#প্রেমানুরাগ পর্ব-১৭
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথি
এয়ারপোর্টের ডিপার্চার গেটের কাছে প্রিয়ম দাঁড়িয়ে আছে অনুরাগের জন্য। বিমান ল্যান্ড করেছে কিছুক্ষন হলো। অনুরাগের এখনই চলে আসার কথা। গতকাল রাতে অনুরাগের কাছে প্রেমা প্রিয়মের ছবি পাঠিয়েছিল সাথে এফবি আইডির লিংক। অনুরাগ তো ছদ্নবেশে থাকবে তাই অনুরাগ প্রিয়মকে চিনে নিবে।
আরো কিছুক্ষন অপেক্ষার পর কাঙ্খিত মানুষটি প্রিয়মের সামনে এসে দাঁড়ালো। প্রিয়ম প্রথমে চিনতে না পারলেও অনুরাগ যখন বলে,
–হ্যালো! আর ইউ প্রিয়ম হাসান?
প্রিয়ম অবাক হয়ে তারপর বলে,
–ইয়েস। অনুরাগ খান, রাইট?
অনুরাগ হেসে হুডিটা ঠিক করে চোখ থেকে সানগ্লাসটা খোলে যেটা সে পুরো বিমান যাত্রাতে পড়ে ছিল। তারপর হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
–স্যরি, প্রথমে আমার পরিচয় দেইনি। ফর দা সেক অফ হাইড মাই আইডেন্টিটি ফ্রম পাবলিক।
প্রিয়ম হাত মিলিয়ে হাসি মুখে বলে,
–আই আন্ডারস্ট্যান্ড। প্লিজ কাম উইথ মি।
_________
প্রেমা অস্থিরতার সাথে অপেক্ষা করছে। প্রিয়ম ভাই একবারো কল করছে না আবার অনুরাগ বাসায় আসার পর বাবার রিয়েকশন কি হবে তা ভাবতে ভাবতেই ওর প্রেশার বেড়ে যাচ্ছে। প্রেমা সানাফকে কল করলো। সানাফ কল রিসিভ করে বলে,
–বল।
প্রেমা অস্থির হয়ে বলে,
–ভাই তুমিও কি প্রিয়ম ভাইদের সাথে আসবা? আজ এতো লেট করতেছো কেন?
সানাফ বলে,
–হ্যাঁ, আমার অফিসের সামনে দিয়েই ওরা যাবে বলে আমি প্রিয়মকে বলেছি আমাকে পিক করতে। আজ এক্সট্রা ডিউটি করছি। বলা তো যায় না কাল অফিসে যেতে পারি কি না! তোর ভাবির যন্ত্রনায় তো বাইকে বেঁচে এখন প্রাইভেট কার কিনার চেষ্টা করতে হচ্ছে। এক মাস তো লাগবেই।
প্রেমা বলে,
–আমার ভয় করছে। বাবা যদি মেনে না নেয়!
সানাফ অভয় দিয়ে বলে,
–মেনে না নিলে তুইও তোর জামাইয়ের মতো এক্টিং শুরু করবি। কেঁদে কেঁদে ঘর-বাড়ি ভাসিয়ে ফেলবি!
প্রেমা কাটকাট গলায় বলে,
–দেখ ভাই! অনুরাগ এক্টিং তার প্রফেশন হিসেবে নিয়েছে যেটা ওর বাবার ইচ্ছেতে।
সানাফ হাসতে হাসতে বলে,
–জাস্ট কিডিং। আচ্ছা রাখি। প্রিয়ম মেসেজ করেছে ওরা এসে পড়েছে। উবার তো বেশিক্ষণ থামবে না। আবার কাকাকেও পিক করতে হবে।
কল কেটে দেয় সানাফ। প্রেমা আবারো পায়চারী করতে লাগে। বিছানায় বসে ইশা ও প্রিয়া অনলাইনে লুডো খেলছিল সাথে আরো দুটো ফ্রেন্ড আছে অনলাইনে। হঠাৎ প্রেমা প্রিয়ার চিৎকার শুনে আঁতকে উঠে। প্রিয়া কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,
–এটা ঠিক না ইশাপু। আমার এই লাস্ট গুটিটা ঢুকে গেলেই আমি ফ্রাস্ট হয়ে বসে থাকতাম। এখন তো রত্না আপুর শেষ দুইটা গুটি একত্রে ঢুকে যাবে।
ইশা হাসতে হাসতে বলে,
–রত্নার গুটি আমার ঘর দিয়ে ঢুকবে। আর আমার একটা কাঁচা গুটি এখনো বসে আছে রত্নার জন্য। তোর গুটি খেয়ে আমি আমার তিন নাম্বার গুটি তোর সামনে দিয়ে নিয়ে যাবো।
প্রিয়া ইশাকে একটা ঘুষি মেরে আবার খেলতে থাকে। ওদের দুজনকে প্রেমা এনেছিল নিজের সাপোর্টের জন্য আর এরা কি করছে! প্রেমার রাগ হচ্ছে তাও দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে আছে। কথায় আছে না,
“হাতি কাঁদায় পড়লে চামচিকাতেও লাথি মারে!”
প্রেমাকে আজ প্রিয়া কতোবার ইচ্ছে করে ভয় দেখিয়েছে। ইশাও অনেক পঁচানি দিয়েছে। প্রেমা প্রতিবার কাঁদো কাঁদো হলে ওরা দুটোতে লুটোপুটি খেয়ে হেসেছে যেনো কেউ জোক্স বলছে!
______
চলে এসেছে কাঙ্খিত সময়। কলিংবেলের শব্দে প্রেমা গুটিশুটি মেরে বসে আছে নিজের রুমের ব্যালকনির কোনে। তার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কপাল বেয়ে দরদর করে ঘাম পরছে। ইশা মাত্র বলেও গেছে প্রেমা যেনো দরজা খুলে কিন্তু প্রেমা মানা করে দিয়েছে। এও বলেছে,
“তোরা রুম থেকে বের হলে আমি আমার রুমের দরজা বন্ধ করে দিবো। এরপর দরজা খুলবো না। আমার খুব ভয় করছে। বাবার রিয়াকশন কি হবে তা ভেবেই আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আবার বাবা যদি মেনে না নেয় সেই ভয়ে দমবন্ধকর লাগছে সব।”
ইশা ও প্রিয়া ড্রয়িংরুমে চলে গেলে প্রেমা সত্যি সত্যি দরজা বন্ধ করে দেয়। সানাফ তার বাবাকে ডাকতে গেছে। অনুরাগ সোফায় বসে মনের মাঝে সামনের পরিস্থিতি সামলানোর জন্য সাহস জোগাড় করছে আর প্রেমাকে এক পলক দেখার জন্য উশখুশ করছে। প্রিয়ার বাবা গাড়িতে অনুরাগের সাথে পরিচিত হয়েছে। সেও এখন বড় ভাইয়ের অপেক্ষা করছে।
প্রিয়া ও ইশা ইতিমধ্যে অনুরাগের সাথে হাই-হ্যালোর পর্ব সেরে ফেলেছে তবে এখন প্রেমার বাবার রিয়াকশনের জন্য দুলাভাই হিসেবে খাতির-যত্ন করতে পারছে না। প্রেমার মা, প্রিয়ার মা ও সিয়া রান্নাঘরে গিয়ে রাতের খাবারের ব্যাবস্থা করছে। এসময় তো নাস্তা দেবার পরিস্থিতি নেই তাই সিয়া ঠান্ডা জুস দিয়ে গেছিলো। সিয়ারো এখন ভয় হচ্ছে।
সানাফ তাকে খুব সুন্দর করে সেদিন রাতে বুঝিয়েছিল। সিয়ার প্রিয়াকে নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। এখন তার ভাই যদি প্রিয়াকে মনে জায়গা দিতে পারে তবে সেও খুব খুশি হবে।
এখন বাসায় তার ননদাই ওরফে তার প্রিয় হিরো এসেছে বলে সে দারুন এক্সসাইটেড। কাল রাত থেকে সিয়া এক্সসাইটেড। সানাফ এটা দেখে বারবার ভ্রুঁ কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে তাকাতো। সানাফের তো হিংসে হচ্ছিলো যা দেখে সিয়া খুবই পুলকিত।
প্রেমার বাবা ড্রয়িংরুমে আসলে অনুরাগ বিনয়ের সাথে সালাম দেয়। প্রেমার বাবা চশমা ঠিক করে সালামের জবাব দিয়ে সিঙ্গেল সোফাতে বসে। প্রিয়া ও ইশা প্রেমার রুমের বন্ধ দরজার দিকে তাকাচ্ছে আর হাত কচলাচ্ছে। প্রেমার বাবা বলে,
–তুমি অনুরাগ খান? ইন্ডিয়ার বলিউডের সুপারস্টার? সানাফ তো তাই বললো।
অনুরাগ মাথা থেকে ক্যাপ খুলে জোরপূর্বক হেসে জবাব দেয়,
–জ্বী আঙ্কেল। আমি অনুরাগ খান। একসময়কার সুপারস্টার সাহিল খান ও অনুরিমা চৌধুরীর ছেলে আমি।
প্রেমার বাবা কপালে ভাজ ফেলে বলেন,
–হ্যাঁ, সাহিল খানের অনেক নাম-ডাক ছিল আগে। তার ওয়াইফ তো কলকাতা থেকে মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগীতার একজন পার্টিসিপেট ছিলেন।
অনুরাগ আশা করেনি যে প্রেমার বাবা এতো কিছু জানবে। অনুরাগ ঢোক গিলে বলে,
–হ্যাঁ, মা সেরা দশে ছিলেন আর মা অভিনয়ে ক্যারিয়ার করেনি। তিনি সংসারে মন দিয়েছিলেন।
প্রেমার বাবা এবার ভণিতা ছাড়া বলেন,
–তো বাবা, তোমার আমার সাথে কি কাজ তোমার?
সবাই এবার টেনশনে আছে। অনুরাগ সানাফ ও প্রিয়ম যে প্রেমার বাবার পেছোনে দাঁড়িয়ে আছে তাদের দিকে একবার তাকিয়ে প্রেমার বাবাকে এক নিঃশ্বাসে বলে,
–আঙ্কেল আমি আপনার মেয়ে প্রেমাকে ভালোবাসি। আপনার মেয়েও আমাকে ভালোবাসে। মূলত আপনার মেয়ের পছন্দের মানুষটা আমি। আপনি প্লিজ আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিন। আমি আজকে এজন্য এসেছি এখানে।
অনুরাগ কথা গুলো বলে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে দুই হাত মুঠিবদ্ধ করে বসে আছে প্রেমার বাবার রিয়েকশনের অপেক্ষাতে। ঘরের বাকি সদস্যরাও এক গুমোট আবহাওয়াতে বিরাজমান।
এদিকে প্রেমা নিজের রুমে অজু করে জায়নামাজ নিয়ে বসে গেছে। কি হবে সবটা তার কাছে ঘোলাটে। এশারের নামাজটা পড়ার পর মোনাজাতে বসে আছে। প্রেমার মা, প্রিয়ার মা ও সিয়া রান্নাঘরের দরজার কাছে মুখে আঁচল চেপে অপেক্ষা করছে প্রেমার বাবার কিছু বলার অপেক্ষাতে। প্রিয়ম সানাফের হাতে খামচে ধরে রেখেছে। সানাফ ব্যাথা পেয়ে প্রিয়মের হাত ছাড়িয়ে ইশারাতে প্রিয়মকে শাসায়।
প্রেমার বাবা গম্ভীর হয়ে বসে আছে। প্রিয়ার বাবাও এখন ভাইয়ের গাম্ভীর্যতা দেখে সন্দিহান।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি করবেন না।
আমার নিজেরি ভয় করতেছে।🥺