প্রজাপতির_রং🦋 Part_26

0
1138

প্রজাপতির_রং🦋
Part_26
#Writer_NOVA

—–গুড মর্ণিং ঢাকা।গুড মর্ণিং বাংলাদেশ। হ্যালো লিসেনার।দিস ইজ মি RJ নোভানাজ আছি আপনাদের সাথে। আপনারা শুনছেন ঢাকা এফএম 90.4 ।আমার শো ভোরের পাখি নিয়ে আমি কিন্তু হাজির হয়ে গেছি আরো আধা ঘণ্টা আগে। এখন সময় ৭ টা বেজে ৩৫ মিনিট। ঘুম কেমন হলো সবার?সকালে উঠেই তো আবার যার যার কর্মস্থানে ছুটতে হবে।পুরো ঢাকা শহরটা কিছু সময়ের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে পরবে।ব্যস্ত নগরীর ব্যস্ত পরিবেশটা কেমন লাগে আপনাদের? অনেকে হয়তো সকালের ধোঁয়া উঠা চায়ের সাথে এফএম শুনছেন।তা দিনকাল কেমন কাটছে আপনাদের? আপনার মনের যেকোনো কথা আমাকে টেক্সট কিংবা কমেন্ট করে জানতে পারেন।কিভাবে কমেন্ট বা টেক্সট করবেন তা কি পুনরায় বলে দিতে হবে? আচ্ছা আমি বলেই দিচ্ছি। আমাকে টেক্সট করতে হলে আপনার মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে আপনার নাম,লোকেশন ও মনের যেকোনো কথা লিখে পাঠিয়ে দিবেন ২৬৯৩৬৯ এই নাম্বারে। কমেন্ট করতে হলে আমাদের অফিসিয়াল পেইজে যুক্ত হতে হবে।ফেসবুকে এসে টাইপ করতে হবে www.dhakafm90.4.bd । তাহলে আমাদের অফিসিয়াল পেইজ চলে আসবে।সেখানে আমি একটা পোস্ট দিয়েছি।যেটা হলো,ব্যস্ত নগরীর ব্যস্ত পরিবেশ থেকে একটু দূরে সরলে কার কথা মনে পরে? সেই পোস্টের কমেন্ট বক্সে আপনারা কমেন্ট করতে পারবেন।বকবক তো অনেক হলো। চলুন একটা গান শুনে মনটা ফুরফুরে করে আসি।আজকের ওয়েদারটা কিন্তু জোস।কিরকম শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ। এমন ওয়েদারে রবীন্দ্র সংগীত হলে খারাপ হয় না।আপনাদের পছন্দের গানের রিকোয়েস্টও কিন্তু করতে পারেন।আমার প্লে লিষ্টে থাকলে তা অবশ্যই বাজিয়ে দিবো।আর কথা নয় এখন আমরা শুনবো আমার খুব পছন্দের একটা রবীন্দ্র সংগীত। আমারো পরাণো যাহা চায়,তুমি তাই তুমি তাই গো।আমারো পরাণো যাহা চাই। আমার গানের গলা ভীষণ বাজে।এই কাকের কণ্ঠের গান শুনিয়ে আপনাদের অজ্ঞান করতে চাই না।চলুন সেরা শিল্পীদের কণ্ঠে শুনে আসি।

গান বাজিয়ে বড় করে একটা নিশ্বাস ছারলাম।আজকাল কথা বলতে অনেক বিরক্ত লাগে। কিন্তু কিছু করার নেই। আমার চাকরীই এটা।কথা বলতে বলতে মাঝে মাঝে গলা ব্যাথা করে।ব্যাগ থেকে টিফিনবক্স বের করে দেখলাম দুটো স্যান্ডউইচ।আজ সকালের খাবার এরিন তৈরি করেছে। সামনে বিয়ে তাই টুকটাক রান্না শিখে নিচ্ছে। একটা স্যান্ডউইচ তুলে মাত্র একটা কামড় দিয়েছি।তখুনি রেডিও স্টেশনের পিয়ন এসে হাজির।

—- নোভানাজ ম্যাম, আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।

আমিঃ আমার সাথে?? (অবাক হয়ে)

—– হ্যাঁ ম্যাম আপনার সাথে। বললো আপনার লিসেনার।আপনি উনার খুব পছন্দের RJ।

আমিঃ আগে কখনো অফিসে এসেছিলো?

—– না ম্যাম।উনাকে আগে কখনো দেখিনি।

আমিঃ আপনি উনাকে ওয়েটিং রুমে বসতে বলুন আমি এখুনি আসছি।

—-ওকে ম্যাম।

পিয়ন চলে যেতেই ভাবনায় বিভোর হয়ে গেলাম।সাধারণত এই ভোর সকালে কোন লিসেনার আমার সাথে দেখা করতে কখনো আসেনি।তাই একটু অবাক হয়েছি।ভাবনার মধ্যে স্যান্ডউইচে আরেকটা কামড় দিয়ে বাকি অর্ধেকটা রেখে দিলাম।প্লে লিষ্টে পরপর তিনটে গান চালু করে রাখলাম।তারপর টিস্যু দিয়ে হাত,মুখ মুছতে মুছতে ওয়েটিং রুমের দিকে রওনা দিলাম।

রুমের সামনে গিয়ে দরজা সামান্য খুলে আগে উঁকি মারলাম।দেখলাম একটা ছেলে অফিসের ফর্মাল গেটআপে উল্টো দিকে ঘুরে তাকের মধ্যে থাকা বই নেড়েচেড়ে দেখছে। আমি ভালোমতো খেয়াল না করে ভেতরে ঢুকলাম।

আমিঃ আমি RJ নোভানাজ।কিছু বলার ছিলো আপনার?না মানে হঠাৎ করে এত সকালে দেখা করতে চলে এসেছেন তাই আরকি।

🦋🦋🦋

বেশ ইতস্ততায় কথাগুলো বললাম।নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। অচেনা কারোর সাথে হুট করে কথা বলতে পারি না। ছেলেটা পেছনে ঘুরতেই আমি মাথা তুলে চমকে উঠলাম।এতো দেখছি আমার স্বামী মহাশয়।কিন্তু সে এখানে কি করছে ? পিয়ন তো বললো একজন লিসেনার এসেছে।

আমিঃ আপনি!!!!!

তাজঃ আমাকে দেখে খুশি হওনি বউ?

আমিঃ আপনি এখানে কি করছেন?(রাগী কণ্ঠে)

তাজঃ আমিই তো তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি। যাক বাবা অবশেষে আমার ধারণাই সঠিক হলো।

আমিঃ কিসের ধারণা?

তাজঃ বলছি, তার আগে বসো।

আমিঃ আমি বসতে পারবো না। আমার শো আছে।

তাজঃ তাহলে তো আমি বলবোও না।

এই ঘাড়ত্যাড়ার সাথে ত্যাড়ামি করে আমি জীবনেও পরবো না। তাই রেগে ধপ করে চেয়ারে বসে পরলাম।এনাজ ওরফে তাজ আমার পাশের চেয়ারে বসলো।

আমিঃ কি বলবেন জলদী বলুন?

তাজঃ তোমার শো দুটো আমার খুব পছন্দের।বলতে পারো, আমি তোমার শো-এর অনেক বড় লিসেনার আরকি।পিয়ন তোমাকে আমার কথাই বলেছে।যেদিন তোমার শো প্রথম শুনেছিলাম সেদিন আমি মনে মনে বলেছিলাম এটা আমার বউ ছাড়া অন্য কেউ হতেই পারে না। তাই তো বউয়ের শো একটাও মিস করি না।তোমার কণ্ঠ, কথা বলার ভঙ্গি, হাসি সবকিছু আমার চেনা।তোমাকে দেখতে অনেক ইচ্ছে করছিলো।তাই সকাল সকাল চলে এলাম।আমার আজ সকাল করে একটা কাজে যাওয়ার কথা ছিল।সে সব ফেলে তোমার কাছে চলে এসেছি।

আমিঃ ইস,ভালোবাসা একদম উথলায় পরতেছে।
হুহ😏!! আমি এত সহজে গলছি না।যত ভালোবাসাই দেখাও।আগে তোমার শিক্ষা হোক তারপর বাকিসব।(মনে মনে)

মনে মনে কথাগুলো বলেই আমি কাঠ কাঠ গলায় তাজকে বললাম।

আমিঃ আপনার কথা শেষ হলে আমি আসতে পারি।

তাজঃ আশ্চর্য, যাওয়ার জন্য এমন শুরু করেছো কেন?তুমি তো তোমার……

তাজ পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি ওর মুখ চেপে ধরলাম।তাজ বিস্মিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আবার দরজার দিকে তাকালাম।আমার মনে হলো কেউ সেখান থেকে আড়ালে সরে গেলো।তাজ সেই সুযোগে আমার হাতে একের পর এক চুমু দিতে লাগলো।আমি হাত সরিয়ে টিস্যু দিয়ে জোরে জোরে ঘষতে লাগলাম।

আমিঃ আমার হাতটাকে নোংরা করে দিলো। আমার থেকে দূরে সরুন।

তাজ উত্তর না দিয়ে মিটমিট করে হাসছে।আমি বাই বলে চেয়ার থেকে উঠে গেলাম।তাজ পেছন থেকে হাত ধরে ফেললো।আমার হাত টেনে নিয়ে উল্টো পিঠে তার ঠোঁট ছোঁয়ালো।আমি হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলাম।

আমিঃ হাত ছাড়ুন।কেউ দেখে ফেললে খারাপ ভাববে।আমার চরিত্রে দাগ লাগাতে এক মিনিটও দেরী করবে না। আপনাদের ছেলেদের তো সাত খুন মাফ।এই সমাজে যত দোষ সবতো মেয়েদের।

তাজঃ আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।

আমিঃ অফিসে বাকি কথা বলেন।এখন আপাতত আমাকে ছাড়েন।কেউ দেখে ফেললে কেলেংকারী হয়ে যাবে।একটু বোঝার চেষ্টা করুন।

আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে ছটফট করতে লাগলাম।তাজ শয়তানি হাসি দিয়ে বললো।

তাজঃ ছাড়তে পারি। তবে এক শর্তে।

আমিঃ আবার কিসের শর্ত?

তাজঃ তুমি নিজ ইচ্ছায় আমার ঠোঁটে একটা চুমু দিবে, তো তোমাকে ছাড়বো।

🦋🦋🦋

এক হাত দিয়ে ঠোঁট দেখিয়ে একগালে শয়তানি হাসি দিলো।তার এরকম উদ্ভট কথাবার্তা এবং লাগাম ছাড়া কান্ড-কারখানা দেখে আমার পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে।

আমিঃ এ্যাহ, শখ কত।ভাগেন এখান থেকে। আপনার সাথে কোন কথা নেই আমার।আমি আপনাকে চিনি না। তাই এসব আবাদার আমার কাছে করবেন না।

তাজ হাতটা শক্ত করে ধরে হেচকা টানে আমাকে তার সামনে নিয়ে এলো।আমি তার হাত থেকে ছোটার জন্য ছটফট করছি।কিন্তু এই জলহস্তীর মতো শরীরের মানুষের হাত থেকে নিজের শুকনো হাড্ডিসমেত হাতটাকে কিছুতেই ছাড়াতে পারছি না।

তাজঃ কি বললে তুমি আমাকে চিনো না?আমার সাথে কথা নেই তোমার?

আমিঃ যা বললাম তাতো শুনতেই পেয়েছেন।

তাজ কিছুটা রেগে গেলেও শয়তানি হাসি দিয়ে আমাকে বললো।

তাজঃ তুমি আমার ঠোঁটে চুমু না খেলে আমি কিছুতেই ছারবো না।এত দূর থেকে বউকে দেখতে এলাম।এর বিনিময়ে কিছু না নিয়ে চলে যাবো?তাতো হয় না।

আমিঃ বদমাশ বেডা।লাজ-শরম সব কি সকালের নাস্তার সাথে খেয়ে ফেলছেন নাকি?হাত ছাড়ুন।আমি কিন্তু চিৎকার করে সবাইকে ডাকবো।

তাজঃ ডাকো, ডাকো।তুমি যদি তোমার স্বামীকে গণধোলাই খাওয়াতে চাও তাহলে ডাকতেই পারো।আমি সেচ্ছায় সবার মার হজম করে নিবো।

এই বেডা আমাকে এখন কিছুতেই ছাড়বে না।কি আর করার এর শর্ত মেনে নিতেই হবে।আগত্যা আমি তার শর্তে রাজী হয়ে গেলাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে বিশ্ব জয় করা হাসি দিলো।

আমিঃ আমি চুমু খেতে পারি।তবে আমারও একটা শর্ত আছে?

তাজঃ তোমার আবার কিসের শর্ত🤨?(ভ্রু উঁচু করে)

আমিঃ আপনি চোখ বন্ধ না করলে আমি আপনাকে কিসি দিবো না।(লাজুক মুখে)

তাজঃ আমাকে বোকা পেয়েছো।তোমাকে কি আমি চিনি না।আমি চোখ বন্ধ করলেই তুমি আমাকে উল্টো পাল্টা কিছু করে এখান থেকে পালাবে।

আমিঃ একটুও না। আমার শর্তে রাজী থাকলে বলেন নয়তো আমি গেলাম।

আমি মনে মনে শয়তানি হাসি দিচ্ছি।পরাণের সোয়ামী,একটু পরেই টের পাইবা তোমার কি অবস্থা করি।তাজ কিছু সময় ভেবে বললো।

তাজঃ আচ্ছা, আমি রাজী।

আমিঃ তাহলে চোখ বন্ধ করুন।

তাজঃ ওকে করলাম।

ফাঁকের ওপর আমি ওর থেকে আমার হাত দুটো ছুটিয়ে নিলাম।তারপর তাজ চোখ বন্ধ করে তার ঠোঁট দুটো আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। কিন্তু আমার মনে তো শয়তানি বুদ্ধি খিচুড়ি পাকাচ্ছে।আমি ওর সামনে একটু হেলে ওর ঠোঁট দুটো, দুই আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে জোরে টান দিয়ে উল্টো দিকে হাসতে হাসতে দৌড় দিলাম।শখ কত,এতদিন খবর ছিলো না আর এখন আসছে।ওরে ভালুপাসা রে।একদম ঠিক করেছি আমি।এটা তার শাস্তি।

তাজঃ আহ্হহহ।ঠোঁট দুটো আমার ছিঁড়ে ফেললো। ভালো হলো না বাটারফ্লাই। এর শাস্তি তোমায় পেতে হবে।তৈরি থেকো তুমি।

আমিঃ কচু করবেন।

দরজার বাইরে থেকে মুখ বের করে হাতের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইচ্ছে মতো ভেংচি কেটে দৌড়ালাম শো করতে।এখানে বেশিখন থাকলে আমার কপালে শনি আছে। বেটাকে আচ্ছা করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। শখ কত,রোমান্স করতে এসেছিলো সে।ওরে আমার পরাণের সোয়ামীরে।এখন ঠোঁট ব্যাথায় মরো।আমি হাসতে হাসতে শো রুমে চলে এলাম।ভাবতেই খুশি লাগছে।কি বোকা বানিয়ে এলাম😝।আবার এসো এরকম উল্টো পাল্টা আবদার নিয়ে। সেবার অবস্থা এবারের থেকে আরো বেশি খারাপ হবে।মনটা খুশি খুশি লাগছে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here