প্রেমানুরাগ পর্ব-২২
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথি
সময় আগাচ্ছে নিজ গতিতে। অনুরাগের মুভির কাজ শেষ। এখন মহরত চলছে মুভির। এক মাসের মধ্যে এটা মুক্তি পাবে। অনুরাগকে এখন মহারাষ্ট্রের বাহিরে আবার যেতে হচ্ছে। অনুরাগের বাবা অনুরাগের সাথে এখন কথাও বলেন না। সে অনুরাগের সাথে একসাথে খান না। অনুরাগ আসার আগেই খেয়ে নিজের রুমে চলে যান। অনুরাগ প্রথমে অতো লক্ষ্য করেনি। কিন্তু মুভির শেষের দিকের কাজে একটু জলদি বাসায় ফিরতে পারতো। প্রথমদিন অনুরাগ দেখে তার বাবা ড্রয়িংরুমে কি যেনো করছে। অনুরাগ তাকে হ্যালো বললে সেও হ্যালো বলে নিজের স্টাডি রুমে চলে গেলো এরপর অনুরাগ ফ্রেশ হয়ে রাত ৯টার পর খেতে আসলে দেখে তার বাবা খেয়ে উঠে যাচ্ছে। অথচ অনুরাগ সেদিন জলদি খেতে এসেছিল কারন প্রতিদিন বাসায় আসে রাত ৯.৩০ এর পর তো প্রতিদিন বাবাকে খেয়ে নিতে দেখে ভাবে হয়তো জলদি খিদে পায় তাই খেয়ে নেয়। সার্ভেন্টকে জিজ্ঞেস করলে বলেছিল ৯টার দিকে খায়। সেদিন জলদি খেতে গিয়েও যখন দেখে তার বাবা খেয়ে নিয়েছ তখন অনুরাগের কাছে ব্যাপারটা কেমন যেনো লাগে।
রাতে প্রেমার সাথে কথা বলার সময় এগুলো বললে প্রেমা অনুরাগকে বলেছিল,
–বাবা তোমার সাথে অভিমান করেছে। তুমি যে সেদিন তাকে অনেক কিছু বলেছিলে সেসব নিয়ে সে অভিমান করেছে। রাগ বলবো না কারন সে কিন্তু তোমার সামনে পরতে ইচ্ছুক না কিন্তু সামনে পরলে ঠিকই কথা বলে। সেদিন তুমি রুড ছিলে তার প্রতি। শত হোক সে তোমার বাবা। আজ তুমি যে পর্যায়ে আছো সেটা উনার কারনেই।উনি তোমাকে আর্থিক সাপোর্ট না দিলে বা নিজে মুভির জগতে না আনলে তুমি এতো দূর আসতে পারতে না। উনি তোমার মায়ের সাথে কিন্তু চিট করেনি। নিজের ক্যারিয়ারের জন্য পারসোনাল লাইফকে নষ্ট করেছে যা অনুচিত ছিল। তাও সে তোমার বাবা। তাকে এখন তোমার মানাতে হবে। তার আপন বলতে এখন শুধু তুমি। নিঃসঙ্গ সে এই মূহুর্তে।
অনুরাগের কাছে কথা গুলো তীরের মতো লাগে তবে কথা গুলো সত্য। সে কি করবে ভেবে না পেয়ে সময়ের হাতে সবটা ছেড়ে দেয়।
_____এই দুই মাসে প্রিয়ার ল্যাবে, ক্যাম্পাসে দুষ্টুমি গুলো জারিফের ভালো লাগতে শুরু করে। প্রিয়াকে আবার আগের মতো চঞ্চল হয়ে উঠতে দেখে স্বস্তি পায়। বছরের শেষ সময়। নভেম্বর মাস এখন। হেমন্তের নতুন ধান পাঁকার পর ঘরে তোলার পর এখন নবান্নের আমেজ। শীতের আমেজ লাগতে শুরু করেছে প্রকৃতিতে। প্রিয়াদের বাড়িতে বিয়ে বিয়ে ভাব। ইশা ও প্রিয়মের বিয়ে ডিসেম্বরের শেষে। নভেম্বর মাসের তো আর কয়েকদিন বাকি। তারপর ইশাদের ফাইনাল পরিক্ষা। পরিক্ষার পর বিয়ের তারিখ। ইশার অনার্স শেষ হবে। বিয়ের কেনাকাটা অল্প-বিস্তর চলছে। ইশা বিয়ে ঠিক হবার পর অনেক খুশি। তার বাবা সব মেনে নিয়েছে জানার পর সে খুশিতে সবার জন্য একা একদিন সবান পছন্দের খাবার রান্না করেছে। ইশার বাবাও মেয়ের খুশিতে খুশি।
ইশার বিয়েতে অনুরাগ আসবে। প্রেমার বাবা নিজে মেয়ের জামাইকে আসতে বলেছে সাথে অনুরাগের বাবাকে নিয়ে আসতে বলেছে। অনুরাগ ভাবছে মুভির মহরত শেষ হবার পরপর সবার সামনে বিয়ের ব্যাপারটা খোলসা করবে তারপর নিজের বাবাকে নিয়ে বাংলাদেশে যাবে। অনুরাগ নিজের বাবার অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করেছে। সাথে এটাও বলেছে সে বিয়ে করেছে। অনুরাগের বাবা প্রথমে অবাক হলেও পরে খুশি হয়। অন্তত ছেলে তার নিজে এসে বিয়ের কথা জানিয়েছে। ছেলের মুখ থেকে শুনতে পেরে সে খুশি নাহলে মিডিয়াতে গুজবের সময় জানতে পারলে নিজেকে আরো ছোট মনে করতো।
অনুরাগ প্রেমার সাথে তার বাবার কথা বলিয়েছে। প্রেমা শ্বশুরের সাথে খুব সুন্দর করে সালাম দিয়ে হিন্দিতে কথা বলেছে। অবশ্য সাহেল খান বাংলা বোঝেন ও বলতেও পারেন কারন তার স্ত্রী তো বাঙালি ছিলেন। ভালোবেসেই তো বিয়ে করেছিলেন। অনুরাগও সেই সূত্রে বাংলা পারে।
__________
দেখতে দেখতে কেটে গেছে এক মাস। ডিসেম্বরের শেষের সপ্তাহ। সবার পরিক্ষা শেষ। এবার ইশার বিয়ের ধুম চলছে। প্রেমার পরিবার কোন পক্ষে যাবে সেটাই চিন্তার বিষয়। একদিক দিয়ে প্রেমার মামাতো বোন আরেকদিক দিয়ে চাচাতো ভাই। উভয় সংকটে পড়েছে।
শেষমেশ স্বিদ্ধান্ত হলো,
প্রেমা ও ওর মা থাকবে মেয়ে পক্ষে আর প্রেমার বাবা, সানাফ ও সিয়া ছেলে পক্ষে। হলুদের দিন ত্বত্ত নিয়ে প্রেমা, প্রেমার দুই খালাতো বোন ও প্রেমার বান্ধুবীরা প্রিয়মদের বাড়িতে যাবে আর সানাফ, সিয়া ও সানাফের ফুপির ছেলেরা যাবে ইশাদের বাড়িতে। প্রিয়া তো ভাইয়ের বিয়েতে নিজের সাঁজ নিয়ে এক্সসাইটেড। প্রিয়ার কেনো জানি মনে হয় জারিফ তার প্রতি দুর্বল হচ্ছে। এখন এটা তার মনের ভুল নাকি অন্যকিছু তা সে জানে না। জারিফের সাথে ল্যাব ক্লাশ করার সময় জারিফ প্রিয়ার সাথে খুব সুন্দর করে কথা বলতো তবে সুন্দর করে কথা জারিফ সব স্টুডেন্টদের সাথেই বলে কিন্তু ল্যাবের কোনো কাজে প্রিয়ার প্রবলেম হলে জারিফকে টিচার হিসেবে প্রিয়ার ডাকতে হয়না। জারিফ নিজ থেকে আসে। অন্যদের বেলায় জারিফকে ডাকতে হয়। বিষয়টা কখনো দুষ্টিকটুর দিকে যায়নি কারন ক্লাশের সকলে জানে প্রিয়া চঞ্চল টাইপ। ল্যাব ইন্সট্রাকটর ম্যামও প্রিয়ার প্রতি কনসার্ন কারন প্রিয়া একবার একটা পুরোনো ভারি সকেট নিজের পায়ে অসাবধানতা বশত ফেলে দিয়েছিল। ভুলটা অন্য এক স্টুডেন্টের ছিল কারন সে ভুলে সেটা কিনারে রেখেছিল। জারিফ সেদিন প্রিয়ার পা কিছুটা কেটে যাওয়া দেখে ইতস্তত করে নিজে কোলে করে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায়। উপর থেকে পরার ফলে পায়ের কিছু অংশ থেতলে রক্ত পরছিল আর ভারি হওয়ায় পায়ের হাড্ডিতে ব্যাথা লেগেছিল খুব। সেদিন প্রিয়া জারিফের এতো কনসার্ন দেখে নিজের ব্যাথা ভুলে জারিফের দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়েছিল যখন জারিফ প্রিয়াকে কোলে তুলে নিয়েছিল।
প্রিয়ার জারিফকে পছন্দর ব্যাপারটা প্রিয়ার একজন বান্ধুবী আনিশা জানে। আনিশাই প্রিয়া ও জারিফকে অবজার্ব করে বলেছে, জারিফ প্রিয়ার কেয়ার করে।
প্রিয়া সেই থেকে খুব খুশি। প্রিয়ম ও ইশার বিয়েতে জারিফ প্রিয়মদের পক্ষ থেকে থাকবে।
প্রেমা ও অনুরাগের বিয়ে খবর অনুরাগ মুভির সব কাজ সমাপ্ত হবার পর মিডিয়াতে বলেছে। এটাও বলেছে যে তার রিলেশন ছিল তার ওয়াইফের সাথে এবং বিয়েটা লুকোচুরির মাধ্যমে করেছে। তার ওয়াইফের পরিবার মেনে নিলে পাবলিকলি বলতো ও তারা মেনে নিয়েছে। অনুরাগ এটাও বলেছে তার ওয়াইফ বাংলাদেশি। দুইদিন পর সে ও তার বাবা ফ্যামেলি ফাংশন এটেন্ড করতে বাংলাদেশে যাবে। প্রেমার পরিবার এখন তারও পরিবার।
অনুরাগ শুধু প্রেমার নামটা বলেছে মিডিয়াতে। এখনও ছবি দেখায়নি। ইশার বিয়ের সময় সেগুলো সবাই জানবে। অনেক রমণীর হৃদয় বিচূর্ণ হয়েছে। তবে প্রেমানুরাগ নামটা এখন মুখে মুখে। অনুরাগ বাংলাদেশে দ্বিতীয় বারের মত এসে এয়ারপোর্টে নেমেই নিজের ইন্স্ট্রাতে একটা নিজের বাবার সাথে ছবি তুলে বাংলাতে একটা ক্যাপশন লিখে পোস্ট দেয়। ক্যাপশনটি ছিলো,
“ভালোবাসার সূত্র কেবল ভালোবাসা। তা কোনো বীজগণিত বা জ্যামিতিক নিয়ম মানে না। হৃদয় যার প্রতি আসক্ত হয় সেই হয় হৃদয়রানী। এতে যে সব কিছু মিলবে তা অপরিহার্য না।”
প্রেমার পরিবারের সকলে অনুরাগ ও তার বাবাকে সাদরে গ্রহণ করে। অনুরাগের বাবার সাথে প্রেমার বাবা-চাচা, ফুফারা ভাব জমিয়ে ফেলে। অনুরাগের বাবা দারুন খুশি। প্রেমাদের বাড়িতে আসার পরেই পুত্রবধূর সালাম দেয়া ও পুত্রবধুর নিজের হাতে বানিয়ে আনা নাস্তা খেয়ে সে পুলকিত এবং মন থেকে দোয়া করে। প্রেমাও শ্বশুরকে যথাযথ দেখভাল করেছে। অনুরাগ লাল শাড়ি পরিহিত রমণীটির দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিল না। বলা বাহুল্য, প্রেমাকে লাল রঙে সবচেয়ে বেশি রানীর মতো লাগে। প্রেমানুরাগ কোনো নীল খামে রঞ্জিত হবে না হবে সিঁদুর রাঙা রঙে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি করবেন না।