#প্রেমালয় ২ -৫.
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ
তীসাকে নিচে নিয়ে গেলো। দেখে সুশান্তের দাদি ও কয়েকজন মেহমান বসে আছে সেখানে। দাদি সোফায় হেলান দিয়ে বললো, এইতো আমার সতিন চলে এলো।
এক এক করে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো তীসাকে। এর পর দাদির পাশে বসলো। দাদি পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। বুড়ি হলেও এখনো পুরোপুরি টনটনে। তীসার কাধে রাত রেখে বললো,
– হাই ইয়াং লেডি, সব ঠিকঠাক?
তীসা অবাক হলো না। কারণ দাদি প্রাচিন কালের মানুষ হলেও আধুনিকতার ছোয়ায় চকচক করে।
তীসা মাথা নাড়িয়ে হ্যা সুচক সম্মতি জানালো। দাদি হেসে উঠে বললো,
– এভাবে মোচড়া মুচড়ি করছিস কেন? তুই কি এই বাসায় আজ নতুন নাকি? এর আগেও তো অনেক বারই এসেছিস। যদিও আজকের বিষয় টা অন্য কথা, তবে শুন স্বামীর আদেশ মেনে চলবি সব সময়। এই পরিবারটা আজ থেকে তোরই। এতোদিন বৌ মা সামলে আসছে এবার তোর পালা। গুরুজনের কথা শুনবি।এর পর কানে কানে ফিসফিসিয়ে বললো, আর স্বামীকে আূর করবি বেশি বেশি। যখন কাছে ডাকবে যাবি। স্বামীর মনে কষ্ট দিবি না, বুঝলি?
এই মুহুর্তে তীসা হাসবে না কাঁদবে ওটাও বুজে উঠতে পারছে না। দাদি এমন ভাব করছে মনে হয় সব কিছু স্বাভাবিক ভাবেই হয়েছে।
এর পর দাদি আবার বলতে শুরু করলো,
– জানিস আমি মনে মনে কত দোয়া করেছি। যাতে ছোট টা না হয়ে তোকে আমার নাত বৌ বানায়৷ আল্লাহ্ মনে হয় আমার দোয়া শুনেছিলো। আরে ছোট টা তো আস্ত বান্দর। ওইটার লগে আমার মিলতো না। এখন তুই আইসছ, আমি একটা সঙ্গি পাইলাম। ইংরেজি তে যাকে বলে, ইয়ে,, ফেরেন্ড আর কি।
তীসা সৌজন্য মুলক একটা হাসি দিলো। দাদি এবার ফোন টা বের করে বললো,
– এটা কি বলে, এই ফেসবুক চালাস না তুই?
তীসা মাতা নারালো যার অর্থ সে চালায়। এবার দাদি বললো,
– তাইলে এক কাম কর, আমার আইডিটাও এড কর। রাতে তো আর তোরে কাছে পামু না, নাতির লগে হুইয়া থাকবি। তখন কথা কমু নে।
তীসা একটু অবাক হয়ে বললো,
– তুমিও ফেসবুক চালাও দাদি?
– ওমা চালামু না? জানস, আমার ফেসবুকে ১ হাজার ফলোয়ার। কতো সুন্দর সুন্দর পোলায় আমারে মেসেজ দেয়। হাই, হ্যালো,, হাই, হ্যালো।
তীসা হেসে বললো,
– আচ্ছা তোমার আইডির নাম বলো।
– ইয়ে কি যেন নাম, ওহ্ হ্যা, অচিন দেশের রাজকন্যা।
তীসা যেন আর হাসি থামাতে পারলো না। শব্দ করে হেসে উঠে। কি বলে এই বুড়ি? আশেপাশের ব্যস্ত মানুষ গুলো তীসার দিকে তাকালো। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো তীসা।
সুশান্ত সিড়ি দিয়ে হেটে বাইরে যাচ্ছিলো খুব তারাহুরা করে। তখনি দাদি ডাক দিলো,
– এই ইয়াং ম্যান, কাম হেয়ার।
সুশান্ত একটু বিরক্তি বোধ করলো। এই বুড়ির পাল্লায় পরলে আর রক্ষে নেই। পরে দেকা যাবে কথা বলা বন্ধ করে দিবে হুট করে। সুশান্ত রাগ টা চাপা রেখে হাসি মুখে দাদির দিকে এগিয়ে গেলো,
– হুম ওল্ড লেডি, তারাতারি বলো কি বলবা?
দাদি একটু অভিমানি ভাব নিয়ে বললো,
– নতুন বৌ পেয়ে আমায় ভুলে গেলা ডার্লিং? আমি এখন পুরোনো হয়ে গেছি তাই না? এখন আমাকে আর ভালো লাগে না? কথা বলতে বিরক্ত লাগে? ব্যস্ততা দেখাও আমার লগে? হুন, তোর দাদা বাইচ্চা থাকলে তোরে আমার পাত্তা দেওয়ারও টাইম ছিলো নাকি? তোর দাদা জোয়ান কালে এতো হ্যান্ডসাম ছিলো, তাও তো নাকে দড়ি দিয়ে কতো পেছন পেছন ঘুরাইছি। বৃষ্টির মাঝে দাড়াই থাকতো পুল নিয়া। কম ঘুরাই নাই তোর দাদারে আমি।
তীসা বললো,
– খুব ইন্টারেস্টিং তো।
– হ, একদিন সময় কইরা তোরে আমার পেমের গল্প হুনামু। এই এদিকে আয় এইখানে বয়। সুশান্তের দিকে চেয়ে বললো।
সুশান্ত গিয়ে দাড়ির পাশে বসে বললো,
– কি বলবা তারাতারি বলো।
দুই পাশে দুইজন মাজখানে দাদি। দাদি উঠে একটু দুড়ে গিয়ে দাড়ালো। হাত দিয়ে ইশারা করলো দুইজন কাছাকাছি বসতে। দাদি ছবি তোলার জন্য রেডি হচ্ছেন। নানান রঙের স্টাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত তিনি। একবার বলছে এভাবে বসতে আরেক বার বলছে ওভাবে বসতে।
এর পর দাদি এসে ছবি গুলো দেখালো।
– বুঝলি, এগুলো আসকে ফেসবুকে দিমু। ভাইয়ের বিয়ার পিক।
তীসা একটু অবাক হয়ে বললো,
– ভাই? তোমার তো নাতি লাগে।
– চুপ ছ্যামড়ি, নাতি লিখলে মানুষ কি বলবো? তুই জানস আমার ফেসবুকে বয়স কতো? একুশ একুশ,,,,, বুছলি?
দাদির কথার তালে সুশান্তও বসে আছে। ওদিকে তার মন পরে আছে অন্য জায়গায়। তার পুরোপুরি বিশ্বাস ছিলো যে তার শিশির তাকে ঠকাতে পারে না। নিশ্চই শিশির কোনো বিপদে পরেছে। সে তো তীসাকে জেদ করে বিয়ে করেছে। মন থেকে না। একবার শুধু তার শিশির পরীকে খুজে বের করুক।
তীসাকে সাইডে ডাকলো সুশান্ত। দাদি একটু হেসে বললো,
– যাও যাও, জামাইয়ে ডাকতাছে। বাপরে বাপ, বিয়ার একদিন না পার হতেই বৌ ভক্ত হয়ে গেছে।
সবার আড়ালে নিয়ে সুশান্ত খুব শক্ত গলায় তীসাকে বললো,
– দেখ, সবার সাথে এতো ভালো হওয়ার চেষ্টা করবি না। ভুলে যাস না, সবাই বিষয়টা যেভাবেই নিক আমি কখনোই তোকে মেনে নিবো না। আগেই বলেছি আমি জেদ করেই তোকে বিয়েটা করেছি। তুই এই বাড়িতে কয়েক দিনের অতিথি মাত্র। একবার শুধু শিশিরকে খুজে পাই।
সুশান্ত চলে গেলো। তীসা ছল ছল দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো সুশান্তের দিকে। মনে মনে বলে উঠলো,
“হুম, আমি তো একটা খেলনা। সবাই জেদ করে যেদিকে লাথি দিবে আমি ওদিকেই যাবো।
,
,
অফিসে আসার পর থেকেই মাথায় একটা চিন্তা ঘুর পাক খাচ্ছে মুগ্ধর। শিশিরের কতা গুলো খুব ভাবাচ্ছে তাকে। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে, চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। হুট করে মনে পরলো মাহিমার কথা। হয়তো তার কাছ থেকেই কিছুটা জানা যাবে।
মাহিমাকে ফোন দিয়ে ইমার্জেন্সি দেখা করতে বলে মুগ্ধ।
মুগ্ধ আর মাহিমা বসে বছে একটা কপি শপে। ফাহিমাকে সব কুলে বললো মুগ্ধ। আর জানতে চাইলো শিশিরের এমন আচরণের কারণ টা কি? কিন্তু মাহিমাও ঘুরিয়ে পেচিয়ে মুগ্ধকে বললো।
– শিশিরের কথা গুলো মাত্রই একটা ঘোর ছিলো। অসুখের ঘোরে মানুষ কত রকমই আবোল তাবোল বকে। শিশিরকে আমি চিনি। আপনার সাথে কথা বলি দেখে সে আমার সাথেও যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো। সে আসলে সুশান্তকেই ভালোবাসে। আপনার বিশ্বাস না হলে তাকে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
– কিভাবে?
– আপনি তাকে সুজুগ দিবেন। যাতে পালিয়ে যেতে পারে। সে যদি না পালায় তাহলে বুঝবেন যে সে আপনাকে ভালোবাসে। আর যদি সুশান্তের কাছে চলে যায়, তাহলে বুঝবেন যে, আপনার প্রতি তার ভালোবাসা একটুও ছিলো না৷
___________________
আজ একদিন এই ঘরে বন্ধি হয়ে আছে শিশির। না জানে বাড়িতে সবাই তাকে নিয়ে কি ভাবছে? সুশান্ত ভাইয়াই বা কি ভাবছে? লোকটাকে এভাবে ঠকালাম? না আমি তো ঠকাইনি। না, তাকে সব বলতে হবে। সত্যিটা জানাতে হবে যে আমি তাকে ঠকাইনি। তার আগে আমাকে এই বাসা থেকে বের হতে হবে যেভাবেই হোক।
মাথায় শুধু এখান থেকে বের হওয়ার চিন্তা ঘুরছে শিশিরের। সবার ভুল ভাঙাতে হবে। দুই হাত মুঠু করে একটা নিশ্বাস ছারলো শিশির।
চলবে?,,,,,,,,,,,,
– রিচেক করা হয়নি, ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন💖