আন্তঃনগরের_ভালবাসা লেখকঃ আবির খান পর্বঃ ০৮

0
1015

#আন্তঃনগরের_ভালবাসা
লেখকঃ আবির খান
পর্বঃ ০৮
হঠাৎই জান্নাত গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখে আবির ফুটপাতে বসে আছে একা। জায়গাটা নির্জন। মানে এলাকার ভিতরের বড়ো গলিগুলো যেমন হয় ঠিক তেমন। মাঝে মাঝে কিছু প্রাইভেট গাড়ি কিংবা রিকশা চলছে। জান্নাত মুহূর্তেই ওর ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে। গাড়ি থামলে ও নেমে দ্রুত আবিরের কাছে যায়। আর অবাক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

~ একি! আপনি এখানে বসে আছেন যে? কি হয়েছে? ইন্টারভিউ দিতে যান নি?

আবির জান্নাতের কথা শুনে আস্তে আস্তে ওর দিকে তাকায়। জান্নাত দেখে আবিরের চোখ ভরা পানি। মানে আবির কাঁদছে! একটা পুরুষ মানুষ ঠিক তখনই কাঁদে যখন সে প্রচন্ড কষ্ট পায়। জান্নাত কোন কিছু না ভেবে আবিরের বাম পাশে গিয়ে ওকে ধরে উঠিয়ে জোর করেই গাড়িতে বসিয়ে সোজা একটা জায়গায় চলে যায়। প্রায় আধা ঘণ্টার মতো লাগে ওদের পৌঁছাতে। জান্নাত আবিরকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভারকে বলে,

~ আঙ্কেল আপনি একটু ওইদিক থেকে ঘুরে আসেন৷ আর আম্মু কল দিলে একটু ম্যানেজ করে নিয়েন।
— ঠিক আছে আপা।

ড্রাইভার গেলে জান্নাত আমাকে জিজ্ঞেস করে,

~ এখন বলুন কি হয়েছে আপনার? এভাবে রাস্তায় বসে ছিলেন কেন? আজ না আপনার ইন্টারভিউ ছিল? বাসার সবাই তো আপনার জন্য চিন্তা করছে। আর আপনি…

জান্নাতের মুখে ইন্টারভিউ কথাটা শুনে মনটা আরও খারাপ হয়ে যায়। মাথাটা নিচু হয়ে যায়। জান্নাত আস্তে করে আবার জিজ্ঞেস করে,

~ এটাও হয় নি?

আমি মাথা নাড়িয়ে না বলি। ও চুপ হয়ে যায়। আমরা দুজন গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। জান্নাত দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,

~ আচ্ছা আপনার রেজাল্ট তো অনেক ভালো। তাহলে ওরা আপনাকে কেন এভাবে তাড়িয়ে দিচ্ছে?

আর চুপ থাকতে পারলাম না। কান্নাসিক্ত কণ্ঠে একটু আগে ঘটে যাওয়া আমার সাথে ঘটনাটা ওকে খুলে বললাম।

ইন্টারভিউ রুমে,
আমি সালাম দিয়ে পারমিশন নিয়ে ইন্টারভিউ রুমে ঢুকি। সেখানে মোট চারজন ছিলেন। আমাকে বসতে বলে আমার ফাইলটি চাইলেন। আমি বাম হাত দিয়ে ফাইলটি দেওয়া মাত্রই একজন জিজ্ঞেস করে উঠলেন,

— আপনার ডান হাতে কোন সমস্যা?
— জি স্যার। আমার ডান হাতটি প্যারালাইজড।
— ওহ! সো স্যাড। তা হাতটি প্যারালাইজড কিভাবে হলো? এক্সিডেন্ট করেছিলেন?
— না স্যার। এটা জন্মগত।
— ওহ!
— আপনার রেজাল্ট তো অনেক ভালো। এই হাত নিয়ে এত ভালো রেজাল্ট কিভাবে করলেন? নিশ্চিতই কোন খারাপ পথ অবলম্বন করে?
— দুঃখিত স্যার, আমি আমার জীবনে কোন দিন অসৎপথ অবলম্বন করিনি। আমার ডান হাত অচল হলেও আমার বাম হাতটি আল্লাহর ইচ্ছায় ভালো আছে৷ আমি এটা দিয়েই এতদূর এসেছি।
— ওহ! তাহলে এবার আমরা আমাদের প্রশ্ন করি, তাহলেই সব বুঝা যাবে৷
— ওকে স্যার।

এরপর তারা চারজন মিলে আমাকে বিভিন্ন হার্ড প্রশ্ন করেন৷ যার মধ্যে ৯০% এর উত্তর আমি দিতে পারি। তাদের বিশ্বাস হয় যে, হ্যাঁ আমার সার্টিফিকেটগুলো আসলেই সত্য। এরপর তাদের মাঝে একজন বলে উঠলেন,

— মি. আবির সাহেব আপনি আমাদের কোম্পানির জন্য উপযুক্ত বলে আমরা মনে করছি। কংগ্রেস।

আমি মুহূর্তেই অসম্ভব খুশি হয়ে যাই। বিশ্বাসই হচ্ছিলো না৷ আমি এত বড়ো নামকরা একটা কোম্পানিতে শেষমেশ চাকরি পেয়েছি। মনে মনে আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করছিলাম। কারণ এই চাকরিটা না হলে বাসায় কি মুখ নিয়ে যেতাম। আমি স্যারদেরও ধন্যবাদ দি। আর ঠিক তার পর পরই একজন স্যার বলে উঠেন,

— তাহলে আবির সাহেব এবার আসল কথায় আসি।
— জি স্যার?
— দেখুন আসলে আমরা নরমালি ১০ করে নি। কিন্তু আপনার হাতের এই সমস্যার জন্য আপনাকে ২৫ দিতে হবে৷ যদি দিতে পারেন তাহলে আপনার এই চাকরি পারমানেন্ট। মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন।
— স্যার ২৫ মানে?
— আরে বুঝেন নি? ২৫ লক্ষ টাকা দিতে হবে এই চাকরি পেতে হলে।

ওনাদের কথা শুনে মনে হলে আমার মাথার উপর বিশাল বড়ো বাজ ভেঙে পড়লো। তারা হাসতে হাসতে এও বলছেন,

— আমরা আপনার মতো কাউকে চাকরি দিনা সহজে৷ কিন্তু আপনার মেধা ভালো। তাই আমরা আপনাকে নিতে চাই। আপনি ২৫ দিলেই আপনাকে নিয়ে নিব৷ আপনার ডান হাতটা যদি ভালো থাকতো তাহলে ১০/১৫ দিলেই হতো। হাহা।

আমি আর কিছু বললাম না। তাদের কাছ থেকে আমার ফাইলটা নিয়ে সালাম দিয়ে চলে আসলাম। জীবনে ভাবতে পারিনি মেধার চেয়ে টাকার মূল্য বেশি হবে৷ আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিবে কেউ। সত্যিই দুনিয়াটা কোথায় যে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না। আমি হেরে গিয়েছি। চরম ভাবে হেরে গিয়েছি। কিভাবে এখন বাবা-মা আর বোনের সামনে মুখ দেখাবো বলেন? যেখানে টাকার বিনিময়ে চাকরি নিতে হয়!

জান্নাত সবটা শুনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। ও কোন ভাষা পাচ্ছে না বলার। আমিও নিজের স্বপ্ন আর ইচ্ছাকে হাওয়ায় উড়ে যেতে দেখে কষ্টে শেষ হয়ে যাচ্ছি। আমার কি কোন যোগ্যতা নেই? এতটা নিরুপায় আমি? জান্নাত হঠাৎ করে গাড়ি থেকে ওর পানির ফ্লাক্সটা আমাকে দিয়ে বলে,

~ এটা খান। খেয়ে একটু শান্ত হন৷

আমারও গলা শুকিয়ে আসছিল। তাই আর না করিনি। ওর কাছ থেকে পানির ফ্লাক্সটা নিয়ে পানি খেয়ে নেই। তারপর জান্নাতকে ফ্লাক্সটা ফিরিয়ে দিলে ও রেখে আমাকে নিয়ে বসার জন্য যে জায়গাটা আছে সেখানে গিয়ে বসে। বুঝতে পারছি না জান্নাত কি করতে চাচ্ছে। আমি আস্তে করে বলি,

— আপনি শুধু শুধু আমার জন্য সময় নষ্ট করছেন। বাসায় ফিরে যান। আপনার বাবা-মা চিন্তা করবে।
~ করবে না৷ কেন আমার সাথে থাকতে আপনার ভালো লাগছে না বুঝি?
— আমার জীবনে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ সেটা এখন আর বুঝিনা। জীবনের গাড়ি যেখানে নিয়ে যাচ্ছে সেখানেই যাচ্ছি।
~ উফফ! আপনার এই ভারী ভারী কথা আমার মাথায় ঢুকে না৷ একটু ভাবতে দিন না আমায়৷

আমি মনে মনে ভাবছি,

— মেয়েটা আমাকে নিয়ে কত্তো চিন্তা করছে। কিন্তু লাভ হবে কি? আমি এখন কি করবো? ব্যবসা করতে গেলেও অনেক টাকা লাগবে৷ এত টাকা কই পাবো? হ্যাঁ বাবার কাছে চাইলে তিনি অবশ্যই দিবেন। কিন্তু সেটা তো আর আমার নিজ যোগ্যতায় হলো না। সেই ঘুরে ফিরে বাবার হোটেলেই খাওয়া হলো। তারপরও যদি আমি টাকা নি এবং ব্যবসায় লস করি তখন কি করবো? আমার ইচ্ছা ছিল চাকরি করে অনেক টাকা জমাবো। আর তারপর…

হঠাৎই জান্নাত আইডিয়া আইডিয়া বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো। আমি চমকে উঠি। ও বেশ খুশি হয়ে বলে,

~ আচ্ছা আপনি তো অনেক ভালো স্টুডেন্ট এবং রেজাল্টও ভালো। আর আপনি তো বিবিএ নিয়ে পড়েছেন তাই না?
— হুম।
~ আমিও বিবিএ তে পড়ছি। প্রথম বর্ষে। আপনি আমাদের সব ম্যাথ পারেন না?
— হুম পারি। ওগুলা পানির মতো আমার কাছে।
~ গ্রেট। তাহলে তো হয়েই গেল।
— কি হলো? কিছুই ত বুঝতে পারছি না।
~ আমাদের একটা গার্লস গ্রুপ আছে। সেখানে আমাদের ক্লাসের কয়েকজন মেয়ে আছে। উমমম, পনেরো জনের মতো হবে৷ বলতে গেলে তারা সবাই ধনী পরিবারেরই। আপনি আমাদের সবাইকে ব্যাচ আঁকারে পড়াবেন। আমি ওদের ব্যবস্থা করে নিয়ে আসবো। আপনি শুধু আমাদের পড়িয়ে মাসে উমমম একজন যদি ৫ করেও দেয় আমরা মোট ১৫ জন আছি। তাহলে ৫ ১৫ জানি কত হয়…
— ৭৫
~ হ্যাঁ ৭৫ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন। তার উপর আপনি নাকি ঢাবির স্টুডেন্ট। ওরা জানলে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। ঢাবির স্টুডেন্ট এর কি দাম জানেন? কি এবার খুশি তো? পারবেন না আমাদের পড়াতে? আমাদের একটা ভালো স্যার লাগতো ম্যাথ গুলা বুঝানোর জন্য। আপনিই আমাদের স্যার হয়ে যান। ভেবে দেখেন, চাকরির চেয়ে এটা কিন্তু অনেক ভালো। আপনার আসল মেধাকে কাজে লাগাতে পারবেন। বিনিময়ে তার সঠিক মূল্যও পাবেন।
— আপনি কি সত্যি বলছেন? আপনার এতগুলো ফ্রেন্ড আমার কাছে পড়বে?
~ ১০০ বার পড়বে। জাস্ট আপনি একবার রাজি হন বাকিটা আমার দায়িত্ব।
— কিন্তু জায়গা পাবো কই? এত গুলো মানুষের জন্য অনেক জায়গা লাগবে।
~ ওহহো…তাও তো ঠিক। তাহলে জায়গার অভাবে আমরা আপনার কাছে পড়তে পারবো না?

আমি জান্নাতের অসহায় মুখটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলি,

— একটা জায়গা আছে।

জান্নাত ভীষণ খুশি হয়ে বলে,

~ কোথায়? কোথায়?
— আমাদের বাসার নিচ তলাটা খালি। কিন্তু ভাবছি বাবা কি পারমিশন দিবে? আর যদি দেয়ও তাহলে টেবিল, চেয়ার, বোর্ড এগুলা কিনার টাকা পাবো কই? কম হলেও ৫০ হাজার টাকা তো লাগবেই।
~ আঙ্কেলের কাছ থেকে নেন। পরে যখন প্রথম বেতনটা পাবেন সেখান থেকে ওনার টাকাটা ওনাকে দিয়ে দিয়েন। ছেলে হিসেবে এটুকু আপনি পান। আঙ্কেল জীবনেও না করবে না। আমি চিনি ওনাকে।
— কিন্তু…
~ প্লিজ প্লিজ কোন কিন্তু না৷ মরিয়ম কিন্তু আমাকে বলছে আপনি অনেক ভালো পড়ান। ওকে নাকি ম্যাথ করতে হেল্প করেছেন৷ ও কিন্তু আমাকে সব বলছে। প্লিজ আমাদের পড়ান। প্লিজ প্লিজ…

জান্নাতের আকুতি শুনে আর না করি নি৷ তবে ওকে বললাম,

— শুনেন, যদি বাবা রাজি হয়, আমাকে পারমিশন দেয় তবেই আমি আপনাদের পড়াবো।
~ আঙ্কেল আর আণ্টি আপনার জন্য যে পাগল, আপনার মনে হয় তারা আপনাকে না করবে? অসম্ভব এটা। তাও আপনি কথা বইলেন। আচ্ছা আপনার ফোনটা দেন তো।
~ কেন? কি করবেন?
— আরে দেন না।

জান্নাত আমার ফোনটা নিয়ে কি যেন করে বলল,

~ এই যে আমার নাম্বার। আমি কিন্তু সহজে কাউকে দিনা। তাও আবার নিজ থেকে। আপনাকেই দিলাম। আঙ্কেল রাজি হলে আমাকে কল দিয়া জানাবেন। তাহলে আমি আমার গ্রুপের মেয়েদের সাথে কথা বলবো। ঠিক আছে?

আমি জান্নাতের কাছ থেকে ফোন নিতে নিতে বললাম,

— আজ আপনিও আমার জন্য অনেক কিছু করলেন। সত্যিই অনেক ভালো আপনি। প্রথমে ভেবেছিলাম আপনি অনেক ডেঞ্জারাস। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আপনি আমার মরিয়ম বোনটার মতোই অনেক ভালো।
~ ওয়েট ওয়েট, আপনি কি আমাকে আপনার ছোট বোনের মতো ভাবছেন নাকি?
— হ্যাঁ। তো আর কি ভাববো?

জান্নাত মুহূর্তেই রেগে গিয়ে বলে,

~ কিইইই! আমি আপনার বোনের মতো? মাইর চিনেন? মেরে আলু না না ডিম ভর্তা বানিয়ে ফেলবো। আমি আপনার কোন বোন না৷ ভুলেও আমাকে বোন ভাববেন না৷ তবে বাকিদের ভাবলে সমস্যা নাই। আমাকে একদম না৷
— তাহলে কি ভাববো?
~ আপাতত আপনার ছাত্রী ভাবেন। পরেরটা পরে দেখা যাবে।
— আচ্ছা।
~ গুড বয়। এবার বাসায় চলেন। সবাই আপনাকে নিয়ে চিন্তা করছে। বাসায় গিয়ে সবাইকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বইলেন।
— আচ্ছা।
~ আসুন আমি নামিয়ে দিচ্ছি। আঙ্কেল..

জান্নাত ওর ড্রাইভারকে ডাক দিয়ে মরিয়মদের বাসায় যেতে বলে। তারপর ও আমাকে নামিয়ে দিয়ে ওর বাসায় চলে যায়। আমি বাসায় ঢুকলে বাবা-মা বোন সবাইকে খুব চিন্তিত ভাবে দেখতে পাই। তারা আমার মন মরা মুখ দেখেই হয়তো বুঝে গিয়েছেন। তাই আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। মা আমাকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলল। একসাথে খাবে সবাই তাই। আমিও ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসলাম। আজ মা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। দিতে দিতে বলল,

~ বাবা নিরাশ হস না। তুই পারবি। আমার বিশ্বাস তুই পারবি। ওই লোকেরা তোর মেধাকে দাম দিল না। একদিন তারাই তোর পিছনে পিছনে ঘুরবে দেখিস।
— আবির তুই চাইলে আমার কোম্পানিতে জব করতে পারিস। আমি কি এতই পর রে বাবা?
— না না বাবা তা না। আসলে আমার মাথায় অন্য একটা প্ল্যান ছিল। সেখানে অবশ্যই আপনার সাহায্য আর পারমিশন লাগবে। খাওয়া শেষ হলে বিকেলে বলবো নি আমি। আপনি মা আর মরিয়ম তুইও থাকিস।
~ ঠিক আছে ভাইয়া। তুমি চিন্তা করো না, আমরা সবসময় তোমার পাশে আছি।

এরপর খাওয়া দাওয়া শেষ হলে আমি আমার রুমে গিয়ে চুপচাপ বসে অনেকক্ষণ ভাবি। যে আসলেই কাজটা করা ঠিক হবে কি না। ভেবে দেখলাম বছরে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা আমি সেইভ করতে পারবো যদি আমি ওদের পড়ানো শুরু করি। তাহলে আগামী চার বছর পর আমি আমার আসল ইচ্ছাটা পূরণ করবে পারবো। দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে গেল। বাবা মা বোন আমার চেয়ে বেশি চিন্তিত। তারা ভেবেই পাচ্ছে না আমি কি বলবো। আছরের নামাজ পড়ে এসে একসাথে সবাইকে নিয়ে হল রুমে বসি। তারপর আজকে যা যা হয়েছে এবং জান্নাত যে বুদ্ধিটা দিয়েছে সেটাও বলি। বাবা সব শুনে বলেন,

— তোকে আমি আগেই বলেছি আবির, আমার যা কিছু আছে সব তোর আর মরিয়মের। আমি আজই আমার পরিচিত লোককে বলে দিচ্ছি, কাল সকালের ভিতর তোর যা যা লাগে চলে আসবে৷ আজ থেকে নিচের ফ্ল্যাটটা সম্পূর্ণ তোর। তুই সেখানে যা ভালো লাগে কর। কেউ কিছু বলবে না। তুই কিন্তু অনেক বড়ো একটা কাজ করছিস বাবা। যা আমরাও পারবো না। সেটা হলো শিক্ষা দান। এটা কিন্তু সবাই পারে না। শিক্ষকের সম্মান অনেক বেশি। আমার সম্পূর্ণ সাপোর্ট তোর সাথে আছে৷
— কিন্তু বাবা আমার একটা কথা আছে।
— কি বল।
— প্লিজ রাগ করবেন না। আপনার যা খরচ হবে আমাকে বলবেন। আমি বেতন পেলে সেটা দিয়ে দিব৷ আমি শুধু একটু সাহায্য চাই। আর কিছু না।

মা রেগে উঠলেও বাবা তাকে থামিয়ে দিয়ে হাসতে হাসতে বলেন,

— আচ্ছা ঠিক আছে। আমি রাজি।

আমি অনেক খুশি হই। মা রাগ দেখিয়ে বাবাকে বলেন,

— তুমি আমার ছেলের কাছ থেকে টাকা নিবে?
— ও তুমি বুঝবে না মরিয়মের মা। আমাদের পুরুষের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যা আমরাই বুঝি শুধু। ও টাকা দিলে তোমার কাছে রেখে দিও আমি নিব না৷
~ ঠিক আছে।
— আপনারা সত্যিই অনেক ভালো।
~ সবচেয়ে ভালো আমার বেস্ট ফ্রেন্ডটা। ওর মাথায় কত্তো বুদ্ধি বাবা দেখছো? ভাইয়ার বিয়ে দিলে ওর সাথেই দিবা।

মরিয়মের কথা শুনে বাবা-মা হেসে দেয়। আর আমি পুরো বোকা হয়ে যাই। মরিয়ম এটা বলল কি! যাই হোক আমি ওসব কথা আমলে না নিয়ে সন্ধ্যার দিকে নামাজ পড়ে এসে জান্নাতকে কল দি। কিছুক্ষণ রিং হতেই…

চলবে…?

সবার ভালো সাড়া চাই তাহলে খুব তাড়াতাড়ি পরবর্তী পর্ব দেওয়া হবে। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। আগের এবং পরবর্তী পর্বের লিংক কমেন্ট দেওয়া হবে। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here