শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
Part_11
#Writer_NOVA
রওনকের রাগ দেখে সবাই ভয় পেলেও আমি কিন্তু বেশ মজা পাচ্ছি। যার কারণে মিটমিট করে হাসছি।আমাকে হাসতে দেখে রওনক রেগে আমার দিকে তেড়ে আসলো।ওকে তেড়ে আসতে দেখে আমি দুই লাফে পিছিয়ে গেলাম।রওনক দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
—তোমাকে কি আমি ক্লাশ ওয়ান টু এর বাচ্চার মতো মাছ,শাপলা ফুল,তাল,প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকতে বলছি?
আমি একটা ভেংচি কেটে কনফিডেন্সের সাথে বললাম,
—একাউন্টিং -এর স্টুডেন্টকে বায়োলজি ডিপার্টমেন্টের প্রাকটিকাল করতে দিলে এর থেকে ভালো কিছু হবে না। তাও ভালো আমি মাছ,ফুল,পাখি, প্রাকৃতিক দৃশ্য এঁকেছি। একবার তো ভেবেছিলাম একাউন্টিং-এর অঙ্ক করে দিবো।কিন্তু মন চাইলো অনেক দিন ধরে চারুকলার কোন কিছু আকি না।সেই যে অষ্টম শ্রেণিতে চারুকারু সাবজেক্টের জন্য একেক কিছু এঁকেছিলাম। তারপর থেকে বহুদিন সবকিছু অফ।তাই আমি ভাবলাম আপনাদের প্রাকটিকাল খাতার স্বদ্যবহার করি।
আমার উত্তর শুনে সবাই বিস্মিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তন্বীর চোখগুলো তো কোটর থেকে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। শুধু রওনক রাগে ফুঁসছে। হ্যাঁ, আপনারা ঠিকই ধরেছেন।আমি ওদের প্রাকটিকাল খাতায় কলম দিয়ে মাছ,শাপলা ফুল,গোলাপ ফুল,পাখি,প্রাকৃতিক দৃশ্য এঁকেছি। এক ঘন্টার মধ্যে সবগুলো খাতায় আকা কমপ্লিট হয়ে গেছে। শুধু খাতার পেজ উল্টিয়েছি আর তাড়াহুড়ো করে কোনরকম এসব এঁকেছি। একবার ভেবেছিলাম একটা খাতায় আঁকবো। কিন্তু মাথায় শয়তানি বুদ্ধি হানা দেওয়ায় সবগুলোতে বসে বসে একে ফেললাম।
রওনক রাগে থেমে থেমে ফুঁসে উঠছে।দুই হাত মুঠ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।আমি বোকা ফেস করে তার দিকে তাকিয়ে আছি। রওনক আমার দিকে ঘুরে বললো,
—কাজটা ঠিক করলে না।
—কাজটা আপনিও ঠিক করেননি।আপনারও বোঝা উচিত ছিলো একাউন্টিং নিয়ে পড়ুয়া মেয়ে কি করে আপনাদের প্রাকটিকাল করবে।
—করতে পারোনি যখন তাহলে খালি খাতা ফেরত দিতে।কিন্তু এরকম করে নষ্ট করলে কেন?
—ইচ্ছে করে করেছি।যাতে পরবর্তীতে আমাকে দিয়ে প্রাকটিকাল করানোর কথা ভুলেও মনে না আনেন।
—তোমার বিরুদ্ধে কিন্তু আমি এখন ব্যবস্থা নিতে পারি জানো?
—আপনি কি ব্যবস্থা নিবেন? নিবো তো আমি।এখন সোজা প্রিন্সিপালের রুমে যাবো।তারপর আপনি যা যা করেছেন আমার সাথে তা তো বলবোই।সাথে বানিয়ে বানিয়ে এক্সট্রা কিছু জুড়ে দিবো।সাথে এটাও বলবো যে আপনি আমাকে রেগিং করেছেন।আপনারা যা করেছেন আমার সাথে তা রেগিং-এর পর্যায় পরে।
আর এই কলেজে কোন সিনিয়র রেগিং করলে তার কঠোর শাস্তি হয়।সে কলেজের ভিপি হোক কিংবা সাধারণ কোন ছাত্র-ছাত্রী।তা কিন্তু দেখা হয় না।আপনারা নিশ্চয়ই তা আমার থেকে ভালো জানেন।আমি চললাম প্রিন্সিপালের কাছে বিচার দিতে।ভিপি পদটা হারানোর জন্য তৈরি থাকেন।চল রে তন্বী, আমার অনেক কাজ আছে।
আমার কথা শুনে রওনক ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
—যাও বলো।তাতে আমার কি?আমি কি প্রিন্সিপালকে ভয় পাই নাকি?
—আপনি প্রিন্সিপালকে ভয় পান না?
—একটুও না।প্রিন্সিপাল আমার কিছুই করতে পারবে না। উনার এখানে কোন হাত নেই।
রওনকের কথা শুনে আমি হতাশ হলাম।ঠিকই তো।প্রিন্সিপাল ওদের কি বলবে?ভি.পি তো নির্বাচিত হয় ছাত্রদের ভোটে।হঠাৎ আমার মনে হলো বর্তমানে কলেজের ভিপি পদে তো যুবরাজ ভাইয়া আছে। আর সে এক্সিডেন্ট করায় রওনককে সাময়িক সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত ভি.পি করা হয়েছে। যদি যুবরাজ ভাইয়ার ভয় দেখাই তাহলে কাজ হবে।কারণ যুবরাজ ভাইয়া নাকি তার সুস্থতা হওয়া অব্দি রওনককে ভিপি দিতে বলেছে।আর ছাত্র সংগঠন মিটিং ডেকে প্রত্যেকটা সদস্যের মত নিয়ে রওনককে ভিপি বানিয়েছে।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে শয়তানি হাসি দিয়ে দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—কি চুপ হয়ে গেলেন যে মিস ঝগড়ুটে? প্রিন্সিপালকে বিচার দিবেন না।
আমিও একটা শয়তানি হাসি দিলাম।তা দেখে রওনক চোখ, মুখ কুঁচকে ফেললো।তারপর খুশিমনে বললাম,
—প্রিন্সিপালকে বিচার দিলে তো কিছু হবে না। তারচেয়ে আমি বরং যুবরাজ ভাইয়াকে বিচার দিবো।তার অবর্তমানে আপনি রেগিং করে তার পদটাকে কলুষিত করছেন।আমার জানামতে ভাইয়া তার রিপিটেশন নিয়ে অনেক সচেতন।কেউ তার অবর্তমানে তার পদটাকে কলুষিত করবে আর তিনি নিশ্চয়ই সহ্য করবে না।আমার তায়াং ভাইয়ার সাথে যুবরাজ ভাইয়ার অনেক ভাব।আমিও সেই ভাবের স্বদ্যবহার করবো।
আমার কথা শুনে সবাই আৎকে উঠলে। নিমিষেই রওনকের মুখের রাগ হাওয়া হয়ে ভয়ে পরিণত হলো।সাথের আণ্ডাবাচ্চাগুলোও বেশ ভয় পেয়ে গেল।ওদের ভয় দেখে আমি আরো দ্বিগুণ সাহস পেয়ে গেলাম।ওদের একেকটার মুখ দেখে শয়তানি হাসি দিয়ে তন্বীর হাত ধরে উল্টো দিকে রওনা দিলাম।দু পা এগুতেই রওনক আমার সামনে এসে ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,
—বোন, আমার এই সর্বনাশটা করিস না।যুবরাজ ভাইয়ার কাছে বিচার দিয়ো না। তুমি বিচার দিলে আমাকে অনেক বকবে।ভাইয়া আমাকে ওয়ার্ণিং দিয়েছে যদি আমার নামে আরেকটা নালিশ যায় তাহলে আমার খবর আছে। প্লিজ বোন তুমি আমার কথা শুনো।আমি কখনো তোমার সাথে লাগতে যাবো না। তাও তুমি কমপ্লেন করো না।
আমি খুশিমনে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
—আমাকে দিয়ে আবার প্রাকটিকাল করাবেন নাকি?
রওনক মুখটাকে কালো করে আমাকে উত্তর দিলো,
—ছাইড়া দে বোইন, কাইন্দা বাঁচি। আরেকবার তো দূরে থাক জীবনে প্রাকটিকাল খাতা নিয়ে তোমার সামনেও আসবো না।
তন্বী আমাকে খোঁচা দিয়ে বললো,
—এত করে যখন বলছে বিচার দিয়ো না নোভাপু।
আমি তন্বীর দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বললাম,
—এই তোর এত জ্বলে কেন রে?
—আমার জ্বলবে কেন? আমি তো এমনি বলছিলাম।
—তাহলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাক।
—এমন করো কেন?
—আবার কথা বলিস?
—😑😑
তন্বীর দিকে একটা ক্রুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রওনকের দিকে তাকিয়ে একগালে শয়তানি হাসি দিয়ে বললাম,
—এত করে যখন বলছেন তাহলে তো বিচারটা না দিলেই ভালো হয়।আচ্ছা আপনি যখন আপনার ভুল বুঝতে পেরেছেন তাহলে আমি আর বিচার দিবো না। তবে এর বিনিময়ে আমাকেও কিছু টাকা দিতে হবে। আমার টাকা লাগতো না।কিন্তু এত কষ্ট করে প্রাকটিকাল খাতা কমপ্লিট করে দিলাম তাই তার পারিশ্রমিক দিলেই হবে।
রওনক ব্যস্ত ভঙ্গিতে পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে ভেতরটা খুলতে খুলতে বললো,
—কত লাগবে তোমার? ৫০০ দিলে চলবে?
—পাঁচ শততে কাজ হবে না। এক হাজার লাগবে।
রওনক চমকে কিছুটা জোর চেচিয়ে বললো,
—এক হাজার!!!
—জ্বি, এক হাজার।এক হাজার দিলে আমি প্রিন্সিপালের কাছে বিচার দিবো না। নয়তো এই যে গেলাম।
আমি পেছন দিকে ঘোরার আগেই রওনক মানিব্যাগ থেকে পাঁচশত টাকার দুটো নোট আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
—আরে না না তোমার কোথাও যেতে হবে না। এই নাও তোমার টাকা।
আমি নোট দুটো হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে জিজ্ঞেস করলাম,
—জাল নোট না তো?
—একটাও না।তুমি চেক করে দেখতে পারো।
—আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি যখন খুশি হয়ে আমাকে প্রাকটিকাল করে দেওয়ার পারিশ্রমিক দিয়েছেন আমি কি না নিতে পারি বলেন।আর নিশ্চিন্তে থাকেন।আমি যুবরাজ ভাইয়ার কাছে কিছু বলবো না। কি আসবেন আবার আমার সাথে লাগতে?যদি আবার আসেন তাহলে আমি কিন্তু সত্যি বিচার দিবো।
—আমি বোইন তোর হাতেও ধরি পায়েও ধরি।আজকের থেকে তুই আমার বড় বোইন।আমি ভুলেও তোমাকে দিয়ে কোন কাজ করাবো না।বরং তোমার থেকে ১০ হাত দূরে থাকবো।যেই থ্রেট তুমি দিছো।আর আমার পকেটও খালি করছো।আমি তোমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখবো।ঐ শাওন,মহিম চল এখান থেকে। আমার মাথা ঘুরতাছে।আর কিছু সময় এখানে থাকলে আমি অজ্ঞান হবো।
রওনক ওর সাঙ্গপাঙ্গদের কথাগুলো বলে এখান থেকে দ্রুত কেটে পরতে নিলেই আমি রওনকে ডেকে উঠলাম,
—এই যে মিস্টার রওনক।
—জ্বি আপু।
—বড় বোন বানালেন আর তাকে সম্মান না করেই চলে যাচ্ছেন।
—মানে বুঝলাম না আপু।
—-সালাম কে দিবে?
—কিন্তু তুমি তো আমার ছোট।
—একটু আগে আমাকে বড় বোন কে বানালো?তাছাড়া সালাম ছোট-বড় সবাইকে দেয়া যায়।
—ওহ্ ভুলে গেছিলাম।
—জোরে সালাম দেন।
—দিতেই হবে।
—না দিলে কিন্তু যুবরাজ ভাইয়ার কাছে বিচার দিবো।
—আবার ব্লাকমেইল 😶।
—হুম,জলদী সালাম দেন।
—আসসালামু আলাইকুম আপু।
—ওয়া লাইকুমুস সালাম।বেঁচে থাকো বৎস। এখন থেকে যখন যেখানে আমায় দেখবেন তখুনি সালাম দিবেন।
—কেন?
—দিতে বলছি দিবেন।এত কথাতো শুনতে চাইনি।নয়তো আমি কিন্তু ভাইয়ার কাছে বিচার দিবো। আর আমাকে কিন্তু যুবরাজ ভাইয়া চিনে । আমি বিচার দিলে ভাইয়া সব বিশ্বাস করে নিবে।
মারলাম একটা ঢপ।আমাকে যুবরাজ ভাইয়া চিনে না। ভাইয়ার কাছে গিয়ে যদি বলি আমি অন্য কলেজের স্টুডেন্ট তাও বোধহয় বিশ্বাস করে নিবো।কারণ স্কুল-কলেজের সবাই শুধু দুই টাইপের স্টুডেন্টদের চিনে।১.ক্লাশের টপার স্টুডেন্টদের ২.ক্লাশের সবচেয়ে বাজে স্টুডেন্টদের।আর মাঝামাঝি যারা থাকে তাদের কোন কারণ ছাড়া খুব কমই চিনে তারা।আমি হলাম ঐ মাঝামাঝি ধরনের স্টুডেন্ট। তাই আমাকে সবাই চিনেও না ভালো মতো।
রওনক আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—আমি কি যাবো?
—হুম ঠিক আছে। যান এবার।
আমি বলতে দেরী কিন্তু রওনকের কোনরকম সেখান থেকে কেটে পরতে দেরী না।আমি হাসতে হাসতে পেট ধরে বসে পরলাম।আজ বেচারাদের আচ্ছা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। তন্বী আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে হাতের পাঁচশত টাকার নোট দুটোয় গাঢ় করে একটা চুমু খেলাম।এই না হলে কি একাউন্টিং এর স্টুডেন্ট। সব জায়গায় বিজনেস খুঁজে নেই।এতকিছু হয়ে ভালোই হয়েছে মাঝ থেকে আমার এক হাজার টাকা লাভ হলো।একাউন্টিং-এর স্টুডেন্ট বলে কথা। লাভ-লোকসানের হিসাব যদি না করি তাহলে কিরকম একাউন্টিং-এর স্টুডেন্ট হলাম😎!!!
#চলবে
আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। বলেছিলাম আজকে এনাজকে আনবো কিন্তু রওনকের তেরটা বাজাতে বাজতে আনতে পারলাম না। আজকের পর্বে ১১০০+ শব্দ আছে। গতকাল এতটুকু লিখে রেখেছিলাম।ভেবেছিলাম আজ এনাজের কাহিনিসহ আরো ৪০০/৫০০ শব্দ লিখে তারপর পোস্ট করবো।কিন্তু বিকেল থেকে যে মাথাব্যথা শুরু হলো এখনো ভালো হওয়ার নাম নেই। বরং বেড়েই চলছে।আগামীকাল অবশ্যই এনাজকে আনবো।প্লিজ কেউ রাগ করেন না।