প্রজাপতির_রং🦋 Part_32

0
1179

প্রজাপতির_রং🦋
Part_32
#Writer_NOVA

—- তায়াং ভাইয়া!!!!

আমি চিৎকার করে চোখ খুললাম।এনাজ,রোশান দুজন কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এত জোরে চিৎকার করেছি যে আমার নিজেরই গলা ব্যাথা করছে।পিটপিট করে চোখ খুলতেই দেখি তায়াং ভাইয়া খাইয়া ফালামু লুক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

তায়াংঃ ঐ ছেমরি চুপ কর।গলা তো না,মনে হয় ফাটা বাঁশ। কানের পর্দা তো ফাটায় ফালালি।

আমিঃ ওরে পাঠা রে!! আমি তো মনে করছিলাম তুই মইরা গেছত।কেউ তোরে গুলি করে মাইরা ফালাইছে।

তায়াংঃ নাটকি বেগম।নাটক তো ভালোই পারিস শাঁকচুন্নি। ওরা দুজন তোকে নিয়া যা শুরু করছিলো তা থামাইতে উপরের দিকে গুলি করছি।

আমিঃ আর কইস না ভাই। দুইজনের আমার প্রতি ভালোবাসা একেবারে বাইয়া চাইয়া পরতাছে।আল্লাহ গো আমার কোমড় 😵।বসে থাকতে থাকতে কোমড় ধরে গেছে। একটু আগে উঠতে গিয়ে আবার পেলাম ব্যাথা।এমনি আমি সিজারের মানুষ। আর এরা যা শুরু করছে তা সহ্য করার মতো না।

আমার কথা শুনে এনাজ ও রোশান দুজনেই ব্যস্ত হয়ে গেলো।আমার দিকে দুজন এগিয়ে আসতে নিলেই আমি নিজের শরীরে একটু শক্তি জোগাড় করে ব্যাঙের মতো দুটো লাফ দিয়ে পিছিয়ে গেলাম।

এনাজঃ কি হয়েছে তোমার? কোথায় ব্যাথা পাইছো বাটারফ্লাই?

রোশানঃ পাখি,তুমি ঠিক আছো তো?

আমিঃ থাম ভাই তোরা।এত দরদ দেখাইতে হইবো না। দুইজনে আমার দুই হাত টানাটানি কইরা আমার হাতের হাড্ডির জয়েন ঢিলা কইরা ফালাইছোত।হাত দুইটা মনে হয় আরেকটু হইলে ছুইট্টাই যাইতো।যেমনে টানাটানি শুরু করছিলি।আরেকটু সময় থাকলে আমি ছিড়াই যাইতাম।শোন ভাই,তোদের আমি ভালো একটা সলিউশন দেই।

এনাজঃ কি?

রোশানঃ কিসের সলিউশন?

আমিঃ আপনাদের দুজনেরই তো আমাকে লাগবো তাই না।তাহলে আপনারা দুজন মিলে আমাকে সমান দুই ভাগে ভাগ করেন।তারপর দুই ভাগ দুইজন নিয়ে যান।ব্যাস সমস্যার সমাধান হয়ে গেলো।

এনাজঃ আমি তোমার ভাগ আর কাউকে কখনো দিতে পারবো না বাটারফ্লাই। তুমি পুরোটাই আমার।তুমি আগেও আমার ছিলে,এখনও আছো আর ভবিষ্যতেও থাকবে।আমি বেঁচে থাকতে তোমাকে অন্য কারো হতে কখনও দিবো না।

এনাজ রোশানের দিকে তাকিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললো।রোশান রাগে লুচির মতো ফুলছে।আমি ভয় পাচ্ছি ওরা দুজন আমার জন্য আবার মারামারি না শুরু করে দেয়।দুজনেই একে অপরের দিকে ক্রুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রোশান, এনাজকে আগে কখনও দেখেনি।এমন কি ছবিও না।যার কারণে সে বিশ্বাস করে নিয়েছে এটা এনাজ।তবে যদি বাই চান্স এনাজের আগের ছবি কিংবা ওকে যদি দেখতো তাহলে এখন এখানে কুরুক্ষেত্র হয়ে যেতো।রোশান কিছুতেই বিশ্বাস করতো না এটা এনাজ।আমি ধপ করে চেয়ারে বসে পরলাম।তায়াং ভাইয়ার লোক চলে এসেছে। তারা মোরশেদ ও সাইমনের লাশটা নিয়ে গেলো।সাথে ওদের সাঙ্গপাঙ্গদেরও।ততক্ষণ সবাই চুপচাপ ছিলো।তায়াং ভাইয়া খোঁড়াতে খোঁড়াতে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো।

তায়াংঃ তোদের ড্রামা শেষ হয়েছে? এক নায়িকা নিয়ে দুই নায়কের তামিল মুভি শুরু করে দিছিলি।যদি শেষ হয় তাহলে দয়া করে এখান থেকে চল।

আমি তায়াং ভাইয়াকে খুড়িয়ে হাটতে দেখে চোখ দুটো ছোট ছোট করে ওর পায়ের দিকে তাকালাম।পা রক্তে ভিজে গেছে। বেল্টের জুতা রক্তে মাখামাখি। আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম।

আমিঃ তায়াং ভাইয়া তোর পায়ে কি হয়েছে? তুই খুড়িয়ে হাঁটছিস কেন?

তায়াংঃ ঐ ছেমরি এত চিল্লাস কে? আস্তে করে কথা বলতে পারিস না।আমি কি তোর মতো বয়রা নাকি?

আমিঃ এর জন্য বলে কারো ভালো করতে নাই।আমি ভালো বলে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে? আর তুই আমাকে ধমকাচ্ছিস।

তায়াংঃ বুঝতে পারতাছি না কি হলো। মারামারি করতে গিয়ে নিশ্চয়ই কোন ভারী কিছুর সাথে লেগে নখ উপরে গেছে। তখন টের পাইনি।একটু আগে ব্যাথা অনুভব করে পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি রক্ত বের হচ্ছে। রক্ত মুছতে গিয়ে দেখি অনেকটা নখ উপরে গেছে। এখন অনেক ব্যাথা করছে।

আমিঃ গন্ডারের চামড়া তো টের পাবি কি করে?

এনাজঃ চল বের হই।

তায়াংঃ হুম চল।রোশান আপনিও আমাদের সাথে যেতে পারেন।

রোশানঃ No Thanks.

এনাজ রোশানকে সাইড কাটিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি কপাল কুঁচকে তার দিকে তাকালাম।কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে কোলে তুলে নিলো।আমার চোখ কোটর থেকে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এনাজ যে এমন কিছু করবে তা আমি ভাবতে পারিনি।আমি হাত-পা ছুঁড়ে নামার জন্য ছটফট করতে লাগলাম।

আমিঃ ঐ মিয়া, নামান কইতাছি।জলদী নামান।আপনার সাথে আমার কোন কথা নাই।জলদী নামান, নয়তো কামড় দিমু।

এনাজঃ যত খুশি দিতে থাকো।তবে আরেকবার নড়লে কোলের থেকে ঠাস করে ফ্লোরে ফেলে দিবো।তায়াং চল।মিস্টার রোশান,আপনি চাইলে এখানে থাকতেও পারেন।আবার চলেও যেতে পারেন।পুরোপুরি আপনার ইচ্ছা। আমি আমার বউ নিয়ে গেলাম।

ফেলে দেওয়ার কথা শুনে আমি ভদ্র মেয়ে হয়ে গেলাম।সত্যি যদি ফেলে দেয় তাহলে আমার কোমড়ের হাড্ডি ভেঙে গুঁড়া গুঁড়া হয়ে যাবে।আমাকে যাতে ফেলে দিলে না পরি তার জন্য দুই হাতে এনাজের গলা জড়িয়ে ধরে রাখলাম।এবার আমাকে ফালাতে চাইলেও আমি পরবো না। রোশান রাগে ফেটে যাচ্ছে। বেচারার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। আহারে, বেচারা!!! রোশান কোন কথা না বলে গটগট করে আমাদের আগে বের হয়ে গেলো।

তায়াংঃ আহা, কি প্রেম!!! আমি হাঁটতে পারছি না।কোথায় আমাকে ধরে ধরে নিয়ে যাবে।তা না করে সে বউকে কোলে তুলে নিয়েছে। একেই বলে বন্ধুত্ব।

এনাজঃ চুপচাপ হেঁটে আয়।এতটুকু তে কি হয়?

তায়াংঃ চুপ শালা।

এনাজঃ আমি তোর বোন জামাই তায়াং।(আমার দিকে তাকিয়ে) একটু আগে তো কোলে উঠিয়েছি বলে ছটফট করছিলে।আর এখন একদম চুপচাপ। জানোই যখন আমার সাথে পারবে না। তাহলে মন-মতলবিগুলো কেন করো? আমার অবাধ্য না হলে কি তোমার ভালো লাগে না?

আমিঃ তায়াং ভাইয়া এই আনাইজ্জারে ভালো হইয়া যাইতে বল।এত দরদ দেখাইতে হইবো না। আমি একাই নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি।কাউকে প্রয়োজন নেই।

তায়াং ভাইয়া আমার কথা শুনে এনাজের পাশাপাশি দাঁড়ালো। তারপর ওর পিঠে চাপর মারতে মারতে বললো।

তায়াংঃ ভালো হয়ে যাও এনাজ,ভালো হয়ে যাও।

তায়াং ভাইয়ার কথা শুনে আমি হো হো করে হেসে উঠলাম।এনাজ আমাকে নিয়ে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে সামনে তাকিয়ে হাঁটছে। আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো।

এনাজঃ আবার মুখ খুলছো তো।তখুনি ফালায় দিবো।

আমিঃ না না।প্লিজ ফেলবেন না।

বাকি রাস্তা আমি চুপচাপ ছিলাম।গাড়িতে উঠিয়ে সামনের সিটে বসিয়ে সিট বেল্ট লাগিয়ে দিলো এনাজ।তারপর গাড়ির থেকে এন্টিসেপটিক ও ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ নিয়ে তায়াং ভাইয়ার পায়ে লাগিয়ে দিলো।তায়াং ভাইয়া পেছনের সিটে বসলো।এনাজ আমার সাথে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

🦋🦋🦋

গাড়ি চলছে নিজস্ব গতিতে। জানলার কাচ খুলে বাইরে তাকিয়ে আছি।দুপুরের রোদের তেজটা আজ অন্য দিনের থেকে কম।বাতাসে চোখের সামনে বেবী চুলগুলো এসে বারবার ডিস্টার্ব করছে।হাত দিয়ে সেগুলো বারবার ঠিক করে দিচ্ছি। এনাজ ড্রাইভ করার মাঝে মাঝে আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। যা আমার নজর এড়াচ্ছে না।হঠাৎ আমার নাভানের কথা মনে পরলো।এত ভেজালের মধ্যে আমি ছেলেটার কথা পুরো ভুলেই গেছি।সেই যে গতরাত এখানে এসেছি। আর আজ দুপুরে ফিরছি।এর মধ্যে নিশ্চয়ই নাভান ওর খালামণিদের পাগল করে ফেলেছে আম্মু কো,আম্মু কো বলে।ঠিকমতো খাবারও তো খাবে না।আমার মোবাইল,ব্যাগের খোঁজ আমি নিজেও জানি না।

আমিঃ তায়াং ভাইয়া আমার ব্যাগটা কোথায় রে?মোবাইলটা লাগবে।

এনাজঃ মোবাইল দিয়ে কি করবে?

আমিঃ আপনাকে কেন বলবো?

এনাজঃ সোজা কথা সোজা করে উত্তর দিতে পারো না। এতো ত্যাড়ামী করো কেন?(দাতে দাঁত চেপে)

আমিঃ আমার কাজই ত্যাড়ামী করা।আমি সোজাভাবে কিছু করতে পারি না। আর আমার কাজের জন্য আমি কাউকে কৈফিয়ত দিতে পছন্দ করি না।আপনার মন মতো যখন আপনি চলেন।তখন কি আমি কিছু জিজ্ঞেস করতে যাই?

এনাজঃ রাগিয়ো না আমায়।

আমিঃ কি করবেন রাগালে?কি করবেন? আড়াই বছর পর এসে দয়া দেখানো হচ্ছে। তার কোন দরকার নেই। আমি কারো দয়া বা অনুগ্রহে বাঁচতে চাই না। আড়াই বছর অনেক মানুষের অনেক কথা শুনে, নানারকম বাজে পরিস্থিতিতে পরে নিজেকে শক্ত করে ফেলেছি।এখন নিজের যেটা ভালো মনে হয় তাই করি।কারো কথা শোনার প্রয়োজন মনে করি না।আপনি যা করেছেন তা কখনো ক্ষমার যোগ্য নয়।আমি আপনাকে ক্ষমা করবো না কখনো।

এনাজঃ এখন এসব কথা কেন উঠছে? আমি কি কিছু বলছি?

আমিঃ নাহ কিছু বলেন নি।তবে আচার-আচরণে তাই বুঝাচ্ছেন।আমার ওপর অধিকার দেখানো শুরু করছেন।আমাকে আপনার মন মতো চালাচ্ছেন। এগুলো আমি একদম সহ্য করবো না।

এনাজঃ তুমি শুধু শুধু ঝামেলা করছো।

আমিঃ আমি তো শুধু শুধুই করি।আর আপনি সব কারণে করেন।আপনি আপনার মতো চলুন।আমি আমার মতো।একদম আমার জীবনে প্রবেশ করার চেষ্টা করবেন না।আমি একাই ভালো আছি।

এনাজঃ আমি একশো বার তোমার ওপর অধিকার দেখাবো।তোমার জীবনে আমিই আছি।আর আমিই থাকবো।

আমিঃ একটুও না।আপনি আড়াই বছর আগের এনাজ নন।আপনি এখন তাজ।এনাজের সাথে আপনার আকাশ-পাতাল তফাৎ।

এনাজঃ সামান্য বিষয় নিয়ে তুমি এমনটা না করলেও পারতে।

আমিঃ একদম কথা বলবে না আমার সাথে। আমি আপনার কেউ হই না।

আমার কেন জানি হুট করে রাগ উঠে গেলো। কেন তাও জানি না। এনাজের পুরনো কথা মনে পরে গেছে। তাছাড়া নাভানের কথাও একবারও জিজ্ঞেস করলো না।আমি নাভানের সাথে কথা বলবো বলে মোবাইল খুঁজছিলাম। সেটাতে কেন যেচে প্রশ্ন করলো।এই বিষয়টাতে যেনো আরো বেশি রাগ হলো তার ওপর।তাই এতো কথা শুনালাম।পেছন থেকে তায়াং ভাইয়া আমাদের দুজনকে ধমকে উঠলো।

তায়াংঃ কি শুরু করলি তোরা? গাড়ির মধ্যে এভাবে কেউ ঝগড়া করে? সবেমাত্র চোখ দুটো লেগে এসেছিলো।তাতেও শান্তি নেই।

আমিঃ তায়াং ভাইয়া, আমার ব্যাগ কোথায় রে?

তায়াংঃ পেছনে। কেন?

আমিঃ আমার মোবাইলটা একটু দে তো।নাভানের খোঁজ নিবো।আল্লাহ জানে ছেলেটা কেমন আছে।

হঠাৎ করে বেশ জোরে এনাজ ব্রেক কষিয়ে গাড়ি থামালো।আমি সামনের দিকে হেলে পরলাম।সিট বেল্ট না থাকলে নির্ঘাত কপাল ফাটতো।আমি চেচিয়ে এনাজকে বললাম।

আমিঃ কি হলো? এভাবে গাড়ি থামালেন কেন? আরেকটু হলেই তো আমার কপাল ফাটতো।

এনাজঃ নাভান কে?

এনাজ নাক,মুখ কুঁচকে বিস্ময়ের ভঙ্গিতে কথাটা জিজ্ঞেস করলো।তার প্রশ্ন শুনে আমার মনে একটা জিদ চেপে গেলো।নাভানের কথা যদি সে নাও জানে তাহলে তাকে আমি বলবো না। বাহ্ কত ভালোবাসা তার।সে জানেই না নাভান কে।আমার তো মনে হয় সে বোধহয় এটাও জানে না যে আমার একটা ছেলে আছে। হয়তো এটাও ভুলতে বসেছে যে সে গায়েব হওয়ার আগে আমি ছয় মাসের প্রেগন্যান্ট ছিলাম।আমি কাঠ কাঠ গলায় উত্তর দিলাম।

আমিঃ আপনার কেউ না।আমার সব।

এনাজঃ মানে? তায়াং তোর বোন কি বলছে?ওর কথা তো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। নাভান কে?

আমি হাতের আঙ্গুল মুখে নিয়ে ইশারায় তায়াং ভাইয়াকে চুপ থাকতে বললাম।তায়াং ভাইয়া আমার ইঙ্গিত বুঝতে পেরে বললো।

তায়াংঃ সেটা তোর বউয়ের থেকে জেনে নে।তোদের স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার তোরা সলভ কর ভাই।মাঝে আমায় টানিস না।

এনাজঃ নোভা আমি জিজ্ঞেস করছি নাভান কে?

আমিঃ আমি জানি না।

এনাজ আর কোন কথা বললো না।রাগী মুখে ড্রাইভ করতে লাগলো।সারা রাস্তায় কারো সাথে কেউ কথা বললাম না।নাভানকেও কল করলাম না।এনাজের সামনে কথা বলতে চাই না তাই।তায়াং ভাইয়া অর্ধেক রাস্তায় নেমে গেলো। তার আবার অফিসে যেতে হবে কিসব ফর্মালিটি পূরণ করতে।গাড়িতে শুধু আমি ও এনাজ।এনাজের মুখ রাগে লাল হয়ে আছে। তাতে আমার কিছু আসে যায় না।আজ তাকে মনের মতো কতগুলো কথা শুনাতে পেরেছি। তার জন্য মনটা খুশি খুশি লাগছে।আমাদের বাসা থেকে কিছুটা দূরের গলিতে গাড়ি থামাতে বললাম।আমি চাই না সে বাসার সামনে আমাকে নামিয়ে দিক।কেউ দেখলে আবার নষ্টা মেয়ে উপাধি পাবো।তার কি দরকার। আমি গাড়ি থেকে নামতেই এনাজও সাথে সাথে নামলো।

আমিঃ আমাকে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ। উপকারটা তুলে রাখলাম। যদি কখনো সুযোগ হয় তাহলে এই ঋণ শোধ করে দিবো।

আমার কথা শুনে এনাজ রক্তচোখে আমার দিকে তাকালো।এই চাহনির দিকে তাকিয়ে থাকার সাহস আমার নেই। আমি চোখ নামিয়ে ফেললাম।

এনাজঃ রেডিও স্টেশনের চাকরীটা ছেড়ে দিও।সাথে অফিসের জবটাও ছেড়ে দিবে।

আমিঃ ফাইজলামি পাইছেন।চাকরী ছেড়ে দিলে আমি চলবো কি করো?আমাকে না খেয়ে মরার বুদ্ধি দেন।আমি আপনার কথা শুনছি না। (রেগে)

এনাজঃ এই মাসের মধ্যে আমি নতুন ফ্ল্যাট কিনবো।সেখানেই উঠবো তোমাকে নিয়ে।তোমার খরচের কথা আর চিন্তা করতে হবে না। এখন থেকে সবকিছু আমি বহন করবো। তুমি একা থাকতে থাকতে বেশি উড়তে শুরু করেছো।তোমার উড়ার ব্যবস্থা কমাতে হবে।

আমিঃ আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো।আমার ইচ্ছায় একদম বা হাত ঢুকাতে আসবেন না।আমি খুব শীঘ্রই আপনার কাছে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবো। তাতে সই করে আমাকে মুক্তি দিবেন।ডিভোর্স……….

পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই আমার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় পরলো।গালটা জ্বলে যাচ্ছে, সাথে বা কানটা তব্দা খেয়ে রইলো।গালে হাত দিয়ে এক মিনিট স্তব্ধ হয়ে রইলাম।চোখে সব অন্ধকার দেখছি।সারা মাথা ঝিম ঝিম করছে।সব শক্তি লাগিয়ে আমাকে থাপ্পড়টা মেরেছে এনাজ।আশেপাশের কোন শব্দ শুনছি না।শুধু এনাজের কথাগুলো কোনরকম কর্ণগোচর হচ্ছে।

এনাজঃ অনেকখন ধরে সহ্য করছি।কিছু বলছি না বলে সাহস বেড়ে গেছে? সহ্যের সীমা এবার অতিক্রম করে ফেলেছো।আরেকবার ডিভোর্সের নাম মুখে নিলে কণ্ঠনালি টেনে ছিঁড়ে ফেলবো।তখন আমিও দেখবো ডিভোর্স শব্দটা উচ্চারণ করো কি করে? তুমি চাইলেও আমার সাথে থাকতে হবে,না চাইলেও । ডিভোর্স তোমাকে আমি জীবনেও দিবো না। ভালো কথায় থাকতে না চাইলে শিকল দিয়ে বেঁধে নিজের কাছে রেখে দিবো।তাও অন্য কোথাও যেতে দিবো না। আমার থেকে মুক্তি তোমার জীবনেও মিলবে না।ভালো লাগলেও আমার হয়ে থাকতে হবে, খারাপ লাগলেও আমরই থাকতে হবে। অনেক স্বাধীনতা দিয়েছি।কিন্তু এখন দেখছি এটাই আমার ভুল।এবার বাটারফ্লাইকে তার খাঁচায় বন্দী করার সময় হয়েছে।

আমি গালে হাত দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। পাগলটা কে অনেক রাগিয়ে ফেলছি।আমি তো এমনি ওকে ভয় দেখানোর জন্য ডিভোর্সের কথা বলেছিলাম।কিন্তু পাগলটা যে এতো রেগে যাবে তা কে জানে? আমি তো ওকে কখনো ডিভোর্স দিবো না। আমি চাই না আমার ছেলে বাবা ছাড়া বড় হোক।কিন্তু হীতের বিপরীত হবে তা কে জানতো।

এনাজঃ একবারো কি আমায় জিজ্ঞেস করেছো আমি এই আড়াই বছর কিভাবে পার করেছি? কিভাবে বেঁচে ছিলাম? তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে পাগল হয়ে গিয়েছিলাম আমি।সেটা কি জানো তুমি?এমন কোথাও নেই যে তোমাকে খুঁজিনি।আর তুমি ভাবছো তোমাকে আমি একটুও খুজিনি।এই আড়াই বছর আমার ওপর দিয়ে কি ঝড় গিয়েছে তা কি তুমি জানো? এই এনাজটা না তোমার বিরহে পুরো পাগল হয়ে গিয়েছিলো।হাসতে ভুলে গিয়েছিল। মাঝরাতে তোমার নাম নিয়ে চিৎকার করে উঠে পাগলের মতো করতো।তখন আমাকে সামলাতে কি কষ্ট হতো তা আমার পালিত পরিবার কে জিজ্ঞেস করে দেখো।কোথায় তোমায় খুঁজি নি বলো?তোমার বাসায় যে কতবার গিয়েছি তার কোন হিসেব নেই।তোমার বাসার কিংবা গ্রামের কোন লোকজন জানে না তুমি কোথায়?তায়াংদের বাসায়ও গিয়েছিলাম।কিন্তু সেখানে গিয়ে শুনি তায়াংরা বাসা পাল্টে ফেলেছে।প্রতিটা রাত কাঁদতে কাঁদতে মাথাব্যথা উঠে যেতো আমার।রাতটা চোখের পানি নিয়ে পার করতে হয়েছে আমার।এই এনাজ জিন্দা লাশ হয়ে গিয়েছিল। তোমায় পেয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। একবারও তো জিজ্ঞেস করোনি আমি কেমন আছি,কোথায় ছিলাম এতদিন। হ্যাঁ, আমি মানলাম এই কয়েকদিন তোমার সাথে আমার সেরকম কোন কথা হয়নি।তোমার খোঁজ নেওয়া হয়নি।কিন্তু তুমি তো আমার চোখের সামনে ছিলে।ব্যবসার কাজে তোমার খেয়াল রাখা হয়নি।কিন্তু তুমি কি রেখেছো আমার খেয়াল? সবসময় নিজের দিকটা ভেবো না,বাটারফ্লাই।তোমার বিপরীতে থাকা মানুষটার পরিস্থিতিও বোঝার চেষ্টা করো।তাহলে হয়তো এই অভিমান থাকবে না। অভিমান অনেক খারাপ জিনিস বাটারফ্লাই। এই বস্তুটা তিলে তিলে একটা সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়।শুধু এতটুকু মনে রেখো, তুমি যেমন আমাকে ছাড়া ভালো ছিলে না।তেমন আমিও তোমাকে ছাড়া একবিন্দুও ভালো ছিলাম না।একবিন্দুও নয়।

কথাগুলো বলে এক মিনিটও দাঁড়ালো না এনাজ।
চোখ মুছতে মুছতে গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে বসে পরলো।তারপর গাড়ি ঘুরিয়ে নিজের গন্তব্যের পথে ছুট লাগালো।আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি মাঝরাস্তায়।সত্যিই তো আমি তো কখনও এনাজের মতো করে বিষয়টা ভাবিনি।এখন নিজের ওপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। সবসময় এত বেশি কেন বুঝি আমি!!!

#চলবে

এই প্রথম আমার কোন গল্প ৩০ পর্বের ওপরে গেলো।আর কয় পর্ব লাগবে শেষ হতে আমি জানি না।গল্পটা শেষ হওয়ার নামই নিচ্ছে না।এতদিনে আমি ১৫ পর্ব করে দুটো গল্প শেষ করে দিতে পারতাম।কিন্তু এখন একটাই শেষ হয়নি।ফিলিং দুক্কু🥺।আমি একটু অসুস্থ। তাই আগামীকাল গল্প দিতেও পারি,নাও দিতে পারি। তবে না দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই কেউ অপেক্ষা করে থেকেন না।দিতে পারলে অবশ্যই দিবো।না পারলে কেউ রাগ করেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here