প্রজাপতির_রং🦋 Part_17

0
1223

প্রজাপতির_রং🦋
Part_17
#Writer_NOVA

চোখ বন্ধ করে দুই হাতে জামা খামচে ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমি।তাজ আমার মুখের দিকে ঝুঁকে আছে। ওর উষ্ণ নিঃশ্বাস আমার চোখ-মুখে উপচে পরছে।এখন আমার আর তাজের দূরত্ব মাত্র কয়েক ইঞ্চির।সারা শরীর কাঁপছে আমার।তাজের কোন শব্দ না পেয়ে পিটপিট করে ওর দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম সে আমার দিকে ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার চোখ দুটোতে আমি অন্যরকম একটা তৃষ্ণা দেখতে পাচ্ছি। বহুদিন পর আমাদের প্রিয় জিনিসটা যখন আমরা কাছে পাই তখন আমাদের চোখ, মুখে যেই উচ্ছ্বাসটা থাকে তাও খুঁজে পাচ্ছি তাজের মুখে। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় তাকে বলে উঠলাম।

আমিঃ একটু সরুন আমি তো নিশ্বাস নিতে পারছি না। আমার নিশ্বাস নেওয়ার অক্সিজেন তো আপনার বিশাল জলহস্তীর মতো দেহ দিয়ে আটকে রেখেছেন।

তাতেও তার হুশ নেই। সেই মাদকতার চোখে আমার কাঁপা কাঁপা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে। তার হাব-ভাব আমার ভালো ঠেকছে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে আছে আমার।আর সে দুই হাত দেয়ালের দুই দিক দিয়ে আমাকে আটকে রেখেছে। চাইলেও আমি এখন কোথাও যেতে পারবো না। ইচ্ছে তো করছে তার পায়ে টাইট করে, একটা পা দিয়ে মাড়িয়ে এখান থেকে ছুটে পালাতে।

আমিঃ মিস্টার তাজ🥶!!!!
তাজঃ হু।
আমিঃ আমাকে কেন ডেকেছিলেন?
তাজঃ হু।
আমিঃ আমি আপনাকে কিছু বলছি।
তাজঃ হু।
আমিঃ কি হু হু শুরু করছেন?(রেগে)
তাজঃ হু।

উফ, অসহ্যকর।আমি এতো কথা বলে যাচ্ছি আর উনি আমার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে হু হু করেই যাচ্ছে। এখন প্রচন্ড রাগ উঠছে। তখন ভেতরে ঢুকতেই এক ঝাটকায় আমাকে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে সেই যে দাঁড়া করিয়ে রেখেছে এই অব্দি আমি দাঁড়ানো। তার চোখের সামনে আমি হাত নাড়ালাম। এতে তার কোন ভাবান্তর দেখা গেল না।সে আমার দিকে আরেকটু ঝুঁকে গেলো।তার ঠোঁট দুটো আমার ঠোঁটের দিকে বাড়িয়ে দিতেই আমি এক হাত দিয়ে আমার ঠোঁট আটকে,আরেক হাতে তাকে ধাক্কা দিলাম।এতক্ষণে মহাশয়ের টনক নরলো।দেয়ালের থেকে দুই হাত সরিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে গেলো।

আমিঃ লুচি,পরোটা বেডা।অফিসের কেবিনে ডেকে এনে লুচ্চামি শুরু করছে।আমার এনাজ না হলে এতক্ষণে গাল দুটো লাল করে ফেলতাম।সামান্য কমোন সেন্স নেই। এসব করতে আমাকে এখানে ডেকে আনছে।একদম চোখ তুলে লুচুগিরি ছুটায় ফালামু। এতদিন খবর ছিলো না।এখন বউয়ের ওপর ভালোবাসা উথলে উঠছে।(বিরবির করে)

বিরবির করে আপন মনে তাজকে বকছিলাম।সামনের দিকে তাকাতেই চুপ হয়ে গেলাম।কারণ তাজ আমার দিকে বাজপাখির নজরে তাকিয়ে আছে। আমি ভয় পেয়ে দমে গেলাম।কিন্তু সে আমাকে এক হাতে টেনে আবারো দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।

আমিঃ আশ্চর্য, সমস্যা কি আপনার? কি শুরু করছেন? কথা নেই বার্তা নেই হুটহাট করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরছেন।ছাড়ুন আমায়।(বিরক্তির সাথে)

তাজঃ আমি কিছু বলেছিলাম সেদিন।(শান্ত কণ্ঠে)

আমিঃ আপনি আমাকে ছাড়ুন।আমার লাগছে।

আমি নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করা শুরু করলাম।কিন্তু এই জলহস্তীরটার থেকে নিজেকে একচুলও সরাতে পারলাম না।আমার দুই হাত শক্ত করে সে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আছে।আমি জানি এটা এনাজ।কিন্তু আমার কাছে কোন শক্ত প্রমাণ নেই। তাই এর থেকে আমার এখন দূরে থাকাই ভালো।যদি আমার কোন ভুল হয়।এই ছেলে এনাজ না হয়।তাহলে তো আমি পরবো বিপদে। তবে আমি চোখ বন্ধ করে বলতে পারি এটা আমার এনাজ।

আমিঃ আপনি কি অফিসে আসা প্রত্যেক নতুন কর্মচারীর সাথে এমনি করেন মিস্টার তাজ?

তাজঃ হোয়াট????

আমিঃ বয়রা নাকি।কানে কি কিছু শুনতে পান না?

তাজঃ আমি সেদিন সুন্দর করে একটা অনুরোধ করেছিলাম।কিন্তু তুমি সেটা রাখোনি কেন? ওহ আমি তো ভুলেই গেছিলাম।তুমি আবার ভালো কথা শোনার মানুষ নয়।তোমাকে আমার স্টাইলে বুঝাতে হবে।

আমিঃ আপনি কিসের অনুরোধের কথা বলছেন? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

তাজঃ তুমি আবার কেন সাদা রঙে নিজেকে সাজিয়েছো? আমি সেদিন বলেছিলাম এই রঙ পরবে না।কান দিয়ে কি ঢুকেনি সেটা?

আমিঃ আপনার কথা কেন শুনবো? কে হোন আপনি আমার? আমার স্বামী মারা গেছে তাই আমি সবসময় সাদা রঙের কাপড় পরে থাকি।আপনি আমাকে মানা করার কে?

তাকে বাজিয়ে দেখার জন্য উপরোক্ত কথাগুলো বললাম।কিন্তু তার রিয়েকশনে আমি মনে মনে বেশ খুশি হলাম।কারণ সে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠছে।চোখ মুখ শক্ত করে আমাকে বললো।

তাজঃ আমি কে? ওহ আচ্ছা। এখন আমায় খুলে বলতে হবে আমি কে?

🦋🦋🦋

রাগে কথাগুলো বলে আমার মুখের দিকে ঝুঁকে পরলো।আমি চোখ বন্ধ করে মুখ ঘুরিয়ে ফেললাম।উনি আমার কানের সামনে মুখ এনে লো ভয়েজে বললো।

তাজঃ নিজের মানুষটার কাছে কখনও নিজের পরিচয় দিতে হয় না।কারণ সে আমায় ঠিক চিনে নিবে।যে মানুষটা পুরোটাই আমার,তাকে আমি হাজার বাহানায় ফাকি দিলেও কাজ হবে না।সে আমাকে ঠিক ধরে ফেলবে।যে আমায় চিনে ফেলেছে তার কাছে নিজের পরিচয় উল্লেখ করা নিত্যান্ত বোকামি ছাড়া কি অন্য কিছু মিসেস আহমেদ??

তার নিশ্বাস আমার কানে থেকে থেকে বারি খাচ্ছে। আমার অস্বস্তি লাগছে।তার কণ্ঠস্বর, তার বলার ভঙ্গি,সেই পুরোনো ভালো লাগার অনুভূতি আড়াই বছর পর এসে আমার কাছে ধরা দিয়েছে। আমার শ্বাস-প্রশ্বাস ভারী হচ্ছে। সে কথাগুলো শেষ করে আমার কানে হালকা করে একটা ফুঁ দিলো।তাতে আমি কেঁপে উঠলাম।আমার মুখ দিয়ে টু শব্দও বের হচ্ছে না। তাকে যে আমি নিজের থেকে সরাবো সেই শক্তিটুকুও আমি খুঁজে পাচ্ছি না।

তাজঃ এরপরের থেকে সাদা রঙে নিজেকে রাঙিয়ে আসলে সারা শরীরে রং ঢেলে দিবো মিসেস এনাজ আহমেদ।সেটা প্রজাপতির রং ও হতে পারে অথবা দেয়ালের রং হতে পারে। মনে রেখো কথাটা।

প্রজাপতির রং বলতে উনি যে ভালোবাসার রং-এর কথা বলেছে সেটা আমি সিউর।কিন্তু এর মতিগতি ভালো ঠেকছে না আমার কাছে।আমি বুঝেও না বোঝার ভান করে বললাম।

আমিঃ মানে??

তাজঃ মানেটা তুমি খুব ভালো করেই জানো বাটারফ্লাই। যে না বুঝে তাকে বোঝানো যায়।কিন্তু যে বুঝেও না বোঝার ভান করে তাকে তো বোঝানো যায় না। তাহলে তোমাকে কি করে বুঝাই বলো?

বাটারফ্লাই ডাকটা শুনে সারা শরীরে ঠান্ডা একটা শিহরণ বয়ে গেলো। কত বছর পর সেই চিরচেনা ডাকটা শুনলাম।তাও আবার নিজের প্রাণপ্রিয় স্বামীর মুখে। আমি মুখ খুলে কিছু বলতে নিলেই আমার ঠোঁট তার এক আঙুল দিয়ে আটকে বললো।

তাজঃ হিশশশশশশশ!!! আর একটা কথাও নয়।আমাকে মন ভরে তোমাকে একটু দেখতে দেও।সবসময় শুধু আমাকে জ্বালানোর ধান্দা তোমার।

বলেন তো এগুলো কি সহ্য হয়? নিজের কেবিনে ডেকে সে রোমান্টিক কথাবার্তা শুরু করে দিছে।সে এখন হেব্বি রোমান্সের মুডে আছে। কিন্তু কেউ দেখে ফেললে তো কেলেংকারী হয়ে যাবে।সেদিকেও খেয়াল নেই তার।আমি ধাক্কিয়েও তাকে সরাতেও পারছি না।

কানের কাছ থেকে মুখ এনে গালে টুপ করে একটা চুমু বসিয়ে দিলো।আমি ৪৪০ ভোল্টেজে শর্কড খেলাম।বিস্ফোরিত চোখে তার দিকে তাকাতেই সে এক চোখ মারলো।তারপর কোন ভুমিকা না করেই আমার ওড়না টেনে নিয়ে নিজের মুখের ঘামগুলো মুছে নিলো।আমি এর কান্ডে ফ্রিজের মতো জমে গেলাম।মুখ মোছা শেষ হতেই সেই ঘামের জায়গা দিয়ে আমার মুখ মুছে দিলো।আমার মুখ তো মুছলো না তার ঘামগুলো আমার মুখে মাখলো।ওয়াক ছিঃ🤢। এর এসব শয়তাইন্না অভ্যাস এখনো যায়নি।আমার ওড়নাটাই নষ্ট। এটাকে আজই ইচ্ছে মতো ধুতে হবে।কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে আমাকে রেখেই মুখ টিপে হাসতে হাসতে হনহন করে কেবিনের বাইরে চলে গেল। আমার এখন নিজের কাছে কিরকম খিটখিটে লাগছে।ওড়নাটা নাকের সামনে নিতেই ঘামের গন্ধ নাকে এসে বারি খেলো।খাচ্চোর বেডা।আগের সেই বদঅভ্যেসটা এখনো আছে। আগেও কোথা থেকে এলে ঘামে ভেজা শার্ট বা টি-শার্ট খুলেই আমার মুখে ছুড়ে মারতো।কখনো বা আমার ওড়নায় মুখের ঘাম মুছে সেই জায়গায় দিয়ে আমার মুখ মুছে দিতো।এর অন্যতম বদঅভ্যেস ছিলো এটা।আজ আবার সেই কাজটা করলো।আজকে আমার সারাদিন খিটমিট লাগবে।

আমিঃ ওয়াক🤮।আমার দিনটাই নষ্ট করে দিলো।এসব খাচরামি করার জন্য আমাকে কেবিনে ডাকছে।আমি এই কানে ধরছি ভুলেও এর সামনে আর আসবো না। কিসের জন্য ডাকছে তার খবর নেই। মাঝখান থেকে সে রোমান্স করে নিলো।আমি তোকে ছাড়বো না খাচ্চোর বেডা।ইস, আমার ওড়নাটাই নষ্ট।

ওড়নার অন্য সাইড দিয়ে মুখ ডলতে ডলতে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলাম। বিরবির করে বকতে বকতে নিজের কাজের স্থানে চললাম।সারাদিনে ভুলেও এর সামনে আসিনি।নিজের মতো কাজ করে নিয়েছি।যথাসম্ভব এর থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছি নিজেকে।যদি আবার কোন বদমাশি করে সেই ভয়ে।যে কাজগুলো বুঝিনি সেগুলো আদরের থেকে বুঝে নিয়েছি।কিন্তু ভুলেও তাজের কেবিনমুখী হয়নি।যেচে ওর কাছে যাওয়ার কোন মানে হয় না।দিনটা আমার ভালোই কাটলো।কাজে ব্যস্ত থাকায় অনেক দ্রুতই চলে গেল।বিকালের শো শেষ করে আর তায়াং ভাইয়ার সাথে দেখা করিনি।শরীরে কুলচ্ছিলো না।তাই তায়াং ভাইয়াকে আসতে মানা করে দিলাম।বাসায় গিয়ে কোনরকম ফ্রেশ হয়ে নাভানকে খাইয়ে নামাজ পরে নিলাম।তারপর বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজত্বে কখন যে হারিয়ে গেছি নিজেও জানি না। নাভানের বাকি কাজ আজ এরিন ও হিমি সামলাবে।আমি আর পারবো না। বহু ধকল গেছে শরীরের ওপর।আজ আমার সবকিছু থেকে ছুটি।

কিন্তু পরেরদিন ঘটলো এক বিপত্তি …………

#চলবে

কেউ আবার বলেন না আমার গল্প পড়ে মানুষ অফিসের বসের সাথে এসব করে বেড়াবে।কিংবা কোন বস তার কর্মচারীর সাথে এমন করে না।তাজই যেহেতু এনাজ।সেহেতু এনাজ তার বউয়ের সাথে এমনটা করতেই পারে, এটা স্বাভাবিক।এই বিষয়টা আবার আপনারা অন্য চোখে দেখেন না।

মন-মানসিকতা একটুও ভালো নেই। যার কারণে গল্প দেওয়ার কোন ইচ্ছে বা আগ্রহ ছিলো না। যার কারণে আজকে অনেক ছোট হয়ে গেছে।তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।তারপরেও এখানে ১৩০০+ শব্দ আছে। কেউ প্লিজ মন খারাপ করেন না।আমি এর জন্য ক্ষমাপার্থী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here