শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
Part_13
#Writer_NOVA
পরেরদিন……
সকাল থেকে আকাশটা আজ ঘন আঁধারে ঢেকে আছে।মনে হচ্ছে এই বুঝি ঝুপঝাপ করে বৃষ্টি নেমে গেলো।তন্বী আজ কলেজে আসেনি।ওর সকালে একটু মাথা ধরেছিলো।সেই ছুতোয় সে আজ কলেজ ফাঁকি দিয়েছে। আমিও দিতে পারতাম কিন্তু মন সায় দিলো না। সামনের এক্সাম তাই একটু পড়াশোনা নিয়ে সিরিয়াস হয়েছি।কলেজ ছুটি হয়েছে আরো মিনিট দশেক ধরে। হেঁটে গেইট পার হতে না হতেই শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি।বৃষ্টির তোরজোরে পাশের এক দোকানের ছাউনীর নিচে দাঁড়ালাম। আকাশের এই অবস্থা দেখেও ছাতা আনিনি।ছাতা আনতে আমার ভীষণ বিরক্ত লাগে।বৃষ্টি না হলে ছাতার বোঝা বইতে হয়।তাই আমার কাছে ছাতা নামক বস্তুটা অসহ্যকর।আশেপাশের দোকানগুলোও বন্ধ। এই বৃষ্টিতে রিকশাতো জীবনেও পাওয়া যাবে না। তাই বোর হয়ে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করতে লাগলাম।
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
ভেবেছিলাম তুমি ছাড়া জীবন চলবে না
সত্যি বলছি তোমায় এখন মনে পরে না
কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না
সত্যি বলছি তোমায় এখন মনে পরে না
ভেবেছিলাম তুমি ছাড়া জীবন চলবে না
আমার জায়গায় বসিয়েছো অন্য কাউকে যেমন
তোমার জায়গায়ও দিয়ে দিবো অন্য কাউকে তেমন
কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না
ভেবেছিলাম তুমি ছাড়া জীবন চলবে না
সত্যি বলছি তোমায় এখন মনে পরে না
ভাবে না যে আমায় তার কথা কেন ভাববো
যার কাছে প্রেম ছেলেখেলা তার প্রেমে কেন ভাসবো
ভাবে নাযে আমায় নিয়ে তাকে কেন ভাববো
যার কাছে প্রেম ছেলেখেলা তার প্রেমে কেন ভাসবো
কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না
ভেবেছিলাম তুমি ছাড়া জীবন চলবে না
সত্যি বলছি তোমায় এখন মনে পরে না
কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না
ভেবেছিলাম তুমি ছাড়া জীবন চলবে না
♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♥♥♥♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪♪
সম্প্রতি জনপ্রিয় হওয়া এই গানটা পাশের কোথাও জোরে বাজছে।আশেপাশে তাকিয়ে সেই উৎস খুঁজতে লাগলাম। একসময় খুঁজেও পেলাম।আমার থেকে ৭-৮ হাত দূরে একটা কলেজ পড়ুয়া ছেলের মোবাইলে গানটা বাজছে।বৃষ্টির বেগ কমে আসায় আর ছেলেটা বেশি একটা দূর না হওয়ায় গানের প্রত্যেকটা শব্দই আমি শুনতে পেয়েছি। অদ্ভুতভাবে এই গানের সাথে আমার জীবনেরও মিল আছে।
পাশ দিয়ে কলেজের একটা ছেলে ও একটা মেয়ে একসাথে এক ছাতার তলে আমাকে সাইড কাটিয়ে চলে গেল। তা দেখে আমার বিষাক্ত অতীত মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।তার সাথেও দেখা হয়েছিলো আমার এই বৃষ্টির দিনে।একসময় বৃষ্টি খুব পছন্দ থাকলেও এখন প্রচুর বিরক্ত লাগে।বৃষ্টি দেখলেই যে অতীতগুলো চোখে ভাসে।হ্যাঁ,আমিও প্রথম ভালোবাসার সান্নিধ্যে গিয়েছিলাম। কিন্তু কে জানতো সেই ভালোবাসায় আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। কেই বা জানতো আমি এক বৈঈমানকে মন দিয়ে বসে ছিলাম।উপর দিয়ে আমি একটা হাসি-খুশি,প্রাণোচ্ছল মেয়ে। যে কিনা সবাইকে মাতিয়ে রাখে।কিন্তু ভেতরে আমি ব্রোকেন। পুরো ভেঙেচুরে গেছি।কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। তার খবর কি কেউ রাখে🙂?
তবে একজনের কারণে আমি পুরো পুরুষ জাতিকে দোষারোপ করি না।যদি পুরো পুরুষ জাতিকে দোষারোপ করি তাহলে আমার বাবাকে,তায়াং ভাইয়াকেও দোষারোপ করা হবে।কিন্তু তারা তো আমার নতুন করে বেঁচে থাকার কারণ। হুট করে কেন যে আবার অতীতটা মনে এলো।যেই বিষাক্ত অতীতের কারণে আমি আজ আমার পরিবার থেকে এতদূরে।আমার প্রিয় গ্রাম,প্রিয় পরিবেশ থেকে দূরে।আবার কেন সেই অতীত মনে হচ্ছে আমার।চোখ দুটো টলমল করে উঠলো।
হঠাৎ আমার মুখের সামনে এসে একজন তার ছাতাটা ঝাড়া দিলো।ছাতায় থাকা পানির বিন্দুগুলো আমার মুখে ছিটে আসতেই আমার সম্বিত ফিরলো। সে ছাতাটা ঝাড়া দিয়ে আমাকে বললো,
—কি মিস টিডি পোকা কি এতো ভাবছো? কতক্ষণ ধরে এসে তোমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছি। তোমাকে কয়েকবার ডাকলাম তাও সাড়া নেই।
নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে দেখলাম এনজিও সংস্থা। অন্য সময় হলে এতক্ষণে ঝগড়া বাঁধিয়ে ফেলতাম।কিন্তু এখন সেই মুডে নেই আমি।আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে এনাজ বললো,
—কি ব্যাপার কথা বলছো না যে?মন খারাপ?
আমি তার দিক থেকে চোখ সরিয়ে ছোট করে উত্তর দিলাম।
—নাহ।
— আমার তো মনে হচ্ছে তোমার মন খারাপ।
—বললাম তো কিছু হয়নি।
—কি হয়েছে আমাকে বলতে পারো!
—আপনার তো ছাতা আছে তাহলে আপনি এখানে কেন এলেন?
—কথা ঘুরিয়ে ফেললে।
—আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি।
—দেখলাম তুমি একা এখানে দাঁড়িয়ে আছো তাই চলে এলাম।
—আপনি হঠাৎ কলেজে?
—কিছু কাগজ তুলতে এসেছিলাম।তাছাড়া একটা কাগজে প্রিন্সিপাল স্যারের একটা সিগনেচার লাগবে।তাই এসেছিলাম।তোমার ছাতা কোথায়?
—আমার ছাতা আনতে ভালো লাগে না।
—এটা কোন কথা হলো?
—হ্যাঁ হলো।
—ত্যাড়ামী করছো?
—বলতে পারেন হ্যাঁ।
—আচ্ছা চলো একসাথে চা খাই।নাকি তাতেও সমস্যা হবে?
—ইচ্ছে করছে না।
—তোমাকে এতটা মনমরা ভালো লাগে না।তোমাকে হাসি-খুশি প্রাণোচ্ছল দেখতে ভালো লাগে। তুমি প্লিজ সবসময় হাসি-খুশি থেকো।
—একটা মানুষ কখনও একরকম থাকতে পারে না।তা কি জানেন আপনি?
—হ্যাঁ জানি।তবে চেষ্টা করলো মানুষ সবই পারে।
—না চেষ্টা করলে পারে না। ভালো থাকার অভিনয় করলে পারে।
—হয়েছে সেসব কথা বাদ দাও এখন।চলো চা খাই।
—আপনার মনে হয় চা অনেক পছন্দ?
—হ্যাঁ অনেক।
আমি কোন উত্তর দিলাম না।গুটি গুটি পায়ে তার সাথে সামনের দিকে যেতে লাগলাম।পাশের ছোট টং দোকানটা পলিথিন দিয়ে আটকে রেখে দোকানী ভেতরে ঘাপটি মেরে বসে আছে। এদিকটায় ততোটা খেয়াল করিনি বলে দেখিনি।ভেতরে গিয়ে একটা বেঞ্চিতে বসলাম আমরা দুজন।দোকানি যখন চায়ের কাপে চামচ নেড়ে সবকিছু মিশ্রিত করছিলো তখন কাপ ও চামচের সাথে লেগে যে টুংটাং শব্দ হচ্ছিলো, আমি মুগ্ধ হয়ে তা শুনছিলাম।নিস্তব্ধ পরিবেশে বৃষ্টি পরার শব্দের সাথে এই টুংটাং শব্দটা আরো বেশি আকর্ষণীয় লাগছিলো।চায়ের কাপ দুটো দোকানী আমাদের দিকে বাড়িয়ে দিলো।আমরা দুজন হাত বাড়িয়ে কাপ দুটো নিয়ে নিলাম।এনাজ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আমার দিকে তাকালো।আমি আড় চোখে তা খেয়াল করে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে চায়ে চুমুক দিলাম।কোন কথা না বলে দুই কাপ চা খেয়ে দুজন বেড়িয়ে পরলাম।ততক্ষণে বৃষ্টিও অনেক কমে গেছে। এনাজ আমাকে বললো,
—এখুনি চলে যাবে?
—হ্যাঁ,রিকশা পেলেই চলে যাবো।
—কিছুখন একসাথে বৃষ্টি উপভোগ করি চলো।
—আমার বিরক্ত লাগে।
—আমার সাথে উপভোগ করো দেখবে ভালো লাগবে।
তার কথার অবাধ্য হতে ইচ্ছে হলো না। তবে বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হলো।সমান তালে বৃষ্টি বিন্দুগুলো ঝড়ে পরছে পিচঢালা রাস্তার ওপর।সেদিকে দুজনের দৃষ্টি। এনাজ আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে গলা ঝেড়ে বললো,
—একটা প্রশ্ন করি?
—হুম করেন।
—তোমার কাছে ভালোবাসা মানে কি?
তার এই অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে আমি তার দিকে তাকালাম। তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো।তার চোখের দিকে তাকিয়ে ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠলাম।চাহনিটা ঘায়েল করে দিবে আমায়।কিন্তু আমি তো ঘায়েল হতে চাই না।দ্রুত চোখ নামিয়ে নিচু স্বরে বললাম,
—-ভালোবাসার তো অনেক উদাহরণ আছে।কোনটা দিবো?
—তোমার যেটা ইচ্ছা।
—ভালোবাসা হলো একটা রাবার ব্যান্ডের মতো।যার দুপাশে দুজন ধরে থাকে।যদি কেউ একজন একপাশ থেকে ছেড়ে দেয় তাহলে অবশ্যই অপরপাশের জন আঘাত পাবে।যাকে আপনি ভালোবেসেছেন তাকে আঘাত দেয়া আর নিজের সাথে প্রতারণা করা দুটোই সমান।
সত্যিই ভালোবাসা রাবার ব্যান্ডের মতো।নয়তো সে একপাশ ছেড়ে দিলে আমিতো আঘাত পেতাম না।তবে এক হিসেবে মনের ভেতর একটু শান্তি লাগে।আমাকে আঘাত দিয়ে সে নিজের সাথে প্রতারণা করেছে। আবার মাঝে মাঝে বুকটা কেঁপে উঠে।আসলেই কি সে আমায় ভালোবেসেছিল? যদি ভালোবাসতো তাহলে তো এতবড় ধোকাটা দিতে পারতো না।এই উত্তরগুলো আমার জানা নেই। বরং উত্তর খুঁজতে গেলে আমি পাগল হয়ে যায়।বৈঈমান মানুষটার ওপর ঘৃণা হয়।
এনাজের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে তার দিকে তাকালাম।তাকিয়ে দেখি সে মুচকি হাসছে।নিশ্চয়ই আমার কথা শুনে হাসলো।তাকে হাসতে দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম,
—কি ব্যাপার হাসছেন যে?আমি কি কোন ভুল উত্তর দিয়েছি?
এনাজ আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
—না,তুমি ঠিক বলেছো।তুমি এখানে দাঁড়াও, আমি পাশের রিকশার গ্যারেজ থেকে আমার বাইকটা নিয়ে আসি।বৃষ্টি শুরু হচ্ছিলো বলে সেখানে রেখে এসেছিলাম।
আমি দ্রুত চোখ নামিয়ে মাথা নেড়ে সায় দিলাম।
এই ছেলের চোখের দিকে তাকালে আমার ভেতরটা তোলপাড় শুরু করে দেয়।হৃৎপিণ্ডটা অনবরত লাফাতে থাকে।তখন ইচ্ছে করে হৃৎপিণ্ডটাকে খপ করে ধরে বন্দী করে রাখি।তাহলে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। এনাজ কিছুটা পথ যেয়ে পেছনে তাকিয়ে আমাকে বললো,
–তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিবো।তোমার কোন সমস্যা নেই তো?
এখন রিকশা পাওয়া সম্ভব নয়।তাই আমি আর কোন ভনিতা করলাম না।ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে না বললাম।এনাজ মুচকি হেসে বাইক নিয়ে আসতে গেলো।বাইক নিয়ে মিনিট তিনের মধ্যে চলে এলো।ছাতাটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
—বাইকে উঠে বসো।আর উঠে দয়া করে ছাতাটা মেলে নিয়ো।গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পরছে এখনো।তোমার তো আবার বৃষ্টির পানিতে এলার্জি। এতটুকু বৃষ্টির পানি মাথায় পরলে মাথাব্যথা উঠে যাবে।
আমি চমকে চোখ দুটো বড় বড় করে তার দিকে তাকালাম।এনাজ বাইকের আয়নার দিকে তাকিয়ে এক হাতে মাথা ঝাড়তে ঝাড়তে আমাকে বললো,
—এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। তায়াং-এর থেকে এসব জেনেছি।
আমি স্বাভাবিক হয়ে বাইকে উঠে গেলাম।একহাতে এনাজের কাঁধে আলতো করে হাত রেখে আরেক হাতে ছাতা মেলে ধরলাম।এনাজ সামান্য ঘাড় ঘুরিয়ে বললো,
—শক্ত করে ধরে বসো।
—হু বসেছি।
আমার উত্তর শুনে এনাজ সামনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বাইক স্টার্ট দিলো।বাইক শো শো গতিতে ছুটে চললো বাসার উদ্দেশ্য। মিনিট দশকের মধ্যে আমরা বাসায় চলে এলাম।এনাজ বাইক থেকে নেমে আমাকে ছাতা দিয়ে ভেতর অব্দি পৌঁছে দিলো।আমি মানা করেছিলাম কিন্তু শোনেনি।এক ছাতার নিচে দুজন পাশাপাশি হাঁটার সময় আমার ভীষণ অস্বস্তি লাগছিলো।যার কারণে তাকে বিদায় না জানিয়ে আমি দ্রুত রুমে চলে এলাম।বারান্দায় দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে দেখলাম এনাজ ছাতা মাথায় ধীর পায়ে বাইকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমার জীবনে আবারো একি ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে চলছে!!!
#চলবে
অনেকে নোভা💖এনাজের আগের দুটো গল্প চেয়েছেন।তাদের জন্য দুটো গল্পের লিংক দিয়ে দিলাম।
#ভালোবাসার_তুই
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=768453063806445&id=213666762618414
#প্রজাপতির_রং🦋
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=887369168581500&id=213666762618414