প্রেমানুরাগ পর্ব-২৩
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথি
গায়ে হলুদের তত্ত্ব নিয়ে ছেলে পক্ষ মেয়ের বাড়িতে ও মেয়ে পক্ষ ছেলের বাড়িতে যায়। অনুরাগ হচ্ছে ছেলে পক্ষ। শেষ সময়ে প্রিয়ম জোর করে ওকে নিজের পক্ষে নিয়ে নিয়েছে। প্রেমা হলুদ ও লালের মিশেল শাড়ি ও মাথায় লাল হিজাব পড়ে হিজাবের উপর ফুলের ব্যান্ড পড়েছে সাথে হাতেও ফুলের বালা। নরমাল সাঁজে অপরূপ লাগছে। প্রিয়া পড়েছে হলুদ ও সবুজের মিশেল শাড়ি ও সবুজ হিজাব। সেও প্রেমার মতো সেঁজেছে। অনুরাগ ও জারিফ সহ সকল ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবি। খুব সুন্দর ভাবে হলুদের অনুষ্ঠান হয়ে গেলো। প্রেমার বাবা নাচ-গান করতে দেয়নি সেই পরিমানে। হলুদের অনুষ্ঠান জলদি শেষ হয়ে গানের কলি খেলে ওরা রাত ১০টা পর্যন্ত। ইশাদের বাড়িতে আবার লেট নাইট হলুদের অনুষ্ঠান চলবে। প্রেমা রাত ১০টার পর ইশাদের বাড়ির জন্য রওনা হবে। অনুরাগ হুট করে প্রেমাকে টেনে নিয়ে যায় ছাদের উত্তর পাশে লাইটিং করা জারবেরা ও কাঠগোলাপ গাছের টব গুলোর কাছে।
অনুরাগ হাতে করে আনা লাল গোলাপ নিয়ে প্রেমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে,
–ভালোবাসি! ভালোবাসি রাজরানী।
প্রেমা লাজুক চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। আলোকসজ্জাতে এক ঐশ্বরিক সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। প্রেমা ফুলটা নিয়ে অনুরাগের সামনে বসে নিজেও জড়িয়ে ধরে। তারটর মৃদু আওয়াজে বলে,
–ভালোবাসি।
______প্রিয়া আজকে জারিফের সাথে প্রথমদিকে একটাই ছবি তুলেছে তাও প্রিয়ার বান্ধুবী আনিশার জোরাজুরিতে। আজ সে জারিফকে ইগনোর করবে কারন সে দেখতে চায় জারিফের মনে কোনো ফিলিংস আছে কিনা?
আর এদিকে জারিফের চোখ যেনো প্রিয়াকে খোঁজে। মেয়েটা হুট করে তাকে ইগনোর করছে কেনো সেটাই বুঝতে পারছে না। প্রিয়াকে সে দেখছে প্রিয়মের বন্ধুদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে আবার সেলফি তুলছে। কই তার সাথে তো একবারো কথা বললো না! একটা ছবি তুললো তাও যেনো বাধ্য হয়ে তুললো। জারিফ যখনি প্রিয়াকে প্রিয়মের বন্ধুদের সাথে হেসে কথা বলতে দেখছে তখনি তার ভ্রঁ আপনাআপনি কুঁচকে আসছে। জারিফ সানাফের সাথে মুখ গম্ভীর করে বসেছিল।
সবাই যখন যার যার রুমে চলে গেছে তখন সানাফ, প্রিয়ম, জারিফ, অনুরাগ ও সাদিব এক রুমে। প্রিয়ম ইশাকে কল করেছে। অনুরাগ প্রেমার সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে ছাদে চলে গেছে। প্রেমা ইশাদের বাড়িতে চলে যাবার পর ঘুমানোর আগে অনুরাকে ফোন করেছে।সানাফ কিছুক্ষন ফেসবুকিং করে দেখে অনেকক্ষন ধরে জারিফ ব্যালকনিতে। অনুরাগও ফোনে পাঁচ মিনিটের মতো কথা বলে চলে এসেছে। এসে দেখে ফ্লোরে বিছানা করে সাদিব ইতিমধ্যে ঘুমিয়ে গেছে। অনুরাগ এসে বিছানায় বসে। সানাফকে জিজ্ঞাসা করে,
–জারিফ ভাই কই? আর প্রিয়মকে দেখলাম গার্ডেনে হাঁটছে।
সানাফ বলে,
–জারিফকে দেখলাম ব্যালকনিতে। চলো তো দেখি সে কি করে!
অনুরাগ ও সানাফ সেদিকে যায়। ব্যালকনিতে গিয়ে দেখে জারিফ ফ্লোরের উপর উলের কার্পেটে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সানাফ তা দেখে জারিফের পাশে বসে। অনুরাগ পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে,
“ছেলেটা নিঃসন্দেহে সুদর্শন। কোনো হিরোর থেকে কম না তারউপর ওয়েল পারসোনালিটি। কোনো মেয়ে তাকে ইগনোর করবে তার সাধ্য নেই। একমাত্র আমার বউটা এসব প্রথমে খেয়াল করেনি বলে আমি আমার বউকে পেয়ে গেছি। থ্যাংকস টু আল্লাহ।”
সানাফ বসার পর জারিফ সানাফ ও অনুরাগের দিকে একবার তাকিয়ে আবার আগের মতো রাতের আকাশের চাঁদ দেখাতে মনোযোগ দেয়। সানাফ বলে,
–তোদের তিনজনকে দেখে আমার এখন নিজের ব্যাচেলার লাইফের কথা মনে হচ্ছে। আমিও তোদের মতো শীতের রাতে বাইরে বসে থাকতাম।
সানাফের কথায় অনুরাগ ও জারিফ নিঃশব্দে হাসে। সানাফ আবারো বলে,
–আহা! কি দিন ছিলো সেসব! জোরা কপোত-কপোতীর মতো রাত জেগে ব্যালকনিতে ফোনালাপ!
এবার জারিফ সানাফের কাঁধে হাত রেখে বলে,
–এজন্যই মাঝরাতে আমি সিয়ার রুমের ব্যালকনিতে আলো দেখতাম নিজের রুমের জানালা দিয়ে। ভালোই রোমিও ছিলা তুমি।
সানাফ বলে,
–তুইয়ো হয়ে যা। আমার সুন্দরী বোনটাতো তোর জন্য পা-গল।
অনুরাগের মনে হুট করে প্রেমার কথা এলো। তাই সে জারিফকে জিজ্ঞাসা করে,
–জারিফ ভাই, আপনি কি আমার উপর রাগ?
জারিফ নিষ্পলক অনুরাগের দিকে তাকায় তারপর মুচকি হেসে বলে,
–না। আপনার উপর আমি রাগ করিনি। আর পুরোনো কথা মনে করতে চাই না। আপনিও ভুলে যান।
অনুরাগ বিনিময়ে হাসে। সানাফ পরিবেশ আবার আগের মতে করতে বলে,
–জানিস আজকে প্রিয়মের এক বন্ধু প্রিয়াকে প্রোপোজ করেছিল!
জারিফ অবাক হয়। জারিফ খেয়াল করেছিল প্রিয়া প্রিয়মের এক বন্ধুর সাথে বেশি কথা বলছিল। জারিফ জিজ্ঞাসা করে,
–প্রিয়া কি রাজী হয়ে গেছে?
সানাফ মুখ বাঁকিয়ে বলে,
–আরে না। প্রিয়া ওই ছেলেকে পেন্ডিং লিস্টে রেখে দিছে।যদি সিট খালি হয়ে যায় তবে পেন্ডিং থেকে ডাক দিবে।
জারিফ আরেকদফা অবাক হলো। জারিফ আপন মনে ভাবে, মেয়েটা এমন কেনো? একটু সিরিয়াস হলে কি হয়? জীবনের সবকিছুতে ফান খোঁজে যে একজন প্রোপোজ করলো আর তাকে ঝুলিয়ে রেখে দিলো! মানা করে কেনো দিলো না!
জারিফের মন অস্থির হয়। সে সানাফকে ব্যঙ্গার্থ ভাবে বলে,
–সে নাকি আমাকে পছন্দ করে! তো এদিকে আরেকজনকে ঝুলিয়ে রাখার মানে কি?
সানাফ তখন হাই তুলতে তুলতে বলে,
–পৃথিবীর কোনো কিছু পারমানেন্ট না। তুমি কিছু দিলে সেও কিছু দিবে। সবটা গিভ এন্ড টেকের সম্পর্ক। রবের সাথে ও বাবা-মা তোমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে দিবে। কোনো সম্পর্কে অবহেলা বাসা বাঁধলে তা ঠুনকো হয়ে যায়। আর প্রিয়া তো তোর বিয়ে করা বউ না যে এভাবে তোর অবহেলা বাধ্য হয়ে সহ্য করবে! আমার বোন তোকে কম ভালোবাসেনি! তুই তাকে ভালোবাসিস না জেনেও ভালোবেসেছে। আর আজকে সে শুধু একজনের প্রোপোজাল পেন্ডিং রেখেছে বলে তোর মনে ওর ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ ঢুকে গেল! আর পেন্ডিং রাখার আরেকটা কারন, ছেলেটা ওর ভাইয়ের বন্ধু। এই বিয়ে বাড়িতে এসব নিয়ে ঝামেলা করতে চায় না। আর আমার ভাষ্যমতে, তোর আমার বোনকে ভালোবাসতে বা মানতে প্রবলেম হলে যে আমি বা প্রিয়ম ওর জন্য ভালো ছেলে খুঁজবো না তা কিন্তু না!
জারিফ হতবাক হয়ে যায়। সে তো ওই মিন করে বলেনি। ফান মুডে বলেছে। অনুরাগ এতোক্ষন সবটা শুনলো। জারিফের দিকে তাকিয়ে অনুরাগের মনে হলো জারিফ এসব মিন করে বলেইনি। অনুরাগ পরিবেশ অনুকূলে নিতে সানাফের পাশে বসে কাঁধ চাঁপড়ে বলে,
–চিল ব্রো। সে এরকমটা মিন করেনি। জাস্ট ফান করে বলেছে।
সানাফ নিজের ভুল বুঝতে পেরে বলে,
–স্যরি। আসলে আমি নিজের বোনদের নিয়ে খুব প্রটেকটিভ। প্রিয়া আমার নিজের বোন না হলেও আমার, প্রিয়মের ও প্রেমার চোখের মনি। আমি ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছিলাম। স্যরি দোস্ত।
জারিফ মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,
–আরে না। আমি কিছু মনে করিনি। আমার কথাটা আমি ফান করে বললেও কথার ধরনটা একটু সিরিয়াস দিকে চলে গেছিলো। তুই ঠিকই বলেছিস। একসাথে দশ বছর সংসার করার পরেও সামান্য অবহেলা করতে শুরু করলে সেটা খেয়াল না করলে বড় ধরনের ইস্যু হয়ে যায় যা সংসার ভাঙার কারনও হয়ে দাঁড়ায়। আমি প্রথম দিকে প্রিয়ার অনুভূতি গুলোকে লাইটলি নিয়েছিলাম। এখন থেকে সেগুলো সিরিয়াসলি নিবো!
সানাফ জারিফের শেষের কথায় চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে,
–হোয়াট ডু ইউ মিন বাই, “এখন থেকে সেগুলো সিরিয়াসলি নিবো!” আর ইউ ফল ইন লাভ উইথ প্রিয়া?
জারিফ মাথা নুইয়ে হাসে। ব্যালকনির ডিম লাইটের আলো ও ব্যালকনির গ্রিলের মরিচবাতির আলোতে সানাফ তা দেখে জারিফকে একপাশ থেকে জাপটে ধরে বলে,
–কনগ্রেটস দোস্ত।
অনুরাগ, সানাফ ও জারিফ তিনজনেই হাসে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি করবেন না।