প্রজাপতির_রং🦋
Part_39
#Writer_NOVA
—- মে আই কাম ইন?
পরিচিত গলার স্বর পেয়ে চট করে সেদিকে তাকালাম। আবছা আলো থাকায় ভালো করে মানুষটার চেহারা বোঝা যাচ্ছে না।তবে এনাজের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার মুখে একটা প্রশান্তির হাসি।বহুদিন পর হারিয়ে যাওয়া জিনিস খুঁজে পেলে আমরা যেমন খুশি হই তেমনটা।সে ভেতরে ঢুকতেই সারা হলরুমে সাদা উজ্জ্বল আলো জ্বলে উঠলো। তার ওপর ফুলের পাপড়ি পরতে লাগলো উপর থেকে।আমি মানুষটাকে দেখে চমকে উঠলাম।
আমিঃ এনাম!!!!
এনাজ কোন কথা না বলে আমাকে পাশ কাটিয়ে এনামের দিকে ছুটে গেল।তারপর সবার সামনে জড়িয়ে ধরলো। বেশ কিছু সময় হয়ে যাওয়ার পরেও তারা কেউ কাউকে ছাড়ছে না বলে সবাই কানাঘুষা করতে লাগলে।ছেলেটা আসলে কে? তাজরানের কি হয়? আমি কিন্তু ঠিক বুঝে গেছি। তারা দুজন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। দুজন দুজনকে ছেড়ে দিলো।তারপর এনামের হাত ধরে এনাজ আমার কাছে নিয়ে এলো।
এনাজঃ দেখ তো চিনিস কিনা?
এনামঃ কি যে বলো না ভাইয়া!!! ভাবীকে আমি চিনবো না তো কে চিনবে?
এনাজঃ এই বাচ্চাটা কে তা বলতো?
এনামঃ এটা আমার একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র ছেলে এনান আহমেদ। আমি কি ভুল বলেছি ভাইয়া?
এনাজঃ মোবাইলে বলেছি তাতেই চিনে গেছিস।এই না হলে আমার ভাই।
এনামঃ আসসালামু আলাইকুম ভাবী।কেমন আছেন?
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
এনামঃ আমিও ভালো আছি।ভালো না থাকলে কি আজ বিকালের ফ্লাইটে দেশে আসতে পারতাম।
এনাম আমার কোলের থেকে নাভানকে নিজের কোলে নিলো।তারপর ওর গালে, কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে ওকে আদর করতে লাগলো।হঠাৎ আমার চোখ গেলো এনামের পেছনে একটা মেয়ের দিকে।মাস দুয়েকের একটা বাচ্চা নিয়ে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। এতক্ষণের ঘটনায় মেয়েটার দিকে ভালো করে খেয়াল করিনি।পরনে শেওলা রঙের জর্জেট শাড়ি।বেচারী সাধারণত শাড়ি পরতে বোধহয় অভ্যস্ত নয়।শাড়ি,বাচ্চা সামলাতে সে অনেকটা হাঁপিয়ে পরেছে।আমি মেয়েটাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে এনামকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলাম।
আমিঃ ও কে এনাম? ওকে তো কখনও দেখিনি।
এনাম একহাতে মাথা চুলকে মুখ নিচু করে ইতস্ততভাবে বললো।
এনামঃ আসলে ভাবী ও আমার ওয়াইফ নীতুয়া।আর আমাদের ছেলে এনায়েত আহমেদ।
আমি বিস্মিত চোখে এনামের দিকে তাকিয়ে রইলাম।দেবরজী আমার একা আসেনি, সাথে বউ,বাচ্চা নিয়ে এসেছে। এনাজ এগিয়ে গিয়ে নীতুর থেকে এনায়েতকে কোলে তুলে নিলো।এনামের হাতের ইশারায় নীতু আমার সামনে এসে নিচুস্বরে সালাম দিলো।
নীতুঃ আসসালামু আলাইকুম ভাবী।
আমিঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম।মাশাআল্লাহ!! আমার দেবরজীর পছন্দ আছে বলতে হবে।একদম পরীর মতো একটা মেয়ে পছন্দ করেছে। তা দেবরজী,
লুকিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করে বউ,বাচ্চা নিয়ে ফিরলে।এটা কি ঠিক হলো।আমি তো ভেবেছিলাম দেবরজী আসলে মেয়ে দেখা শুরু করবো।কব্জি ডুবিয়ে দেবরের বিয়ের পোলাও,মাংস খাবো।তা কতদিন হলো বিয়ের?
এনামঃ দেড় বছর। কারো সাথে যোগাযোগ ছিলো না বলে জানাতে পারিনি।তাছাড়া নীতুর বাবা ওর বিয়ে প্রায় ঠিক করে ফেলছিলো।তাই একপ্রকার তাড়াহুরো করেই বিয়েটা হয়ে গেছে। বিয়ের দুই মাস পর ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ হয়।তখন ভাইয়াকে জানাই।
তায়াং ভাইয়া ও নূর আপিও এনামের আসার খবর শুনে অন্য দিক থেকে এদিকে চলে আসলো।তায়াং ভাইয়া এসে এনামকে জড়িয়ে ধরলো।
তায়াংঃ কি অবস্থা এনাম? আছিস কেমন? তুই তো ভাই বাজিমাত করে দিলি।বউ,বাচ্চাসহ এসে আমাদের তাক লাগিয়ে দিলি।তোর ভাই বিয়ে হয়ে একটা ছেলেও হয়ে গেলো।আর আমরা এখনো বিয়েও করতে পারলাম না।একেই বলে কপাল।
আমিঃ ভাইয়া তুই জানতি এনামের বিয়ে হয়েছে?
তায়াংঃ আমাকে এনাজ সেদিন বললো।তোকে বলেনি এই কারণে যে তোকে একটা সারপ্রাইজ দিবে তাই।
আমিঃ সত্যি অনেক বড় সারপ্রাইজ পেয়ে গেলাম।
নূরঃ কেমন আছেন এনাম ভাইয়া?
এনামঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপু।আপনি কেমন আছেন?
নূরঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। ভাইয়া আমরা কিন্তু দুটো ট্রিট পাই আপনার কাছে। একটা বিয়ের জন্য। আরেকটা বাচ্চার জন্য। ট্রিটের কথা ভুলেন না কেমন? ভুললে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।
এনামঃ ইনশাআল্লাহ, দুটো ট্রিটই পাবেন।
আমিঃ এই যে নাভানের আব্বু।দেখি আমার ছোট ছেলেকে আমার কাছে একটু দেন।আপনি কি একা নিবেন নাকি?
🦋🦋🦋
এনাজ এগিয়ে এসে এনায়েতকে আমার কোলে তুলে দিলো।মাশাআল্লাহ, বাবুটা দেখতে অনেক কিউট।একটু গুলুমুলু দেখতে।অনেকটা ওর মায়ের মতো হলেও অনেক কিছু এনামের পেয়েছে। এনাজ, এনামকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে অপরপাশে নিয়ে গেলো।নূর আপি আমার কাছ থেকে এনায়েতকে নিয়ে কোলে নিলো।আমি নীতুর সামনে গিয়ে বললাম।
আমিঃ তুমি কি আনইজি ফিল করছো নীতু? লজ্জা পেয়ো না। আমাকে বড় জা মনে না করে বড় বোন ভেবে সব বলে দিবে।
নীতুঃ আসলে ভাবী কখনও শাড়ি পরিনি তো।তাই কিরকম জানি লাগছে।মনে হচ্ছে এদিক দিয়ে খুলে যাচ্ছে, ঐদিক দিয়ে আঁচল সরে যাচ্ছে। ছোট থেকে অস্ট্রেলিয়ায় বড় হওয়ায় টপস,প্যান্ট,কুর্তি এসবে অভস্ত্য হয়ে গেছি।শাড়ি শুধু বিয়ের দিন পরেছিলাম।
আমিঃ অসুবিধা যখন হবে তাহলে পরলে কেন? যেই পোশাকে কম্ফোর্ট ফিল করবে সেটা পরবে।দেখো না আমি তাই গাউন পরে এসেছি।
নীতুঃ আসলে বাংলাদেশে এসেছি কে কি ভাবে ঐসব পরা দেখলে।তাই শাড়ি পরে এসেছি।ফ্লাইট থেকে নেমে সোজা এখানে চলে এসেছি। যার কারণে চেঞ্জ করার সময়ও পাইনি।
আমিঃ তুমি যদি চাও আমি ড্রেসের ব্যবস্থা করে দেই।
নীতুঃ না না ভাবী।তার কোন দরকার নেই। এখন থেকে কোথাও গেলে শাড়িই পরবো।তাই আগের থেকে অভ্যাস করে নেই।
আমি,নীতু ও নূর আপি একপাশে দাঁড়িয়ে রইলাম।এনাজ এসে নাভানকে আমার কাছে দিয়ে গেলো।এনায়েতকে দেখে নাভান এগিয়ে গিয়ে পুটুর পুটুর করে নিচুস্বরে কথা বলতে লাগলো।তখুনি জুলেখা আন্টি ও মুরাদ আঙ্কেল পার্টিতে এসে উপস্থিত হলো।কোন দিকে না তাকিয়ে আমার কাছে চলে এলো।কুশলাদি জিজ্ঞেস করে নাভানকে কোলে তুলে নিলো।দুজন তো পাগল হয়ে গেছে নাভানকে দেখে। উনারা যেমন করে আদর করছিলো নাভানকে ঠিক যেনো নাভানের আপন দাদা-দাদি। আমি তাদের সাথে নূর আপি ও নীতুর পরিচয় করিয়ে দিলাম।
তায়াংঃ এনাজ আঙ্কেল-আন্টি তো চলে আসছে।এবার পার্টি শুরু কর।
এনাজঃ হ্যাঁ করছি।আরিয়ান কোথায়?
আরিয়ানঃ এই তো ভাইয়া আমি এখানে।
এনাজঃ এনাউন্সমেন্টের স্পিকার কোথায়?
তায়াংঃ আমি সব ব্যবস্থা করেছি।তুই স্টেজে ওঠ।
এনাজ সামনের ছোট স্টেজে উঠে গেল।হাতে মাইক তুলে নিয়ে চেক করলো।ছোট স্টেজের পুরোটা হার্ট সেইপের লাল বেলুন দিয়ে সাজানো।নিচের ফ্লোরেও বেলুন ছড়ানো-ছিটানো।হুট করে এনাজের পায়ের সাথে বেজে একটা বেলুন ফেটে গেল।এনাজ ভয় পেয়ে চমকে উঠলো। যেটা দেখে আমি হো হো করে হেসে উঠলাম।পুরো পার্টি শান্ত দেখে আমি সবার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি পেলাম লজ্জা। নূর আপির পেছনে গিয়ে লুকালাম।আড়াল থেকে দেখলাম এনাজ মুখ টিপে হাসছে।তায়াং ভাইয়াও মাইক হাতে স্টেজে উঠে গেল। মাইকে কয়েকবার হাত দিয়ে বারি দিয়ে এনাজ সাউন্ড ঠিক করে নিলো।তারপর বলতে শুরু করলো।
এনাজঃ গুড ইভিনিং এভরিওয়ান।আজ আপনাদের সাথে আমি অনেকগুলো আনন্দ শেয়ার করার জন্য এই পার্টির আয়োজন করেছি।গত পরশু আমরা বিশাল বড় একটা ডিল পাস করেছি। তাছাড়া কিছুদিন আগে আমাদের শেয়ার পাস হলো।মূলত এই দুটো কারণে আমরা পার্টির আয়োজন করিনি।আরো কিছু আছে। সেটা হলো আগামী মাসের ৭ তারিখে আমাদের কোম্পানির আরেক ওনার আরিয়ান আজওয়ারের বিয়ের ডেট ফিক্স করা হয়েছে। সাথে কিন্তু আরেকটা জুটির বিয়ে হবে।
আরেক জুটির কথা শুনে আমরা একে অপরের দিকে তাকাতে লাগলাম।কেউ বুঝতে পারছি না আরেক জুটি কে হতে পারে?
আমিঃ আন্টি, আরেক জুটির বিয়ে মানে? কার কথা বলছে আপনাদের ছেলে?
জুলেখাঃ আমিও তো বুঝতে পারছি না।
মুরাদঃ ধৈর্য্য ধরো বউমা।এখুনি তাদের নাম এনাউন্সমেন্ট ঘোষণা করা হবে।
জুলেখাঃ এই তোমরা বাপ-বেটা মিলে আবার কি ফন্দি করেছো বলো তো? আমাদের তো কোনকিছু জানানোর প্রয়োজনই মনে করো না।
মুরাদঃ মাথা ঠান্ডা করো জুলেখা। দেখো তোমার ছেলে কার নাম ঘোষণা করে।
এনাজঃ সবাই একটু শান্ত হোন।আমাকে তাদের নামটা বলতে দিন।আগামী ৭ তারিখে আরিয়ান ও এরিন ছাড়া যাদের বিয়ে হবে তারা হলো……..
এতটুকু বলে আবার থামলো এনাজ। সবাই উৎসুক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।সেটা দেখে তার মনে নিশ্চয়ই দুষ্টু বুদ্ধি খুলে গেছে। তাই সে নাম দুটো বলতে এত সময় নিচ্ছে। মুসকান আমার পাশে দাঁড়িয়ে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে মিনমিন সুরে বললো।
মুসকানঃ ও বড় ভাবী, বাবা আর ভাইয়রা কি আবার আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললো নাকি।তাদের হাব-ভাব তো আমার ভালো ঠেকছে না।যদি অন্য কারো সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে তাহলে কিন্তু আমি পিংক কালারের বিষ খেয়ে নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে দিবো।
আমিঃ আরে টেনশন নিও না।তেমন কিছুই হবে না। আমি আছি তো তোমার সাথে। সবকিছু সামলে নিবো।
এনাজঃ আরেকজন হলো আমাদের আদরের ছোট বোন মুসকান।আগামী ৭ তারিখে আমার দুই ভাই-বোনের বিয়ে একসাথে ফিক্সড করা হয়েছে।
🦋🦋🦋
এনাজের কথা শুনে মুসকান কান্না করেই দিলো।আমি মুসকানকে সান্ত্বনা দিতে লাগলাম।আদরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখ টলমল করছে।চোখ মুছে আদর অন্য দিকে চলে যেতে নিলেই এনাজের বাকি কথা শুনে আদরসহ সবাই টাসকি খেয়ে গেলো।
এনাজঃ আরে আরে অনেকে এত আপসেট হচ্ছো কেন? আমার বোনের হবু বরের নামটা শুনবে না।আমার বোনের হবু বরের নাম হলো আদর।
আদরের নাম শুনে সবাই আরেকদফা অবাক।মুসকান খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আদর অবিশ্বাস্য চোখে এনাজের দিকে তাকালো। এনাজ চোখ দিয়ে ওকে আস্বস্ত করতেই আদর দৌড়ে স্টেজে উঠে এনাজকে জড়িয়ে ধরলো।
মুসকানঃ ধন্যবাদ ভাবী।অনেক অনেক ধন্যবাদ। আজকে আমি অনেক খুশি।তুমি নিশ্চয়ই ভাইয়াকে রাজী করিয়েছো।তার জন্য এত্তগুলা ভালোবাসা।
আমিঃ আমি কিছু বলিনি মুসকান।আমার মনে হয় তোমার ভাই আগের থেকেই জানতো।সেই তোমার বাবাকে ও আরিয়ানকে রাজী করিয়েছে। তারা তিনজন প্ল্যান করে এতকিছু করলো।
মুরাদঃ একদম ঠিক ধরেছো বউমা।এমনটাই হয়েছে।
জুলেখাঃ আমাকে তো একটু বলতে পারতে।
মুরাদঃ তোমাকে বললে তো তুমি আবার মেয়েকে বলে দিতে।তাহলে কি আর মুসকান এতবড় সারপ্রাইজ পেতো।
জুলেখা আন্টি মুখ ঝামটা দিলো।মুসকান আমাকে ছেড়ে ওর বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরলো।
তায়াংঃ আমি– আরিয়ান,এরিন, মুসকান, আদরকে স্টেজে আসার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। ওহ্ আদর তো এখানেই আছে। বাকি তিনজন চলে আসুন।আপনাদের আংটি বদল হবে এখন।ভয় পাবেন না। যারা ভাবছেন আপনাদের ফ্যামেলীর কেউ নেই। তারা ভালো করে একটু খেয়াল করুন।ফ্যামেলীর লোক খুজে পেয়ে যাবেন।
আমি আশেপাশে তাকিয়ে এরিনের বাবা-মা কে পেয়ে গেলাম।জুলেখা আন্টি ও মুরাদ আঙ্কেল এর মধ্য একজন বয়স্ক মহিলাকে দেখে সামনে এগিয়ে গেলেন।পরে জানলাম উনি আদরের মা।একটু অসুস্থ। জুলেখা আন্টি তাকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিলেন।একে একে সবাই স্টেজে উঠে পরলেন।যেই মুহুর্তে দুই কাপল আংটি বদল করবে সেই সময় এনাজ সবাইকে থামিয়ে দিলো।
এনাজঃ এক মিনিট। সবাই অপেক্ষা করুন।আমি স্টেজে আরো দুটো কাপল ডাকবো।তারাও চলে আসুন।
তায়াংঃ আর কে বাকি আছে এনাজ?
এনাজঃ বাকি তো অবশ্যই আছে। নূর আপি চলে আসো।সাথে রোশান দেওয়ান আপনার হবু বউকে নিয়ে স্টেজে চলে আসুন।
রোশানের কথা শুনে আমি এদিক সেদিক তাকালাম।এতক্ষণের ভেজালে আমার মাথা থেকে রোশান ও জারার কথাটা একদম মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো।তায়াং ভাইয়া স্টেজ থেকে নেমে এসে নূর আপির দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলো।নূর আপি লাজুক মুখে হাতটা ধরলো।আরেক হাতে গাউন ধরে স্টেজে উঠে গেল। রোশান আমার সামনে এগিয়ে এলো।আমি ভয়ে কিছুটা দূরে সরে গেলাম।এনাজ আংটি আনতে ভেতরের দিকে গেছে। রোশান আমার সামনে এসে লো ভয়েজে বলল।
রোশানঃ আবার যদি তোমাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করতে চাই তাহলে কি করবে পাখি?
আমিঃ মানে, আপনি কি বুঝাতে চাইছেন?
রোশানঃ সেবার তো ছেলে নিয়ে পালিয়েছিলে বলে অল্পর জন্য আমার বউ হতে পারলে না।এবার যদি এমনটা হয়।তাহলে কি করবে?(ভ্রু নাচিয়ে)
আমিঃ তার মানে আপনি ছিলেন সেই লোকটা।যে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো বিয়ে করার জন্য।
(অবাক হয়ে)
রোশানঃ ইয়েস পাখি।আমি ছাড়া কি অন্য কারো সাহস আছে নাকি।
আমিঃ এই খবর যদি এনাজ জানে তাহলে আপনার অবস্থা কি হবে জানেন তো?
রোশানঃ ঐগুলো পাস্ট ছিলো।তা নিয়ে মাতামাতি করার কিছু নেই। সেগুলো ভুলে গেলে তোমারও মঙ্গল সাথে আমারও।তবে তুমি যদি এনাজকে এই বিষয়ে বলো তাহলে আমি সত্যি তোমাকে আবার তুলে নিয়ে যাবো।(শয়তানি হাসি দিয়ে)
রোশানের কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।আমার ভয়ার্ত মুখটা দেখে রোশান ফিক করে হেসে উঠলো।
রোশানঃ আমি মজা করছি।তুমি সবকিছু এতো সিরায়াসলি নেও কেন? আমি জারাকে সত্যি বিয়ে করবো।আর তোমার জীবন থেকে সরে যাবো।তাই ভয় পেয়ো না। তুমি এত ভয় পাও বলে তোমাকে ভয় দেখাতে আমার এতো ভালো লাগে।
আমাদের কথার মধ্যে জারা চলে এলো।ততক্ষণে এনাজও স্টেজে চলে এসেছে। জারা রোশানকে জিজ্ঞেস করলো।
জারাঃ কি ফুসুরফাসুর করছো তুমি?
রোশানঃ কিছু না বেবি। চলো।
🦋🦋🦋
রোশান নিজের হাতটা এগিয়ে দিতেই জারা রোশানের
বাহু ধরে স্টেজে উঠলো।সবাই যখন আংটি বদল করবে তখন তায়াং ভাইয়া আবার থামিয়ে দিলো।
তায়াংঃ একটু ওয়েট করো সবাই। আমরা চার কাপল না হয় সামনে বিয়ে করবো তার জন্য আংটি বদল করছি।কিন্তু বিবাহিত দুই কাপল কেন বাদ যাবে।এনাম,নিতু,নোভা চলে আয় তোরাও।
এনাজঃ আমাদেরটা আবার কেন? আমাদের তো বিয়ে হয়েই গেছে। দুই ভাইয়ের দুই ছেলেও আছে।
তায়াংঃ চুপ কর তুই। আজ ছয় কাপল নতুন করে ভালোবাসার শপথ নিবো।সবাই চলে এসো।
এনাম এসে নীতুর হাত ধরে স্টেজে নিয়ে গেলো।নীতুর ছেলেকে জুলেখা আন্টি কোলে তুলে নিলেন।আর নাভানের হাত ধরে পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিলো।এনাজ ধীর পায়ে স্টেজ থেকে নেমে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে এক হাত বাড়িয়ে দিলো।
এনাজঃ আমার হাতটা আবার নতুন করে ধরবে বাটারফ্লাই। কথা দিচ্ছি এবার কিছুতেই ছাড়বো না। যত বাঁধা আসুক, যত ঝড় আসুক শক্ত করে তোমার হাতটা ধরে রাখবো।তোমার হাত ছেড়ে দিলে একটা পুতুল বেবী পাবো কোথা থেকে? একটা পুতুল বেবীর জন্য হলেও তোমার হাতটা সারাজীবন ধরে রাখবো।
আমি এনাজকে চোখ রাঙিয়ে লজ্জায় মুখ ঢেকে নিলাম।তারপর ওর হাতের ওপর হাত রাখলাম।এনাজ এক ঝাটকায় সবার সামনে আমায় কোলে তুলে নিলো।সাথে সাথে করতালি ও সিটি বাজানো শুরু করলো সবাই। আমি লজ্জায় এনাজের বুকের সাথে মিশে রইলাম।স্টেজের ওপর উঠে আমাকে নামিয়ে দিলো।তারপর সবাই একসাথে আংটি বদল করে নিলাম।এনাজ হাঁটু মুড়ে বসে আমার বাম হাতের অনামিকায় আংটি পরিয়ে দিলো।তারপর সেই হাতে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো। তখুনি পেছন থেকে রোশান বলে উঠলো।
রোশানঃ এনাজ সাহেব আপনি তো চুমু দিলেন।এবার কি আমি একটা দিবো?
বক্সে মৃদু শব্দে গান বাজছে বলে রোশানের কথাটা শুধু আমরাই শুনতে পেরেছি। যেহেতু আমাদের পরেই রোশান,জারা দাঁড়িয়ে আছে,তাই কথাটা আমরা বাদে অন্য কেউ শুনেনি। এনাজ চোখ দুটো ছোট ছোট করে রোশানের দিকে রাগী লুকে তাকালো।রোশান ভয় পাওয়ার ভঙ্গি করে বললো।
রোশানঃ আরে রাগছেন কেন? যাস্ট কিডিং।
জারাঃ রোশান এসব কি?
রোশানঃ কিছু না বেবী।তুমি আমাকে আংটি পরিয়ে দেও।এত দেরী কেন করছো?
ছেলেরা সবাই যার যার হবু বউকে আংটি পরিয়ে দিলো।এবার মেয়েদের পালা।আমাদের সবাইকে একটা মেয়ে এসে আংটির বক্স দিয়ে গেলো।সেটা খুলে আংটি বের করে আমরা মেয়েরাও যার যার ভালোবাসার মানুষটাকে পরিয়ে দিলাম।পুরো ঘটনাটাই ক্যামেরাবন্দি করা হলো।এখন ছবি তোলার পালা।এনাজ আমার কানের কাছে মুখ এনে বললো।
এনাজঃ এই যে মিসেস এনাজ আহমেদ। অনেক তো আপনি করে বলেছেন। এখন থেকে কিন্তু তুমি করে বলতে হবে।
আমিঃ বয়েই গেছে আমার😏।আপনাকে আপনি করে বলতেই আমার ভালো লাগে।
এনাজঃ ভালো লাগলে হবে না। এখন থেকে অভ্যাস করতে হবে। আপনি শব্দটা আমার কাছে পর পর লাগে।প্লিজ বাটারফ্লাই এখন থেকে তুমি করে বলো।আমার নাভানের আম্মু, প্লিজ এই কথাটা রেখো।
আমিঃ ওকে নাভানের আব্বু চেষ্টা করবো।
এনাজঃ চেষ্টা নয় পারতেই হবে।
আমিঃ ওকে এনাজ সাহেব।আপনি যা বলবেন তাই হবে।
এনাজঃ আবার আপনি😤।
আমিঃ ওহ সরি।তুমি যা বলবে তাই হবে।
এনাজঃ এই তো আমার বউটা।
সবাই একেক পোজ নিয়ে ছবি তুলছে।আমাদের ছবি তুলতে ক্যামেরা ম্যান আমাদের দিকে আসতেই এনাজ দ্রুত পায়ে স্টেজ থেকে নেমে গেল।তারপর নাভানকে কোলে তুলে স্টেজে চলে এলো।
এনাজঃ আমাদের একমাত্র ছেলেকে ছাড়া আমরা কি ছবি তুলতে পারি বলো? ও তো আমাদেরই ভালোবাসার অংশ।
আমি মুচকি হাসলাম।এনাজ নাভানের দুই গালে চুমু খেলো।তা দেখে নাভান তার বাবার গলা ধরে মাথা সামনে এনে গালে চুমু খেলো।
এনাজঃ এবার তোমার আম্মুকে দেও।
নাভানঃ আত্তা(আচ্ছা)।
আমি নাভানের দুই গালে হাত রেখে কপালে গাঢ় করে একটা চুমু দিলাম।তারপর এনাজের পাশেই দাঁড়িয়ে রইলাম।এনাজের কথা শুনে নাভান ওর বাবার কোল থেকে আমার গলা জড়িয়ে ধরে আমার গালটাকে সামনে এনে গালে টাইট করে একটা চুমু দিলো।এই সুন্দর মুহুর্তটাকে ক্যামেরাবন্দি করতে ভুললো না ক্যামেরাম্যান।
#চলবে
আমার মনে হয় না আর কোন রহস্য খোলা বাকি রয়েছে। যদি কোনটা বাকি থাকে তাহলে দয়া করে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।