শিশির_ভেজা_রোদ্দুর Part_28

0
1411

শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
Part_28
#Writer_NOVA

আমি ভালোবাসি তোর পায়ের
রিমঝিম ঐ নুপুর
তুই না হয় ভালোবাসলি আমার
শিশির ভেজা রোদ্দুর

সকাল হতেই চারিপাশে ব্যস্ততায় ঘিরে যায়। আজ আমার মনের আকাশে একরাশ ঘনকালো আধারে ঢেকে গেছে। সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে এক মগ কফি হাতে নিয়ে ছাদে চলে গেলাম।মগের হাতলের সাথে সবুজ কাগজের ছোট চিরকুটটা এক টুকরো সুতলি দিয়ে বাঁধা ছিলো।চোখের পানিগুলো যখন গাল বেয়ে নিচে পরছিলো তখন চোখ যায় সেদিকে।সেটাকে হাতে নিয়ে দেখতে পাই উপরোক্ত কথাগুলো লেখা ছিলো।
একবার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম পায়ে নুপুর পরা। গতকাল রাতেই পরেছিলাম। কিন্তু সে কি করে জানলো?চিরকুটটা ভাজ করে হাতে রেখে আমি নাক টেনে কফির মগে চুমুক দিলাম। তায়াং ভাইয়া তার বন্ধুদের নিয়ে মিনিট বিশ আগে বের হয়ে গেছে। আমি একটা জিনিস খেয়াল করেছি যদিন তায়াং ভাইয়ার সকল ফ্রেন্ড বাসায় আসে সেদিনই আমার রুমে আগে থাকতে এক মগ কফি মজুদ থাকে। সাথে একটা চিরকুট। এই চিরকুট প্রেমীকে শুধু হাতে নাতে ধরাটাই বাকি। সকালের আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

আজ হঠাৎ করে অতীতগুলো একে একে চোখের সামনে ভেসে উঠছে। যেদিন প্রথম রোশানের সাথে দেখা হয়েছিল। সেদিন ছিলো ঝুম বৃষ্টি।

ফ্লাশব্যাক……

আমি তখন সদ্য কলেজে ওঠা এক প্রাণবন্ত কিশোরী। ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার মানেই হাওয়ায় উড়ন্ত বয়স।কলেজে উঠে গেছি ভাবসাবের তো একটা ব্যাপার আছে। সারাক্ষণ এমন একটা মুড নিয়ে চলতাম না জানি কত বড় ডিগ্রি অর্জন করে ফেলেছি।বেশিরভাগ সময় ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে কফি হাউসে কিংবা ফাস্টফুডে হামলা করতাম।গ্রামের কলেজ হওয়ায় আমাদের ধরা বাঁধা কোন নিয়ম নেই। ইচ্ছে হলে ক্লাশ করো।নয়তো পেছনের দরজা দিয়ে বের হয়ে যাও।এতে যেনো আমাদের আরে বেশি সুবিধা হতো।

সেদিন ছিলো ঝুম বৃষ্টি।আমি,সাদ্দাম, শাকিল,
তামিম,জারা,সাফা,ঝুমা সাতজন ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে কফি হাউসে গিয়ে আটকা পরে গেলাম।সে কি বৃষ্টি থামার নামও নেই। শাকিল বিরক্তি সহকারে বললো,

—দেখ তো কি বৃষ্টি নামলো?এবার কলেজে যাবো কি করে?

তার সাথে সুর মেলালো জারা,
— পরের ক্লাশ আজ বাদ।

তামিম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে টেবিলে এক পা হেলান দিয়ে বসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— ধূর, এতো ক্লাশ ক্লাশ করোস কেন? দুই-একদিন ক্লাশ না করলে কি হয়?

সাদ্দাম তামিমের পিঠে চাপর মেরে বললো,
— তোর মতো ছাত্রর জন্য কিছুই হয় না। কিন্তু আমাদের হয়। এরপরের ক্লাশ হলো ইংরেজি। তুই ইংরেজিতে হেব্বি ভালো। কিন্তু আমরা হলাম পুরো গোবর পঁচা। তাই আমাদের জন্য অনেককিছু। তুই মাম্মা ইংরেজি পরীক্ষায় কোপায় ফালাস। কিন্তু আমাদের পাস নাম্বার উঠাতেও হিমশিম খেতে হয়।

ঝুমা ওদেরকে থামানোর উদ্দেশ্য হাত নাড়িয়ে বললো,
— থাম তোরা। ঝগড়া করিস না। বৃষ্টি নামবে সেটা তো আমরা কেউ জানতাম না। এখন চুপ করে থাক। বৃষ্টি থামলে কলেজ চলে যাবো।

আমি ও সাফা কোন উত্তর দিচ্ছিলাম না। ওরা ওদের মতো কথা বলছিলো। বৃষ্টি মানেই ছিলো তখন অন্য রকম ভালো লাগা। এক ধ্যানে বৃষ্টি দেখছিলাম আর বৃষ্টির পানিতে হাত ভিজাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম এক হাত মাথায় দিয়ে আরেক হাতে কফির মগ নিয়ে একটা ছেলে আমাদের পাশে দাঁড়ালো। সে দাঁড়িয়ে মাথা,শার্ট ঝাড়তে লাগলো। আমি মাথা বাঁকিয়ে তাকে দেখার জন্য পেছনে ঘুরতে নিলেই অসাবধানতা বশত আমার হাত লেগে তার কফি পরে যায়। কফি পরবি ভালো কথা কিন্তু ছেলেটার শার্টে পরার কি দরকার ছিলো। বেচারার সাদা শার্ট কফি পরে পুরো নষ্ট। আমি মুখে হাত দিয়ে ভয়ার্ত মুখে তার দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বললাম,

— সরি, আমি আসলে ইচ্ছে করে করিনি। দূর্ভাগ্যবশত হয়ে গেছে। প্লিজ মাফ করে দিবেন।

উনি একবার রাগী লুকে তাকিয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে কফি মুছতে লাগলো। তামিম গিয়ে তাকে বললো,
— ভাই প্লিজ কিছু মনে করবেন না। এই মেয়ে হলো এক নাম্বার নিষ্কর্মা। যেখানে যাবে ভেজাল লাগাবেই। ওর পক্ষ থেকে আমরা মাফ চাইছি।

উনি গম্ভীর মুখে বললো,
— ঠিক আছে। পরেরবার থেকে সাবধানে থাকতে বলবেন। চোখ দুটো শুধু সামনের দিকে নয় আশেপাশেও রাখতে বলেন।

জারা পাকনামি করে বললো,
— ও একটু এরকমি। আপনি কিছু মনে করেন না ভাইয়া। আপনার জন্য খারাপ লাগছে যে আপনার সাদা শার্টটা নষ্ট হয়ে গেলো। এর জন্য আমারা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।

জারার কথায় কেন জানি রাগ উঠে গেলো। মাঝে মাঝে ও একটু বেশি বুঝে। এখন এসব কথা বলার মানে কি? কপাল কুঁচকে অন্য দিকে দৃষ্টি দিলাম। মিনিট দশ পর বৃষ্টির বেগ কমলো। আমরা অতি দ্রুত সেখানে থেকে চলে এলাম। না ছেলেটার জন্য নয়। জারার জন্য। যতক্ষণ সেখানে ছিলো সেধে সেধে ছেলেটার সাথে কথা বলতে গিয়েছিল। ছেলেটাও সেরকম ওর সাথে কথা বলছিলো। মাঝে মাঝে আড় চোখে ওদের দিকে তাকাতে দেখি ছেলেটা আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। জারার এই কান্ডে আমরা সবাই বিরক্ত। তাই বৃষ্টি পুরোপুরি না থামতেই সেখান থেকে কেটে পরেছি। ভেবেছিলাম এই ঘটনা এখানেই শেষ। কিন্তু না এখান থেকে শুরু হয়।

এই ঘটনার দুই দিন পর থেকে খেয়াল করি ছেলেটা ইদানীং আমাকে ফলো করছে। প্রথমে বিষয়টা পাত্তা না দিলেও পরে আমি সিউর হয়ে যায়। জারার থেকে জানতে পারি তার নাম রোশান দেওয়ান। চেয়ারম্যানের মেজো ছেলে। চেয়ারম্যান ও জারার বাবা আবার খুব ভালো বন্ধু। দেওয়ান বাড়ির মানুষ এভাবেই আমাদের গ্রামের কেউ পছন্দ করতো না। এর ক্ষমতার দাপটে অন্যায় করেও পার পেয়ে যেতো। রোশানকে যে আমার ভালো লাগতো না তা কিন্তু নয়। আমি নিজেও এর জন্য অনেকটা দূর্বল ছিলাম। কারণ ও দেওয়ান বাড়ির অন্য ছেলেদের মতো ছিলো না। দিনকে দিন রোশানের ফলো করা বেড়ে গেলো। ওর বন্ধুমহলের কাছে ভাবী ডাকে পরিচিত পেলাম। সপ্তাহ দুই ঘুরতে না ঘুরতেই রোশান একদিন আমায় কলেজের পেছনের পুকুর পাড়ে ফিল্মি স্টাইলে হাঁটু গেড়ে প্রপোজ করলো। আমি ভয়ে একসেপ্ট করিনি।ভয় পাওয়ার কারণ আছে। কলেজে নতুন আসার পর আব্বু সাবধান করে দিয়েছিলো। কোন ছেলের সাথে কোনরকম সম্পর্ক নয়। আর দেওয়ান বাড়ির ছেলেদের সাথে তো একদমি না। যদি এমন কিছু আব্বুর কানে যায় তাহলে পড়াশোনা বাদ।তাই আমি একটু ভয়ে ছিলাম। আব্বুর ওপর কেন জানি সেদিন খুব বেশি রাগ হয়েছিল। কেন আব্বু আগে থাকতে চেয়ারম্যান বাড়ির ছেলেদের সাথে সম্পর্কের সাথে মানা করলো। এখন বুঝি বাবা-মা কখনও সন্তানের খারাপ চায় না।

আমি রোশানের প্রপোজ একসেপ্ট করিনি বলে সে হাত কেটেও ফেলছিলো। একদিকে তার প্রতি দূর্বলতা আরেকদিকে আব্বুর ভয়, আপরদিকে রোশানের পাগলামি। আমার তখন পাগল পাগল অবস্থা।রোশানের বন্ধুরা আমাকে চাপ দিচ্ছিলো।রোশানের বন্ধু আহাদ রোশানকে ও আমাকে মিলাতে পুরোদমে কাজ করেছে। আহাদের জোড়াজুড়িতে শেষে এক প্রকার বাধ্য হয়েই রোশানকে দুই দিন পর একসেপ্ট করে নিতে হয়। ধীরে ধীরে আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে যেতে লাগলো। ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে আমি প্রেম করতে ব্যস্ত থাকতাম।বন্ধুরা বারবার সাবধান করেছে। সম্পর্কে জড়িয়েছিস ভালো কথা। কিন্তু নিজের বিপদ ডেকে আনিস না।আমি ওদের কথা এক কান দিয়ে ঢুকিয়েছি আরেক কান দিয়ে বের করে দিয়েছি।নতুন নতুন প্রেমে পরলে যা হয় আরকি।

রোশান তখন মাস্টার্সে পড়তো। ও ঢাকার যে বেসরকারি কলেজে পড়তো সেখানে মাসে মাসে গিয়ে শুধু পরীক্ষা দিয়ে আসতো। আর সারা মাস আমাদের কলেজে ঘুরতো,ফিরতো,বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতো। আমি এখন রোশানের দিওয়ানা। পড়াশোনা আমার লাটে উঠেছে। বাবা চাকরিসূত্রে নবাবগঞ্জ আর আম্মু সারাদিন স্কুলে শিক্ষকতা করার দরুন আমার দিকে ততটা নজর রাখতে পারতো না।এতে আমি যেনো আরো বেশি সুযোগও পেয়ে গিয়েছিলাম। দেখতে দেখতে চার মাস কেটে গেলো। রোশনকে আমি আমার সবটুকু দিয়ে ভালোবাসি। এখন রোশান বলতেই অজ্ঞান। কিন্তু কিছু দিন যাবত রোশানের ভাব-ভঙ্গি অন্য রকম। ওকে প্রায় সময় নাকি জারার সাথে দেখা যায়। বন্ধুরাও কানাঘুষা করতে লাগলো এই বিষয়ে। কিন্তু আমার বিশ্বাস হতো না। একটা মানুষকে পাগলের মতো ভালোবাসলে যা হয় আরকি।রোশান সবসময় আমাকে রাই বলতো। কারণ জিজ্ঞেস করলে বলতো আমি তার কাছে স্পেশাল একজন। তাই আমাকে ভিন্ন নামে ডাকে।যদিও রাই আমার নিকনাম। কিন্তু এই নামে কেউ না ডাকায় এর মধ্যে জং ধরে গিয়েছিল। সেই জং ছুটাতে রোশান এই নামে ডাকতো। আমার তুমি বলতে লজ্জা লাগতো বলে আপনি করে বলতাম।

সেদিন কলেজের পেছনে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছিলাম। মূলত সবাই কথা বলছিলো আমি পানির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।আমাদের মধ্যে জারা ছাড়া সবাই ছিলো। হঠাৎ রোশান জারার হাত ধরে আমার সামনে এসে হাজির। এসেই সে বললো,

— রাই, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

#চলবে

আসসালামু আলাইকুম। এক পর্বে অতীত শেষ করতে পারলাম না।তাই আরেক পর্ব লাগবে।আমি জানি আজকের পর্ব ছোট হয়ে গেছে। তাই আগামীকাল দুপুর ১২ টার দিকে আরেকটা বোনাস পর্ব দিতে চাইছি। আপনারা কি বোনাস পর্ব চান?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here