প্রজাপতির_রং🦋 Part_03

0
1819

প্রজাপতির_রং🦋
Part_03
#Writer_NOVA

—–আরে মিসেস এনাজ আহমেদ যে!!কেমন আছেন?

তায়াং ভাইয়ার সাথে একটা রেস্টুরেন্টে বসে ছিলাম।হঠাৎ এক লোকের কথায় কিছুটা চমকে সেদিকে তাকালাম।৩৫ বছরের এক লোক আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে আমি চিনি বলে আমার মনে হচ্ছে না।আমি তায়াং ভাইয়ার দিকে তাকালাম।তার মুখেও একি রিয়েকশন।

আমিঃ আমি আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।

—- আমি মোরশেদ ওয়াসিম। এনাজ ভাইয়ের আন্ডারে কাজ করতাম।আমার কথা নিশ্চয়ই ভাইয়ের মুখে শুনেছেন।আসলে আপনার সাথে আমার কখনও দেখা হয়নি। তাই আপনি আমায় চিনবেন না।কিন্তু এনাজ ভাইয়ের কাছে আপনার অনেক ছবি ছিলো।তাই আপনাকে আমি চিনি।এনাজ ভাই যদিও আমার স্যার।কিন্তু আমি ভাই করেই বলতাম।কাজের ক্ষেত্রে স্যার,কাজের বাইরে ভাই।তা কেমন আছেন ভাবী?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?

মোরশেদ ভাই আমার কথার উত্তর না দিয়ে নাভানকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো।

মোরশেদঃ এটা কি আমাদের এনাজ ভাইয়ের বাচ্চা?

নাভান ওর মামার কোলে চুপচাপ বসে বসে চিপস খাচ্ছিলো। আমি তার কথায় ছোট করে উত্তর দিলাম।

আমিঃ জ্বি।

মোরশেদঃ মাশাআল্লাহ, পুরো এনাজ ভাইয়ের মতো দেখতে হয়েছে। মুখের আদল,ভ্রু,নাক সবকিছু অবিকল বাবার মতো।নাম কি রেখেছেন?

আমিঃ জ্বি, এনান আহমেদ। ডাকনাম নাভান।

মোরশেদঃ মাশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ।বাবার নামের সাথে মিল রেখে নামটা খুব সুন্দর হয়েছে। তা আমি কি বলবো? নাভান নাকি এনান?

আমিঃ আপনার যা ইচ্ছা।

মোরশেদ ভাই এগিয়ে গিয়ে তায়াং ভাইয়ার কোল থেকে নাভানকে কোলে নিলো।মুগ্ধ চোখে সে নাভানের দিকে তাকিয়ে আছে। তার মুখ খুশিতে উপচে পরছে।কিন্তু তার এত খুশির কারণটা আমি খুঁজে পেলাম না।

মোরশেদঃ ভাবী, উনাকে তো চিনলাম না?

আমিঃ আমার খালাতো ভাই তায়াং। উনাকে তো আপনার চেনার কথা।নাভানের আব্বুর জানে জিগার ফ্রেন্ড। হাইস্কুল, কলেজ,ভার্সিটি সব একসাথে কমপ্লিট করেছে।

মোরশেদঃ আসলে হয়েছে কি ভাবী, আমি এনাজ ভাইয়ের আন্ডারে মাত্র দুই মাস কাজ করতে পেরেছি। তারপর তো ভাই আমাদেরকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন।(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে)থাক সেসব কথা। আমি কিন্তু আপনার ছেলেকে এনান বলেই ডাকবো।এনাজ ভাইয়ের ছেলে এনান।

আমি বিনিময়ে মুচকি হাসলাম।নাভান আমাদের তিনজনের দিকে পালাক্রমে তাকাচ্ছে।চিপসের প্যাকেটটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো।আমি সেটা নিয়ে টেবিলে রাখলাম। নাভান সবার সাথে খুব সহজে মিশে যেতে পারে। একদম বাবার মতো।চেহারা, গায়ের রং, স্বভাব সব ওর বাবার পেয়েছে। শুধু চোখ দুটো আমার মতো।মোরশেদ ভাইয়ের কোর্টের বোতাম নিয়ে মুখে দিচ্ছে।

আমিঃ ছি, নাভান বাবা।চাচ্চুর বোতাম মুখে দেয় না।তুমি না গুড বয়। চাচ্চু তো তোমায় পঁচা ছেলে বলবে।মুখের থেকে বের করো।(ধমকের সুরে)

মোরশেদঃ আহ্ ভাবী ধমকাচ্ছেন কেন? ও কি এসব বুঝে? থাক করুক।

তায়াংঃ তোর তো সাহস কম না, আমার ভাগিনাকে ধমক দিস।(চোখ রাঙিয়ে)

আমিঃ তোর জন্য কি আমি ছেলেকে শাসন করতে পারি।

তায়াংঃ পারবিও না।আমার সামনে ওকে একটা ছোট করে ধমকও দিতে পারবি না।

মোরশেদঃ ভাবী, একটা কথা বলি। যদি কিছু মনে না করেন। (মুখটা কুচোমুচো করে)

আমিঃ জ্বি বলুন।

মোরশেদঃ ওকে নিয়ে আমি একটু বাইরে যাই।বেশি দুরে নয় এই সামনেই থাকবো।

আমিঃ আমি জানি আপনি কেন যেতে চাইছেন। ওকে নিয়ে এখন দোকানে যাবেন।তারপর এত্তগুলা চিপস, চকলেট কিনে দিবেন।তার কোন দরকার নেই ভাই। একটু আগে ওর মামা পুরো এক দোকান তুলে এনেছে। দেখুন, কতকিছু কিনে পুরো টেবিল ভরে ফেলেছে।

মোরশেদঃ প্লিজ, ভাবী মানা করেন না।আবার কবে না কবে দেখা হয়।ততদিনে যদি মারা যায়।তাহলে আফসোস থাকবে।এত্তো কিউট একটা বাচ্চাকে যদি আমি কিছু কিনে না দেই তাহলে আমার খারাপ লাগবে।তাছাড়া ও আমাদের এনাজ ভাইয়ের শেষ স্মৃতি। ওকে কিছু দিতে না পারলে সত্যি আমার সারাদিন খুব বাজে যাবে।

আমিঃ দিলেন তো মন ঘুরিয়ে।আপনাদের ভাতিজা, ভাগিনাকে আপনারা দিবেন।আমি আর কি বলবো?এখন কিছু বললেও যে আপনি মানবেন না তাও আমি জানি।আর যদি কিনে দিতে মানা করি তাহলে ভাববেন আপনাদের ভাই বেঁচে নেই বলে আমি নিতে দিচ্ছি না।সবদিক থেকে জ্বালা।

মোরশেদঃ ধন্যবাদ ভাবী।আমি এই রাস্তার পাশে স্টলেই আছি।

মোরশেদ ভাই খুশিমনে নাভানকে নিয়ে বের হয়ে গেলো।আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে তায়াং ভাইয়ার দিকে তাকালাম।তায়াং ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো ছোট ছোট করে বললো।

তায়াংঃ বিবাহিত ছেমরি পোলাডারে নিয়া দৌড়ায়ছিস কিভাবে?আমারে কইতি হিরোর মতো এন্ট্রি মাইরা তোরে নিয়ে আসতাম। পোলাডার কিছু হয় নাই তো?

আমিঃ হো তুই হিরোর মতো গিয়া বিলাইয়ের মতো মাইর খাইয়া আসতি।

তায়াংঃ কে আমাকে মারবে? কারো সাহস আছে।(ভাব নিয়ে)

আমিঃ হইছে, তোর ডায়লগ তোর কাছেই রাখ।

তায়াংঃ ধূর, এতো সাজ-গোজ করে কি লাভ হইলো?কি একটা হিরোর মতো লুক নিছালাম।কিন্তু ঐ খানেও কোন মেয়ে পেলাম না। এখানেও কোন মেয়ে দেখি না।শুধু শুধু সময় নষ্ট।

আমিঃ আহারে 🤣।

তায়াংঃ খুদায় ইঁদুরে পেটের ভেতরে ড্রাম পিটাইতাছে।কিন্তু এই রেস্টুরেন্টের ওয়াটারগুলি কি সব মরছে?কখন অর্ডার দিছি এখনো আসে না।

আমিঃ ওয়েটার তো বললো একটু দেরী হবে।তখন তো খুব বললি অপেক্ষা করতে পারবি। কিন্তু এখন কান্না করিস কেন?

তায়াংঃ তুই জীবনে আমার পক্ষে কথা বললি না।এখন চুপ থাক, আর কথা কইস না।

আমি মুখ টিপে হাসতে লাগলাম।তায়াং ভাইয়া আর আমি প্রায় ৭ বছরের ছোট-বড়। কিন্তু তার আমার বন্ডিং দেখে যে কেউ ভাববে আমরা পিঠাপিঠি ভাই-বোন। সম্পর্কে তায়াং ভাইয়া আমার আপন খালাতো ভাই। কিন্তু ওর আচার-ব্যবহার, কাজে যে কারো মনে হবে আমার আপন ভাই। ও আমার সাথে সবসময় লেগে থাকবে।কিন্তু আমি কোন বিপদে পরলে পাগল হয়ে যাবে।তায়াং ভাইয়া আর এনাজ জানে জিগার দোস্ত। কেউ কাউকে ছাড়া কখনো কোন কাজ করতো না। সবকিছুতে দুজনের দুজনকে লাগলো।কিন্তু এনাজের মৃত্যুর পর তায়াং ভাইয়া অনেক বদলে গেছে। কিন্তু আমাকে বুঝতে দেয়নি।বরং নিজের মনকে শক্ত করে আমাকে সামলিয়েছে।

তায়াংঃ আমার জন্য আজ তোর এই অবস্থা। আমি যদি তোকে এনাজের সাথে বিয়েতে তোকে জোর না করতাম।তাহলে আজ তোকে এই দিন দেখতে হতো না।

আমিঃ কি উল্টো পাল্টা বকছিস? তুই জোর কবে করলি? আমাদের এরেঞ্জ ম্যারেজ।আমার ভাগ্যটা আল্লাহ এভাবে সাজিয়েছে। তুই নিজেকে অপরাধী ভাবিস না ভাইয়া।বরং অপরাধ আমার।আমি যদি সেদিন জেদ না করতাম।তাহলে সবকিছু হারাতাম না।

তায়াং ভাইয়া কোন কথা বললো না। মাথা নিচু করে বসে রইলো।আমিও বাইরের দিকে দৃষ্টি দিলাম।সকালে আলাকান্দি গ্রাম থেকে রওনা দিয়ে তিন ঘন্টা জার্নি করে অবশেষে ঢাকা এসে পৌঁছিয়েছি।আধা ঘন্টা ধরে রেস্টুরেন্টে বসে আছি। মাঝে তায়াং স্টল থেকে নাভানের জন্য একগাদা খাবার কিনে এনেছে। গতরাতের অভিজ্ঞতা আমি জীবনেও ভুলবো না।মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলাম।আল্লাহ আমার জন্য চাচীর মন নরম করে দিয়েছিলো।তাইতো আমি সারা রাত নিশ্চিন্তে তাদের বাড়িতে কাটাতে পেরেছি।আসার সময় জড়িয়ে ধরে বলেছিলো সাবধানে থাকতে।তার ব্যবহারে আমার শ্রদ্ধাবোধ আর ভালোবাসা দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছে। আজ বাসায় যাবো না। তায়াং ভাইয়া বলছে কোথায় জানি নিয়ে যাবে।আজ বাসায় গেলে যারা আমায় আটকে রেখেছিলো তারা আবার আসতে পারে।এমনটা ধারণা তায়াং ভাইয়ার।ওর কথার ওপর আমি কোন কথা বলি না।কারণ এই একটা মানুষ আমাকে নিস্বার্থভাবে সব বিপদ থেকে রক্ষা করেছে। ওর ঋণ আমি সারাজীবন ওর গোলাম হয়ে থাকলেও শোধ হবে না। সারা পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করে আমাকে ও আমার ছেলেকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ওর কথা অমান্য করলে যে আমি নিজেই বৈঈমান হয়ে যাই।

🦋🦋🦋

আকাশটা আজ শুভ্র মেঘে সেজেছে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই থোকা থোকা সাদা মেঘের ভেলা।আজ যে আকাশের দিকে তাকাবে সেই প্রেমে পরে যাবে।মন মাতানো এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।দুপুর গড়িয়ে বিকেল নেমেছে বহু আগে।চারিদিকে মিষ্টি রোদের আলো।চারিদিকের পরিবেশরা যদিও স্তব্ধ হয়ে আছে। তবুও খারাপ লাগছে না।

নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে দোতলা একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি।সামনে ছোট একটা বাগান।গেইটের সাথে দেয়ালে নেমপ্লেটে লেখা আছে এক অদ্ভুত নাম “ঠিকানাবিহীন”।নামটা দেখে যে কেউ অবাক হয়ে যাবে।এরকম নাম কেন? বাড়ির মালিক মুরাদ হোসেন শখের বশে নামটা রেখেছেন।

বারান্দায় বেতের চেয়ারে আরাম করে বসে পত্রিকা পড়ছেন মুরাদ সাহেব। আজ দুপুরের দিকে অফিস থেকে ফিরেছেন।বড় ছেলে ব্যবসা সামলানোর দরুন তার অবসর মিলেছে। তারপরও মাঝে মাঝে গুরুত্বপূর্ণ মিটিংগুলো তাকে সামলাতে হয়।নিয়ম করে প্রতিদিন অফিসে যান তিনি।দুই ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সুখের সংসার।ছোট একটা বিজনেস চালান।হাতে ছোট ট্রে-তে দুই কাপ চা নিয়ে প্রবেশ করলেন জুলেখা বেগম। তার স্বামী পত্রিকা পড়তে পড়তে চা খেতে ভীষণ পছন্দ করেন।পত্রিকা হাতে নিলে তার চা লাগবেই। তাই জুলেখা বেগম আজ জলদী করে নিয়ে আসেছেন।নয়তো কখন চেচিয়ে বাসা এক করে ফেলে কে জানে?

মুরাদঃ জুলেখা, আমার……

চা বলে চিৎকার করার আগেই জুলেখা বেগম তার স্বামীর দিকে চায়ের কাপটা বাড়িয়ে দিলেন।

মুরাদঃ আজ কোন দিক দিয়ে সূর্য উঠলো? চা বলে চেঁচানোর আগে চা এসে হাজির।অন্যদিন তো সারা বাড়ি এক করে ফেললেও তোমার খবর থাকে না।

জুলেখাঃ ছেলে-মেয়ে তিনটার বিয়ের বয়স হয়ে গেছে। এখনো কি আমার নাম ধরে ডাকবে? ওদের বিয়ের পর যখন নাতিনাতকুর আসবে তখন তো ওরাও তোনার মতো নাম ধরেই ডাকবে।

মুরাদঃ ডাকলে ডাকুক, সমস্যা কি? নাতিনের ঘরের ছেলে মেয়ে হয়ে গেলেও তোমাকে আমি নাম ধরেই ডাকবো।এই নাম ধরে ডাকার মধ্যে আমি যেই প্রশান্তি পাই তা তোমাকে বোঝাতে পারবো না জুলেখা। আমার ভীষণ ভালো লাগে তোমাকে নাম ধরে ডাকতে।মনে হয় সেই আঠারো বছরের কিশোরী মেয়েটা।যাকে আমি বউ করে ঘরে তুলেছিলাম।

জুলেখাঃ হইছে আর বলতে হইবো না।খালি পাম মারেন। নেন কাপ ধরেন।চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

জুলেখা বেগম লজ্জায় আঁচলে মুখ ঢাকলেন।মাঝে মাঝে তার স্বামীর যে কি হয় তা তিনিও বুঝে উঠতে পারেন না।তবে এতটুকু বুঝতে পারেন তার স্বামীর মন ভালো।যেদিন মন ভালো থাকে সেদিন স্বামীর সাথে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা খোশগল্পে মেতে থাকেন।আঠারো বছর বয়সে এই মানুষটার বউ হয়ে এসেছিলেন।আর এখন ৫০ এর উর্ধ্বে বয়স।কিন্তু তাদের ভালোবাসা যেন ছিটেফোঁটাও কমেনি।হঠাৎ গাড়ির আওয়াজ পেয়ে মুরাদ সাহেব ও জুলেখা বেগম দুজনেই গ্রিল দিয়ে নিচের দিকে তাকালেন।

জুলেখাঃ এখন আবার কে এলো?

মুরাদঃ তোমার গুণধর ছোট ছেলে ছাড়া আর কে হবে? যেদিন থেকে ওর বড় ভাই অফিসে জয়েন করলো সেদিন থেকে ছোট জন যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। ওকেও তো বুঝতে হবে। ছেলেটা কি একা সব সামলাতে পারে। বছর তো এখনো হলো না,ছেলেটা কত বড় এক্সিডেন্ট থেকে বেঁচে ফিরলো।কোথায় সেই বড় ভাইকে হেল্প করবে।তা না করে সুযোগ পেলেই ফাঁকিবাজি।

জুলেখাঃ আহ কি শুরু করলেন? থামেন তো।আমি নিচে গিয়ে দেখছি কে আসলো?

মুরাদঃ মেয়ে কোথায়?

জুলেখাঃ ঘরে ঘুমুচ্ছে।

মুরাদঃ নামাজ পরতে ডাকোনি? আছরের আজান দিয়েছে সেই কোন বেলা? ঘুম থেকে উঠিয়ে নামাজ পরতে বলো।যদি ছোট ছেলে আসে তাহলে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও।ওর সাথে আমার কথা আছে।

জুলেখাঃ আচ্ছা।

জুলেখা বেগম তার চায়ের কাপটা নিয়ে স্বামীকে পাশ কাটিয়ে বারান্দা থেকে বেরিয়ে গেলো। বাড়িতে ঢুকেই গাড়িটা গ্যারেজে রেখে সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলো একটা ২৬ বছরের ছেলে।নাম আরিয়ান আজওয়্যার। মুরাদ সাহেবের ছোট ছেলে।আরিয়ান হাতে গাড়ির চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে শিস বাজিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো।তখনি পেছন থেকে তার মায়ের ডাক শুনলো।

জুলেখাঃ আরিয়ান!!!

আরিয়ান থেমে গেল।হাসি মুখে মায়ের দিকে ঘুরলো।

আরিয়ানঃ কিছু বলবে আম্মু?

জুলেখাঃ আজ এতো তাড়াতাড়ি ফিরলি যে? আর তোর বড় ভাই কোথায়? ও কি আসেনি?

আরিয়ান মাথা চুলকিয়ে আপরাধীর ভঙ্গিতে মুখটাকে অসহায় করে বললো।

আরিয়ানঃ আসলে আম্মু হয়েছে কি? আসলে না, মানে বলছিলাম কি?

জুলেখাঃ আসলে, না মানে, হয়েছে কি এসব না বলে বল তোর ভাই কোথায়? আর তুই এই সময় বাড়িতে কেন?

আরিয়ানঃ ভাই তো অফিসে। আমার ভালো লাগছিলো না তাই আমি চলে এসেছি।

চোখ বন্ধ করে একদমে কথাটা বলে হাফ ছারলো আরিয়ান।কিন্তু পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলো তার মা এখনো তার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। যার মানে হলো, “তোকে দেখে দিব্যি সুস্থ মনে হচ্ছে। কিন্তু তুই কেন বললি তোর ভালো লাগছিলো না। ” আরিয়ান দাঁতগুলো সব বের করে বেআক্কল মার্কা এক হাসি দিয়ে তার মাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করলো।একসময় সফলও হলো।জুলেখা বেগম ছেলের কান্ডে ফিক করে হেসে উঠলেন।এমনি তিনি তার তিন সন্তানের এক সন্তানের সাথেও বেশি সময় রাগ করে থাকতে পারেন না।মাঝে মাঝে কঠিন খোলস ধারণ করলেও তার ছেলে-মেয়ে তা নানাকিছু করে ভেঙে ফেলে। যেমন এখন আরিয়ান করলো।

জুলেখাঃ উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।তোর বাবা ডেকেছে। ফ্রেশ হয়ে বাবার কাছে যাবি।আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি। বাবার কথা শুনে এসে খেয়ে নিবি।

আরিয়ান সিঁড়ি থেকে নেমে জুলেখা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন।

আরিয়ানঃ আমার লক্ষ্মী আম্মু।এই জন্যই তো তোমাকে আমি এতো ভালোবাসি।

জুলেখাঃ আমাকে পটিয়ে লাভ নেই। আমি তোর বাবার কাছে কিছু বলতে পারবো না। আমি তো ছেড়ে দিয়েছি।কিন্তু তোর বাবা আজ নির্ঘাত বকা দেবে।ছেলেটা কে কেন একা একা এভাবে ছেড়ে আসিস বল তো।ও তো একটা মানুষ। তাছাড়া কত বড় একটা এক্সিডেন্ট থেকে বেঁচে ফিরেছে তাতো তুই নিজের চোখেই সব দেখেছিস।তাহলে এরকম কেন করিস?

আরিয়ানঃ আমি তো ভাইকে বলেই আসলাম।ভাই চলে আসার অনুমতি দিয়েছে বলেই তো আমি এসেছি। নইলে কি আসতাম নাকি।

জুলেখাঃ ও তো বলবেই। তোরও তো বিষয়টা বুঝতে হবে।

আরিয়ান তার কথা বলেগাল ফুলিয়ে রাখলো।জুলেখা বেগম গাল দুটো টেনে দিয়ে কপালে আলতো করে চুমু খেলেন।

জুলেখাঃ এত বড় হয়েছিস তাও বাচ্চাদের মতো নাক কুঁচকানো, গাল ফুলানো কমাস নি।

আরিয়ানঃ আমি কমাবোও না।আমি তো সারাজীবন তোমাদের কাছে ছোট থাকবো।তাই আমি এই বাচ্চামোগুলো করবো।

জুলেখাঃ হুম আমার ২৬ বছরের বাচ্চা। যা ওপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।

আরিয়ান আবারো তার মায়ের দুই গালে টাইট করে চুমু খেয়ে উপরে উঠে গেলো।জুলেখা বেগম মুচকি হেসে মাথা নাড়াতে নাড়াতে বললেন।

জুলেখাঃ পাগল ছেলে।

জুলেখা বেগম কিচেনে চলে গেলেন। আরিয়ান ফ্রেশ হয়ে একটা টাউজার ও টি-শার্ট পরে নিলো।তারপর পা বাড়ালো বাবার রুমের দিকে। আজ যে সে তার বাবার কাছে আচ্ছা করে বকা খাবে তার কোনো সন্দেহ নেই।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here