#প্রজাপতির_রং🦋
Part_30
#Writer_NOVA
——আআআআপপপপনি!!!!
সামনে থাকা মানুষটা দেখে আমি আৎকে উঠলাম। আমি তো কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি পুরো কাহিনীর পেছনে সে থাকতে পারে। তাকে তো ভালোর খেতাবি দিয়ে বসে ছিলাম।আমার চোখ, মুখে বিস্ময় দেখে সে কিছুটা এগিয়ে এসে বললো।
—– মনে হচ্ছে ভাবী আমাকে দেখে অনেক বেশি অবাক হয়েছেন।হওয়ারি কথা।আমরা সবসময় যা দেখি আর যা ভাবি তা কিন্তু ঠিক হয় না।
আমিঃ মোরশেদ ওয়াসিম ভাই!!!! আপনি ছিলেন সবকিছুর মূলে?
মোরশেদঃ জ্বি ভাবী।
আমিঃ অনেক বড় ভুল করে ফেলেছেন।এর মাশুল খুব বাজেভাবে দিতে হবে আপনাদের। একটু অপেক্ষা করুন।আমার ভাই ও স্বামীকে আসতে দিন।
সাইমনঃ তোমার ভাই,স্বামী ও প্রেমিক তিনজনই আসবে।তাদের সবাইকে আলাদা করে ইনভাইট করা হয়েছে। তুমি একটু অপেক্ষা করো।তাহলে সবার মৃত্যুটা নিজের চোখেই দেখবে।
আমিঃ রোশানের সাথে কি শত্রুতা আপনাদের? ওকে এসবে টানছেন কেন?
মোরশেদঃ বেশি ভালো সাজতে চেয়েছে সে।দুইবার কল করে হুমকি-ধমকি দিয়েও আমি ঐ এমপি সাহেবকে তায়াং-কে মারার জন্য রাজী করাতে পারিনি।ও যদি তায়াং-কে মারতে রাজী হতো তাহলে কি আমাকে এতকিছু করতে হতো?তাই ব্যাটাকে জানে না মারলেও এমন ডোজ দিবো, যাতে সারাজীবনের জন্য কোমায় চলে যায়।
আমিঃ দেখা যাক কি হয়?কে হারে কে জিতে?
আমি মোরশেদ ভাইয়ের কথা শুনে বেশ কয়েকবার হাই তুলে কথাগুলো বললাম।যার মানে তাদের কোন কথা আমি গুরুত্ব দেই নি।এতে সাইমন বেশ চটে উঠলো।হুংকার ছেড়ে তার ভাইকে বললো।
সাইমনঃ বড় ভাইয়া, দেখছো কি সাহস?একটুও ভয় পাচ্ছে না।ওকে তো আমরা এখন মেরে গুম করেও ফেলতে পারি। কিন্তু তার কোন ভাবান্তর নেই। আর তুমি আসার আগে কি বলেছে জানো?এনাজ নাকি তুষার ভাইয়াকে মেরে অনেক ভালো কাজ করছে। তুমি না আসলে এতক্ষণে আমি ওকে গলা টিপে মেরে ফেলতাম।
আমিঃ আমার হাত দুটো যদি খোলা থাকতো না,তাহলে সবার প্রথমে তোকে কষিয়ে দুটো চড় মারতাম।তোর ভাই দুটো মেয়ের জীবন শেষ করে দিয়েছে আর তুই বলিস কোন অপরাধ করে নি তোর ভাই ।আমার স্বামী তোর ভাইকে মেরে একদম ঠিক কাজ করেছে। ঐরকম অমানুষের পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই।
মোরশেদঃ মুখের বুলি দেখছি ভালোই ফুটছে।অবশ্য ফুটবেই তো।স্বামী সিবিআই অফিসার মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছে,গোয়েন্দা ভাই আছে। এমপি প্রেমিক আছে। তাদের পাওয়ার তো আপনার মধ্যে মজুদ আছে তাই না।
সাইমনঃ ওকে তো আমি আজ মেরেই ফেলবো।ও আবারো তুষার ভাইয়াকে নিয়ে কথা বলছে।
সাইমন তেড়ে আমার কাছে আসতে নিলেই মোরশেদ ওয়াসিম তাকে আটকে ফেললো।
মোরশেদঃ ঠান্ডা হো ভাই। মাথা গরম করে কোন কাজের সমাধান হয় না।
আমিঃ কি রে অমানুষ, থামলি কেন? আমাকে মারবি তুই? আয় পারলে মার।আমিও দেখি তোর কত সাহস আছে। তোদের মরার সময় হয়েছে তো তাই এতো উড়ছিস।একটু অপেক্ষা কর।তোদের উপরে পাঠানোর জন্য লোক আসছে তো।
রাগে আমার সারা শরীর কাঁপছে। এদের ওপর প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছে। মানুষ কতটা নিচ মন-মানসিকতার হতে পারে তা এদের না দেখে বুঝতেই পারতাম না।মোরশেদ ওয়াসিম রেগে আমার সামনে এসে নিজের মুখে আঙ্গুল দিয়ে বললো।
মোরশেদঃ চুপ, একদম চুপ।ভদ্রলোকের মতো ব্যবহার করছি বলে পার পেয়ে গেছিস।গলায় পারা দিয়ে আওয়াজ বন্ধ করে দিবো।খুব সাহস বেড়েছে তোর তাই না।আরেকটু সময় পর তোর এই গলার সাউন্ড কোথায় যায় তা আমিও দেখবো।
আমিঃ আওয়াজ নিচে।আওয়াজ নিচু করেন মোরশেদ সাহেব।কুকুরের কাজ কি জানেন? এরা শুধু ঘেউ ঘেউ করতে পারে। তারা ভাবে বড় গলায় চেচিয়ে ঘেউ ঘেউ করতে পারলে সে বড় হয়ে যাবে। আপনারা দুজনও না সেই কুকুর। সারাদিন ঘেউ ঘেউ করলেও কোন লাভ হবে না। পৃথিবীতে জয় সবসময় ন্যায়েরই হয়।চিল্লাইয়া মার্কেট পাবেন না।
কথা শেষ হতে দেরী কিন্তু আমার গালে সজোরে থাপ্পড় পরতে দেরী না।সামনে তাকিয়ে দেখি থাপ্পড়টা মোরশেদ সাহেবই দিয়েছে। রক্ত চোখে দুই ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। পারলে এখুনি খেয়ে ফেলে।এদের রাগাতে পেরে মনের ভেতর একটা পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করছি।তাই থাপ্পড়ের ব্যাথাটা গায়ে লাগেনি।আবারো জোরে চেচিয়ে বলে উঠলাম।
আমিঃ উচিত কথা কারোই ভালো লাগে না। তাই তোদের যে এই কথাগুলো গায়ে লাগবে তা আমি ভালো করেই জানি।
মোরশেদঃ একে চুপ করতে বল সাইমন।আমার আর সহ্য হচ্ছে না। ও যদি চুপ না করপ তাহলে হয়তো আমি একে উল্টো পাল্টা কিছু করে ফেলতে পারি।
সাইমন এগিয়ে এসে জোরে আমার মুখ চেপে ধরলো। রাগে ওর মুখ লাল হয়ে আছে।দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
সাইমনঃ খুব বেশি ন্যায়বাদী হয়ে গেছিস তাই না?তোর ন্যায়বাদীতা ছুটাচ্ছি আমি।আবার অজ্ঞান হয়ে পরে থাক।যতদিন এখানে থাকবি খাবার তো দূরে থাক একফোঁটা পানিও পাবি না।তখন দেখবো কথার এতো জোর আসে কোথা থেকে।
সাইমন কথাগুলো বলতে বলতেই আমার নাকে তখনকার মতো টিস্যু চেপে ধরলো। আমি কিছুক্ষণ ওর হাত থেকে ছোটার জন্য ছটফট করতে করতে শক্তিহীন হয়ে গেলাম।ধীরে ধীরে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এলো।
🦋🦋🦋
মোরশেদ ওয়াসিম তখন ট্রান্সফার হয়ে নতুন করে এনাজের টিমে জয়েন করেছে।এনাজ ছিলো তার সিনিয়র অফিসার। তুষারের কেসটা প্রথমে পুলিশের কাছে ছিলো।মোরশেদ সাহেব বহু ছলচাতুরী করে সেটা নিজেদের আন্ডারে নিয়ে আসেন।সে ভেবেছিলো এসব ছোটখাটো ব্যাপারে এনাজ মাথা ঘামাবে না।বরং তার হাতে তুষারের ফাইল তুলে দিবে।যাতে করে সে অনায়াসে তুষারকে বাইরে বের করে ফেলতে পারবে।আর সব দোষ ঐ মেয়ে দুটোর দিয়ে দিবে।ঐ মেয়ে দুটো উশৃংখল ড্রেস পরে বয়ফ্রেন্ডের সাথে চলাচল করতো।যার কারণে তাদের বয়ফ্রেন্ডের হাতে ধর্ষণ হয়েছে। কিন্তু মাঝখান দিয়ে শুধু শুধু তার ভাইকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু মোরশেদ সাহেব এনাজকে চিনতে ভুল করে ফেলছে। এনাজের কাছে কেস ছোট হোক কিংবা বড় সেটা দেখার বিষয় নয়। সে প্রত্যেকটা কেস কে সমান গুরুত্ব দেয়।তাই তুষারের কেসটাকে সে নিজের হাতে তুলে নেয়।
এতে মোরশেদ সাহেব কিছুটা দিশেহারা হয়ে যায়।এনাজের সাথের সহকর্মীদের থেকে জানতে পারে এনাজ সব কেস নিয়ে বেশ কড়াকড়ি। অপরাধী যেই হোক তাকে তার শাস্তি অবশ্যই দেয়।এসব শুনে মোরশেদ সাহেব চোখে মুখে অন্ধকার দেখা শুরু করে। তাই সে ভাবে এনাজের হাত-পায়ে ধরে টাকার লোভ দেখালে হয়তো সে রাজী হয়ে যাবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ।এনাজকে আলাদা ডেকে পায়ে ধরে টাকা দেখিয়ে নিজের দলে নিতে চায়।কিন্তু এনাজের মাথায় চলছিলো অন্য কিছু। সে এই সুযোগের স্বদ্যবহার করে মোরশেদ সাহেবের মুখ থেকে সত্যি ঘটনা স্বীকার করিয়ে নেয়।মোরশেদ সাহেব ভাবেন যদি সে এনাজকে সবকিছু খুলে বলে তাহলে হয়তো এনাজ ওকে হেল্প করবে।তাই সে জানিয়ে দেয় সব দোষ তার ভাইয়ের। সব শুনে এনাজ চুপ করে ছিলো।এতে মোরশেদ সাহেব ভেবে নেয় এনাজ তার কথায় গলে গেছে। এনাজ কিন্তু তখন অন্য ফন্দি আঁটছিলো।তাই সে মোরশেদ সাহেবকে বিশ্বাস করাতে টাকাগুলো নিয়েছিলো।যাতে মোরশেদ সাহেব বিশ্বাস করে নেয় এনাজ তুষারকে কিছু করবে না। এর মধ্যে মোরশেদ সাহেব তুষারের জামিনের ব্যবস্থা করার তোড়জোড় শুরু করে দেয়।
এনাজের কাছে সবসময় মনে হতো ধর্ষণের শাস্তি একমাত্র মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছু নয়।তাই সে তুষারকে মেরে ফেলার প্ল্যান করে। কারণ একে ছেড়ে দিলো ভবিষ্যতে আরো অনেক মেয়ে তার সম্ভ্রম হারাবে।যার জন্য এনাজ নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারবে না। তাই দিন দুই পর রাত ১০ টার দিকে তুষারকে ছেড়ে দিয়ে বলে পালিয়ে যেতে। আর সে মোরশেদের লোক।তুষার রিমান্ডে থেকে যেই পরিমাণ মার খেয়েছে তাতে সে ভয়ে পুরো আধপাগল হয়ে গিয়েছিল। পালানোর কথা শুনে কোনকিছু না ভেবে ছুট লাগায়।এনাজ তো এটাই চেয়েছিলো।এই একটা ক্ষেত্রে খুব সুন্দর করে একটা মিথ্যে বলা যায়। আসামি পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলিয়ে নিহত।তারপর এনাজ নিজেই আবার মোরশেদ সাহেবকে খবর দেয় তুষার পালিয়েছে।তাকে এখন সেভ কোন জায়গায় নিতে হবে। তাই মোরশেদ ও এনাজ দুজন তুষারের পেছনে ছুটে।একসময় ওকে ধরেও ফেলে।আর কয়েক কদম এগিয়ে গেলে মোরশেদ সাহেব তুষারকে ধরে ফেলবে।কিন্তু তখুনি একঝাঁক বুলেট এসে তুষারের গা ঝাঝরা করে দেয়।ঘটনার আকস্মিকতায় মোরশেদ ওয়াসিম হতভম্ব হয়ে যায়।নিজের চোখের সামনে নিজের প্রাণপ্রিয় ভাইকে মারা যেতে দেখে। এনাজ তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তুষারের মৃত্যুটা নিয়ে ততটা জল ঘোলা হয় না।এনাজ সব শান্তপর্ণে সামলে নেয়।মোরশেদ নানা কিছু করেও প্রমাণ করতে পারে না যে তার ভাইকে এনাজ মেরে ফেলছে।কারণ এনাজ সব এভিডেন্স নষ্ট করে ফেলে।
কয়েক দিন এটা নিয়ে তোলপাড় হলেও পরবর্তীতে শান্ত হয়ে যায়।তবে মোরশেদ সাহেব এনজকে শেষ করে দেওয়ার শপথ নেন।এনাজ তার দেওয়া টাকাগুলো ফেরত পাঠিয়ে জানায়।কেন সে টাকাগুলো গ্রহণ করেছিলো।শুধুমাত্র ওর মুখের থেকে সবকিছু জানতে ও এনাজকে বিশ্বাস করার জন্য যে এনাজ টাকাগুলো নিয়েছিলো তা শুনে রাগে ফেটে পরে।তবে সে পুরোপুরি চুপ হয়ে যায়।চুপ থেকে এনাজকে মেরে ফেলার ফন্দি আঁটে। সুযোগ খুঁজতে থাকে এনাজকে মারার জন্য। একদিন পেয়েও যায়।সেদিন নোভা ও এনাজ হাঁটতে বের হয়েছিল। ভাড়া করা লোক দিয়ে এনাজকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে।যদিও সেদিন ভাগ্যক্রমে এনাজ বেঁচে যায়।
মোরশেদ ওয়াসিমের নিজের কোন সন্তান নেই। তার স্ত্রী কখনো মা হতে পারবে না জেনেও সে তাকে এখনো ছাড়েনি।ভীষণ ভালোবাসে তার স্ত্রীকে।সব মানুষের ভালো-মন্দ দুটো দিক আছে। তেমনি মোরশেদের ভালো দিক এটা বলা যায়। রেস্টুরেন্টে সেদিন(পর্ব-০৩) নাভানকে দেখে তার পিতৃসুলভ মন জেগে ওঠে। তাই সে নাভানকে আদর করে নানাকিছু কিনে দেয়।অনেকটা গরু মেরে জুতা দান প্রবাদের মতো কাজটা করেন তিনি।তার এই ভালো মানুষী মন দেখে নোভা তাকে ভালোর দলে ফেলে দেয়। কিন্তু নোভা জানতো না এই লোকটাই তাকে সাদা রঙে রাঙিয়ে ছিলো।তার স্বামীকে তার কাছ থেকে তার বাচ্চার কাছ থেকে আড়াই বছর দূরে রেখেছে। এতকিছুর মধ্যে সাইমন তার বড় ভাইকে পুরোদমে সাহায্য করেছে।
তায়াং যখন পুনরায় এনাজের কেস ওপেন করেছিলো তখন বারবার সন্দেহটা মোরশেদ সাহেবের দিকে যাচ্ছিলো।এতে মোরশেদ সাহেব খুব ঘাবড়ে যায়।তাই রোশনকে বলে তায়াং-কে মেরে ফেলতে।সাথে তায়াং-এর ওপর নজর রাখার মানুষ রেখে দেয়।কিন্তু রোশান তায়াংকে মারতে রাজী হয় না।ততদিনে তায়াং বের করে ফেলে মোরশেদ সাহেবকে।ঠিকানাবিহীন বাড়িতে যেদিন যায় সেদিন একটা কল পেয়ে তায়াং তাড়াহুড়ো করে চলে আসে।বলে আর্জেন্ট একটা কাজ আছে। সেই আর্জেন্ট কাজটা ছিলো মোরশেদ সাহেব যে সবকিছুর পেছনে তার প্রমাণ জোগাড় করা।যেই ভাড়া করা লোকদের দিয়ে এনাজকে মেরেছিলো তাদের মধ্যে থাকা একজনকে তায়াং-এর আন্ডারে থাকা লোকজন খুঁজে পেয়ে যায়। তাকে আটকে রেখে তায়াংকে কল দেয়।আর তায়াং সেদিন কল পেয়ে তাড়াহুড়ো করে চলে আসে।পৃথিবীর সবার কাছে যেহেতু এনাজ মৃত সেহেতু ওর খুনীকে হাতেনাতে ধরে সকল প্রমাণের ভিত্তিতে ওদের বড় সাজা হবে।সেটা মোরশেদ সাহেব ও সাইমন যখন সব জেনে যায় তখন নোভাকে গুটির চাল বানাতে তুলে আনে।জয় কার হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।
🦋🦋🦋
সাইমন ও মোরশেদ সাহেব খুব মনোযোগ সহকারে সামনের সি সি টিভি ফুটেজে তাকিয়ে আছে। তাদের ধারণা এখনই রোশান,তায়াং,এনাজের মধ্যে কেউ একজন চলে আসবে।কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজের সামনে বসে থাকতে থাকতে তাদের কোমড় ধরে যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু কারো দেখা নেই।
মোরশেদঃ তুই সবাইকে কল করে জানিয়ে দিয়েছিস তো? ওরা খবর পেলে তো এতক্ষণ চলে আসার কথা। তাহলে আসছে না কেন?
সাইমনঃ আমিও বুঝতে পারছি না। ওদের আসতে দেরী আছে। ততক্ষণে অন্য কাজ করি।সিসিটিভি ফুটেজের সামনে এভাবে ভ্যাবলাকান্তের মতো বসে থাকার কোন মানে হয় না।
সাইমনের মুখে স্পষ্ট বিরক্তি দেখা যাচ্ছে। সেটা দেখে মোরশেদ সাহেব একটা মুচকি হাসি দিলেন।তবে সেই হাসিটা তার মুখে দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় সাইমনের দৃষ্টিগোচর হলো না। স্বাভাবিক কণ্ঠে মোরশেদ উত্তর দিলো।
মোরশেদঃ এরা প্রচুর চালাক।এদের বোকা ভেবে নিজে বোকা হস না।ওদের কে কাবু করতে হলে সাবধান থাকতে হবে। নয়তো আমাদের ফাঁসিয়ে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নোভাকে নিয়ে চলে যাবে।প্রত্যেকজন যদি ধূর্ত না হতো তাহলে এমপি, গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা অফিসারের পদে কাজ করতে পারতো না।
সাইমনঃ তা ভুল বলো নি।এনাজের বউয়েরই জানের ভয় নেই। সাহস দেখে আমি অবাক।
মোরশেদঃ সত্যি কথা বলতে আমিও বিষয়টাই ভীষণ অবাক হয়েছি।আড়াই বছর আগে এনাজের মুখে নোভার যে বিবরণ শুনেছিলাম তার সাথে আজকের নোভার আকাশ-পাতাল পার্থক্য।অবশ্য ওকে দেখে আমার একটা কথা মনে হচ্ছিলো যে,শামুক যেমন প্রতিকূল আবহাওয়ায় নষ্ট না হয়ে যায়, তার জন্য তাকে শক্ত খোলস দেওয়া হয়েছে। তেমনি কিছু কিছু মেয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নরম থেকে শক্ত হয়ে যায়।
সাইমনঃ হয়েছে ওর গুণগান গাইতে হবে না তোমাকে।একে আমি একটুও সহ্য করতে পারি না।রেডিও স্টেশনে সময়ে অসময়ে শুধু আমাকে অপমান করতো।ওর ওপর প্রচুর ক্ষোভ আছে আমার।ওর কোন ক্ষতি ছাড়া আমি এত সহজে ছাড়ছি না।
মোরশেদ ওয়াসিম খুব মনোযোগ সহকারে ভাইয়ের কথা শুনছিলো।সাইমন খুব একগুঁয়ে ও জিদ্দি টাইপের ছেলে।খুব সহজে রেগে যাওয়া এর জন্মগত অভ্যাস।কিন্তু গত ছয় মাস ধরে যে ও নোভার এত অপমান সহ্য করে রেডিও স্টেশনে কাজ কিভাবে করেছে সেটা আল্লাহ মালুম। কারণে অকারণে নোভা সাইমনকে শুধু অপমানই করতো না।সাথে সবার সামনে হেনেস্তাও আছে। তারপরেও গুপ্তচর হওয়ায় বেহায়ার মতো ওর সাথে লেগে থাকতো সাইমন।সেই পুরনো অপমানগুলো আজ মনে পরে গেছে। তাই মনের মতো করে দুটো চড় মেরেছিলো।আরেকটু হলে রাগের বশে নোভার গলা টিপে মেরেই ফেলতো।কিন্তু মোরশেদের কারণে তা সম্ভব হলো না।
সাইমনঃ ভাইয়া দেখো একটা ব্লাক কার এসেছে।
উৎফুল্ল মনে সাইমন চেচিয়ে উঠলো। মোরশেদ এতক্ষণ মন দিয়ে কিছু একটা ভাবছিলো।যার কারণে তার দৃষ্টি ছিলো শূন্যে।সাইমনের কথা শুনে চটজলদি সেদিকে তাকিয়ে বললো।
মোরশেদঃ এটা তো ওদের গাড়িই।দ্রুত আমাদের লোকদের তৈরি থাকতে বল।সবাই যাতে অস্ত্র নিয়ে ওদের ঘেরা দিয়ে ফেলে।
সাইমন দ্রুত গতিতে পকেট থেকে মোবাইল বের করে তার লোকদের কল করতে শুরু করলো। মোরশেদ ওয়াসিম কিছুটা গভীরভাবে গাড়িটা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।অনেক সময় হয়ে যাওয়ার পরেও গাড়ি থেকে কেউ বের হচ্ছে না। তাই সাইমন ও মোরশেদ দৌড়ে বাইরে বের হয়ে গেলো।বাইরে যাওয়ার পরই তারা দেখলো একজন আড়াল থেকে বের হয়ে ওদের সামনে এক হাতে রিভেলবার তাক করে দাঁড়ালো।
—-হাত উপরে উঠা।নয়তো গুলি করে উপরে পাঠিয়ে দিবো।কি বললাম শুনতে পাসনি?হাত জলদী উঠা।
#চলবে
সবকিছু বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে দিলাম।যাতে কারো বুঝতে কোন অসুবিধা না হয়।আমার কাছে মনে হচ্ছে আজকের পার্টটা পুরো অগোছালো ও খাপছাড়া হয়ে গেছে। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত তার জন্য 😥।রি-চেইক দেওয়া হয়নি।তাই ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।