শিশির_ভেজা_রোদ্দুর Part_09

0
1758

শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
Part_09
#Writer_NOVA

পাশের ফ্ল্যাটের কিচেন থেকে একঘেয়েভাবে প্রেসার কুকার সিটি মারছে।সেই শব্দে কানে তালা লাগার জোগাড়। মিনিট খানিক পরপর বিরক্তিকর শব্দে মাথা ধরে যাওয়ার উপক্রম। তার সাথে আমার খালামণির চেচামেচিতো আছে।কিছু সময় পর পর এসে ফ্যান বন্ধ করে দিয়ে যায়।সাথে একদফা বকা তো আছেই। হঠাৎ শরীরে তরল জাতীয় কিছু পরতেই ধরফর করে উঠে বসলাম।তাকিয়ে দেখি আমার সারা শরীর পানিতে ভিজে একাকার। তায়াং ভাইয়া মগ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বিশাল এক চিৎকার দিয়ে উঠলাম।

—তায়াং ভাইয়াআআআআআআ!!!

—আস্তে শাঁকচুন্নি, আমার কান ধরে গেলো।

—কি করলি এটা?

—তোর গায়ে পানি ঢেলে দিয়েছি।ভালো চাইলে এখনো উঠ নয়তো বালতি এনে সব পানি ঢেলে দিবো।

—তোদের জন্য কি বন্ধের দিনও একটু আরামে ঘুমাতে পারবো না।

—ওরে আমার আরামওয়ালী! আমার বন্ধুদের কাছে আমার মান-সম্মান ফালুদা করে এখন আরামে ঘুমানো হচ্ছে? তাতো আমি হতে দিবো না। গতকাল একটু ব্যস্ত ছিলাম বলে তোকে ধরতে পারিনি।এবার শাস্তির জন্য তৈরি হয়ে যা।

—জামা-কাপড় তো অর্ধেকই ভিজিয়ে দিছিস।আর তোর মান-সম্মান ফালুদা করলে একদম ঠিক করেছি পাঠা।ভালো চাইলে এখান থেকে ভাগ।আমি কিন্তু তোর অনেক সিক্রেট জানি।সেগুলো ফাঁস না করতে চাইলে আমার চোখের সামনে থেকে সর।

তায়াং ভাইয়া সামনে এসে আমার চুলের বেণীটা টেনে ধরলো।আমি ব্যাথায় কুকিয়ে উঠলাম।

—ভাইয়া চুল ছাড়।আমার লাগছে তো।

—আকাম করে এখন আবার বড় গলায় আমাকে ব্লাকমেইল করা হচ্ছে।

—চুল ছাড় ভাইয়া।মাথাব্যথা উঠে যাবে।

—তাহলে বল আমি যা শাস্তি দিবো তা মাথা পেতে মেনে নিবি।

—না।

—তাহলে ছাড়ছি না।

—আচ্ছা মেনে নিবো।দয়া করে চুলগুলো ছাড়।নয়তো কোনকিছু মানবো না।

তায়াং ভাইয়া চুল ছেড়ে দিয়ে শয়তানি হাসি দিলো।তারপর এক লাফে খাটের ওপর হাঁটু মুড়ে বসলো।ওকে এভাবে লাফ দিতে গিয়ে আমি চিৎকার করে উঠলাম।

—ভাইয়া, প্লিজ এভাবে লাফ দিস না।

—কেন?

—তোর মতো হাতির লাফ আমাদের জীর্ণশীর্ণ খাট-টা সহ্য করতে পারবে না।আজই ইন্তেকাল ফরমাবে।তারপর আমাদেরকে নিচে বিছানা পেতে ঘুমাতে হবে।

—তোকে তো😤……

—কিছু করলে আমি তোর কোন কথা শুনবো না।

—আবার ব্লাকমেইল।

—ইয়েস।কি বলবি জলদী বল?আমার ঘুম পাচ্ছে।

—তোর শাস্তি হলো আমার ময়লা প্যান্ট-শার্টগুলো সব সুন্দর করে ধুয়ে ইস্ত্রি করে দিবি।

—এ্যাহ আইছে।যা ভাগ। আমি পারমু না।

তায়াং ভাইয়া চোখ পাকিয়ে খাটের থেকে উঠতে উঠতে বললো,
—কি বললি আবার বল?

ওকে রাগতে দেখে কাঁদো কাঁদো মুখ করে অসহায় কন্ঠে বললাম,

—তোর প্যান্টগুলো অনেক মোটা।ধুতে গেলে ভেজা প্যান্টগুলো বালতির থেকে উঠাতে উঠাতে আমার কোমড়ের হাড্ডি লড়ে যায়।আর এতগুলো আমি ধুবো কি করে? এই বাচ্চা মেয়েটার সাথে তোরা এমন করিস কেন?

তায়াং ভাইয়া কোন উত্তর দিলো না। একগালে ভিলেন টাইপের হাসি দিয়ে ওর ময়লা জামা-কাপড় নিয়ে আসতে চলে গেলো।এরা আমারে পাইছে কি?এদিকে
ঐ রওনক ব্যাটা কতগুলো প্রাকটিকাল দিয়ে দিছি।যার মাথা-মন্ডু কিছুই বুঝি না।তাই সেই যে এনে টেবিলের ওপর ভাজ করে রেখে দিছি এখন অব্দি ভাজ করাই আছে।ঐগুলো আমি ছুঁয়েও দেখবো না। আর যদি ধরি তাহলে এমন হাল করবো যেনো জিন্দিগিতে আমার কাছে প্রাকটিকাল খাতা দেওয়ার সাহস না করে।আজ কলেজে যেতে বলেছিলো। আমার মাথা খারাপ নাকি।বন্ধের দিন আমি কলেজ যাবো।তাও আবার তাদের প্রাকটিকাল খাতা কমপ্লিট করে। জীবনেও না। আমার ভাবনার মধ্যে তায়াং ভাইয়া একগাদা শার্ট,প্যান্ট,টাউজার,টি-শার্ট এনে হাজির।এতগুলো দেখে আমার অবস্থা,”ছলছল নয়নে, হাসিমাখা বদনে🥺।” তায়াং ভাইয়া বললো,

—আমার আন্ডারওয়্যারটাও কি ধুয়ে দিবি?

আমি রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
—যা নিয়া আয়।সেটা আবার বাকি রাখছিস কেন?

—সত্যি নিয়া আসবো?তুই ধুয়ে দিবি তো?

—খাচ্চোর বেডা।সর সামনের থিকা।তোরটা তুই ধুইয়া নিস।আমি পারবো না।

—তুই তো বললি।

—চুলগুলি ছিঁড়তে না চাইলে সর তায়াং ভাইয়া। মুখের মধ্যে পর্দা নাই।বোনেরে কি বলিস?যা তোর বউরে কো ধুইয়া দিতি।

—তুই তো বললি।বউ থাকলে কি তোকে বলতাম নাকি?

—আবার!!

—শোন,সবগুলো ভালোমতো ধুয়ে কড়া রোদে শুকাবি।তারপর ইস্ত্রি করে আমার ওয়ারড্রবে ভাজ করে রেখে আসবি।

—আরেকটা কথা বলবি তো কিছু করুম না।

—নোভাপু তোমারে আম্মু ডা…..

তন্বী নাচতে নাচতে রুমে ঢুকে কথাটা বলা শুরু করেছিলো।কিন্তু তায়াং ভাইয়াকে দেখে পুরো কথা না বলেই আবার উল্টো দিকে পল্টি মারলো।কারণ ও ভালো করে জানে এখন আমাদের দুজনের মাঝখানে আসলে ওকে বিপদে পরতে হবে।তায়াং ভাইয়া ভ্রু নাচিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল।আর আমি এতগুলো জামা-কাপড়ের দিকে তাকিয়ে ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠলাম।সবাই কি কলুর বলদ বানাতে আমাকেই পায়?

💖💖💖

সারাদিন কাজ করতে করতে কোমড় ধরে গেছে। এতগুলো ইয়া মোটা মোটা প্যান্ট-শার্ট ধোওয়া কি চারটি খানি কথা।এখন কোমড় নাড়াতে পারছি না। আবার ইস্ত্রি করা বাকি আছে। ইস্ত্রি করার কথা মনে এলেই আমার কান্না পায়।কারণ আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহ্য কাজের মধ্যে একটা হলো ইস্ত্রি করা।আবার রওনকের প্রাকটিকাল খাতার চিন্তাও মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছি না।এখন শুধু কান্না পায়।বারান্দায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিলেও মনের মধ্যে কোন প্রশান্তি পাচ্ছি না। এত ঝামেলা মাথায় ঘুরলে কি কোন শান্তি লাগে।তখুনি পাশের ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে একজন চিৎকার করে ডেকে উঠলো,

—ভাবীইইইইইই!!!

—আস্তে ছেমড়া।আমি বয়রা নাকি?

—কি করো ভাবী?

—ঐ কিসের ভাবী, কে ভাবী?

—তুমি আমার ভাবী।তুমি তো আমার ইফাত ভাইয়ার একমাত্র বউ।ভাইয়া তো বাসার সবাইকে বলছে তুমি ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না।

এমনি মেজাজ সপ্ত আসমানে তার মধ্যে এই পুঁচকে ছেলের কথা শুনে আরো রাগ হলো।এই ছেলে হলো ইফাতের ভাই সিফাত।মাত্র ৭ বছর।বাড়িওয়ালা জামিল সাহেবের দুই ছেলে, এক মেয়ে। বড় ছেলে বাহিরে পরিবার নিয়ে স্যাটেল আছে।মেয়েটাকে বিয়ে দিয়েছেন ভোলা জেলায়।ছোট ছেলের সাথে তারা থাকেন।ছোট ছেলের আবার দুই ছেলে।বড় ইফাত আর ছোট সিফাত।ওর আম্মু পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট। আরেকটা বাবু হবে।ইফাতের আব্বু সারাদিন নিজস্ব চালের আড়ত দেখাশোনা করে। ইফাতের আম্মু ভীষণ মিশুক মেয়ে।একটা মেয়ের আশায় তৃতীয় সন্তান নেওয়া।কিন্তু পিচ্চি ছেলে দুটো হয়েছে বদের হাড্ডি। বড়টার থেকে ছোটটা আরো বেশি। বড়টাকে তাও ধমক,ধাওয়া দিলে ভয় পায়।আর এ পুচকে তো কাউকে ভয় পায় না।পাঁচতলা দালানের চারতলায় তায়াং ভাইয়ারা ভাড়া থাকে।আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে আবার বাড়িওয়ালারা থাকে।

—ও ভাবী কি ভাবো?

—এদিকে আয় বজ্জাত ছেলে।তোর কান দুটো মলে দিবো।সেবার যে তোর মায়ের হাতের আচ্ছা করে পিটুনি খাওয়ালাম তা বোধহয় ভুলেই গেছিস।

—ভাইয়ের জন্য দু-একটু মার খেলে কিছু হয় না ভাবী।

—এই বিচ্ছু ছেলে কথায় কথায় ভাবী বলবি না তো।

—একশ বার বলবো,হাজার বার বলবো।কি করবে? হ্যাঁ,কি করবে?

—আমার হাতের সামনে আয় দেখ কি করি?

—কিচ্ছু করতে পারবে না।আচ্ছা বাদ দাও তো ভাবী।তোমার জন্য ভাইয়া একটা চিঠি পাঠিয়েছে। তুমি নাকি কালকে ভাইয়াকে ধাওয়া দিয়েছো। তাই তোমার সামনে আসতে ভয় পাচ্ছে। তাই আমাকে দিয়ে পাঠিয়েছে।

আমি চোখ পাকিয়ে ওর দিকে তাকালেও ও কোন গাহ্য করলো না।বরং বারান্দার গ্রিল দিয়ে হাত বাড়িয়ে আমার দিকে একটা টুকরো কাগজ ছুঁড়ে মেরে রুমে দৌড় দিলো। আমি রাগ ও বিরক্ত নিয়ে কাগজটা তুলে ভাজ খুললাম।ভেতরের লেখা পড়ে আমার অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা। কাগজের লেখাগুলো ছিলো এরকম;

প্রীয় জান,

আমি তুমাকে অনেক ভালবাসি।কিন্ত তুমি আমাকে বুঝো না।তুমার জন্য আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গিছে তার খবর কি রাখো তুমি।তুমাকে না পেলে আমি মরে জাবো।মনে রাইখো তুমারে না পাইলে আমি বাচব না।তুমি এই ইফাতের না হলে আর কাউর হইবা না।তুমি তো আমারে তুমার সামনেও যাইতে দেও না। যানো আমার প্রষুড় কস্ট হয়।আমি তুমাকে সত্য অনেক ভালবাসি।আম্মু-আব্বুকে বলছি তুমার কথা।খুব সিঘ্রই তুমাকে আমার বউ করবো।তুমি শুধু একটু আপেক্ষা করো।

ইতি তুমার
ইফাত

ক্লাশ ফোরে পরা এক ছেলের হাতের লাভ লেটার পেয়ে আমার কি রিয়েকশন দেওয়া উচিত তাও বোধহয় ভুলে গেছি। অগণিত বানান ভুল হওয়া লাভ লেটার হাতে নিয়ে থুম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। আপাতত আমার অবস্থা এখন, “আমি জ্ঞান হারাবো,মরেই যাবো।বাঁচাতে পারবে না কো।” তারপরে জোরে চিৎকার করে বললাম,

—ইফাতরেএএএএএএএ!!! তোর ভালুপাসা আমি ছুটাইতাছি।একবার শুধু তোরে হাতে পাই।ভালোবাসার ভূত তোর ঘাড় থেকে কেমনে নামাই তুই শুধু দেখবি! ফাজিল পোলা।মাত্র ১০ বছর বয়সে এখনই এসব? আর দিন তো পরেই আছে। তোর থেকে ১১ বছরের বড় আমি।তোর বয়সে একটা ফ্রক পরে কুতকুত খেলতাম।আর তুই আমারে লাভ লেটার দিস।আজ তোরে শুধু হাতের কাছে পাই!!! চ্যালাকাঠ দিয়া পিটাইয়া তোর ভালোবাসার ভূত তাড়ামু।

#চলবে

অনেকে বলছেন রওনককে নায়ক দিতে।কিন্তু এটা কখনো সম্ভব নয়।কারণ নোভা❤️এনাজের এটা প্রথম গল্প নয়।এটা ওদের তৃতীয় গল্প। প্রথম গল্প হলে রওনককে নায়ক হিসেবে ভাবা যেতো।কিন্তু তৃতীয় গল্পে কিছুতেই সম্ভব নয়।নোভানাজ জুটিই থাকবে।রি-চেইক দেওয়া হয়নি।ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আর গল্পে কোন ভুল হলে অবশ্যই ধরিয়ে দিবেন।আজ গল্প দেওয়ার কোন ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু আজ আমার লেখালেখি জগতের ১ বছর পূর্তি উপলক্ষে দিয়ে
দিলাম🥳।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here