প্রজাপতির_রং🦋 Part_05

0
1615

প্রজাপতির_রং🦋
Part_05
#Writer_NOVA

আবছা অন্ধকারে পুরো শহরটা ছেয়ে গেছে। সন্ধ্যা হতে বেশি বাকি নেই। কাচের দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন এক যুবক।তার অগোছালো চুলগুলো কপালে পরে আছে।পরন্ত বিকেলের আলোক রশ্মি তার কপালের চুলের ওপর পরেছে।যাতে কালো চুলগুলো লালচে ভাব এসে চিকচিক করছে। মুখে রাজ্যের চিন্তা এসে ভর করেছে।প্রিয় মানুষটাকে আবারো হারানোর ভয়।যা তাকে খুব করে জেঁকে ধরেছে।এবারও কি সে তার ভালোবাসার মানুষটাকে পেতে ব্যর্থ হবে।ছেলেটা আর কেউ নয়, রোশান দেওয়ান।রোশানের অপজিটে দাঁড়িয়ে তমাল তার বসের মতিগতি বোঝার চেষ্টা করছে। কখন থেকে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। তমালের যে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যাথা হয়ে আসছে।সেদিকেও খেয়াল নেই।অন্ততপক্ষে বসতে তো বলবে।তা না করে মনোযোগ সহকারে বাইরে তাকিয়ে আছে। এবার তমাল সাহস করে বলেই ফেললো।

তমালঃ স্যার কিছু বলতে ডেকেছিলেন?

রোশানের কানে তমালের কথা পৌঁছালো কিনা তা আল্লাহ জানে।কারণ সে এখনো এক ধ্যানে বাইরে তাকিয়ে আছে। তমাল আরেকটু সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো।তার কাছে মনে হচ্ছে তার বস কিছু একটা বিরবির করে বলছে।

তমালঃ স্যার, কিছু বলছেন।

রোশানঃ হুম বলছিলাম।

তমালঃ আমাকে কিছু বলছিলেন?

রোশানঃ না তোমাকে নয়।আমার হার্টবিটকে বলছিলাম।

তমালঃ কি বলছিলেন স্যার?

রোশানঃ বলছিলাম, নোভা যদি আমার না হয় তাহলে আমি অন্য কারো হতে দিবো না।

তমালঃ কেন স্যার, আপনার হলে কি সবার হতে দিবেন নাকি😜?

বেক্কল মার্কা হাসি দিয়ে কথাটা বললো তমাল।কিন্তু তার বসের দিকে তাকিয়ে তার অন্তরত্মা শুকিয়ে গেলো।কারণ সে যে কতবড় ভুল কথা বলে ফেলেছে তা সে নিজেও জানে না।যার কারণে রোশান তার দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে আছে। এখুনি বোধহয় তমালকে খুন করে ফেলবে।এই চাহনির দিকে তাকিয়ে থাকার মতো সাহস তমালের নেই। দ্রুত সে দৃষ্টি নিচের দিকে নামিয়ে বড়সড় ঢোক গিলে আল্লাহর নাম জপতে লাগলো।আজ তার কপালে শনি আছে। রোশান কিছুটা রাগমিশ্রিত চোখে তমালের দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই তার মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠে। তমালের দিকে আবারো কড়া চাহনি দিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করলো।

রোশানঃ হ্যাঁ নাঈম বলো।নতুন কোন আপডেট?

নাঈমঃ বস,আমি বিকেল থেকে নোভা মানে ভাবীর বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু ভাবী একটু আগে বাসায় ফিরলো।তাও একটা ছেলের সাথে,বাইকে করে।

নোভা অন্য একটা ছেলের সাথে বাইকে করে ফিরেছে, এই কথাটা শোনার পর রোশান কপাল কুঁচকে ফেললো।সেই রাতে নোভা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে রোশান ওর বাড়ির সামনে নাঈম ও আরাফাতকে পাহারায় রেখেছে। আজ দুই দিন পর সে খবর পেলো নোভা ফিরেছে।

রোশানঃ ছেলেটার খবর বের করো? কোথায় থাকে, কি করে, নোভার সাথে কিসের পরিচয় সবকিছু।

নাঈমঃ আপনি চিন্তা করেন না। সব পেয়ে যাবেন।

রোশানঃ আপাতত ওর বাসার সামনে আর থাকতে হবে না। তোমরা রাতের মধ্যে ঐ ছেলের খবর নেও।তারপর সকাল হলে আবার নোভাকে ফলো করো।

নাঈমঃ ওকে বস।

রোশান কল কেটে চেয়ারে ধপ করে বসে পরলো।এক হাতে কপালে স্লাইড করতে করতে ভাবতে লাগলো নতুন করে এই ছেলেটা আবার কোথা থেকে আমদানি হলো।তমাল এক ধ্যানে রোশানের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো হয়েছেটা কি।রোশানকে মোবাইলে কথা বলতে শুনলেও অপরপাশে থাকা নাঈমের কোন কথা সে শুনতে পায়নি।তাই ঘটনার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝেনি।

তমালঃ স্যার, কোন সমস্যা?

রোশানঃ এক গ্লাস পানি দেও তো।আর সাথে একটা পেইন কিলার দিও।মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে।

তমাল আর কথা বাড়ালো না।রোশানের মাথাব্যথা ধরেছে।এখন যদি বেশি কথা বলে তাহলে কানের নিচে ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দিতে পারে।তাই চুপচাপ টেবিলের ড্রয়ারে পেইন কিলার খুঁজতে লাগলো।

🦋🦋🦋

ঘড়ির কাটায় রাত ৮ টা বেজে ১২ মিনিট। ফাঁকা রাস্তায় শো শো গতিতে সিলভার কালারের একটা প্রাইভেট কার চলছে। ভেতরে বসে ড্রাইভিং করছে তাজ।মুখটা তার গম্ভীর। আশেপাশে কোন দিকে দৃষ্টি না দিয়ে নিজের মতো করে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে।একসময় গন্তব্যে পৌঁছে গেল সে।”ঠিকানাবিহীন” নামের বাড়ির গেইটে এসে কয়েকবার হর্ণ বাজাতেই দারোয়ান গেইটে খুলে দিলো।গাড়িটা গ্যারেজে পার্ক করে বাসার ভেতরে ঢুকলো তাজ।ডাইনিং টেবিলে মাত্রই খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। খাবার টেবিলে মুরাদ সাহেব, আরিয়ান বসে আছে।জুলেখা বেগম প্লেটে খাবার বাড়ছে।তাজকে দেখে বললেন।

জুলেখাঃ ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে আসিস।

মুরাদঃ এই তো চলে এসেছে আমার বড় পুত্র তাজরান তাজওয়ার।বাবা,ফ্রেশ হয়ে চলে আয়।আমরা ততক্ষণ ওয়েট করছি।

জুলেখাঃ আসার সময় তোদের আদরের বোন মুসকানকে কান ধরে টেনে নিয়ে আসিস।কখন থেকে ডাকছি,কিন্তু কানেই নিচ্ছে না।আসছি, আসছি বলে আধা ঘণ্টা পার করে দিয়েছে।

আরিয়ানঃ তাজরান ভাই, জলদী জলদী আসিস। খুব খিদে পেয়েছে। তুই না আসলে কিন্তু আমি একা একাই খেতে বসে পরবো।

সবার কথার বিনিময়ে তাজ মুচকি হাসলো।তারপর সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে গেল।আজকাল নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতে তার ভালো লাগে না। ফ্রেশ হয়ে মুসকানকে ডেকে খাবারের টেবিলে গিয়ে বসলো তাজ।মুরাদ সাহেব সকালের ও রাতের খাবারটা তার তিন সন্তানের সাথে বসে খেতে ভীষণ পছন্দ করেন।বড় ছেলে তাজরান, ছোট ছেলে আরিয়ান ও একমাত্র মেয়ে মুসকান তার সব।তাজরানের বয়স ৩১ বছর।আরিয়ানের ২৬ আর মুসকানের ২২ বছর।মুসকান অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ছে।

মুরাদঃ খুলনার থেকে আসা ডিলটার কি খবর তাজরান?

মুরাদ সাহেব খেতে খেতে ছেলের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন।তারা একসাথে খেতে বসলেই ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়া অন্য কথা নেই। এতে মাঝে মাঝে বেশ বিরক্ত হয় জুলেখা বেগম ও মুসকান।যেমনটা আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

জুলেখাঃ ছেলেটা সারাদিন পর বাসায় ফিরেছে।কোথায় একটু শান্তিমতো দুটো খেতে দিবে।তা না করে এখানেও ব্যবসার পেঁচাল।

মুরাদঃ ব্যবসায়ীরা যখন সময় পায় তখুনি ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা বলে।তুমি এসব বুঝবে না। তাই আমাদের মাঝখানে কথা বলো না।

তাজঃ আমি ডিলটা ক্যান্সেল করে দিয়েছি বাবা।কাজটা আমার ততটা সুবিধার মনে হয়নি।তাছাড়া আমাদের কিছু লোকের প্রয়োজন আছে।৩য় বিভাগে কয়েকজন ব্যবস্থাপকের প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের হাতে নেই। তাই ক্যান্সেল করাই সমুচিত মনে করেছি।

আরিয়ানঃ আমরা কিছু ব্যবস্থাপকের ব্যবস্থা করতে পারি।বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আগ্রহীদের ডেকে আনি।তাদের CV দেখে, ইন্টারভিউ নিয়ে যোগ্য লোক নিয়োগ করতে পারি।

তাজঃ আমিও সেটাই ভাবছি।এই নিয়ে ম্যানেজারের সাথে আমি কথাও বলে এসেছি।তাকে বলে দিয়েছি বিজ্ঞপ্তি দিতে।আগ্রহীরা CV জমা দিলে আমরা বাছাই করে ইন্টারভিউতে ডাকবো।তারপর এক মাসের একটা কোর্স কমপ্লিট করিয়ে নিয়োগ দিবো।

মুরাদঃ গুড আইডিয়া।

তাজঃ ৩য় বিভাগে ব্যবস্থাপকদের তো বেশি কাজ নেই। ব্যবস্থাপকের কাজের সাথে অন্য কোন পার্ট টাইম জবও করতে পারবে।এক সপ্তাহের বেশি সময় আমি এটার ক্ষেত্রে ব্যয় করবো না। এমনি ফ্রান্স থেকে ক্লায়েন্টরা সামনের মাসেই তাদের প্রোডাক্ট নিতে আসবে।তারা আসার আগেই সবকিছু তৈরি করে রাখতে হবে।যাতে তারা এসে একদিনোও দেরী না করে তাদের পণ্য নিয়ে ফেরত যেতে পারে।

মুরাদঃ তোর যেভাবে ভালো মনে হয় সেভাবে কর।আমি আমার সবকিছু তোদের দুই ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়েছি।তোরা যেভাবে ভালো বুঝবি সেভাবে করবি।

মুসকানঃ বাবা,বড় ভাইয়া,ছোট ভাইয়া। দয়া করে তোমরা তোমাদের এসব বিজনেসি কথা-বার্তা অফ করে চুপচাপ খেয়ে নেও। আমাদেরও একটু খেতে দাও।

জুলেখাঃ আমি কিছু বললেই তো দোষ হয়ে যায়।এবার নিজের বোনের কথায় একটু চুপ কর।তোর বাবার তো খেতে বসলেই যত কথা মনে পরে।

মুরাদ সাহেব চোখ দুটো ছোট ছোট করে জুলেখা বেগমের দিকে তাকালো।জুলেখা বেগম মুখ ঝামটা মেরে খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন। তা দেখে মুসকান ও আরিয়ান মুখ টিপে হেসে উঠলো। আর তাজরান গম্ভীর মুখে কোনদিকে খেয়াল না করে চুপচাপ খেতে লাগলো।

🦋🦋🦋

খাওয়ার পর্ব শেষ করে যে যার রুমে শুয়ে পরছে।নোভা বিছানা করে নাভানকে নিয়ে শুয়ে পরলো।আগামীকাল আবার সকাল সকাল উঠে শো করতে যেতে হবে। ফজরের নামাজের পর তাড়াহুড়ো করে সবার জন্য রান্না করে কোনরকম একটু খেয়ে দৌড়াতে হয় শো করতে।প্রথম প্রথম অনেক হাঁপিয়ে পরতো।কিন্তু এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। ছোট দুটো রুমের এক রুমে তারা মা-ছেলে, আরেক রুমে এরিন, হিমি থাকে।সব কাজ তাদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া।সকালের রান্না নোভা,দুপুরের রান্না এরিন আর রাতের রান্না হিমি করে।এরিন, হিমি মাস্টার্সে পড়ার পাশাপাশি RJ ক্যারিয়ারের সাথে যুক্ত আছে।

গতকাল মোরশেদ ওয়াসিম সাহেব নাভানকে অনেক কিছু কিনে দিয়েছে।যাওয়ার আগে বেশ অনুরোধ করে বলে গেছে কোনদিন সময় পেলে যেনো নোভা তার ছেলেকে নিয়ে তার বাসায় বেড়াতে যায়।নোভাও তাকে বলেছে একদিন যাবে।লোকটাকে নোভার ভালোই লেগেছে।রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে তায়াং-এর বোনের বাসায় গিয়েছে। সেখান থেকে আজ সন্ধ্যায় ফিরেছে।তায়াং বাইকে করে বাসার গেইটে নামিয়ে দিয়েছে।

বিছানার সাথে শরীরটা এলিয়ে দেওয়ার পর চোখটা যেই লেগে এসেছে তখুনি তায়াং-এর কল এলো।এতে বেচারীর বেশ রাগ হলো।বিরক্তি নিয়েই কলটা রিসিভ করলো নোভা।

তায়াংঃ একটা কল ধরতে এতক্ষণ লাগে।কি এমন কাজ করিস রে? আমার কলটা ধরার সময় হয় না।

তায়াং-এর কথায় নোভা আরো রেগে গেল।ঘুম ভাঙ্গিয়ে ইয়ার্কি হচ্ছে। বেশ চড়া গলায় সে বললো,

—- তোর কি নূন্যতম কমোন সেন্স নেই রে পাঠা? একজনের ঘুম ভেঙে ফেলছিস।তাতে তুই নিজে সরি না বলে তাকেই ঝাড়ি মারছিস।তোর সমস্যা কি হ্যাঁ? তোর জন্য কি একটু শান্তিমতো ঘুমাতেও পারবো না।সবেমাত্র চোখ দুটো লেগে এসেছিলো।দিলি তো ঘুমটা ভাঙিয়ে। (রেগে)

তায়াংঃ তুই তো এত তাড়াতাড়ি ঘুমাস না।তাই ভাবলাম তোর সাথে একটু খেজুরে আলাপ পারি।

—- তোর সাথে খেজুরে আলাপ পারার কোন ইচ্ছে বা সময় কোনটা আমার নেই। নে ফোন রাখ।রাত-বিরেতে কল করে সে খেজুরে আলাপ পারবে।এতোই যখন আলাপ পারতে ইচ্ছে করছে তোর গার্লফ্রেন্ড কে কল করে বল।আমি শুনতে পারবো না।

তায়াংঃ এর জন্য বলে উপকারিকে বাঘে খায়।তোকে কত কষ্ট করে আমি উদ্ধার করে আনলাম।দুই দিন নিজের বোনের কাছে তোকে রেখে এলাম।যাতে তোর কোন সমস্যা না হয়।আর তুই আমাকে এসব শুনচ্ছিস।এর জন্য বলে কারো ভালো করতে নেই।

—- দেখ ভাই, প্রচুর ঘুমে ধরছে।সকালে উঠে শো করতে হবে।এমনি তিনদিন অফ দিয়েছি।তার জন্য বেতন কেটে রাখবে।তোর সাথে যদি রাতভরে খেজুরে আলাপ পারি তাহলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। বরং আমার ঘুম নষ্ট হবে।তার চেয়ে বরং তুইও ঘুমা।আর আমিও ঘুমাই।

তায়াংঃ আমার ভাগিনা ঘুমিয়ে গেছে?

—- হুম ঘুমালো একটু আগে।রাতে একটা ভাতও মুখে দেয়নি।তুই আর ঐ মোরশেদ ভাই যে চিপস, জুস হাবিজাবি কিনে দিয়েছিস সেগুলো খেয়েই আছে।একটু আগে ঘুমের মধ্যে একটু সুজি বানিয়ে ফিডারে করে খাইয়ে দিয়েছি।

তায়াংঃ তোর রুমমেটরা কিছু জিজ্ঞেস করেনি? এই কয়েকদিন কোথায় ছিলি, কি করেছিস এসব কিছু?

—- এরিন, হিমির কথা বলছিস।হ্যাঁ, ওরা জিজ্ঞেস করেছিলো।আমি বলেছি খালাতো বোনের বাসায় ছিলাম।হুট করে বোন অসুস্থ হয়ে গেছে তাই কাউকে কিছু বলে যেতে পারিনি।আর সেখানে গিয়ে একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই কারো মোবাইল দিয়ে কলও করতে পারিনি।

তায়াংঃ এতবড় মিথ্যে কথা😳।

—- কিছুই করার নেই। ওদের বললে শুধু শুধু টেনশন করবে,ভয় পাবে। এত ভেজালের কি দরকার।তার থেকে আপাতত জানুক আমি খালাতো বোনের বাসায় ছিলাম সেটাই ভালো।পরে কোন সমস্যায় পরলে বলো দিবো সেই দিনের কাহিনি।

তায়াংঃ তোকে ওরা কিডন্যাপ করেছিল কিভাবে?

— বিকালের শো-টা শেষ করতে প্রায় সন্ধ্যা নেমে যায়।ধরতে গেলে তো সন্ধ্যাই।তো সেদিনও শো শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম।এরিন,হিমির কোচিং ছিলো বলে আমি নাভানকে নিয়ে গিয়েছিলাম।ফেরার পথে রিকশা না পেয়ে আমি ও নাভান হেঁটে হেঁটেই ফিরছিলাম।দশ মিনিটের রাস্তা। আকাশটা বেশ মেঘলা।যার কারণে আশেপাশে মানুষ নেই। হঠাৎ বিশাল এক কালো হাইস এসে আমাদের সামনে থামলো।সেখানে থেকে মুখ ঢাকা কিছু লোক এসে আমাকে জোর করে হাইসে তুললো।নাভানকে একজন কোলে করে আমার পাশে বসলো।তারপর ক্লোরোফোম জাতীয় কিছু একটা স্প্রে করলো।আমার আর কিছু মনে নেই।চোখ খুলতে নিজেকে বিয়ের সাজে পাই।কে বা কারা আমায় তুলে নিয়ে গেছে তা আমি জানি না। কিংবা এর পেছনে কে আছে তাও জানি না।

তায়াংঃ তোর না জানলেও চলবে।কে আছে এর পেছনে তা না হয় আমি বের করবো।অনেক রাত হয়েছে ঘুমা শাঁকচুন্নি। এতো রাত জাগিস কেন?

—- নিজে ঘুম ভাঙিয়ে আবার নিজেই জ্ঞান বিতরণ করছিস। তোকে তো পাঠা…….

আরো কিছু বলার আগেই তায়াং কলটা কেটে দিলো।ওর যা জানার প্রয়োজন তা জেনে গেছে। এখন শুধু এর পেছনে থাকা কালপ্রিটকে ধরতে পারবে।এমনো তো হতে পারে নোভাকে যারা কিডন্যাপ করেছে তার সাথে এনাজকে মেরে ফেলার মানুষটার কোন সংযোগ আছে।সবাই না হয় এনাজের খুনীর খবর না নিয়ে থাকতে পারে।কিন্তু সে কি তার জানের জিগারের খুনীকে এত সহজে ছেড়ে দিবে নাকি।

তায়াং কল কেটে দেওয়ার পর নোভা “তায়াংইয়া পাঠা” বলে একটা চিৎকার দিয়ে বসে পরে।মোবাইলের ফ্লাশ জ্বালিয়ে লাইটের সুইচ ওন করে।সামনে থাকা টেবিল রাখা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে খেয়ে নিলো।তারপর জগ,গ্লাস যথাস্থানে রেখে লাইট অফ করতে নিলে চোখ যায় টেবিলে থাকা একটা ছোট ফটো ফ্রেমের দিকে।হাত বাড়িয়ে ফটো ফ্রেমেটা নিলো।নোভা নাভানকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর নাভান দুই হাতে তার মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।বেশ কিছুদিন আগের তোলা ছবিটা।ওর ভীষণ পছন্দ হয়েছে বলে ফটো ফ্রেমে বাঁধিয়ে এনেছে।ছবিটা যথাস্থানে রেখে নাভানের দিকে তাকালো সে।আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।নাভানের ঘুমন্ত চেহারাটা অসম্ভব মায়াবী দেখাচ্ছে। বেশি কিছু না ভেবে লাইট অফ করে এক হাতে নাভানকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো নোভা।বেশি রাত জাগলে কাল আবার উঠতে দফারফা হয়ে যাবে।সেই চিন্তা করে চোখ দুটো
বুজলো সে।

#চলবে

আমার মনে হচ্ছে, আমি গল্পটা সুন্দর করে সাজাতে ব্যর্থ হচ্ছি।আমার আরো সময় নেওয়া উচিত ছিলো। আগের কোন গল্প আমার কাছে এতটা এলোমেলো লাগেনি।আমি বুঝতে পারছি না আসলে আমার ভুলগুলো কোথায়? দয়া করে আপনারা আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিবেন? তাহলে আমি সঠিকভাবে গল্প সাজানোর চেষ্টা করবো।আপনাদের কাছে যেটা ভুল মনে হবে সেটাই বলবেন।কোন দ্বিধা করবেন না।ভুল ধরিয়ে দিলে আমি কিছু মনে করিনা।বরং খুশি হই।কিন্তু আপনারা তো নেক্সট, নাইস, ওয়াও, ওসাম এগুলো ছাড়া অন্য কোন মন্তব্যই করেন না।আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ আজকের পর্বসহ গত চারটা পর্বে যা যা ভুল ছিলো দয়া করে ধরিয়ে দিবেন।তাহলে আমি সত্যি উপকৃত হবো।নয়তো আমাকে গল্পটা তাড়াহুড়ো করে কিছু পর্বেই শেষ করে দিতে হবে। আমি সত্যি গল্পটা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here