#প্রেমানুরাগ পর্ব-২
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথি
ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে প্রেমার সামনে বরাবর চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে অনুরাগ খান। প্রেমার বিস্ময়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। তার মনে অনুরাগের প্রতি ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। অনুরাগ পা নামিয়ে প্রেমার দিকে অনেকটা ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে,
–ওয়েলকাম টু মাই ওয়ার্লড রাজরানী!
প্রেমার শরীর খানিকটা কেঁপে উঠে। অদ্ভুত শিহরণে শিহরিত তার মন ও দেহ! সম্মোহনী কণ্ঠস্বর, চোখের গভীরতা সবটা আবারো প্রেমার ভিতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু প্রেমা তার সামনের অনুরাগ খানকে একরাশ ঘৃণা করে। টিভিতে কয়েকটা মুভিতে অনুরাগ খানের অভিনয় দক্ষতা অসাধারন। প্রেমার ভাবনার ছেদ ঘটে অনুরাগের চুটকি বাজানোতে। অনুরাগ চেয়ার ছেড়ে উঠে প্রেমার সামনে থেকে ঘুরে প্রেমার পেছোনে যায়। তারপর প্রেমার চেয়ারের দুই হাতলে হাত রেখে প্রেমার কানের কাছে মুখ এনে মৃদু কন্ঠস্বরে বলে,
–কি যেনো বলেছিলে! কাল চা বাগান এড়িয়াতে তোমার বন্ধুদের সাথে আমার নামে কি বলেছিলে?
প্রেমা অবাক হয়। কাল বন্ধুদের কি বলেছে তা সুপারস্টার অনুরাগ খান কেনো জানতো চাইছে? ঘার ঘুরিয়ে অনুরাগের দিকে চাইতে গেলে অনুরাগের গালে প্রেমার ঠোঁটের স্পর্শ ঘটে। প্রেমা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সাথে সাথে ছিটকে সরে যেতে নিলে চেয়ার উল্টিয়ে পরে যাবার দশা হয়। অনুরাগ আগলে ধরে। অনুরাগ চেয়ার থেকে হাত সরিয়ে নিয়েছিল বলেই প্রেমার হঠাৎ মুভমেন্টে চেয়ার উল্টে যাচ্ছিলো। অনুরাগ বাঁকা হেসে বলে,
–ওয়াও! ইউ কিসড মি! কেন ইউ প্লিজ ডু ইট এগেইন?
প্রেমা ভ্রুঁ বাঁকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে চাইলো অনুরাগের দিকে। অনুরাগ এবার প্রেমার পেছোন থেকে সামনে এসে পকেটে দুই হাত গুঁজে বলে,
–তো মিস প্রেমা, আপনাকে যখন খাবার খাওয়ার জন্য এক হাত খুলে দেওয়া হয়েছিল তখন আপনি পালান নি কেনো?
প্রেমা কথাটা শুনে রাগে গজগজ করতে করতে বলে,
–এই রুম থেকে বেড়োনোর একটাই দরজা। কোনো জানালা নেই। উপরে একটা ভেন্টিলেটর আছে তাও সিমেন্টের। আর পুরো রুমে একটা ধাতব পদার্থও নেই যা দিয়ে ওই কালু আর ধলুর মাথা ফাটাবো! আর ওই কালো যেমনে তাকায়!
শেষের কথাটা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে প্রেমা। অনুরাগ ভাব নিয়ে বলে,
–তাহলে বলতে হবে, আমি একজন পারফেক্ট কিডন্যাপার! আমি তোমাকে রুমের ভিতর বেঁধে না রাখলেও পারতাম তবে তোমাকে কিছুটা কিডন্যাপ হবার ফিল দিতে বেঁধে রাখা আর কি। মুখে স্কচটেপ ও কাগজ দেবার কারন আমার ভিনদেশী বডিগার্ড গুলার মাথা যাতে খারাপ না করো তুমি।
প্রেমা নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে। অনুরাগ এবার সরাসরি প্রশ্ন করে,
–তো কি যেনো বলছিলে কাল বিকেলে? চা বাগানে যখন হাঁটছিলে?
প্রেমা বিরক্তি নিয়ে বলে,
–আশ্চর্য! আমি আমার বন্ধুদের সাথে যা খুশি বলবো। তাতে আপনার কি?
অনুরাগ আবার চেয়ারটাতে গিয়ে বসে ফোন হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে বলে,
–আমাকে নিয়ে বলবে আবার এটাও জিজ্ঞাসা করবে, তাতে আমার কি! তো সুন্দর করে বলে ফেলো, কি বলছিলে আমাকে নিয়ে?
প্রেমা রাগে কিছুটা উচ্চস্বরে বলে,
–যা বলেছি একদম ঠিক বলেছি। একটাও ভুল বলিনি। আপনাকে নিয়ে এতো মাতামাতির কি আছে? মাত্র দুই একটা মুভি করেই বেশি লাফাচ্ছেন আপনি। কাল চা বাগানে আপনার মিউজিক ভিডিওর কনসার্টের জন্য দার্জিলিংয়ের মানুষজন গায়ককে রেখে আপনার জন্য মাতামাতি করে। আরে ভাই! গানটা যদি সুন্দর না হতো তাহলে তো হিট হতো না। আর মানুষজন আপনার ক্যারেক্টার সম্পর্কে জেনেও আপনার জন্য পাগল! আমি এর ব্যাখ্যাটা পেলাম না। কথায় আছে না,
“দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য!”
তেমনি আপনার মতো চরিত্রহীন যতোই ভালো অভিনেতা হোন না কেনো! আপনার থেকে দূরে থাকাই ভালো। স্বভাব চরিত্র যার বাজে তাকে আমি প্রেমা কখনো সাপোর্ট করবো না। নারীবাজ একটা!
অনুরাগ রাগে ক্ষোভে নিজের চেয়ারটা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তারপর প্রেমার কাছে গিয়ে প্রেমার দুই গাল এক হাতে চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলে,
–মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ মিস প্রেমা হাসান মৌ! কারো সমন্ধে মনগড়া কথা বলাটা এক ধরনের ক্রাইম। ইউ আর হ্যারাসিং মি। যা আমি করিনি তাই আমার নামে তোমার বন্ধুদের কাছে বলে বেড়াচ্ছো। গতকাল জাস্ট তোমার জন্য আমি কনসার্ট ক্যান্সেল করেছি রাগের বশে। আর আজ দেখো, তুমি আমার ডেরায়। আমার রাজ্যে তুমি এসে গেছো রাজরানী! এবার এই ক্যারেক্টারলেস কেই তোমার সহ্য করতে হবে। তুমিই হবে তোমার ভাষায় এই ক্যারেক্টারলেসের রানী। আমার রাজরানী হবে তুমি। আজ বিয়ে হবে আমাদের বি প্রিপেয়ার্ড বেইবি!
অনুরাগ কথা গুলো বলে হাতে চাবির রিং ঘুরাতে ঘুরাতে চলে যায়। প্রেমা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছে। যখন ওর হুঁশ হলো তখন চিল্লা পাল্লা শুরু করছে এই বলে যে,
” শয়তান, বান্দর, ক্যারেক্টারলেস একটা। তোরে আমি বিয়ে করবো না! না! না! আমাকে আরেকবার হাত খুলে দে। তখন নাহয় খিদের জ্বালায় চেয়ার দিয়ে মারার কথা মাথায় আসেনি। এবার আমি সব গুলার মাথা ফাটাবো। যেতে দে আমায়। আম্মুউউ! আমি বাংলাদেশে ব্যাক করবো। এখানে এসে আমি ফেঁসে গেলাম। তখন তোমার কথা শোনা উচিত ছিল। আর আমি এখানে আসবো না।
প্রেমা একলা বদ্ধ ঘরে চিল্লিয়ে যাচ্ছে। কেউ শোনার নেই। বডিগার্ড গুলোও দরজা লাগিয়ে চলে গেছে।
৪.
সারিফ, শান্ত ও রিজন কনসার্ট শেষ হবার পর গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে প্রত্যেককে লক্ষ্য করেছে কিন্তু প্রেমাকে পায়নি। এখন কি করবে বুঝতে পারছে না। আবার পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ বলে,
–দেখেন, এসব ঘ্যান ঘ্যান বাদ দেন। সে নিজেই কোথাও গেছে আর আপনারা বলেন তাকে কেউ তুলে নিয়ে গেছে!
বারবার নিজেদের ও আমাদের সময় নষ্ট করছেন। যান তো যান।
রিজনরা হতবাক হয়ে গেছে। পুলিশরা সাহায্য না করে উল্টে ধমকাচ্ছে। হোটেলে ফিরে নিশিদের সব বললে ওরাও কম অবাক হয় না। এখন কই খুঁজবে কি করব ওরা কিছু বুঝতে পারছে না। ২৪ ঘন্টা যে এভাবেই বসে থাকতে হবে তা পুলিশের ভাষ্যমতে পরিষ্কার। প্রেমার মা প্রেমার হোয়াটসএপে একবার কল করেছিল। কিন্তু কি জবাব দিবে বা কি বলবে সেই ভয়ে কেউ ফোন রিসিভ করেনি।
রিজনরা যাবার পর পুলিশ কাউকে ফোন করে বলে,
–জ্বী স্যার আপনার কথা মতো কাজ হয়ে গেছে। ২৪ ঘন্টা হবার আগে তো মিসিং ডায়েরি হয় না তবে টুরিস্ট বলে আমাদের আরো আগে মিসিং ডায়েরি নিতে হতো। আপনি মেয়েটাকে ভালোয় ভালোয় পৌঁছে দিবেন দয়া করে। নাহলে আপনার রেপুটেশনের সাথে সাথে দার্জিলিংয়ের নাম খারাপ হবে। এমনিতেই তো কম জল ঘোলা হয়নি দার্জিলিং নিয়ে!
ফোনের অপর পাশ থেকে অনুরাগ বলে,
–আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। আমি মেয়েটাকে সকালেই পৌঁছে দিবো কোনো ক্ষতি না করে। একটা ম্যারেজ রেজিস্টার আমাদের গেস্ট হাউজে পাঠিয়ে দিবেন। আর আপনার একাউন্ট চেক করেন। কিছুটা বখশিশ এটা। অন্য কিছু ভাববেন না। আমি নিজের মূল্যবান কিছু পাওয়ার কারনে খুব খুশি তাই এই সামান্য উপহার।
পুলিশটা শেষের কথা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে একাউন্ট চেক করে দেখে তার একাউন্টে ২ লাখ টাকা এসেছে। পুলিশটা এবার তার পরিচিত উকিলকে ফোন করে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি করবেন না।