#প্রেমালয় ২ সূচনা_পর্ব
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
~ কিছুক্ষন পর শিশিরের বিয়ে। অথচ সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করেও কোথাও খুজে পেলো না তাকে। শিশিরের মা শিরিনা আহমেদ ছুটে এসে তার বাবাকে বলে,
– ওগো শুনছো, শিশিরকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। শাড়ি-গয়না সব খাটের উপর পরে আছে, কিন্তু শিশির নেই।
– কোথায় গেছে আবার? ফোন দিয়ে দেখো।
– ফোনে পেলে কি আমি তোমার কাছে ছুটে আসতাম? ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে। ফোনেও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে।
পাত্র পক্ষ আসার সময় হয়ে গেছে। শিশিরের বাবাও ছুুটাছুটি করছে, লোক জন লাগিয়ে দিয়েছে কিন্তু না, কোথাও শিশিরের কোনো হদিস নেই। মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পরে তৌফিক আহমেদ। প্রেসার বেরে যাচ্ছে। চিকন ঘাম বইছে কপাল ও গলা দিয়ে। তীসা দৌড়ে এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো।
বিয়ের সব আয়োজন রেডি করা হয়েছে সেই বিকেল থেকে। দাওয়াতি অতিথিও সবাই চলে এসেছে। এমনিতেও আগের বার তীসার বিয়ে ভেঙে যাওয়ায়, নতুন করে কার্ড ছাপিয়ে একই দিনে শিশিরের বিয়ের ডেট ফেলে দিলো। কিন্তু আজও যদি এমন হয় মান ইজ্জত কোথায় যাবে তার? তৌফিক আহমেদ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে, আর পাশে শিরিনা বেগম ও তাদের বড় মেয়ে তীসা। বাইরের সবাই, নিজেদের মতো আয়োজনে ব্যস্ত। মেয়েরাও গেটে দাড়াতে রেডি হয়ে গেছে অনেক আগেই। বিকেল থেকে এই পর্যন্ত খুব তারাহুরার মাঝে সব শেষ হলো। এখন সন্ধা ৭ টা।
ওই দিকে বর বেশে শিশিরের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো সুশান্ত। আজ বড্ড খুশি লাগছে তার। প্রশান্তি নামক পাখি গুলো আজ মনাকাশে ডানা মেলে উড়ছে। হাস্যজ্বল চেহারা চোখে মুখে প্রপ্তির আনন্দ। এই দিন টার জন্য যে বহু অপেক্ষায় ছিলো সে। ফাইনালি আজ তার শিশির পরীকে কাগজে কলমে নিজের করে নিবে সারা জীবনের জন্য। ভালোবাসার মানুষটা অবশেষে সারা জীবন ছায়া হয়ে পাশে থাকবে, ভাবতেই মনাকাশের প্রশান্তি গুলো উজ্জল নক্ষত্র হয়ে জ্বল জ্বল করতে থাকে। হুম আজ দিন টা আমার জন্য লাইফের সবচেয়ে বেস্ট দিন। ওফ রাস্তাটা আর কতদুর? আজ যেনো শেষই হচ্ছে না। আমার পরীর মতো শিশির পরীকে বৌ সাজে কেমন দেখাবে? না আর যেনো তরই সইছে না তাকে এক নজর দুচোখ ভরে দেখার।
,
,
একটা চেয়ারে বাধা অবস্থায় অচেতন হয়ে পরে আছে শিশির। পাশে ফ্লোড়ে বসে শিশিরের বাম হাতটা ধরে তার মায়াবি চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ। স্নিগ্ধ কোমলতায় আশ্চর্য এক মুগ্ধতা জড়ানো এই মুখ। তার চোখ, ও তীক্ষ্ম দৃষ্টি, বুকের বা-পাশ টা এক নিমেশেই ক্ষত বিক্ষত করার ক্ষমতা রাখে। তাই তো সব বাধা তুচ্ছ করেও তোমায় নিয়ে এলাম। তুমি অন্য কারো হয়ে যাচ্ছো, আমি এটা কিভাবে সহ্য করবো বলো?
শিশিরের বাম হাতটা মুঠো করে নিলো মুগ্ধ। সেই দিনের কাটা দাগ টার উপর হাত বুলিয়ে একটা চুমু একে দিলো সে। দু’চোখ যেনো ভিজে আসে তার। নিজেকে কতোটা কষ্ট দিয়েছে সে। কিন্তু কেন এমন করলো শিশির। উত্তর টা তার আজও অজানা।
অনেক্ষন যবত মুগ্ধর এমন বাচ্চামো টের পেয়ে চোখ খুললো শিশির। চোখ খুলে চার দিকটায় তাকাতেই দেখে একটা ঘরে চেয়ারের সাথে বাধা অবস্থায় পরে আছে শিশির। আর পাশে মুগ্ধ বসে আছে।
তার হটাৎ মনে হলো,
শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে বিছানায় রাখা শাড়ি গয়না এগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিলো শিশির। আজ তার বিয়ে হবে। তবুও একটা শুন্যতা বার বার আঘাত করে তাকে। তবে আজ সে খুশিও অনেকটা। কারণ নতুন জীবন শুরু হলে অতিত গুলো মুছে যেতে থাকবে একটু একটু করে। মুছে না গেলেও কষ্ট টা তো কমে যাবে। সুশান্তও যে তাকে খুব ভালোবাসে, খুব।
এসব ভাবতে ভাবতে হুট করে কেউ একজন এসে তার মুখে রুমাল চেপে ধরে। এর পর আর কিছু মনে নেই তার।
তার কাছে এখনসব পরিষ্কার মুগ্ধ যে তাকে বিয়ে বাড়ির সকলের চোখ ফাকি দিয়ে তুলে নিয়ে এসেছে। তাহলে ওই দিকে সুশান্ত?
বর যাত্রি চলে এসেছে কিছুক্ষন হলো। আর শিশির কে কোথাও খুজে পেলো না কেউ। সুশান্ত যে অধিক আগ্রহ নিয়ে বসে আছে কখন তার শশিশির পরী বৌ সেজে তার পাশে এসে বসবে।
শিরিনা আহমেদ সুশান্তের মায়ের কাছে এসে একটু সাইডে ডেকে নিয়ে যায়।
– কি রে শিরিনা, কি এমন কথা বলবি যে সবার সাইডে নিয়ে এলি? আর দুলাভাই কোথায় তাকে দেখছি না যে?
– বোন, একটা ঝামেলা হয়ে গেছে।
– কি হয়েছে আবার?
– শিশির নেই,,
– নেই মানে? আজ তার বিয়ে, কোথায় গেছে সে?
– নেই মানে বুঝতে পারছিস না? সন্ধার পর কোথাও খুজে পেলাম না তাকে?
সুশান্তের মা শান্তা বেগম এবার যেনো বাক রুদ্ধ হয়ে গেলো। এক মাত্র ছেলেকে বিয়ে করাতে এসে এমন একটা নিউজ শুনবে তা হয়তো কখনো কল্পনাও করেনি সে।
সুশান্ত এটা শুনলে তো নির্ঘাত বিয়ে বাড়িতে তুলকালাম কান্ড বাজিয়ে দিবে।
শিশিরের মা কাঁদু কাঁদু ভাব নিয়ে বললো,
– কয়দিন আগে তীসার বিয়ে ঠিক হওয়ায়, সকলকে দাওয়াত দেওয়া শেষে বিয়েটা ভেঙে গেলো। আর আজ শিশিরের বিয়েতেও এমন টা ঘটলো। আত্মিয়দের সামনে মান ইজ্জত টা কোথায় থাকবে আজ?
সুশান্তের কানে খবর টা আসতেই দৌড়ে শিশিরের রুমে চলে যায় সুশান্ত। সব তো ঠিক ঠাকই ছিলো, তবুও শিশির কিভাবে পালাতে পারলো? সব যেন এলোমেলো লাগছে তার কাছে।
শিশিরের খাটের পাশে একটা চিরেকুট পেলো সুশান্ত। তা হাতে তুলে নিলো সে।
“আমায় ক্ষমা করে দিবেন সুশান্ত ভাইয়া। আমি মুখ থেকে এই বিয়েতে সম্মতি দিলেও আমার মন সব সময় মুগ্ধতেই আবদ্ধ। আমি কখনোই তাকে ভুলতে পারবো না। আর হে, তীসা আপু ছোট বেলা থেকেই আপনাকে পছন্দ করে। আপনি আমায় পছন্দ করেন এটা সুনার পর তীসা আপু কখনোই আপনাকে এই ব্যপারে কিছু বলেনি। তবে আমি জানি সে আপনাকেই ভালোবাসে। তবে প্রকাশ করতে পারেনি। আর আমিও মুগ্ধকে ছারা অন্য কারো সাথে থাকতে পারবো না। তাই সব ছেরে মুগ্ধর কাছেই চলে গেলাম। আমায় ক্ষমা করে দিবেন। “”
আর কিছু লেখা ছিলো না ওখানে। চিঠিটা পড়ে একটা দির্ঘশ্বাস নিলো সুশান্ত। সব কেমন যেন এলোমেলো লাগছে তার। মনে হচ্ছে একটা স্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সে। শিশির কিভাবে পারলো এমন টা করতে?
,
,
– আমাকে কেন এখানে তুলে নিয়ে এসেছেন? কি চান আপনি? আমার জীবন থেকে আর কি কেড়ে নেওয়া বাকি আছে আপনার?
শিশিরের প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না মুগ্ধ। চুপ চাপ শিশিরের হাতে কাটা দাগ টার দিকে তাকিয়ে আছে। শিশিরের এভাবে দুড়ে সরে যাওয়া আবার হাত কেটে সুই সাইডের চেষ্টা। নিশ্চই এই দাগের পিছনে অনেক কিছুই লুকিয়ে আছে। যা মুগ্ধর অজানা।
মুগ্ধকে চুপ থাকতে দেখে, এবার শিশির কাঁদু ভাব নিয়ে বললো,
– প্লিজ আমায় ছেরে দিন, আজ আমার বিয়ে। সবাই অপেক্ষা করছে। প্লিজ আমার বাবা মায়ের সম্মান নষ্ট করবেন না আপনি। সুশান্ত ভুল বুল বুঝবে আমায়। আমায় যেতে দিন প্লিজ।
মুগ্ধ এবার একটু রেগে গিয়ে বললো,
– বিয়ে? কিসের বিয়ে? আমাদের এতো বছরের সম্পর্কটা তাহলে কি ছিলো? আর এখন অন্য কাউকে বিয়ে বরবে? আমি জানি শিশির তুমি এখনো আমায় ভালোবাসো। তবুও কেন এমন করছো তুমি?
– না আমি আপনাকে এখন আর ভালোবাসি না, আমি সুশান্তকে ভালোবাসি। প্লিজ আমায় যেতে দিন। সুশান্তই এখন আমার সব। She is a lucky person in my life
,,,,,,
To be continue,,,,,,,,
#
বিঃদ্রঃ যারা #প্রেমালয় ১ পড়েন নি তারাও এটা পড়তে পারবেন।