প্রজাপতির_রং🦋
Part_04
#Writer_NOVA
—- গুড মর্ণিং ঢাকা।গুড মর্ণিং বাংলাদেশ। আমি আর জে এরিন আছি আপনাদের সাথে।আপনারা শুনছেন ঢাকা এফএম 90.4। আর এখন চলছে আপনাদের সবার ফেভারিট শো “ভোরের পাখি”। সকাল ৭ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত আমি এরিন থাকবো আপনাদের সাথে। এর মধ্যে চলবে গান,ফান ও জমজমাট আড্ডা। আমার সাথে যুক্ত হতে ও আপনার মনের অনুভূতি জানাতে SMS করুন ৭****৬ এই নাম্বারে।এবং কেমেন্ট করুন আমাদের ফেসবুক অফিসিয়াল পেইজে।কথা না বারিয়ে চলুন শুরু করা যাক।আপনারা জলদী জলদী করে এসএমএস এবং কমেন্ট করে আপনার পছন্দের গান জানিয়ে দিন।অনেকের হয়তো প্রশ্ন থাকবে আপনাদের প্রিয় আর জে নোভানাজের শো বিগত দুই দিন ধরে আমি কেন করছি? আসলে আপনাদের নোভানাজ একটু সমস্যায় আছে।তাই তার শো-টা আমাকেই চালাতে হচ্ছে। তবে ইনশাআল্লাহ আগামীকাল কিংবা পরশু থেকে তার শো সেই সামলাবে।কথা না বাড়িয়ে আমরা গানে চলে যাই।চলুন আপনাদের প্রিয় আর জে নোভানাজের প্রিয় সিঙ্গার ইমরান মাহমুদুলের ধোঁয়া গান টা শুনে আসি।ফিরছি গানের পর বিজ্ঞাপন বিরতির পরপরি।কোথাও যাবেন না। আমার সাথে ও ঢাকা এফএমের সাথেই থাকুন।ইনজয় দিস মিউজিক।
হাসিমুখে এক বিশাল রচনা বলে থামলো এরিন। গত দুই দিন থেকে সকাল-দুপুরে দুটো শো সামলাতে হচ্ছে তার।নিজের একটা আরেকটা নোভার।নোভার দুটো শো এর একটা সে আরেকটা হিমি সামলায়।সবার সামনে হাসিমুখে থাকলেও ভেতরে ভেতরে সে অনেক টেনশনে আছে।কারণ দুই দিন ধরে নোভা ও তার বাচ্চাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।সেই চিন্তায় এরিনের ও হিমির রাতের ঘুম হারাম।এরিন,হিমি ও নোভা বলতে পারেন কলিজার টুকরো বান্ধবী। যদিও তিন জনের পরিচয় এই আর জে ক্যারিয়ারে এসে। তবে তারা এখন একে অপরের অংশ।একসাথে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে।সবকিছু তিনজন মানিয়ে চলে।আর জে ক্যারিয়ারে সবাই নোভাকে চিনে নোভানাজ নামে।
এরিন গভীর চিন্তায় ডুব দিয়েছে। কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে নোভার প্রিয় সিঙ্গার ইমরানের ধোঁয়া গানটা বাজছে।
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
কি করে বলি,
কতটা ভালোবাসি আমি তোমাকে
এই দিনগুলি,
কি করি থাকি বলো একা এইভাবে
এই মুহুর্ত কাটে না, নিঃস্ব তুমি হীনা
পেতে চায় তোমারি ছোয়া
ধোয়াআআআআআআআআআ
এই শহরে যাই হারিয়ে, এই প্রহরে খুজি তোমাকে
পথে হলো দেখা, সেই পথেই কেন একা
আমি দুই হাতে ধরি শূন্যতা
তুমি শুধু পারো, যদি ছুঁয়ে দেও আবারো
তাতে পাবে সে সব পূর্ণতা
মন ভ্রান্ত এই সময় অশান্ত আজানায়
পেতে চায় তোমারি ছোয়া
ধোয়াআআআআআআআআআ
এই শহরে যাই হারিয়ে, এই প্রহরে খুজি তোমাকে
রাতে যদি হবে তবে আলো কে ছড়াবে
দুচোখে নিয়ে অন্ধকার
তুমি শুধু পারো, যদি ছুঁয়ে দেও আবারো
তাতে আলোকিত হবো আবার
মন ভ্রান্ত বেদনায়, অচেনা ঠিকানায়
পেতে চায় তোমারি ছোয়া
ধোয়াআআআআআআআআআ
এই শহরে যাই হারিয়ে, এই প্রহরে খুজি তোমাকে
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
গান শেষ হতেই এরিন বিজ্ঞাপন বিরতি নিলো। মাথায় দুই হাত দিয়ে ডেস্কের ওপর বসে আছে।এত সকালে ওঠার অভ্যাস নেই এরিনের।তার শো দুপুরের দিকে।তাই সকালে ঘুমিয়ে কাটায়।হিমির শো বিকেলে। মাথা ঝিমঝিম করছে।এই মুহুর্তে এক কাপ কফি হলে মন্দ হতো না।তখুনি কফি হাতে সেখানে প্রবেশ করলো সাইমন।সেও একজন RJ। এরিন ও হিমি দুজনের সাথে সাইমনের আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভালো তবে ততটা বেশি নয়। নোভার সাথে তো একদম ভালো নয়।কারণ সাইমনকে দেখতে সহজ সরল এক ছেলে মনে হলেও সে হলো গভীর জলের মাছ।আর নোভার কাছে সবসময় মনে হয় ছেলেটার ভেতরে ঘাপলা আছে।তাই যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে চলে নোভা।নিজে তো দূরত্ব রাখেই সাথে এরিন ও হিমিকেও এর থেকে দূরে থাকতে কড়া নিষেধ করেছে।কিন্তু সাইমন দেখতে খুব বোকা কিছিমের।চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা,হাতে ঘড়ি,গলা অব্দি বোতাম লাগানো টি-শার্ট পরহিত কেউ দেখলে তাকে যে কেউ বোকা উপাধি দিয়ে দিবে।তবে তাকে দেখে যতটা বোকা মনে হয় আসলে সে ততটা নয়।কফির মগ এরিনের সামনে রেখে টেবিলের ওপর হাত দিয়ে জোরে দুটো টোকা দিলো সাইমন।এতে এরিন মাথা উঠিয়ে তাকালো।
সাইমনঃ কফি😊😊।
এরিন মুচকি হাসি দিয়ে সাইমনের হাত থেকে কফির মগটা নিজের হাতে নিলো।তারপর মৃদুস্বরে বললো।
এরিনঃ ধন্যবাদ।
সাইমনঃ তুমি কি কিছু নিয়ে টেনশনে আছো এরিন?
এরিনঃ অনেক বড় টেনশনে আছি। নোভার জন্য অনেক বেশি টেনশন হচ্ছে। গত তিনদিন ধরে ওর কিংবা নাভানের কোন খোঁজ নেই। তাই প্রচুর টেনশনে আছি। আল্লাহ না করুক, কোন বিপদে পরেনি তো।ওর কোন ক্ষতি হলে আমি ও হিমি নিজেদের ক্ষমা করতে পারবো না।
সাইমনঃ চিন্তা করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।নোভা যথেষ্ট বুদ্ধিমতি মেয়ে।যদি কোন বিপদে পরেও তাহলে ঠিক কাটিয়ে নিতে পারবে।আল্লাহ ওকে আর ওর ছেলেকে রক্ষা করুক।
এরিন চিন্তিত মুখে একের পর এক কফির মগে চুমুক দিতে লাগলো।সাইমন মগ হাতে নিয়ে টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। দৃষ্টি তার সামনের দিকে আবদ্ধ। হঠাৎ এরিনের চোখ সাইমনের দিকে যেতেই এরিনের মনে হলো সাইমন কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসছে।বিষয়টা স্বাভাবিক মনে হলো না এরিনের কাছে।তাই কফির মগ ডেস্কের ওপর রেখে চোখ, মুখ কুঁচকে সাইমনকে জিজ্ঞেস করলো।
এরিনঃ কি ভাবছেন মিস্টার সাইমন?মনে হচ্ছে আপনি খুব খুশি?
এরিনের কথায় কিছুটা বিষম খেয়ে উঠলো সাইমন।হন্তদন্ত হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললো।
সাইমনঃ তেমন কিছু নয়। পুরনো একটা হাসির কথা মনে পরে গিয়েছিলো।তাই না চাইতেও হাসি চলে আসছিলো।তাছাড়া তেমন কিছু নয়।
এরিনঃ কি এমন কথা?যার জন্য আমাকে চিন্তিত দেখেও আপনার মুখে হাসি ফুটে উঠছে।আমি জানতে পারি কি?
সাইমনঃ বললাম তো তেমন কিছু না।আচ্ছা, সরি তোমার কাজে ডিস্টার্ব করলাম।বিজ্ঞাপন বিরতি তো শেষ হওয়ার পথে।তুমি শো করো।আমি আসছি।
কথাগুলো প্রায় একদমে বলে তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেলো সাইমন।এতে বেশ অবাক হলো এরিন।সাইমন যে ওর থেকে কথা ঘুরিয়ে এখান থেকে পালিয়ে গেলো তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু সাইমন কেন এভাবে পালালো তার যুক্তি সে দাঁড় করাতে পারলো না।হয়তো সেই হাসির কথাটা সে এরিনকে জানাতে চায় না। এর জন্যই কথা কাটিয়ে পালিয়ে গেলো।এরিন আর বেশি কিছু ভাবলো না।বিজ্ঞাপন বিরতি শেষ হওয়ার আগেই মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে নিলো।আবার শো শুরু করতে হবে।
🦋🦋🦋
সময় এখন ৯ টা বেজে ৪৭ মিনিট।যামে আটকে গাড়িতে বসে বিরক্তির সাথে হাই তুলছে তাজ।ঢাকা শহরে এই একটাই ঝামেলা।আর তা হলো যাম।যামে পরলো জীবনটা অতিষ্ঠ হয়ে যায়।যদিও এটা নিত্যদিনের ব্যাপার।কিন্তু আজ তাজের অফিসে একটা জরুরি মিটিং আছে।সময় মতো যেতে না পারলে বড় লোকসানও হতে পারে। এখন নিজের ওপর রাগ উঠছে তাজের।কেন যে সকাল সকাল তার বাবা ও ছোট ভাইয়ের সাথে বের হলো না। বিরক্তি কমাতে রেডিও ওন করলো তাজ।তার প্রিয় শো “ভোরের পাখি”।মূলত নোভানাজের সকাল-বিকেল দুটো শো সে শুনে।একদিনও মিস দিবে না।যার কারণ হলো এই দুটো শো-এর আর জে নোভানাজের কন্ঠটা তার অনেক চিরচেনা মনে হয়।মনে হয় তার কাছের খুব প্রিয় মানুষ। তাই সে একটা দিনও মিস দেয় না।কিন্তু গত দুই দিন যাবত অন্য একটা মেয়ে শো করায় তার শুনতে ভালো লাগে না।
তাজঃ ড্যাম ইট।আমার বাবার সাথে চলে গেলেই ভালো হতো।এখন এই বিরক্তিকর যাম সহ্য করতে হবে।
হঠাৎ জানালায় টোকার আওয়াজ পেয়ে সেদিকে তাকালো।জানালার কাচ নিচে নামাতেই বকুল ফুলের ঘ্রাণ জানালা ভেদ করে তাজের নাকে এসে বারি খেলো।চোখ বন্ধ করে লম্বা করে ফুলের ঘ্রাণ নিলো।নিমিষেই বিরক্তি দূর হয়ে একরাশ ভালো লাগা ছেয়ে গেল।সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো একটা দশ বছরের মেয়ে নানারকম ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গোলাপ ফুল ভর্তি বালতিটাকে এক হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। আর আরেক হাতে কতগুলো বেলি ফুল ও দুটো বকুলের মালা।
—- ভাইয়া, ফুল নিবেন? একদম তাজা ফুল আর ফুলের মালা।আজকেই বানাইছি।
ময়লা জামা পরিহিত উসকো খুসকো চুলের মেয়েটার দিকে তাকিয়ে তাজের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।যেই বয়সে মেয়েটার স্কুলে যাওয়ার কথা সেই বয়সে রাস্তায় ফুল বিক্রি করছে।তাজ মুখে হালকা হাসির রেখা টেনে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলো।
তাজঃ নাম কি তোমার?
—- আমার নাম টুম্পা।
তাজঃ বাহ্ বেশ সুন্দর নাম তো।তা তোমার ফুলের দাম কত?
টুম্পাঃ গোলাপ ফুলের পিস ১০ টেকা।বেলি ফুলের মালা ২০ টেকা কইরা।আর বকুলের মালা ৫০ টেকা।এই বকুল ফুলের মালা আমারে ছাড়া আর কারো কাছে পাইবেন না।
তাজঃ কেন?
টুম্পাঃ আমি সকাল ভোরে অনেক দূরের এক বাগান থিকা কুড়ায় আনি।এহন(এখন) তো বকুল ফুলের গাছ কোনহানে দেহা যায় না। তাই এইডার দাম বেশি। আর আমি ছাড়া ঐ গাছের খবর কেউ জানে না। ঐ ফুল গাছটা জংলি গাছের ভিতরে তো।
তাজঃ স্কুলে যাও না কেন?
টুম্পাঃ ইস্কুলে গেলে টেকা ইনকাম করবে কে?
তাজঃ তোমার বাবা-মা করবে।
টুম্পাঃ বাবা ছুডু থাকতে মইরা গেছে। মায় মাইনষের বাড়ি কাম করে।আমি তো ইস্কুলে পড়তে চাইছিলাম।কিন্তু মায় কইছি আমগো গরীব মানুষের পড়ালেহা করতে হয় না।তার থিকা ফুল বেচলে নাকি টেকা আইবো।
তাজঃ অনেকে তো ভিক্ষা করে জীবন চালায়।
টুম্পাঃ ছি, ছি। মায় কইছে না খাইয়া থাকবো।তাও নিজে কারো কাছে হাত পাতবো না।আমারেও পাততে দিবো না।
টুম্পার এই কথায় তাজের মুখটা আনন্দে চকচক করে উঠলো।গরীব হয়েও টুম্পার মা তাকে সঠিক শিক্ষা দিয়েছে। এতটুকু বয়সের মেয়ে হয়ে সে নিজেও এই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। অথচ মেক্সিমাম ৮০% শিক্ষিত মানুষের মনে সামান্যতম মানুষ্যত্ব নেই। আর গরীবের সন্তান হয়েও সে তার মায়ের কথা মেনে নিয়েছে।
টুম্পাঃ স্যার কি ফুল নিবেন? নিলে জলদী নেন।আমার আবার ঐদিকে যাইতে হইবো।দাড়ায় থাকলে আমার ব্যবসা লস।
তাজঃ আমাকে বকুল ফুলের মালা দুটো দেও।
টুম্পাঃ নেন স্যার।
তাজঃ কত হয়েছে বলো তো?
টুম্পাঃ ৫০ আর ৫০ তাইলে ১০০ টেকা।(হাত গুণে)
তাজঃ বাহ্, হিসাব তো ভালোই জানো।
তাজ মুচকি হেসে পকেট থেকে মানওব্যাগ বের করলো।সেখানে থেকে ৫০০ টাকার দুটো নোট টুম্পার দিকে এগিয়ে দিলো।
টুম্পাঃ স্যার এতো টেকা দিতাছেন কেন? আমার ১০০ টেকা দিলেই হইবো।বেশি টেকা আমি নিতে পারমু না।
তাজ অসহায় চোখে টুম্পার দিকে তাকালো। ওর কাছে সব পাঁচশত টাকার নোট।একশত টাকার কোন নোট নেই।
তাজঃ আমার কাছে ১০০ টাকার কোন নোট নেই। তুমি বিশ্বাস না করলে এই যে দেখ।
টুম্পা এগিয়ে এসে মানিব্যাগের দিকে তাকালো।সত্যি সেখানে সব ৫০০ টাকার নোট। সেও পরে গেলো বিপদে।বকুল ফুলের মালাগুলো ৫০ টাকা বলে কেউ নিতে চায়না।যাও একটা কাস্টমার পেলো।তার কাছেও ভাংতি টাকা নেই। টুম্পার মুখটা মলিন হয়ে গেলো।
তাজঃ তুমি এই দুটো নোট রাখো।আমি তোমাকে এগুলো ছোট বোন হিসেবে দিলাম।প্লিজ রাখো।
টুম্পাঃ না না আমি এগুলা নিবার পারুম না।বাড়িতে গেলে মায় যখন জিগাইবো তহন আমি কি কমু?মায় তহন আমারে মারবো।
তাজঃ আরে কিছু বলবে না। তুমি রাখতো। যদি জিজ্ঞেস করে তাহলে বলবে এক ভাইয়ার কাছে টাকা ভাংতি ছিলো না। তাই এগুলো দিছে।
টুম্পাঃ তাইলে একটা নোট দেন।আমি দুইটা নিতে পারমু না।
তাজ জোর করে টুম্পার হাতে নোট দুটো গুঁজে দিলো।টুম্পা বাকি ফুলগুলো দিতে চাইলে সেগুলোও তাজ নিলো না।অগত্যা তাজের জোড়াজুড়িতে টুম্পা টাকাগুলো নিয়ে অন্য দিকে চলে গেল।যাওয়ার আগে তাজকে বললো।
টুম্পাঃ আপনে অনেক ভালা ভাইজান।তয় সাবধানে থাকবেন।পৃথিবীতে ভালা মানুষরে বেশি দিন বাঁচতে দেয় না।শত্রুরা মাইরা ফালায়।নয়তো আল্লাহ নিয়া যায়।
তাজ টুম্পার কথার উত্তরে কিছুই বলেনি।বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে টুম্পার গাল টেনে দিয়েছে।তাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধে টুম্পার চোখ ছলছল করে উঠে ।মুখে তার আনন্দের হাসি।এই টাকা তার মা কে দিলে সে এই মাসের বাজার করতে পারবে।তখন বলবে গরুর কলিজা কিনে আনতে।কতদিন ধরে তার শখ জাগছে গরুর কলিজা ভুনা খাবে।বান্ধবী লাইলীর মুখে শুনেছিল গরুর কলিজা ভুনা নাকি অনেক মজা।লাইলির মা যেই বাসায় কাজ করে তারা একদিন একটু দিয়েছিলো।সেটা লাইলীর মা না খেয়ে আচলের তলায় লুকিয়ে লাইলীর জন্য নিয়ে এসেছে।সেই থেকে টুম্পার শখ জেগেছে গরুর কলিজা ভুনা খাওয়ার।কিন্তু তাদের তো আর সেই সামার্থ নেই। মায়ের কাছে এসবের কথা বললেই তার মা রাগারাগি করে।মাঝে মাঝে মারধর করে। একদিন মারতে মারতে বলেছিলো,,,
—“নবাবের বেটির এত শখ কে? কে কিইন্না খাওয়াইবো তোরে? দুইবেলা নুন দিয়া ভাত খাইতে পারি না।আর হেই গরুর কলিজা ভুনা খাইবো।গরীবের ঘরে জন্ম না নিয়া বড়লোকের ঘরে জন্ম নিতে পারলি না।তইলে তো তোরে একেকদিন একেক পদ দিয়া খাওয়াইতো।তোর বাপে তো মইরা খালাস হইছে।আর এহন যত জ্বালা হইছে সব আমার।”
সেদিন টুম্পার মা টুম্পাকে অনেক মেরেছিলো।যার কারণে টুম্পার জ্বর চলে আসে। পরে অবশ্য তার মা কেঁদে কেঁদে সারারাত জেগে সেবা করেছে। ময়েরা তো এমনি হয়।নিজেই শাসন করবে আবার নিজেই বুকে টেনে নিবে।
তাজ বকুল ফুলের মালা দুটো হাতে নিয়ে নাকের সামনে আনলো।বড় করে নিশ্বাস টেনে ঘ্রাণ নিলো।তার প্রেয়সীর খুব পছন্দের এই বকুল ফুল।আজ যদি সে এই মালা দুটো পেতো তাহলে যে কি খুশি হতো তা তাজ নিজেও জানে না। ফুল দুটোকে গাড়ির সামনের দিকে যত্ন সহকারে রাখলো।সামনের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। আবার সেই বিষাক্ত অতীত এসে তাকে ঘিরে ধরছে।সে তো চাইছে সব ভুলে নিজেকে মানিয়ে নিতে।কিন্তু তা পারছে না।অতীতের কথা মনে হতেই মুখটা আপনাআপনি বিষন্নতায় ঘিরে গেলো।হঠাৎ সামনের দিকে চোখ যেতেই তাজ চমকে উঠলো। ওর শরীর ঘামতে শুরু করলো।কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা নয়।
#চলবে
আস্তে আস্তে সব রহস্য ক্লিয়ার হবে।তার জন্য ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষা করতে হবে🙂।প্রত্যেকটা নতুন চরিত্র গল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।তাই আমাকে আনতে হচ্ছে।আপনাদের কি গল্পটা ভালো লাগছে না? ভালো না লাগলে বলুন আমি কয়েক পর্বে শেষ করে দেই।হুট করে আপনাদের রেসপন্স এতো কমে গেলো কেন? তাতে তো আমি ধরেই নিবো আপনাদের ভালো লাগছে না।