তুই_আমার🌹আট
#ফারজানা
নীপার চিৎকার শুনে নীপার মা আর ভাই দৌড়ে আসে আর জিজ্ঞাসা করে….
“কি হয়েছে নীপু ?”
নীপা অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে তখন নিরব জানালা দিয়ে রুমে দেখতেই ও চিৎকার দেয় তখন নীপার মা ও জানালা দিয়ে এই দৃশ্য দেখে চিৎকার দেয়। ওদের চিৎকার শুনে আসে পাশে লোকজন সবাই বাসায় আসে আর দেখে পাখার সাথে একটা ওরনা দিয়ে ঝুলে আছে মিস্টার খান সবাই পুলিশে খবর দেয় তখন পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে মিস্টার খানের লাশকে নামায়……
নিরব ও যায় পুলিশের সাথে তখন নীরবের চোখে একটা সাদা কাগজ পড়ে ও একটা সুযোগ নিয়ে কাগজটা হাতিয়ে নেয়।
রাত ও আসে নিশির বাবার জানাজা তে। রাতের কথায় লাশের কোনো ময়নাতদন্ত হলো না। রাত ভেবেছিলো নিশি হয়তো ওর বাবার মৃত্যু সংবাদ শুনে লুকিয়ে থাকবে না বাট রাত তো জানে না যে নিশি তো ওর বাবার মৃত্যু সংবাদ পায় নাই।
নিশির বাবার মৃত্যু দুই মাস কেটে গেলো। রাত ও অনেক চেষ্টা করছে নিশিকে খুঁজতে। নীপার মায়ের স্বভাব এখনও আগের মতোই আছে। আর রাত সরাসরি বলে দিয়েছে যে সে নীপাকে বিয়ে করবে না……..
🌺🌺🌺
“এই আধু শুন না”
“হুম বল কি বলবি?”
“আমার না আব্বুর জন্য কেমন যেনো লাগছে। অনেক আগে থেকেই তোকে বলতে সাহস পেলাম না যদি বকা দিস তাই”
মাথা নিচু করে বললো নিশি কথাগুলো। আধাঁর নিশির দিকে এক নজর তাকিয়ে পরে বললো…..
“যে বাবা তোকে ভালোবাসে না তোর কোনো খুঁজ নেই না সেই বাবার জন্য তোর মন কোন দুঃখে কাঁদে একটু বল তো?”
নিশি কথা বললো না চুপচাপ কান্না করছে….. আধাঁর নিশির কান্না সহ্য হলো না তাই ও বললো….
“আমি তিনটা জিনিস সহ্য করতে পারি না। এক, মেয়েদের কান্না,দুই,আপন মানুষের কষ্ট আর তিন বেস্ট ফ্রেন্ড হারানো”
নিশির কাছে বেস্ট ফ্রেন্ড হারানো কথাটা সুচের মতো লাগলো ওর বুকে তখন ও বললো….
“অয়ন,তৃপ্ত,নিধন,তারা,প্রীতি আর আলিয়ার কি খবর রে”
কথা ঘুরানোর জন্য নিশি কথাগুলো বললো তা আধাঁর বুঝতে পারলো তখন আধাঁর বললো…..
“নিধন প্রীতি আর অয়ন আলিয়ার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মাঝে অয়ন আর আলিয়ার ব্রেকআপ হয়েছিল বাট পরে ঠিকঠাক হয়ে যায়। নিধন আর প্রীতির তো মেয়েও হয়েছে আর আলিয়া প্রেগনেন্ট।”
“ওহহ তৃপ্ত আর তারার কি খবর?”
আধাঁরের কাছে এই প্রশ্নটা আসা মাত্র আধাঁরের গলা আটকে গেলো…
“কি হলো বল?”
“ওদের খবর জানি না আমি”(কঠোর গলায় বলল)
“তুই না ওইদিন বললি সবার সাথে যোগাযোগ আছে তোর তাহলে তৃপ্ত আর তারার কথা জানিস না কেনো?”
“নিশি তুই এইখান থেকে যা আমাকে আমার কাজ করতে দে”
“যাবো না আগে বলে ওদের খবর?”
“তোকে এক কথা কতবার বলতে হয় নিশি। তুই তো দেখছি সেই আগের মতই জেদী আছিস।তোর এই জেদের জন্যই আজ অনেকগুলো জীবন”
বলতে গিয়েও থেমে গেলো আঁধার তখন নিশি বললো…..
“জীবন, কিসের জীবন কি হয়েছে বলবি তো?”
“নিশি তুই এখন যা আমার রাগ তুলবি না পরে রাগের বশে কি না কি করে ফেলবো বুঝবি না তুই”
নিশি আঁধারের কথায় ভয় পায় সাথে অবাক ও হয়। আধাঁরের ব্যাবহারে তখন ও কাদতে কাদতে চলে যায়। আধাঁর হাত দুটি মুষ্টি করে রেখে কিছুক্ষণ চুপ থাকে পরে নিজে কে নিজেই বলে….
“ওফফ আঁধার নিজেকে কন্ট্রোল কর”
অন্যদিকে রাত খবরের কাগজে+ নিউজে নিশির আব্বুর মৃত্যুর কথা জানায়…..
নিশি আলোক কে নিয়ে খেলছে আর আলোক কে ওর বাবার ব্যাপারে বিচার দিচ্ছে আর আলোক হাসছে আর বলছে…
“মনি বাবাই পতা খুব পতা”
নিশি মন ভালো করার জন্য টিভি টা চালু করলো কার্টুন দেখবে বলে। একটার পর একটা চ্যানেল দেখে যাচ্ছে তাও সে মনের মতো কোনো কিছু পাচ্ছে না তখনই একটা কথা শুনে তার চোখ দুটি ঝাঁপসা হয়ে আসলো আর জোড়ে চিল্লাতে লাগলো আধাঁর নিশির চিৎকার শুনে রুমে আসে আর নিউজে চোখ দেয় । ওইখানে নিশির বাবার নাম শুনে আধাঁর ও স্থির হয়ে যায়।
“আমি আব্বুর কাছে যাবো আধু আমাকে নিয়ে চল”
আধাঁর কিছু বললো না। ও খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারলো এইটা কোনো ছাল। কেননা মৃত্যুর দু মাস পর কেনো এই খবর দেওয়া হলো এতদিন কোথায় ছিলো।বাট নিশির অবস্থা খুব খারাপ তাই বাধ্য হয়ে নিশিকে নিয়ে গেলো আধাঁর নিশির বাসায়……
🌺🌺🌺🌺
নিশির মা নিশিকে দেখে তেড়ে আসছিলো নিশিকে মারার জন্য বাট আধাঁরের জন্য পারলো না। নিশি দৌড়ে ওর বাবার কবরে চলে গেলো আর কাদতে লাগলো।
“আব্বু তুমি কেনো চলে গেলে আব্বু । তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো। আব্বু তুমি ফিরে এসো দেখো আমি আর পালাবো না। তুমি যাকেই বলো তাকেই বিয়ে করবো প্লিজ আব্বু চলে এসো।”
নিশির মা বললো….
“ওই এখন ন্যাকা কান্না বাদ দে আর বল এতদিন কই ছিলি আর এই ছেলে কোথা দেখে আসলো। নাকি এখন তুই….”
আধাঁরের রাগ হচ্ছে এই মহিলাটির উপর। না জেনে শুনে বাজে কথা বলছে তাও নিশির নামে তাই আধাঁর বলেই ফেললো….
“নিজের চরিত্র কেনো বার বার অন্যদেরকে বলেন। আপনি যেমন আপনার কথাও তেমন।”
“ওই ছেলে চুপ কর।তোর সাহস তো কম না আমার বাসায় এসে আমাকেই কথা শুনাচ্ছিস ।”
“ঠিক কথা বলতে কার বাসা কোনটা তা দেখতে হয় না । এই নিশি চল এইখান থেকে”
“চলবে মানে কোথায় যাবে ও?”
“যেখান থেকে এসেছে সেইখানে যাবে”
“মামার বাড়ির আবদার নাকি ব্রো। এত কিছু প্ল্যান করলাম এখন কি সব জলে যাবে নাকি?”
নিশি আধাঁর আর মিসেস খান দেখলো রাত দাড়িয়ে আছে এক হাত পেন্টের পকেটে আর এক হাতে কিছু একটা ঘুরাচ্ছে”
নিশি রাতকে দেখে ভয় পেয়ে গেলো তখন নিশির আম্মু বললো….
“রাত এই নে তোর বউ। এইবার বাবা আমাদের পিছন ছার”
রাত তার ফুফুর কথা শুনে বললো….
“ঠিক বলছো ফুফু তোমাদের তো সত্যিই ছেড়ে দিতে হবে”
বলেই পিস্তল দিয়ে গুলি মারলো রাত তার ফুফুকে…..
রাতের এই আচরণে নিশি আরো ভয় পেয়ে যায়। যে ছেলে তার ফুফুকে মারতে পারে সেই ছেলে আঁধার বা নিশিকে ও মারতেও পিছ পা হবে না। তাই নিশি বললো….
“রাত প্লিজ আপনি ওকে(আধাঁর) কে মারবেন না আমি বিয়ে করবো আপনাকে”
“ওই তোর কি ধারণা আমি তোকে বিয়ে করার জন্য তোর পিছনে এত ঘুরেছি। এত টাকা শেষ করেছি?”
“ভাষা ঠিক করে কথা বলেন মিস্টার রাত”
“আমার ভাষা ঠিকই আছে। তোরা নিজেদের মন মানসিকতা ঠিক কর। তোরা কি নিজেদের সাধু মনে করিস?”
নিশি আর আধাঁর অনেকটা অবাক হলো রাতের কথায় । রাত কি বলতে চাইছে। কি করেছে ওরা।ওদের মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না। কি হচ্ছে কি এইসব।
তখন রাত বললো….
“বুঝতে পারছিস না কিছু তাই না। তাহলে শুন মৃত্যুর আগে তোদের বলেই দেই”
“রাত আপনি কি বলতে চাচ্ছেন এইসব?”
“তোরা কি আরশি নামের কাউকে চিনিস? আবার এইটা বলবি না যে চিনিস না”
নিশি আর আধাঁর চমকে গেলো আরশির কথা শুনে….
“আ আরশি”
“হুম আরশি। ও হলো আমার একমাত্র ছোটো আদরের বোন। আমার এই বোনটাকে কোনোদিন কোনো কিছুর কষ্ট বুঝতে দেই নাই যখন যা চাইতো তাই পেয়েছে । আমার বোন ছিলো আমার কলিজা। কিন্তু আমার এই ফুফু সব সময় আমার বোন কে মোটা বলে হাসাহাসি করতো। এমনকি অনেকেই এইটা নিয়ে হাসাহাসি করতো। আর তোদের কথাও আমার বোন আমাকে বলেছে। তোদের সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনেছি আরশির কাছ থেকে বিশেষ করে নিশি আর আধাঁরের সম্পর্কে। আরশি আধাঁরকে পছন্দ করতো বাট কোনোদিন বলে নাই তার কারণ ও মোটা বলে যদি আধাঁর ওকে দূরে ঠেলে দেয়। ওইদিন নৌকায় যখন আমার বোন অনেক জেদ করছিলো তখন আমি ওর সাথে কথা বলছিলাম। আমার বোন চেয়েছিলো আধাঁর যেনো তাকে চড় মেরে নৌকা থেকে নামায় বাট আধাঁর এমন কিছু করলো না। ও যখন নৌকা দিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত যাচ্ছিলো তখন আমি বার বার বলছি যে চলে আসার জন্য ফোনে তখন আমার কলিজাটা বলছিলো….
“ভাইয়া আধাঁর ও বলছে বেশি দূরে না যেতে বাট একবারও জোর কাটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না”
রাত এইসব বলছে আর কান্না করছে।
রাতের কান্না আর কথা শুনে নিশি ও আধাঁর ও কান্না করছে…..
তখন আধাঁর বললো…..
“আমি আরশির ভালোবাসা ফিল করতে পারতাম বাট….”
নিশি বলল…..
“বাট কি?”
চলবে…..
ইনশাআল্লাহ আগামী পর্বে সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে। আর অতীত দেওয়ার কারণটা এখন তো বুঝতে পারছেন সবাই।