প্রজাপতির_রং🦋 Part_12

0
1197

প্রজাপতির_রং🦋
Part_12
#Writer_NOVA

আমিঃ এনাজ!!!!!!

আমি এনাজ বলে ডাকতেই তাজরান কপাল কুঁচকে আমার দিকে ঘুরে তাকালো। সে আমার দিকে ঘুরতেই আমি আরেকটা বড়সড় ঝাটকা খেলাম। চেহারাতো এনাজের নয়। তাহলে এত মিল কি করে হতে পারে এনাজের সাথে।তাজ আমাকে দেখে কেঁপে উঠলো। আমি তার চোখের দিকে গভীরভাবে তাকালাম।তার চোখে একটা ছটফটানির ভাব দেখতে পেলাম।আর চোখ দুটো অবিকল এনাজের।কিন্তু আমি অঙ্ক মিলাতে পারছি না।

তাজঃ সরি, আপনি আমায় কি বলে ডাকলেন?

আমিঃ এনাজ!!!!

তাজঃ সরি, আমি তাজরান তাজওয়ার 😊।

কথাটা বলে এনাজের মতো ভ্রুর কিছুটা ওপরে চুলকালো তাজ।তারপর চেয়ারে বসে ল্যাপটপের দিকে নজর দিলো। এক হাতে ল্যাপটপে কাজ করছে আরেক হাতে কপালে স্লাইড করছে। যেমনটা এনাজ ল্যাপটপে কাজ করার সময় করতো।উনি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো।

তাজঃ প্লিজ সিট ডাউন।

আমি তাজের সরাসরি চেয়ারে বসে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকে পর্যোবেক্ষণ করতে লাগলাম।উনি খুব অস্বস্থি বোধ করছে।সামনে থাকা কাচের গ্লাস থেকে একটু পরপর পানি খাচ্ছে। গ্লাস ধরার সময় তার হাত অসম্ভব কাঁপছিলো।

আমিঃ আর ইউ ওকে মিস্টার তাজ?

তাজঃ ইয়াহ।হোয়াট ইজ ইউর নেম?(ব্যস্ত হয়ে)

আমিঃ মিসেস এনাজ আহমেদ।

আমার নামটা শুনে উনি আবারো চমকে উঠলো। উনার চোখ দুটো খুব অস্থির লাগছে। মনে হচ্ছে সে এখন আমার থেকে পালাতে পারলে বেচে যাবে।মাত্র একবার আমার চোখে তার চোখ পরেছে।তারপর থেকে ভুলেও আমার দিকে তাকাচ্ছে না।আমার সন্দেহটা আরো জড়ালো হলো।তাই আমি সামনে থাকা পেপার ওয়েট-টাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা মেরে তাজের সামনেই টেবিলের নিচে ফেলে দিলাম।আমার উদ্দেশ্য হলো তার হাত দেখা। এটা যদি আমার এনাজ হয় তাহলে তার ডান হাতের উপর দিকে কোণার কাছে একটা বড় তিল থাকবে।

আমিঃ আই এম সো সরি।আমি আসলে দেখতে পাইনি।এক্সট্রিমলি সরি।(ব্যস্ত হয়ে)

তাজঃ ইট’স ওকে।

আমার দিকে না তাকিয়ে উবু হয়ে পেপার ওয়েট উঠিয়ে যথাস্থানে রাখলো।আমিও চট করে তার হাতের দিকে তাকিয়ে অবাক।হ্যাঁ,ডান হাতের কোণার দিকে বড় একটা তিল।উনি আবারো গ্লাস থেকে বেশ কয়েক ঢোক পানি খেলো।চেহারা এনাজের নয় ঠিক আছে। কিন্তু পেছনের দিক,চোখ, স্বভাব, হাতের তিল, কন্ঠস্বর,মুখের অঙ্গিভঙ্গি এক কি করে হতে পারে? মানুষ চেহারা পাল্টালেও এগুলো তো পাল্টাতে পারে না।আমার মন বলছে এটাই এনাজ।ওর চেহারা পাল্টিয়ে ফেলেছে। কিন্তু স্বভাবগুলো এখনো বদলাতে পারেনি।আমার হৃৎপিণ্ডটা ধপধপ করে লাফাচ্ছে।আচ্ছা, তাহলে কি এনাজ সেদিন বেঁচে গিয়েছিল। আগুনে হয়তো ওর মুখ নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।তাই প্লাস্টার করে নতুন চেহারা দিতে হয়েছে।

তাজঃ আমি আপনার নাম জিজ্ঞেস করেছিলাম।

আমিঃ আমি বলেছিলাম।

তাজঃ আপনার নাম বলেন নি।

আমিঃ নোভা ইসলাম। মিস্টার এনাজ আহমেদের ওয়াইফ।

এবারো উনি হালকা কেঁপে উঠলো। আমি যতবার এনাজের নাম নিলাম ততবারই এমন হলো।উনি আমার সার্টিফিকেট দেখায় মনোযোগ দিলেন।আর আমি আড়চোখে তার কার্যকলাপ।তখুনি চট করে আমার মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল।আমি ইচ্ছে করে টেবিলের পায়ার সাথে নিজের পা বারি দিয়ে জোরে চিৎকার করে উঠলাম।

আমিঃ আহ্ পা টা জ্বলে গেলো রে।এত শক্ত কেন টেবিলের পায়া।একটু নরম হলে কি হয়?

তাজঃ কি হয়েছে আপনার?

তাজ হন্তদন্ত হয়ে চেয়ার থেকে উঠতে নিয়েও আবার ধপ করে বসে পরলো।আমি তীক্ষ্ম চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

তাজঃ ব্যাথা পেয়েছেন নাকি?

আমিঃ নাহ আমি ব্যাথা পাইনি।তবে টেবিল ব্যাথা পেয়েছে।

দাঁতে দাঁত চেপে কথাগুলো বললাম।যে জন্য করলাম তাতো হলোই না উল্টো আমি ব্যাথা পেলাম।পা জ্বলে যাচ্ছে। ব্যাথাটা ভালোই পেয়েছি। তাজ আমার দিকে পানির গ্লাসটা বারিয়ে দিয়ে বললো।

তাজঃ পানি দিয়ে ব্যাথার জায়গায় হালকা করে ম্যাসেজ করে দিন। ব্যাথা কমে যাবে।

আমি পানির গ্লাসটা নিলাম না।ভীষণ রাগ হচ্ছে আমার।গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বসে রইলাম। তাজ হয়তো আমার দিকে খেয়াল করেছে।কারণ ও একগালে মিটমিট করে হাসছে।সেইম এনাজের হাসি।এনাজও এভাবে একগালে হাসতো। যখন আমি ওর সাথে অভিমান বা রাগ করতাম।তখন একগালে অদ্ভুত রকম করে হাসতো।আমার এই হাসিটা ভীষণ পছন্দের ছিলো।এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি ইতস্ততায় পরে গেলো।আমার দিকে না তাকিয়ে একের পর এক ব্যবসা সম্পর্কিত প্রশ্ন করতে লাগলো।আমি এক ধ্যানে তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিতে লাগলাম।উনি আড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। তাকিয়ে যেই দেখতে পাচ্ছে আমি তার দিকে দুগালে হাত রেখে তাকিয়ে আছি। ওমনি সে সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আমি ফাঁকের মধ্যে মোবাইল বের করে ফ্লাশ বন্ধ করে দুটো ছবি তুলে নিলাম।তায়াং ভাইয়াকে দেখাতে হবে তো।মোবাইল ব্যাগে রেখে পূর্বের মতো স্বাভাবিক হলাম।মোবাইল বের করার সময় যে ব্যাগ থেকে আমার প্রিয় নীল মলাটের ডায়েরীটা বের করেছিলাম তা ব্যাগে ঢুকাতে ভুলে গেলাম।যার ফলে সেটা টেবিলে ফাইলের একপাশে পরে রইলো।কি মনে করে যেনো গতকাল ব্যাগে ঢুকিয়ে রেখেছিলাম।কিন্তু কাজের সময় ভুলে গেছি।তাজের চোখে এখনো অস্থিরতা লুকিয়ে আছে।ভুলেও আমার চোখের দিকে তাকাচ্ছে না। আমার মুখে হাসি ফুটে উঠছে।

তাজঃ আপনি এখন আসতে পারেন।আপনি যদি জবটা পান তাহলে আমরা আপনাকে রাতে কল করে জানিয়ে দিবো।আর দু-এক দিনের মধ্যে জয়েনিং লেটারও পেয়ে যাবেন।

আমিঃ শুকরিয়া।

তাজঃ আরেকটা প্রশ্ন ছিলো।যদিও সেটা প্রশ্ন নয় আমার অনুরোধ। সেটা আপনার পার্সোনালি বিষয় । তাও যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি অনুরোধটা কি করতে পারি?

আমিঃ হুম করতে পারেন।

তাজঃ আপনাকে সাদা রঙে একটুও মানায় না।এই রঙে নিজেকে আর রাঙাবেন না।আপনি সম্ভবত আগে অনেক শৌখিন ছিলেন।আমি আন্দাজে ঢিল মারলাম।জানিনা কতটুকু সঠিক।

আমি তাচ্ছিল্যের সাথে হাসলাম।হুট করে এনাজের ওপর একরাশ অভিমানের পাহাড় জমে গেলো।কি সুন্দর করে সে আমাকে এই অনুরোধটা করে দিলো।সে কি জানে এই অনুরোধটা যে আমার হৃৎপিণ্ডটাকে বিধ্বস্ত করে দিতেই যথেষ্ট। আমি শান্ত কণ্ঠে উত্তর দিলাম।

আমিঃ “যেখানে জীবনের রংটাই ফিকে
সেখানে শখ করা নিত্যান্ত মূল্যহীন”

চোখের পানিটা আড়ালে মুছে নিলাম।কথাটা বলে চেয়ার থেকে উঠে পরলাম।সার্টিফিকেট গুলো গুছিয়ে ফাইলে ভরে নিলাম।কিন্তু ডায়েরীটা একটুও খেয়াল করলাম না।তাজ আবারো উল্টো দিকে গিয়ে কাচে বাইরের ব্যস্ত নগরী দেখতে মনোযোগ দিলো।দরজার সামনে দাঁড়াতেই আমি থমকে দাঁড়ালাম চিরচেনা একটা ডাক শুনে।

তাজঃ বাটারফ্লাই!!!!

বাটারফ্লাই, ডাকটা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।এই নামে শুধু আমাকে এনাজ ডাকতো।তাজ কি তাহলে এখন স্বীকার করবে ও আমার এনাজ।খুশি মনে দৌড়ে তাজের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।

আমিঃ আপনি কি বললেন?

তাজঃ বাটারফ্লাই বললাম।

আমিঃ আপপপপনননি কি আআআমাককে বলললেন??( কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে)

তাজঃ আপনাকে কেন বলবো?আমিতো এই প্রজাপতিটাকে দেখে বললাম।

এক নিমিষেই আমার মুখের হাসি বিলীন হয়ে গেল।সামনে তাকাতে দেখলাম সত্যি কাচের বাইরে ছোট একটা প্রজাপতি। আবার আমার দু চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরেই গেলো।রাগে,অভিমানে কাঁদতে কাঁদতে কেবিন থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম।

🦋🦋🦋

কফি হাউসে মুখ গোমরা করে বসে আছি। শূন্য দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। তায়াং ভাইয়া খুটিয়ে খুঁটিয়ে আমার মোবাইলে তাজের ছবি দেখছে।অফিস থেকে বের হয়েই তায়াং ভাইয়াকে ইমিডিয়েটলি কল করে এখানে আসতে বলেছি।তারপর তাজের সব ঘটনা খুলে বললাম।সেই কখন থেকে তায়াং ভাইয়া তাজের ছবি দুটোকে পর্যোবেক্ষণ করছে।আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।

তায়াংঃ তুই সিউর এটা এনাজ?

আমিঃ হ্যাঁ,আমি সিউর।পুরো একটা বছর তার সাথে আমি সংসার করেছি।তাকে চিনতে আমি ভুল করবো না।

তায়াংঃ কিন্তু চেহারায় একফোঁটাও মিল নেই।

আমিঃ চোখ দুটো দেখ।অবিকল এনাজের চোখ।

তায়াংঃ হুম,চোখ দুটো মনে হচ্ছে। কিন্তু আর কিছু নয়।

আমিঃ তুই ছবিতে দেখে এসব বলছিস।কিন্তু সামনাসামনি দেখলে তুইও সিউর হয়ে যাবি এই তাজই এনাজ।একটা মানুষের চেহারা পাল্টাতে পারে,ধরলাম স্বভাবও পাল্টাতে পারে। কিন্তু কন্ঠস্বর কিংবা চোখ কি করে পাল্টাবে।তাছাড়া হাতের সেম জায়গায় বড় তিল, এটাও তো অবিশ্বাস্য ব্যাপার। পেছন থেকে বডিও অবিকল একিরকম দেখতে।এনাজের মতো একগালে হাসিটাও।

তায়াংঃ তোর কথা শুনে তো আমারও সন্দেহ হচ্ছে এই তাজের ওপর।

আমিঃ আমি যতবার এনাজের নাম নিয়েছি ততবার কেঁপে উঠেছে ও।আমি সিউর এনাজ বেঁচে আছে। আর এই তাজই আমার বাচ্চার বাবা এনাজ।

তায়াংঃ তুই কি এনাজকে সেদিন আগুনে পুড়তে দেখেছিস? ভালো করে মনে করে তারপর বলবি।

আমিঃ না, আমি ওকে আগুনে পুড়তে দেখিনি।তবে ওর গায়ে যখন আগুন ছুঁড়ে মারলো।তখন দাউদাউ করে আগুন জ্বলে উঠেছিলো।তারপর আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।

তায়াংঃ এমন হয় নি তো।সেদিন ওকে কেউ বাঁচিয়ে নিয়েছিলো।আর ওর চেহারা আগুনে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্লাস্টিক সার্জারি করে ওকে নতুন চেহারা দিতে হয়েছে।

আমিঃ আমিও এমনটা ভাবছি।সেদিন কোনভাবে এনাজ বেঁচে গিয়েছিল। আর ওর চেহারা আগুনে পুড়ে যাওয়ায় প্লাস্টিক সার্জারি করে নতুন চেহারা দিয়েছে। যদি এটা এনাজ হয় তাহলে আমার থেকে কেন নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে? ও তো জানতো আমি প্রেগন্যান্ট ছিলাম।ওর বাচ্চাকে কেন দেখতে এলো না। তুই তো জানিস এনাজ আমাকে কতটা ভালোবাসে।আমাকে না পেলে মরে যাবে এমনটা হুমকি দিয়েছিলো তোকে।যার জন্য তুই, আম্মু,আব্বু আমাকে জোর করে বিয়েটা দিয়েছিলি।

তায়াংঃ সেটা আমিও ভাবছি।এমনটাও তো হতে পারে যে, এনাজ সবার থেকে আড়ালে থেকে নিজের খুনীকে খুজছে।তবে আমি কি এই তাজের সাথে সামনাসামনি দেখা করবো?

আমিঃ না, এখন করিস না।তুই বরং এই তাজের খোঁজ-খবর নে।কোথায় থাকে? কি করে? বাসায় কে কে আছে? এখন থাকে কোথায়? আগে কোথায় ছিলো? কোন অতীত আছে কিনা।সবকিছুর তথ্য জোগাড় কর।এগুলো হাতে পেলেই আমরা বুঝতে পারবো এটা সত্যিই আমার এনাজ কিনা।আমার মন বলছে এটা আমার এনাজ।

তায়াংঃ আচ্ছা আমি সব খোঁজ নিচ্ছি। সাথে তাজকে ফোলো করবো।যদি কোন শক্ত প্রমাণ পেয়ে যাই।

আমিঃ এনাজের চেহারা পাল্টালেও স্মৃতি শক্তি হারায়নি।যদি স্মৃতি শক্তি না থাকতো তাহলে আমাকে দেখে ওভাবে চমকাতো না।আমাকে ও বাটারফ্লাই বলে ডেকেছে। এই নামে তো শুধু এনাজই আমাকে ডাকতো।আমি খুশি হয়ে ওর কাছে যেতেই ও বলে কাচের ওপর প্রজাপতি দেখে ও বাটারফ্লাই নাম নিয়েছে। কিন্তু আমি জানি ও আমাকে ডেকেছে। ওর চোখে আমি অপরাধী ভাব দেখেছি,অস্থিরতা দেখেছি। আমি যখন ব্যাথা পেলাম তখন আৎকে চেয়ার থেকে উঠতে চেয়েছিল।কিন্তু উঠেনি।যদি ধরা পরে যায়।আমার জন্য অন্য রকম কিছু অনুভব করতে দেখেছি।
ও যদি এনাজ হয় তাহলে অবশ্যই আমাকে চাকরীটা দিবে।এটাও আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারি।

তায়াংঃ আর কিছু??

আমিঃ ও আমার চোখের দিকে ভুলেও তাকাচ্ছিলো না।তুই তো জানিস আমার চোখ দুটো ওর সবচেয়ে বেশি পছন্দের ছিলো।আমার চোখের দিকে তাকালে ও নাকি সব গুলিয়ে ফেলে।আজ যেনো আমার সামনে নিজেকে গুলিয়ে না ফেলে তাই আমার চোখের দিকে তাকায়নি।

তায়াংঃ ও হয়তো অপরাধবোধে ভুগছিলো।যার কারণে তোর চোখের দিকে তাকাতে পারছিলো না। চোখের দিকে তাকালে নিজের ওপর রাগ হবে তার জন্য।

আমিঃ হতে পারে। তোকে দায়িত্ব দিলাম।তুই এই তাজের পুরো বায়োডাটা বের করবি।আজ তাহলে উঠি।নাভানকে সকালে তাড়াহুড়ায় কিছু খাওয়ানো হয়নি।বাসায় গিয়ে খাওয়াতে হবে। জানি না এরিন,হিমি আদোও ওকে কিছু খাওয়াতে পেরেছে কিনা।

তায়াং ভাইয়া ও আমি কফি হাউস থেকে বেরিয়ে গেলাম।ভাইয়া আমায় বাসায় পৌঁছে দিলো।রাতে কল এলো আমার চাকরিটা হয়ে গেছে। দুদিন পর জয়েন হতে হবে।আমি খুশিতে এরিন ও হিমি কে জড়িয়ে ধরলাম।

পরেরদিন সকালে………

একটানা কোলিং বেল বেজে যাচ্ছে। নাভান ঘুমিয়েছে।এরিন সম্ভবত ওয়াসরুমে আর হিমি ঘুমে।আজ শো করতে যাইনি।সকালে উঠতে দেরী হয়ে গেছে। তাই আটটার দিকে উঠে রান্না বসিয়েছি।

আমিঃ এই অসময়ে আবার কে এলো?

কিচেন থেকে ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে দরজার সামনে গেলাম।দরজা খুলতেই আমার মুখটা রাগে লাল হয়ে গেলো।দরজার ওপর পাশের ব্যাক্তিটাকে দেখে রাগে মাথা গরম হয়ে গেছে।কিন্তু সেই মানুষটা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে তার সাদা কোর্ট-প্যান্ট।কোর্টের ভেতরে গাঢ় বেগুনি কালার মখমোলের শার্ট।কোর্টের ওপর দিয়ে গলার দুই পাশে বেগুনি রঙের মখমোলের ছেলেদের ওড়না ঝুলানো।হাতে বিশাল এক ফুলের তোড়া।এক হাতে ফুলের তোড়া আরেক হাতে কোর্ট ধরে স্টাইল নিয়ে দাড়িয়ে আছে। তোড়ার ভেতরে দিকটা নীল গোলাপ আর চারিদিকে সাদা গোলাপের গোল ঘেরা দিয়ে তৈরি ।কিন্তু এই লোকটা আমার খোঁজ কি করে জানলো?

নীল রঙ আমার পছন্দ। কিন্তু নীল গোলাপ থেকে লাল গোলাপ আমার বেশি পছন্দ। তার থেকেও বেশি বকুল ফুল।এই বকুল ফুল দেখলে আমার হুশ থাকে না।বকুলের মালাও আমার ভীষণ পছন্দ। বকুলের ঘ্রাণ আমার অনেক অনেক ভালো লাগে ।আগে প্রায় এনাজ আমার জন্য বকুলের মালা নিয়ে আসতো।যদিও এটা পাওয়া অনেক কঠিন ছিলো।কিন্তু আমার জন্য সে এই কঠিন কাজটাও অনায়াসে করে নিতো। আমি ফুলের দিকে তাকিয়ে অন্য ধ্যানে চলে গিয়েছিলাম।সামনে থাকা ব্যাক্তিটা আমার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো।

— ভেতরে কি ঢুকতে দিবে না,পাখি? এভাবেই বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে ?

#চলবে

বলুন তো সামনে থাকা ব্যাক্তিটা কে হতে পারে?আমি কিন্তু ক্লু দিয়ে দিয়েছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here