শিশির_ভেজা_রোদ্দুর Part_56

0
1214

শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
Part_56
#Writer_NOVA

ভাইয়ার কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম। সত্যি, সত্যি এনাজ বিষ খেয়ে নেইনি তো? আমার হাত-পা কাঁপা কাঁপি শুরু হয়ে গেলো। আমরা কি আসতে দেরী করে ফেললাম? ভয়ে আমি সামনে এগুতে পারছি না। মনে হচ্ছে পা দুটো কেউ আটকে রেখেছে ফ্লোরের সাথে। আমি শুকনো ঢোক গিলে ভাইয়াকে বললাম,

— ভাইয়া, একটু ধাক্কা মেরে দেখ তো।

— আচ্ছা দেখছি।

তায়াং ভাইয়া এনাজকে জোরে ধাক্কা দিয়ে নাম ধরে ডাকতে লাগলো,
— এনাজ, এই এনাজ!

— হুহ।

এনাজের কন্ঠস্বর পেয়ে আমার কলিজায় পানি এলো। বড় করে হাফ ছাড়লাম। আরেকটু হলে আমি জ্ঞান হারাতাম। তায়াং ভাইয়া ওকে আবার ধাক্কা দিয়ে বললো,

— উঠ।

এনাজ জড়ানো গলায় বললো,
— তায়াং তুই এখানে কেন? তোর না আজকে বিয়ে। যা ভাই বাসায় যা। সরি রে ইয়ার আমি তোর বিয়েই থাকতে পারবো না।

— তুই উঠে দেখ কে আসছে।

— আমি তো মরি নাই। তাহলে বউ নিয়ে আমাকে দেখতে আসার মানে কি বল? আমাকে আরো পোড়াতে আসছিস?

—একটু আগে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি আর এখন এসব বলছিস?

— বেঁচে আছি এখনো ভাই।

উল্টোপাল্টা কথা শুনে এনাজের ওপর আমার রাগ হচ্ছে। তায়াং ভাইয়ার দিকে তাকাতেই সে আশ্বস্ত গলায় বললো
— তোর শোকে পাগল হয়ে গেছে। একটু পরই তোকে দেখে ঠিক হয়ে যাবে। শীতে শরীর ঠান্ডা হয়ে ছিলো। আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

এনাজ সোজা হয়ে উঠে বসলো। কিন্তু আমাদের দিকে না তাকিয়ে চোখের ওপর হাত দিয়ে বললো,

— লাইটটা অফ করে দে তায়াং। চোখে লাগছে।

— এখন না। আগে বল তোর পাঞ্জাবী কোথায়?

— কেন? পাঞ্জাবী দিয়ে কি করবি?

— গায়ে দিবো।

— ওয়ারড্রবের তিন নাম্বার ড্রয়ারে দেখ।

ভাইয়া ওয়ারড্রব খুলতে খুলতে এনাজকে বললো,
— সামনে একটু তাকিয়ে দেখ কে আসছে।

— কে আসছে?

চোখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে আমার দিকে তাকালো। প্রথমে খেয়াল করলো না। অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে কিছু একটা ভেবে চোখ ডলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— তায়াং, আমি সত্যি দেখছি?

— হুম তোর টিডি পোকা।

— তোদের বিয়ে হয়ে গেছে?

— জ্বি না। আমরা পালিয়ে তোর কাছে চলে আসছি।

কথাটা শোনার সাথে সাথে এনাজ লাফ দিয়ে উঠে দৌড়ে আমার কাছে চলে এলো। এর মাঝে আমি বোরখা খুলে ফেলেছি।উনি এগিয়ে এসে শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। আমি সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বললাম,

— আমি বলছিলাম না সব ঠিক করে দিবো।কি এবার বিশ্বাস হলো তো?

— লাল শাড়িতে তোমাকে সত্যি পুতুল বউ লাগছে।

— শুকরিয়া।

—আমি ভেবেছিলাম তোমাকে হারিয়ে ফেলছি।

— এই জন্য সিগারেট টানা হয়েছে?

এনাজ আমাকে ছেড়ে মাথা চুলকে বোকা ভঙ্গিতে বললো,
— হু একটু-আধটু আরকি।

— সারা রুম সিগারেটের গন্ধে টেকা যাচ্ছে না। আর উনি বলছে একটু আধটু।

উনি মাথা নিচু করে বোকার মতো মাথা চুলকাতে লাগলো। চোখ, মুখ লাল হয়ে ফুলে আছে। চেহারার বেহাল দশা। পরনের টি-শার্ট, টাউজার কুঁচকে তেরটা বেজে আছে। মাথার চুল উসকো খুসকো। একদিনে কি অবস্থা করেছে নিজের। তায়াং ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,

— এনাজ, নোভার নামে একটা বিচার আছে।

— কি বিচার?

— ও বলছিলো আমাকে বিয়ে করতে নাকি রাজী আছে। আমি বলছি তোর কাছে বলে দিবো। ও বলে তোকে নাকি ভয় পায় না।

আমি তায়াং ভাইয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই ভাইয়া মোকি হাসি দিয়ে পাঞ্জাবী নিয়ে যেতে যেতে বললো,
— অনেক জ্বালিয়েছিস আজকে। এবার তোর প্রেমিকের ঠেলা সামলা। দিয়েছি পাগলকে রাগিয়ে। বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে বোইনা।টা টা বাই বাই।

আমি রেগে ভাইয়ার পিঠে কিল দিতে গেলেই ও দৌড়ে বাইরে চলে গেল। যাওয়ার আগে বাইরে থেকে দরজা আটকে দিলো। আমি সামনের পাটি দাঁত বের করে এনাজের দিকে তাকাতেই দেখলাম এনাজ আমার দিকে খাইয়া ফালামু লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

— তায়াং যা বলে গেলো তা কি সত্যি?

আমি ভয়ে থতমত খেয়ে বললাম,
— না মেনে হ্যাঁ। হ্যাঁ না মানে না।

— সত্যি বলো?

আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে সত্যি ভয় পেয়ে গেলাম। ও ভীষণ রেগে আছে। মনে মনে বললাম,

— আব ত্যারা কেয়া হোগা নোভা! তু তো আজ গেয়া।

এনাজ ধমক দিয়ে বললো,
— কথা বলছো না কেন?

আমি বিরবির করে বললাম,
— খাইছেরে আমি আজকে শেষ। কেন যে পাকনামি করে শয়তানটাকে ঐসব কথা বলতে গিয়েছিলাম। এখন আমার কি হবে? আমাকে কে বাঁচাবে? দরজাও তো আটকানো😵।

এনাজ মুখে রাগী ভঙ্গীমা রেখেই এগিয়ে আসছে আমার দিকে। আমি মনে মনে আল্লাহর নাম জপছি। আজ বোধহয় আমার রক্ষা নেই। আল্লাহ তুমি বাঁচিয়ো। বেঁচে থাকলে সবার আগে তায়াং ভাইয়াকে কেলিয়ে আলু ভর্তা করবো। শয়তান ছেমরা। আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে নিজে পালালো।

💖💖💖

কোমড়ে শাড়ির আঁচল গুঁজে সারা বাসা গুছানোর কাজে লেগেছি। পুরো বাসাটাকে গোয়ালঘর করে রেখেছে। দেখতে কিরকম বিচ্ছিরি লাগছে। শার্ট,প্যান্ট এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা।দেড়-দুই ঘন্টার ওপর লাগবে এগুলোকে গুছাতে। এনাজ দরজায় হেলান দিয়ে বুকে দু হাত গুঁজে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তখন অনেক কষ্ট করে পাগলকে থামিয়েছি। নয়তো এতখনে এসপারওসপার হয়ে যেতো। আমি বিছানা ঝাড়ু দিয়ে চাদর টানটান করে তার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলাম,

— কি দেখেন?

— তোমাকে।

— অদ্ভুত ব্যাপার তো।আগে কখনো আমাকে দেখেননি?

— হুম দেখেছি। কিন্তু আজ তোমাকে বউ বউ লাগছে।এসেই কিরকম আঁচল গুঁজে কাজে নেমে পরেছো। মনে হচ্ছে আমার বউ তার বাবার বাড়ি থেকে ফিরে আসছে।

— হয়েছে আর পটাতে হবে না। গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসেন। চেহারার কি বেহাল দশা করছেন তা কি আয়নাতে দেখছেন?

উনি মুচকি হেসে গানের সুরে বললো,
— আমার হৃদয় একটা আয়না। সেই আয়নায় তোমার মুখটি ছাড়া কিছুই দেখা যায় না।

আমি বালিশের কভার ঠিক করতে করতে তার দিকে তাকিয়ে মিটমিট হাসলাম। একটু আগের এনাজের সাথে এখনকার এনাজের আকাশ-পাতাল তফাৎ। কতটা উৎফুল্ল দেখাচ্ছে তাকে। নাহ মানুষটাকে আমি ছাড়বো না। তাকে আমার চাই। এতটা কেয়ারিং ও ভালোবাসা আমি অন্য কারো থেকে পাবো না। বিছানা পুরোটা গুছিয়ে চেয়ারের ওপর জামা-কাপড় ধরতে গেলেই সে বললো,

— ঐগুলো আধোয়া,ময়লা কাপড়। ভাজ করতে হবে না। বুয়া আসলে তাকে দিয়ে ধুইয়ে নিবো।

— বুয়া কি প্রতিদিন আসে?

— না সপ্তাহে এক দিন এসে সব কাজ করে দিয়ে যায়।

— তাহলে রান্না কে করে?

— মন চাইলে আমি করি। নয়তো বাইরে থেকে খেয়ে আসি। দুটোর একটাও করতে মন না চাইলে না খেয়েই থাকি।

— হু না খেয়ে খেয়েই তো চেহারার এই দশা। (চেয়ার দেখিয়ে) দেখেন তো চেয়ারটাকে কি অবস্থা করে রাখছেন। প্রতিদিন দুই একটা করে ধুয়ে ফেললে তো এতগুলো জমে না।

— এখন জমবেই। তুমি যখন ধুয়ে দিবে তখন জমবে না। জামা-কাপড় ধোয়ার জন্য হলেও তোমাকে চাই।

— ওহ্ কাজের জন্য আমাকে লাগবে?

— সবকিছুর জন্য লাগবে। আমার কি মন চাইছে জানো?

— কি?

— পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে।

— খবরদার এরকম চিন্তা ভাবনা মাথায়ও আনবেন না। আমি কিন্তু এখন আপনার বউ না।

— এর জন্য তো দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আফসোস করছি।

— তায়াং ভাইয়া কোথায়? দরজা খুলে দিয়ে গেলো কোথায়?

— বাইরে এনামের কাছে। রাতের খাবারের ব্যবস্থা করতে।

— এনাম ভাইয়া আসছে?

— হুম সকালে।

— ওহ্ এর জন্য দরজা বাইরে থেকে আটকানো ছিলো।

— জ্বি হ্যাঁ।

—আমি ফ্রেশ হতে যেতে বলছি।

— হুম যাচ্ছি। আগে মন ভরে তোমাকে দেখে নেই।

— আমাকে পরেও দেখতে পারবেন। আমি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি না। আপনি দয়া করে ফ্রেশ হতে যান।

এনাজ শয়তানি হাসি দিয়ে দুষ্টামির সুরে বললো,
— এত সুন্দর করে জান বলে যেতে বললে আমি কি না গিয়ে থাকতে পারি।

— আমি আপনাকে যেতে বলছি জান বলিনি।

—ঐ একই।জানো, তোমার এই শাসনগুলো আমার ভীষণ ভালো লাগে। মনে হয় আমার বউ আমাকে শাসন করছে।

— না বেশি কথা বলছেন। কাজের সময় এত কথা আমার ভালো লাগে না।

— নিজে যখন কথা বলতে বলতে কান পচিয়ে ফেলো তখন কিছু হয় না। আমি একটু কথা বললেই দোষ।

— হ্যাঁ, দোষ। এবার ফ্রেশ হয়ে আসেন।

— যথাআজ্ঞা মহারাণী।

উনি মাথা নাড়িয়ে ওয়াসরুমের দিকে যেতে নিলে আমি তাকে ডেকে বললাম,

— এই যে শুনেন!

— জ্বি বলো।

— উনাদের বাইরের থেকে খাবার আনতে মানা করে দিন।

— কেন?

— আমি আজ বাসায় রান্না করবো।

— না তার দরকার নেই। পুরো বাসা গুছিয়ে তুমি হাঁপিয়ে যাবে। আবার রান্না করতে গেলে তুমি অসুস্থ হয়ে পরবে। এমনি সারাদিন অনেক ধকল গিয়েছে তোমার ওপর।

আমার ছোটখাটো বিষয়গুলোও সে খেয়াল করে, কতটা কেয়ার করে। তার এই বিষয়গুলো আমাকে মুগ্ধ করে।আমি মিষ্টি হেসে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— আমার কথা এতো চিন্তা করতে হবে না।

— তাহলে কে করবে?

— আমি আজ বাসায় রান্না করবো। ব্যাস শেষ কথা। আর আমি কি একা রান্না করবো নাকি? আপনারাও আমাকে সাহায্য করবেন।সবাই হাতে হাতে কাজ সেরে ফেলবো।

— আচ্ছা তাহলে ওদের বলে দেই।

— কি করে বলবেন? ভাইয়ার মোবাইল তো বন্ধ।

— এনামের মোবাইল খোলা আছে।

এনাজ ওয়ারড্রবের ওপর থেকে মোবাইল নিয়ে এনাম ভাইয়াকে কল করে খাবার আনতে মানা করে দিলো। তারপর ওয়াসরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেল। আমি পুরো রুম গুছিয়ে বসার রুম গোছাতে চলে গেলাম।

💖💖💖

পাক্কা দুই ঘন্টায় পুরো বাসাকে গুছিয়ে গোয়ালঘর থেকে মানুষের ঘরে পরিণত করেছি। এখন গহনাগাটি সব খুলে কিচেনে রান্না করছি। হাতে শুধু চিকন দু গাছি চুড়ি, নাকে নাকফুল। এই দুটো আমার ভীষণ ভালো লাগে। কেমন বিবাহিত বিবাহিত ফিলিংস আসে। এক চুলোয় ভাত চড়িয়েছি। আরেক চুলোয় ডিম সিদ্ধ। রাতের জন্য শর্টকাটে ভাত,ডিম ভুনা, ডাল রান্না করবো। সময় পেলে আলু ভর্তা বানাবো। না তায়াং ভাইয়াকে নয়, আলুকেই ভর্তা বানাবো। তায়াং ভাইয়ার ওপর পরেছে পেঁয়াজ কাটার দায়িত্ব। তায়াং ভাইয়া চোখ বন্ধ করে চেচিয়ে আমাকে বললো,

— শাঁকচুন্নি আমাকেই কি তোর পেঁয়াজ কাটতে দিতে হলো? পেঁয়াজের কি ঝাঝ! এখন আমার চোখের পানি, নাকের পানি এক হয়ে যাচ্ছে।

আমি নাক সিটকিয়ে বললাম,
— ছিঃ খাচ্চোর। কি বলিস এসব? যা সর।

এনাজ বসা থেকে এগিয়ে এসে বললো,
— দে তায়াং আমি কেটে দেই।

আমি সামনে থাকা খুন্তিটা উঁচিয়ে এনাজকে শাসনের সুরে বললাম,
— খবরদার ওকে একটুও হেল্প করবেন না। বউকে নাকি সব কাজ করে খাওয়াবে। তাহলে এতটুকু পেঁয়াজ কাটতে নাকের পানি, চোখের পানি এক হলে কি কাজ করে খাওয়াবে?

— তাই বলে তুমি বেচারাকে এভাবে কষ্ট দিবে?

— এটা ওর শাস্তি। গত দুই দিন আমাকে অনেক প্যারা দিছে। আপনি যদি ওকে পেঁয়াজ কাটতে সাহায্য করেন তাহলে আমি কিচেন থেকে বের হয়ে যাবো।

— বাপরে! বিয়ের আগেই কি থ্রেট দেয়🥶। বিয়ের পর যে কি করবে আল্লাহ মালুম।

তায়াং ভাইয়া আফসোসের সুরে বললো,
— তোর জীবন তেজপাতা থেকে বাঁশপাতায় রূপান্তরিত করবে ভাই।

এনাজ একগালে হেসে আমার দিকে তাকিয়ে তায়াং ভাইয়াকে বললো,
— আমিও সোজা করতে জানি। যে যেমন তার সাথে তেমন করে সিধা করার অভিজ্ঞতা আছে আমার।

— অবশ্য তুই এটা ঠিক বলেছিস। সেদিন রোশানকে যা মারটা দিলি ভাই। আমি তো অবাক। আমি তো ভেবেছিলাম তুই একা গিয়ে মার খেয়ে আসবি। পরে দেখলাম তুই একাই ওর তেরটা বাজিয়ে দিলি।

— তোরা শেষে গিয়ে না ধরলে ওকে আমি মেরেই ফেলতাম। অতিরিক্ত বাড় বেড়েছিলো ও। কিছু বলছিলাম না বলে পার পেয়ে গেছে ভেবেছে। মনের আশ মিটিয়ে যদি মারতে পারতাম।

— তাহলে মরেই যেতো। এমনি এক হাত, পা ভেঙে হসপিটালে ছিলো কতদিন।

আমি চিন্তিত ভঙ্গিতে বললাম,
— কাজটা আপনি ঠিক করেননি এনাজ। ও অনেক ডেঞ্জারাস। সুযোগ বুঝে আপনাকে একা পেলে আক্রমণ করতে পারে। এত সহজে ও আপনাকে ছেড়ে দিবে না। আমার জন্য নিজের বিপদ ডেকে আনলেন। আল্লাহ না করুক আপনার যদি কোন ক্ষতি করে ফেলে।

এনাজ আস্বস্তের গলায় বললো,
— তুমি টেনশন নিও না তো। রোশান আমার মাথার একটা চুলও স্পর্শ করতে পারবে না। ও যেই রাস্তা অবলম্বন করবে সেই রাস্তা আমরা বহু আগে পার করে এসেছি। ভাগ্যক্রমে ও বেঁচে গেছে। নয়তো ওর কপালে নয় নম্বর বিপদ সংকেত থাকতো।

আমি মুখ বাঁকিয়ে বললাম,
— হু নেতা তো আপনারা। আপনাদের কত সাঙ্গপাঙ্গ আছে। আপনাদের কি কিছু হতে পারে নাকি?

— এই তো বুঝে গেছো।

— নিন এবার নেতা সাহেব এই সিদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়িয়ে দিন। তায়াং ভাইয়া তোর পেঁয়াজ কাটা হয়েছে?

তায়াং ভাইয়া মুখটাকে শুকনো করে বললো,
— আরেকটু বাকি আছে।

— এত মোটা করে কাটছিস কেন? আরো চিকন হবে।

— আরো চিকন চাইলে নিজে করে নে। আমি পারবো না। এতটুকু করেছি অনেক কষ্টে।

— এই চেহারা নিয়ে বউকে কাজ করে খাওয়াতে হবে না। একটু পেঁয়াজ কাটতে কপাল বেয়ে ঘাম পরছে।দে আমার কাছে। আমার কাজ তো কমাসনি। উল্টো বাড়িয়ে দিয়েছিস।

তায়াং ভাইয়া চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে জিহ্বা দেখিয়ে ভেংচি কাটলো। আমি হাতের ছুরিটা উঁচু করে ওকে একবার ভয় দেখিয়ে পেঁয়াজ কাটায় মনোযোগ দিলাম। এনামের কথা মনে আসতেই জিজ্ঞেস করলাম,

— এনাম ভাইয়া কোথায়?

তায়াং ভাইয়া বললো,
— আমাকে এনাম বললো, “ভাইয়া আপনি চলে যান আমি একটু পর আসছি।” এখনো তো আসার নাম নেই।

— আই এম হেয়ার।

এনাম ভাইয়া দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চেচিয়ে কথাটা বললো। আমি মুচকি হেসে বললাম,

— এই তো এনাম ভাইয়া চলে এসেছে। তা ভাইয়া কেমন আছেন?

— আলহামদুলিল্লাহ ভাবী। আপনি কেমন আছেন?

— আলহামদুলিল্লাহ। গত দুই দিন ভালো ছিলাম না। এখন অনেক ভালো আছি।

— আমিও ছিলাম না। এখন আমার ভাইয়ার হাসিখুশি মুখটা দেখে আমি পুরো ভালো আছি।বিয়েটা হয়ে গেলে আমি পুরো নিঃস্ব হয়ে যেতাম। ভাইয়া তো গত দুই দিন ধরে উল্টোপাল্টা বকছে। তাই ভয়ে চলে এলাম। যদি কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে। এসব কথা এখন বাদ দেই। যা চলে গেছে তাতো গেছেই। এখন তো সব ঠিক আছে।

— ভাইয়া বাইরে থেকে আসছেন এখন ফ্রেশ হয়ে আসেন।

— আমি কি কোন কাজে হেল্প করতে পারি?

— না না তার দরকার নেই। আমার হেল্পার দুইজন আছে। আপনাকে কিছু করতে হবে না।

— আচ্ছা তাহলে ফ্রেশ হয়ে আসি।আরেকটা কথা ভাবী।

— কি?

— আপনাকে লাল শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে। আমার ভাইয়ের বউ মনে হচ্ছে। বাসায় ঢুকেই বুঝে গিয়েছিলাম কোন গুছানো মেয়ের আবির্ভাব ঘটেছে।

— কিভাবে বুঝলেন?

— এই যে পুরো বাসাটা কি সুন্দর করে গুছানো। এটা মেয়েদের কাজ। বেশিরভাগ ছেলেরাই রুম অগোছালো করে রাখে। তবে সবাই নয়। অনেক ছেলেও আছে গুছানো। তবে সেগুলোকে অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হয়।

আমি মুচকি হেসে বললাম,
— তেমন কিছু নয়। অগোছালো দেখতে ভালো লাগছিলো না।কেমন জানি দমবন্ধ লাগছিলো। তাই কোমড়ে সবকিছু গুছিয়ে ফেললাম।

— আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

এনাম চলে গেল।তায়াং ভাইয়া এনাজকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— দেখলি ভাই একদিকে গরম আরেকদিকে নরম। আমাদেরকে খাটিয়ে মারছে। অন্য দিকে তার দেবরকে বাচিয়ে দিলো। এনাম হেল্প করতে চাইলেও মানা করে দিলো।

এনাজ ডিমের খোসা ছাড়িয়ে দিতে দিতে বললো,
— ইহাই ভাবীদের কাজ। দেবরের জন্য বেশি মায়া থাকে।

আমি ভাত হয়েছে কিনা সেটা দেখে তায়াং ভাইয়াকে বললাম,

— আজাইরা বসে আছিস তো ভালো লাগছে না, তাই না? যা ডাল ধুয়ে দে। আরেক চুলো খালি যাচ্ছে। ডাল সাজিয়ে বসিয়ে দিবো।

তায়াং ভাইয়া রেগে ফোঁস করে উঠলো। আমি ওর দিকে নজর দিলাম না। ভাত হয়ে গেছে। এখন মাড় ঝড়াতে হবে। ভাইয়া ডাল ধুতে বেসিনের দিকে চলে গেলো। অবশেষে দেড় ঘন্টা যুদ্ধ করে রান্না শেষ করলাম। রান্না শেষ করে একসাথে সবাই হৈ-হুল্লোড় করে খাবার খেলাম। তারপর ল্যাপটপে ভুতের মুভি দেখলাম। রাত আড়াইটার দিকে ঘুমাতে চলে গেলাম। তারা তিনজন এক রুমে আমি একা আরেক রুমে।

পরেরদিন আমাদের জন্য কি খারাপ কোন ঘটনা অপেক্ষা করছে? হুট করে মনটা কিরকম জানি কু ডাকছে। আচ্ছা সত্যি কি খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে? যার কারণে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here