#প্রেমানুরাগ পর্ব-৪
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথি
লাল বেনারসিতে সজ্জিত প্রেমা বসে আছে অনুরাগের সামনে। একটু আগে সে পালানোর চেষ্টা করেছিল। বাগান পর্যন্ত গিয়ে আর পারেনি। ধরা পরে অনুরাগের কাছেই। শাড়ি পড়িয়ে যাবার পর প্রেমার একা থাকার ইচ্ছেতে সার্ভেন্টরা বাহিরে গিয়েছিল। সেই সুযোগে বাংলো থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু অনুরাগের সাথেই এসে অন্ধকারে ধাক্কা খেয়েছে!
অনুরাগ গম্ভীর স্বরে বলে,
–তুমি তো জানো তুমি পালাতে পারবে না। তাও পালাতে গিয়েছিলে! অবশ্য এটা মানুষের স্বভাবগত অভ্যাস। যা করতে পারবে না তার জন্যই বারবার চেষ্টা করে যায়। চেষ্টা করা ভালো। অনেক সময় চেষ্টা সফল হয়ে যায়।
প্রেমা বিষণ্ণ মন নিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে। অনুরাগ এবার প্রেমার হাত ধরে টেনে উঠিয়ে টেনে নিয়ে যায় বসার ঘরে। সেখানে কাছের এক মসজিদের ইমাম ও উকিল বসে আছে।
উকিল কাগজ রেডি করে সাইন করতে বলল। অনুরাগ তৎক্ষণাৎ করে দেয় কিন্তু প্রেমা থম মেরে বসে আছে। সাইন করার লক্ষন নেই তার মাঝে। অনুরাগ ব্যাপারটা লক্ষ্য করে প্রেমার কানের কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে,
–বিয়ে না করলে কাল পুরো দার্জিলিংয়ে তোমার বদনাম হবে। এরপর সেটা পুরো ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশেও ছড়িয়ে যাবে। এখন তুমি ভাবো, কি করবে?
প্রেমার টনক নড়ে। তার বন্ধুরা নিশ্চই এতোক্ষনে সব জায়গায় খুঁজে ফেলেছে। আর অনুরাগের সাথে যদি কেউ দেখে তাহলে তো!
অনুরাগ এবার প্রেমার হাতে স্পর্শ করে। হকচকিয়ে উঠে প্রেমা। চোখের ইশারাতে সাইন করতে বললে প্রেমা দীর্ঘশ্বাস ফেলে করে দেয়। এক অনিশ্চিত সম্পর্ক তার কাছে এটা।
ইমাম সাহেব দোয়া পড়ে কবুল বলতে বললে অনুরাগ বলে দেয় তবে প্রেমা দেরি করতে থাকে। অনুরাগ আবারো প্রেমাকে বলে,
–আইনত তো আমার অধিকার আছে তোমার উপর। এখন ইসলামিক ভাবে স্বিকৃতি নিবে নাকি আমি আমার আইনত অধিকার ফলাবো?
প্রেমা কবুল বলে দেয়। ইমাম ও উকিল চলে যায়। এক সার্ভেন্টকে অনুরাগ বলে, প্রেমাকে যেনো অনুরাগের পাশের রুমে নিয়ে যায়।
৫.
পরেরদিন খুব সকালে অনুরাগ নিজে প্রেমাকে হোটেলের সামনে দিয়ে আসে। প্রেমা গাড়ি থেকে নেমে একবারের জন্যও পেছোন ঘুরে দেখে না। সোজা হোটেলের ভিতর চলে যায়। অনুরাগ গাড়িতে বসে থাকে প্রেমার একবার তাকানোর আশায়। পরে হতাশ হয়ে চলে যায়।
প্রেমা হোটেলের একদম ভিতরে গিয়ে লুকিয়ে তাকিয়েছিল যাতে অনুরাগ না দেখে। ভালো তো সেও বাসে তবে সেটা অব্যক্ত।
প্রেমার বন্ধুরা প্রেমাকে ঘিরে ধরে। কোথায় গেছিলো? কোথায় ছিল? বলে যেতে পারতো! প্রেমা চুপ করে ছিল অনেকক্ষণ। পরে বলে,
–সুপারস্টার অনুরাগ খানের কাছে ছিলাম।
সবাই একদম হা করে তাকিয়ে আছে। তারপর হাসতে হাসতে একেকজনের উপর একেকজন হেলে পরছে। প্রেমা বেকুব হয়ে তাকিয়ে আছে। অর্ষা বলে,
–দোস্ত তুই সুন্দর জোক মারতে পারিস। তোর যদি বলতে ইচ্ছা না হয় বলিস না। কথায় কথায় বেচারা অনুরাগকে পিঞ্চ করার দরকার কি? আমরা জানি তুই তারে দেখতে পারোস না। তারে আর রোস্ট করিস না।
বাকিরাও ঘার হেলায়। প্রেমা হতাশ হয়। কিভাবে বিশ্বাস করাবে? থাক আর বলবে না।
প্রেমা বলে,
–নাস্তা করবো চল।
সবাই নাস্তা করতে চলে যায়। আজকে তারা শিলিগুড়ি যাবে তারপর সেখান থেকে কলকাতা হয়ে আগ্রা।
দুপুরের আগ পর্যন্ত দার্জিলিংয়ের মার্কেট গুলো ঘুরে তারপর লাঞ্চ করে হোটেলে এসে ব্যাগ প্যাক করে নেয়। বেলা ২টায় তারা শিলিগুড়ির উদ্দেশ্য রওনা করবে। অনুরাগের নাম্বার লেখা কাগজটা নিয়ে বসে আছে প্রেমা। অনুরাগ বলেছিল যাতে দার্জিলিং থেকে যাওয়ার আগে তাকে হোয়াটসএপে ফোন করে। প্রেমা দ্বিমনাতে ভুগছে। লোকটার যদি খারাপ উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে তো কাল রাতেই কিছু করতে পারতো। বিয়ে তো হয়ে গেছিলো। তাও ভয় হয়। সুহানা দেশাই এখনো অনুরাগের পেছোনে পরে আছে। সে প্রেস-মিডিয়ার সামনে আকারে ইঙ্গিতে অনুরাগকে নিজের বয়ফ্রেন্ড জাহির করে। গুজব তো এটাও উঠেছে যে অনুরাগের বাবা সাহিল খান তার বানানো নেক্সট মুভিতে সুহানার সাথে অনুরাগের জুটি করতে চলেছে।
দরজাতে কেউ নক করলো। প্রেমা দরজা খুলে দেখে রুম সার্ভিস এসেছে। রুম সার্ভিসের ছেলেটা বলে,
–ম্যাম, আপনার জন্য লনে একজন অপেক্ষা করছে। আপনাকে যেতে বলেছে
–কে অপেক্ষা করছে? পরিচয় না দিলে যাবো কেনো? আপনারা তো জানেন, এখানে আমাদের পরিচিত কেউ নেই।
প্রেমার করা প্রশ্নে ছেলেটি বলে,
–আপনি কি রাজরানী? লোকটা বলেছে যদি আসতে মানা করেন তাহলে যেনো বলি আপনি নাকি রাজরানী।
প্রেমা বুঝে যায় এটা অনুরাগ। সে রুম সার্ভিসের ছেলেটাকে বিদায় করে দিয়ে বিছানা থেকে শালটা উঠিয়ে লনেন উদ্দেশ্যে যায়। অর্ষা ওয়াশরুমে তাই দরজাটা বাহির থেকে নব ঘুরিয়ে দেয়।
লনে গিয়ে দেখে একজন কালো জ্যাকেট, জিন্স, মুখে কালো মাস্ক, মাথায় টুপি ও চোখে সানগ্লাস পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটা পাশ ফিরে দাঁড়ানো। প্রেমা তার মুখের একাংশ দেখেছে। প্রেমা তার সামনে গিয়ে বলে,
–আপনি আবার এখানে কেনো আসলেন?
অনুরাগ চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে বলে,
–চিনে ফেললে তাহলে! কিভাবে চিনলে? আমি তো আমার নাম, পরিচয় কিছু বলিনি। আর আমার এই বেশে কারো চিনার কথা না।
প্রেমা ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
–না চিনার কি হলো? রুম সার্ভিসের কাছ থেকে শিউর হয়েই তো এসেছি।
অনুরাগ দুই কদম সামনে এগিয়ে বলে,
–সেও তো নাম বলেনি কারন সে জানে না আমি কে?
প্রেমা ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–রাজরানী! এটাই তো বলেছিলেন। এটা শুনেই এসেছি। যাইহোক বলেন? কেনো ডেকেছেন?
অনুরাগ ফট করে প্রেমার কাছে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরে। অবাক হয় প্রেমা। ছুটার জন্য চেষ্টা করে চলেছে কিন্তু অনুরাগ বাঁকা হেসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তারপর প্রেমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“লিখা হে তেরে নাম আব মেরে দিল মে,
সারি কায়নাত কো কেহ দো তু হে মেরি জাহান!”
আল্লাহ তা’আলা ও মায়ের পর আমি তোমাকে ভালোবাসি। বাবা তো আমাকে তার তৈরি করা সিনেমাতে অভিনয় করার জন্য মায়ের কাছে করা শেষ ওয়াদাকে কাজে লাগিয়েছে। জানি না আর কতো কিছু করতে আমাকে ওই ওয়াদার দোহাই দিবে! বিশ্বাস করো, টিভির পর্দায় আমাকে ও বাবাকে যতোটা ক্লোজ দেখো আমরা ঠিক ততোটাই দূর! লোকটার অবহেলার কারনে আমার মা শেষ সময়ে ক্যান্সারের সাথে লড়তে পারেনি। তিন বছর আগে চলে গেছে আমাকে ছেড়ে। বাবার সাথে অন্য একট্রেসদের সম্পর্ক না থাকলেও বাবা মিডিয়াতে সেগুলো জোর দিয়ে ক্লিয়ার করতো না। সে নিজের পরিচিতি বাড়াতে এগুলো ক্লিয়ার করতো না। আমার মা এগুলো নিয়ে খুব কষ্টে থাকতেন। কিন্তু বাবাকে অতিরিক্ত ভালোবাসতেন। বাবাও বাসতেন। বাসতেন বলেই তো কারো সাথে সম্পর্কে যান নি কিন্তু মিডিয়ার কাছে তার সম্পর্কে গুজবে ভরপুর থাকতো। মা শেষ সময়ে বলে গেছিলো আমাকে, আমি যেনো বাবার সব কথা মানি তবে অন্যায়ের সাথে আপোষ না করি।
প্রেমা শুনলো। প্রেমার মনেও তো একই ভয় যা অনুরাগের মায়ের মনে ছিল। কি হবে ভবিষ্যতে! এগুলোই সংশয়ে ফেলে দেয় বারবার।
অনুরাগ প্রেমার মুখশ্রীতে শঙ্কার ছায়া দেখে বলে,
–সেসব বাদ দাও। তোমার বাংলাদেশের নাম্বার ও আমাকে ফেসবুক থেকে আনব্লক করো জলদি। শিলিগুড়ি গিয়ে কল দিবা মেসেন্জারে।
প্রেমাকে কিছু বলতে না দিয়ে অনুরাগ চলে যায়। প্রেমা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভ্যাকসিন দিতে গেছিলাম সকালে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি করবেন না।