প্রেমানুরাগ পর্ব-৬
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথি
আগ্রার তাজমহল দেখার পর সূর্যাস্তের সময় এটিমাদ-উদ-দজল্লার সমাধি পরিদর্শন করে। পরেরদিন আরো দুয়েক জায়গায় ঘুরে বাংলাদেশে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ট্রেনে যাবার কথা ভেবেও লম্বা জার্নির সময় দেখে আর শক্তি বা ইচ্ছা নেই। তাই ফ্লাইটের টিকিট কাটে। অনুরাগ এই কয়দিন প্রেমার সাথেই ছিলো তবে সবার আড়ালে। কোথাও ঘুরতে গেলে সেখানে ছদ্মবেশে হাজির হওয়া, প্রেমাকে নিয়ে কিছু কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করা। এসবই অনুরাগ করতো।
এয়ারপোর্টে যাবার আগে অনুরাগের সাথে সামনা সামনি কথা হয়েছিল। তখন প্রেমাই প্রথমে বলেছিল,
–কোনো কাজ হুজুগে করলে তার পরিনাম ভালো হয়না। আপনি হুজুগে বিয়ে করলেন। না আপনার বাবা জানে না আমার পরিবার। দুই পক্ষই বাঁধা দিতে পারে। এমনও হতে পারে, এখানেই আমাদের শেষ। আর হ্যাঁ, আপনার সাথে বিয়ের ব্যাপারটা পাবলিক করবেন না। যতদিন না আমার পরিবার রাজী হচ্ছে।
অনুরাগ স্মিত হাসলো। তারপর বললো,
–বেশি টেনশন করো তুমি। আমিই সময় বুঝে বাংলাদেশ গিয়ে তাদের রাজী করাবো।
আর কোনো কথা হয়নি ওদের। নিশ্চুপতার মধ্যে দুজন দুজনের চোখের দৃষ্টি বিনিময়ে অনেকটা সময় চলে যায় ওদের।
_______
প্রায় দশদিন পর বাড়িতে ফিরে প্রেমা তার ভাইয়ের জন্য কাল মেয়ে দেখতে যাবে শুনে ভাইকে রাগানোর জন্য ভাইয়ের সাথে ফাজলামি শুরু করেছে। প্রেমার হবু ভাবীর সাথে তার ভাইয়ের তিন বছরের সম্পর্ক। মেয়ের পরিবার বিয়ের জন্য প্রেশার দিচ্ছে বলে এখনি বিয়ে করবে। হবু ভাবী অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। আর প্রেমা পড়ে তৃতীয় বর্ষে। প্রেমার ভাই দুই বছর হলো জব করছে। প্রেমা হবু ভাবীর ছবি দেখে পছন্দ করে ফেলে। মেয়েটা দারুন সুন্দর।
পরিবারের সকলের সাথে প্রেমা নিজের ভ্রমন অভিঙ্গতা বলছে। কোথায় কোথায় গিয়েছে সব। তবে অনুরাগের ব্যাপারটা স্কিপ করে যায়।
কথা বাত্রা শেষে নিজের রুমে ঘুমাতে এসে ফোনের নেট অন করে দেখে অনুরাগের ১০+ মিসডকল হোয়াটসএপে। প্রেমা নামাজটা পড়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিয়ে নিজে অনুরাগকে কল করে। চলতে থাকে তাদের কথা। রাত দুটোর পর ওরা ঘুমায়।
পরেরদিন,,
সকালের নাস্তার পর বেলা ১১টায় প্রেমা ও প্রেমার পরিবার বেড়িয়ে পরে মেয়ে দেখতে যাবার উদ্দেশ্যে। প্রেমা সেখানে গিয়ে জানতে পারে, প্রেমার ভাই নিজের বন্ধুর বোনের সাথে প্রেম করেছে। তাই দুই পরিবারে কেউ বিয়ে নিয়ে দ্বিমত করেনি। আজ আকদ করে রেখে দুই মাস পর আনুষ্ঠানিক বিয়ে হবে। প্রেমার ভাবীর নাম সিয়া। মেয়েটা মিশুক। প্রেমার সাথে সুন্দর মিশে গেছে। আকদের জন্য প্রেমার চাচা ও এক মামাকে বলা হয়েছে। খালা অন্য বিভাগে থাকে বলে আকদে আসেনি। চাচাতো বোন প্রিয়া ও মামাতো বোন ইশা। ওরা তিন বোন মিলে হবু ভাবীর সাথে বসে কথা বলছে।
আর এদিকে প্রেমার ভাই সানাফের কাছে তার বন্ধু জারিফ ছাদে গিয়ে বলে,
–আমার বোনকে তো তুই সুন্দর পটিয়ে ফেলেছিস। তোর বোনটাকে এবার পটিয়ে দে আমার জন্য। চার বছর ধরে মেয়েটাকে ভালোবাসি কিন্তু বন্ধুর বোন বলে আগ বাড়িয়ে বলিনি। আর তুই কি করলি!
সানাফ হাই তুলে বলে,
–তোর বোন নিজে আমার উপর লাড্ডু ছিল। তোর বাসায় আসা যাওয়া থাকাকালীন সেই আমাকে প্রথমে লুকিয়ে চিঠি দিছে। তো আমারো তারে ভালো লাগতো বলে একসেপ্ট করে নিছি।
জারিফ সানাফের হাত ধরে বলে,
–আচ্ছা যেই প্রোপোজ করুক। তোদের বিয়ে তো হচ্ছে। এবার প্রেমাকে আমার কথাটা বল প্লিজ।
সানাফ ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
–ভাই হয়ে বোনের কাছে বলবো, বন্ধুর সাথে প্রেম করতে!
জারিফ তাড়াহুড়া করে বলে,
–আরে প্রেম করবো না। বিয়ে করবো। তোর বোনকে বউ করে ঘরে তুলবো।
সানাফ মোবাইল বের করে দেখতে দেখতে বলে,
–আমার বোনের যদি তোরে পছন্দ হয় তো বিয়ে হবে। এতে আমি কিছু করতে পারবো না। আমার বোনেরো মতামত আছে।
জারিফ হতাশ হয়ে বলে,
–যদি সে রাজী না হয়!
সানাফ বলে,
–আমার কিছু করার নেই। আমি যেমন নিজের পছন্দে বিয়ে করছি ঠিক ওরো অধিকার আছে নিজে পছন্দ করার। আরেকটা কথা, আমার ও সিয়ার বিয়ের মধ্যে আমার বোনকে টানবি না। তোর বোন আমাকে ভালোবাসে আর আমিও। সো ব্ল্যাকমেইল করার চিন্তাও করবি না।
জারিফ মনমড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সে ভেবেছিল বন্ধু তার পাশে থাকবে। কিন্তু সে ভুলেই গেছিলো যে প্রেমাকে সানাফ বেশি ভালোবাসে। নাহলে ইন্ডিয়া ঘুরতে যাবে বলে প্রেমার বাবা-মাকে সানাফও বুঝিয়েছে। সানাফ তার বোনকে অনেক ভালোবাসে।
সন্ধ্যার পর আকদ হবে সানাফ ও সিয়ার। প্রেমা, প্রিয়া, ইশা, সানাফ, জারিফ ও সানাফের চাচাতো ভাই প্রিয়ম এরা মার্কেটে যায় আকদের জিনিসপত্র কিনতে।
জারিফ প্রেমার সাথে কথা বলার স্কোপ খুঁজছে। আর প্রেমা তো অনুরাগের সাথে ম্যাসেজে কথা বলতেছে। একটু পর পর মুচকি হাসছে যা জারিফের চোখ এড়াচ্ছে না।
জারিফ সন্দেহবশত প্রেমার পেছোনে গিয়ে দাঁড়ায়। কি ম্যাসেজ করছে তা দেখার উদ্দেশ্যে। প্রেমা ম্যাসেজ করতে করতে হঠাৎ পেছোনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ফোনের স্ক্রিন বন্ধ করে দেয়। জারিফ কিছু দেখতে পায়নি শুধু কিসিং ইমোজি ছাড়া।
প্রেমা জারিফকে জিজ্ঞাসা করে,
–কিছু লাগবে ভাইয়া?
জারিফ আমতা আমতা করে বলে,
–না মানে! আসলে!
প্রেমা চেয়ে আছে জারিফের দিকে তা দেখে জারিফ গলা ঝেড়ে বলে,
–তুমি একা বসে আছো এখানে তাই আরকি! ওদের সাথে শাড়ি দেখো।
প্রেমা মুখে হাসি ঝুলিয়ে বলে,
–ওরা দেখুক। আমার ইচ্ছে করছে না।
জারিফ ফট করে বোকার মতো জিজ্ঞাসা করে বসে,
–কার সাথে কথা বলছিলে?
প্রেমা কপাল কুঁচকে তাকালে জারিফ বুঝে সে বোকার মতো প্রশ্ন করে ফেলেছে। তাই বলে,
–না মানে, তুমি হাসছিলে তো। তাই ভাবলাম কেউ আছে নাকি? মনের মানুষ?
প্রেমা প্রতিক্রিয়াহীন ভাবে বলে,
–থাকতেই পারে। কয়দিন পর ফোর্থ ইয়ারে উঠবো আর আপনি আশা করেন কিভাবে আমার কেউ থাকবে না! আপনার বোন তো কয়দিন পর থার্ড ইয়ারে উঠবে, তাতেই তার প্রেমের বিয়ে। তো আমারো পছন্দের কেউ থাকতেই পারে।
জারিফের বুক মোচড় দিয়ে উঠে। প্রেমা অন্য কাউকে ভালোবাসে এটা মানতে তার কষ্ট হচ্ছে। এখন তো সানাফও তাকে সাহায্য করবে না। জারিফ কিছু না বলে সেখান থেকে চলে যায়।
জারিফ চলে যাবার পর প্রেমা বিড়বিড় করে বলে,
–বন্ধুর বোন আবার বোনের ননদ সিঙ্গেল কিনা তা জানতে এসেছে! বেয়ানদের মতো করে যদি আহ্লাদ করতাম তাহলে মাথায় চড়ে বসতো। আমি এদিকে আমার টেনশনে বাঁচি না আবার এর প্যারা নিবো! নো ওয়ে। ভাইয়াকে বলেই রাখবো যে আমার পছন্দের মানুষ আছে। আমার ভাই আমার পক্ষে থাকবে তা আমি জানি।
সকল কেনাকাটা করে সন্ধ্যার আগে জারিফেদের বাড়িতে সবাই পৌঁছে যায়। সিয়াকে প্রেমা, প্রিয়া ও ইশা মিলে ঘরোয়া ভাবে সুন্দর করে সাঁজায় তারপর কাজি এসে আকদ করিয়ে দেয়।
সানাফ ও প্রিয়মকে ওই বাড়িতে রেখে বাকিরা বাড়ি চলে আসে। প্রেমার সাথে ওর কাজিন বোন দুটো ওর সাথে একসাথে ঘুমাবে আর ইন্ডিয়া ভ্রমনের গল্প শুনবে। তাই প্রেমা অনুরাগকে গাড়িতে থাকতেই ম্যাসেজ করে দিয়েছে যাতে কল না করে।
ইশা প্রেমার বয়সি আর প্রিয়া ইন্টার পরিক্ষা দিলো সবে। প্রিয়া বেশি এক্সাইটেড। ইন্ডিয়াতে ওরো যাওয়ার ইচ্ছা অনেক তবে এখনো পাসপোর্ট হয়নি ওর। প্রেমা একে একে সব বলতে থাকে। সাথে মোবাইলে তোলা কোন ছবি কোথায় তোলা সব ব্যাখ্যা দিতে থাকে।
হঠাৎ একটা ছবিতে এসে ইশা প্রেমাকে আটকে দেয়। ছবিটা প্রথম দিকে থাকলেও প্রেমা একেবারে আগের ছবি থেকে দেখানো শুরু করেছে বলে ওটা নিচে পরে গেছে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি করবেন না।