শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
Part_02_03
#Writer_NOVA
হঠাৎ করে আমার শাড়ির আঁচলে টান পরতেই পেছনে ঘুরে তাকালাম।তারপর যা দেখলাম তা সহ্য করার মতো অবস্থায় আমি নেই। একটা ছেলে আমার আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে।আমি দুই হাত ঘষে থাপ্পড় মারার প্রস্তুতি নিয়েও ফেললাম।কিন্তু তখনি পেছন থেকে কেউ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো।
—- কি হচ্ছে এখানে?
আমি পেছনে ঘুরে কথা বলার মানুষটার দিকে তাকালাম।তাকে দেখে মাথাটা আরো বেশি গরম হয়ে গেলো।এটা তো তখনকার ছেলেটা।যার সাথে গেইট দিয়ে ঢুকতে গিয়ে মাথায় ধরাম করে বারি খেয়েছিলাম।কি ছ্যাচড়ারে!! এখন ফলো করতে করতে এখানেও চলে এসেছে। তাকে দেখে যে ছেলেটা আমার আঁচল ধরে রেখেছে সে জলদী করে আঁচল ছেড়ে দিয়ে আমতা আমতা করে বললো।
—- কিছু হইতাছে না বড় ভাই। আমরা তো যাস্ট এমনি দাঁড়িয়ে আছি। (সাথের ছেলেগুলোকে উদ্দেশ্য করে) ঐ চল তোরা।
আমি অবাক চোখে ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলাম।প্রত্যেকটার চোখে ভয়।কিন্তু এই পুঁচকে ছেলেটাকে ভয় পাওয়ার মতো কোন কারণ আমি খুঁজে পেলাম না।ছেলেগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে হুংকার মেরে বললো।
— এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
— যাযাযাচ্ছি ভাই।
“যাচ্ছি ভাই” বলে এক মিনিটও দাঁড়ালো না।পরিমরি করে ছুট লাগালো সামনের দিকে।আমি শুধু আহাম্মকের মতো কাহিনি দেখছি।পাশে তাকিয়ে তন্বীকে দেখে আরেকদফা অবাক।উরি মা!!! তন্বী লজ্জায় লাল,নীল সিগন্যাল দিচ্ছে। দুই হাতে শাড়ির আঁচল পেঁচাচ্ছে আর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে লজ্জা পাচ্ছে। আমি ওকে কনুই দিয়ে জোরে গুঁতা মেরে জিজ্ঞেস করলাম।
___ এই তোর সমস্যা কি?তুই এরকম আজিব বিহেভ করছিস কেন?
তন্বী লজ্জার হাসি দিয়ে আমাকে বললো,
— কিছু না আপু।
— কিছু তো আছে। কে রে এই ছেলেটা? ওকে দেখে সবাই এমন ভয় পেলো কেন?
তন্বী আমার কথার উত্তর দেওয়ার আগেই ছেলেটা আমার সামনে এসে তার ডান হাত বাড়িয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বললো,
— হাই আমি রওনক হাসান।
আমি চোখ দুটো ছোট ছোট করে কড়া গলায় উত্তর দিলাম।
— তো আমি কি করবো?
—- না মানে পরিচিত হতে পারি না।
— কেন? আপনার সাথে আমি কেন পরিচিত হবো?
— আজব, সামান্য একটা বিষয় নিয়ে আপনি এমন বিহেভ কেন করছেন? ভদ্রতার খাতিরে তো ধন্যবাদও বলেননি।আপনাকে ছেলেদের হাত থেকে বাঁচালাম। তার জন্য অন্তত ছোট করে একটা ধন্যবাদ জানাবেন।
—আমি কি বলেছি আপনাকে বাঁচাতে? আমি নিজেকে রক্ষা করতে পারি।তাই কাউকে দরকার নেই। এমন গায়ে পরা ছেলে আমার একদম পছন্দ না।নিজ থেকে এসে হেল্প করে হাতেম তাঈ হয়ে যাননি।
আমার কথা শুনে তন্বী চোখ, মুখ উল্টে আমাকে মৃদু ধমকের সুরে বললো,
— আহ্ আপু কি শুরু করলে?উনার সাথে এমন করে কথা বলছো কেন?তুমি জানো উনি কে?
—উনি কে তা জানার আমার কোন দরকার নেই। উনি কোন ভিআইপি পার্সন যে তাকে আমার চিনতে হবে?সে যদি কোন রকস্টার, গ্যাংস্টারও হয় তাতেও আই ডোন্ট কেয়ার। তুই এতো এর পক্ষে কথা বলছিস কেন? তোকে কি বশীকরণের তাবিজ করেছে নাকি?
তন্বী লজ্জামাখা মুখে মিনমিন করে বললো,
— তার থেকেও বেশি কিছু করেছে।
—এই তুই কি বললি?
— কিছু না আপু।
তন্বীর দিক থেকে ফিরে রওনকের দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললাম।
— এভাবে কি রাস্তার মাঝখানে সং সেজে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের বাঁদর মুখাখানা দেখাতে থাকবেন,নাকি সরে দাঁড়াবেন।
রওনক কপাল কুঁচকে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— তুমি তো দেখছি বেশ ঝগড়ুটে।
তার কথা শুনে আমি তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠলাম।সাহস কত বড় আমাকে ঝগড়ুটে বলে।আজ তার একদিন কি আমার যতদিন লাগে।
—এই বেডা এই,ঝগড়ুটে কাকে বলেন হ্যাঁ? চোখ তুলে মার্বেল খেলবো বলে দিলাম।কথাবার্তা সাবধানে। নয়তো আমি কি করতে পারি তা আপনার ধারণারও বাইরে।আর তুমি কি হুম তুমি কি? এটেনশন পাওয়ার জন্য প্রথমে একটু হিরোগিরি করলেন।এখন আবার আপনি থেকে তুমি তে নেমে গেছেন।কি ভাবছেন,কিছু বুঝি না আমি?
তন্বী আমার দুই বাহু ঝাঁকি দিয়ে বললো,
— কি শুরু করলে আপু?চুপ করো।নয়তো তুমি ঠিক থাকবে কিনা তাতে সন্দেহ আছে।
— এই চুপ একদম ভয় দেখাবি না আমায়।
— চলো তো তুমি।তুমি এখানে থাকলে আজ বিশাল বড় ভেজাল করে ফেলবে।
তন্বী আমার এক হাত টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।পেছন থেকে রওনক জোরে চেচিয়ে বললো,
— ও ঝগড়ুটে ম্যাম।এট লাস্ট নিজের নামটা তো বলে যাও।
আমি তন্বীর হাত থেকে নিজের হাত ঝাড়া মেরে ছেড়ে পেছন দিকে ঘুরে বললাম।
— আমার কোন নাম নেই। বাবা-মা আকিকা দেওয়ার ভয়ে আমার নাম রাখেনি।যত্তসব ফালতু লোক।
—তুমি তো দেখছি বেশ ত্যাড়া।
—শুধু ত্যাড়া নই।বিশ্ব ত্যাড়া।ত্যাড়ামী আমার রক্তে মিশে আছে।
আরো কিছু বলতে চাইছিলাম।কিন্তু তার আগেই তন্বী আমার হাত ধরে সামনে টেনে নিয়ে গেল।কিছুদূর যেতেই তন্বীর থেকে হাত ছাড়িয়ে ওকে রাগী গলায় বললাম।
—সমস্যা কি তোর? এতো টানাটানি করছিস কেন? আমাকে কি লুটের মাল পেয়েছিস?কখন থেকে হাতটাকে টেনে বাহুর জয়েন্ট খুলে ফেললি।
— তুমি জানো রওনক কে?তুমি ওর সাথে ঝগড়া করতে গেলে কেন?
—তুইও কিন্তু আমাকে ইন্ডাইরেক্টলি ঝগড়ুটে বলছিস।এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।তুই ওর পক্ষে আর কথা বলিস না।আমার সহ্য হচ্ছে না।
—দয়া করে একটু থামো তুমি নোভা আপু।রওনক কিন্তু আমাদের কলেজের নতুন ভিপি।ও ঠিক কি কি করতে পারে তার বিন্দুমাত্র ধারণাও ওর নেই।
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে বললাম।
— সেই যেই হোক।এই নোভা কাউকে ভয় পায় না।
—তুমি কি শুনছো আমি কি বলছি?
—আমি কিছু শুনতে চাইছি না।
—আপু, রওনক ভাইয়া এই কলেজের নতুন ভিপি।তুমি শুনতে পেয়েছো আমি কি বলেছি?
এতক্ষণে ওর কথা আমার কর্ণগোচর হলো।তন্বীর দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো রসগোল্লা করে ফেললাম।তারপর একটা শুকনো ঢোক গিলে আমতাআমতা করে বললাম।
—কি বলিস এসব?আগের ভিপি UV কই?ওরে আল্লাহ এখন কি হবে?আমি তো না জেনে কত কিছু বলে ফেললাম।
—UV এক্সিডেন্ট করছে।তার অবর্তমানে রওনক সব সামলাচ্ছে।তুমি কত কি বলে দিলে তাকে?এখন কি করে বাঁচবে তাই ঠিক করো।
—তুই আমাকে আগে বলবি না।
—তুমি আমাকে বলার সুযোগ দিয়েছো?
—হ্যাঁ রে তন্বী, আমার কি হবে এবার?তুই তো জানিস এই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র স্টুডেন্ট, ভিপি-টিপিকে আমি কত ভয় পাই।আর আমি নিজে ভিপির সাথে ভেজাল করলাম।
—এখন ভয় পাচ্ছো কেন?তখন তো আমার কথা শুনতেই চাচ্ছিলে না।
আমি তন্বীর দিকে তাকিয়ে নিজের মনে বিরবির করে বলে উঠলাম।
—ভাগ নোভা ভাগ।আপাতত আজকে এখান থেকে কেটে পর।কালকে বাকিটা দেখে নিস।
তন্বী আমাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—কি বলছো নোভা আপু?
আমি তন্বীর কথায় মনোযোগ দিতে পারলাম না।তার আগেই আমার চোখ পেছনে চলে গেল।তাকিয়ে দেখি রওনক তার দলবল নিয়ে এদিকেই আসছে।আমি তন্বীকে উদ্দেশ্য করে বললাম।
—কিছু না রে বোইন।আমি এখন দফা হয়ে যাবো।
কথাটা বলেই এক হাতে কুচি ধরে আরেক হাতে কোনরকম শাড়ি উঁচু করে দিলাম ভৌ দৌড়। আমাকে আর পায় কে?পেছন থেকে তন্বী জোরে চেচিয়ে বলছে, “আপু কোথায় যাও?এই আপু!!” কে কার আপু।এবারের সংগ্রাম দৌড় দেওয়ার সংগ্রাম।এবারের সংগ্রাম এখান থেকে পালানোর সংগ্রাম।
#চলবে
রি-চেইক দেওয়া হয়নি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।😊
#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Part_03
#Writer_NOVA
এয়ারপোর্টে বসে ঘুমু ঘুমু চোখে হাই তুলছি আর তায়াং ভাইয়াকে বিরবির করে বকছি।এই সাত-সকালে কার ভালো লাগে ঘুম ছেড়ে এখানে বসে থাকতে।তায়াং ভাইয়ার কোন জানে জিগার দোস্ত নাকি আজকে আসবে।তার জন্য ভাইয়া আমাকে সকালে ফজরের নামাজ পরে আর ঘুমাতেই দেইনি।আমার লাগছে বিরক্ত। কোথাকার কোন লাট সাহেব আসবে তার জন্য আমাকে কেন আসতে হবে? তোর বন্ধু আসবে তাই তুই আসবি।তা না করে আমাকে ও বাজিয়ে নিয়ে আসছে।আমি একা আসবো কেন?তাই সাথে তন্বীকেও নিয়ে এসেছি।আমি এয়ারপোর্টে বসে ঝিমাবো আর তন্বী বাসায় ঘুমাবে, তাতো হতে দিতে পারি না আমি।তাই তায়াং ভাইয়াকে বলে জোর করে ওকেও নিয়ে এসেছি।
পৃথিবীতে তিনটা কাজে আমি অনেক বেশি এক্সপার্ট। ১.ত্যাড়ামি করায় ২. ব্লকমেইল করায় ৩. ঘুমাতে।এই তিনটার মধ্যে ঘুম আমার ভীষণ পছন্দ। বাকি সব গোল্লায় যাক ঘুম আমার সবার আগে। সেই ঘুম ভাঙিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে। একবার ডিপলি চিন্তা করেন তো, এসব কি মানা যায়? তন্বীও আমার সাথে বসে ঝিমোচ্ছে। ওকে ধাক্কা মেরে বললাম,
—- কোথাকার কোন নবাবজাদা আসবে রে তন্বী?আমার কিন্তু আর সহ্য হচ্ছে না। তায়াং ভাইয়া পাইছেটা কি? কখনো কোন বন্ধুর সামনে আমাদেরকে যেতে দেয় না। আজ নিজে আমাদেরকে নিয়ে এসেছে। এখানে নিশ্চয়ই কোন ঘাপলা আছে।
তন্বী আমার দিকে রাগী লুকে তাকিয়ে বললো,
— তুমি আর কথা বলো না নোভাপু।তোমাকে ভাইয়া নিয়ে আসবে তার সাথে আমাকে কেন জড়ালে?কাল রাতে এমনি ফেসবুক চালিয়ে একটার পর ঘুমিয়েছি।ভাবছি সকালে বেশি সময় ঘুমাবো।তা আর হলো কই?নিজে আসবে বলে আমাকেও নিয়ে এলে।আমি তোমার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি গো?যার জন্য আমার সাথে এই শত্রুতা।
—তুই আমার কোন পাকা ধানে মই দিসনি।মই তো দিয়েছে তোর বিটকেল ভাই। এই বেডার তো আমার ভালো সহ্যই হয় না।কোথায় ভাবছি একটু আরাম করে ঘুমাবো তা আর হলো কোথায়?কড়া গলায় তোর ভাই বলে দিলো যদি আমি এখন না যাই তাহলে রাতের পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠানের কনসার্টে আনবে না।আমাকে ব্লকামেইল করে।ভেবে দেখেছিস কি খবিশ?
—তোমাদের মধ্যে আমারে কেন টানলা বোইন?
আমি একটা ক্রুর হাসি দিয়ে বললাম,
— আমি এয়ারপোর্টে বসে মশা মারবো আর তুই বাসায় আরমচে ঘুমবি তাতো আমি হতে দিবো না।
—দিনটায় খারাপ আমার।কার মুখ দেখে যে সকাল বেলা উঠছি আমি?
— তোর ভাইয়ের🤭।
আমি মুখ টিপে হেসে কথাটা বললাম।তন্বী কিছু বললো না।তবে একটা খাইয়া ফালামু লুক দিলো।যেটাকে আমি তোয়াক্কা করে ভেংচি কেটে,চুপ হয়ে বসে আশেপাশের পরিবেশ দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।সময় এখন সকাল ছয়টা বেজে ৫৫ মিনিট। সাতটায় বিমান এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করবে।
শীত বুড়ি এখনো বাংলাদেশে আসেনি।তারপরেও চারদিকে একটা শীত শীত ভাব।এসির নিচে বসে থেকে কিছু সময় পরপর কেঁপে উঠছি।এবার ঠান্ডা না লাগলেই রক্ষা।তায়াং ভাইয়া ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে একটু ভেতর দিকে গিয়েছে। যে আসবে তাকে রিসিভ করতে।আর আমরা চেয়ারে বসে এসির তোড়জোড়ে কাঁপছি। আমার সাধের ঘুমটা নষ্ট করায় আরো কয়েকবার তায়াং ভাইয়া ও তার লাট সাহেব বন্ধুকে মনে মনে আরেকদফা বকলাম।হঠাৎ তন্বী আমাকে ডেকে বললো,
— এই আপু, শুনো না।
— হুম বল।
—আমার না অনেক শীত করছে।এসির পাওয়ারটা একটু কমিয়ে দিতে বলবে।প্লিজ একটু বলো না।
—বলতে পারি তবে এক শর্তে।
—আবার কিসের শর্ত?
—তুই তো জানিস কে আসবে,তার নামটা বল।
— কে আসবে সত্যি আমি জানি না।
—সত্যি??
—হ্যাঁ গো আপু।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হতাশ হলাম।কারণ ওর চোখ বলছে ও মিথ্যে বলছে না।কিন্তু কে আসতে পারে তার ধারণা আমারও নেই। আর যেখানে তায়াং ভাইয়া নিজে আমাদেরকে তার কোন বন্ধুর সামনে যেতে দেয় না সেখানে আমাদের নিয়ে এসেছে। নিশ্চয়ই কোন বড় কারণ আছে। তাই আমি সেই ব্যক্তির নাম জানার জন্য উসখুস করছি।হঠাৎ একটা কথা খেয়াল হতেই আমি কিছুটা নড়েচড়ে বসে তন্বীকে জিজ্ঞেস করলাম।
— তন্বী!!!
—আবার কি হলো?
—তায়াং ভাইয়ার কোন কোন বন্ধু বিদেশে থাকে তাতো তুই জানিস তাই না?
—হ্যা তাতো জানি।ভাইয়ার দুইটা বন্ধু প্রবাসে থাকে।
–তার মধ্যে বেশি ক্লোজ কে?
—দুই বন্ধুই ক্লোজ।তবে তাদের আসার সম্ভবনা একদম নেই। কারণ কয়েক বছর হলে মাত্র গেলো।
— এছাড়া অন্য কেউ নেই?
—আর তো মনে পরছে না।
—একটু মনে করার চেষ্টা কর।
তন্বী কিছু সময় নিজের ব্রেণের ওপর চাপ দিলো।তারপর হুট করে বললো,
— ও আমার আল্লাহ!! আমি তার কথা ভুলে গেলাম কি করে? আমি সিউর আজকে সেই ভাইয়া আসছে।
—কে??
—এনাজ ভাইয়া।
—এই এনাজটা কে?তাকে তো কখনো দেখিনি।
—তুমি দেখবে কি করে?তুমি আমাদের বাসায় আসার আগের সপ্তাহে ভাইয়া তার কাজের ট্রেনিংয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে। বলছে এক বছর পর ফিরে আসবে।আজ এনাজ ভাইয়া আসবে।সাথে নিশ্চয়ই তার ছোট ভাই এনামও আসবে।এনাজ ভাইয়া আর তায়াং ভাইয়া একে অপরের কলিজার টুকরো।কলেজে তো তাদেরকে মানিকজোড় নামে সবাই চিনতো।
—ওহ আচ্ছা। কিন্তু তার জন্য আমাদের আনার কি দরকার ছিলো?
—আমিও জানি না।
আমাদের কথা বলার মাঝে তন্বী পেছনে তাকিয়ে অনেকটা জোরে চেচিয়ে বললো,
—ঐ তো ভাইয়ারা চলে এসেছে।
আমি তন্বীর দিকে ঘুরে ছিলাম।তন্বীর চিৎকারে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালাম।তায়াং ভাইয়ার হাতে লাগেজ।আর তার সাথে ৫ ফুট ৮ ইঞ্চির শ্যাম বর্ণের একটা ছেলে।আমার মনে হলো এটাই এনাজ হবে।গায়ের কোর্ট খুলে একহাতে ভাজ করে ফেলে রাখছে।ডিপ ব্লু শার্টের ওপর এ্যাশ কালারের কটি, সেম কালারের প্যান্ট।পায়ে সু জুতা।পুরো ফরমাল ড্রেসআপ। শুধু চুলগুলো এলোমেলো। এক মুহুর্তের জন্য তার চুল দেখে আমার মনে হলো বিমানের পাখা ধরে ঝুলে এসেছে। তবে সে যাই হোক।আমি কিন্তু পুরো ফিদা😌।ছেলে দেখতে মাশাআল্লাহ। আমার পছন্দ হয়েছে।সাথে ক্রাশও খাইছি।এবার হাতে বাঁশ না ধরাইলেই হয়।
তায়াং ভাইয়া আমাদের সামনে এসে বললো,
— কিরে চল, আজকে কি এখানেই থাকবি নাকি?
কথাটা আমার কান দিয়ে ঢুকলো না।আমি তো হা করে ঐ এনাজকে গিলছি।এত সুন্দরও কোন বাঙালি ছেলে হয়।বোইন তোরা কিসের কোরিয়ান ছেলের কথা বলিস।আমি তো বাঙালি ছেলে দেখেই ফিদা হয়ে গেছি।তন্বীর কনুইয়ের গুঁতায় আমার হুশ ফিরলো।কানের কাছে বিরবির করে বললো,
—আপু,এবার মুখটা বন্ধ করো।
—হ্যাঁ রে তন্বী এটাই কি এনাজ?
—জ্বি হ্যাঁ।
—মাশাআল্লাহ, আমি তো ক্রাশ খাইছি।
আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে এনাজ গলা খাকরি দিয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে তায়াং ভাইয়াকে বললো,
—তায়াং মুখটা বন্ধ কর।মশা ঢুকবে তো।
কথাটা যে আমাকে বলছে তা ভেবে আমি মুখ বন্ধ করে ফেললাম।তা দেখে সবাই মিটমিট করে হেসে উঠলো। আমাকে অপমান এর শোধ তুলে রাখবো।ইস,কি ভাব! একবার আমার দিকে তাকায়ওনি।বাপরে কি ভাব!!! হুহ😏,ভাবে লাভ নাই টাকায় সব।তার পিছনে আরেকটা ছেলেকে সেম গেটআপে দেখলাম।শুধু ড্রেসের কালার চেঞ্জ। এনাজের সাথে চেহারার অনেকটা মিল।মেবি এটাই এনাজের ভাই এনাম।আমার সাথে একটা কথাও বললো না।হঠাৎ এনাজ আমাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।আমি তো হেব্বি খুশি।
যেই হাত মিলানোর জন্য আমিও হাত বাড়ালাম তখুনি এনাজ বললো,
— কেমন আছো তন্বী?
—আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আপনি কেমন আছেন?
—আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
তন্বীর সাথে হাত মিলিয়ে নিজের পকেটে হাত গুঁজে রাখলো।আবার অপমান।আর তো সহ্য করা হচ্ছে না।গটগট পায়ে একাই এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে আগ থেকে গাড়িতে গিয়ে বসে পরলাম।একটু পর সবাই চলে এলো।গাড়িতে আমি ভুলেও ঐ আনাইজ্জার দিকে তাকাইনি।রাগে,অপমানে আমার সারা শরীর জ্বলছে। পইপই করে আমি সব হিসেব রাখছি।সময়মতো সুদ শুদ্দ উসুল করবো।
বাসায় এসে রাগে কারো সাথে কথা বললাম না।নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।এনাজ,এনামও আমাদের সাথে এসেছে। খালামণি নয়তো কুরক্ষেত্র করে ফেলবে।এনাজ,এনামকে খালানণি নিজের ছেলের চোখে দেখে।সকালের নাস্তা এই বাসায় করবে।ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বের হতেই দেখি খালামণি এসে হাজির। হাতের শরবতের ট্রে দিয়ে আমাকে বললো,
— নোভা,এই শরবতের ট্রে-টা একটু তায়াং-এর রুমে দিয়ে আয়।আমার চুলোয় রান্না আছে।ছেলেগুলো এতদূর থেকে এলো নয়টার মধ্যে যদি ওদের খাবার না দিতে পারি বিষয়টা কিরকম দেখায় তুই বল?
—কিন্তু তায়াং ভাইয়াতো বকবে আমায়।তুমি তো জানো ভাইয়া তার কোন বন্ধুর সামনে যাওয়া পছন্দ করে না।
—তন্বী তো ওয়াশরুমে।নয়তো ওকেই বলতাম।তুই একটু যা না রে মা।
—আচ্ছা যাচ্ছি। তবে ভাইয়া বকা দিলে সব দোষ তোমার।
খালামণি মুচকি হেসে আমার হাতে ট্রে দিয়ে চলে গেল।আমি ওড়না দিয়ে ঘোমটা টেনে তায়াং ভাইয়ার রুমের দিকে গেলাম।ইতিমধ্যে এনাজের আাসার খবর শুনে তাদের সকল বন্ধু চলে এসেছে। দরজার সামনে আসতেই শুনতে পেলাম তায়াং ভাইয়া কিসের জানি অনুষ্ঠানের কথা বলছে।শুধু এতটুকু শুনতে পেয়েছি কার সুন্নতে খাৎনার কথা বলছে।
কথায় আছে না অতিরক্ত এক্সাইটিং জন্মের খারাপ।আমি অতিরিক্ত এক্সাইটিং ঠেলায় শেষ অব্দি উল্টো পাল্টা কথাই বলে দিলাম।আমি পুরো কথা না শুনে পর্দা ঠেলে ভেতরে ঢুকে বলে উঠলাম,
—তায়াং ভাইয়া তোর মুসলমানি😳!!! অনুষ্ঠান কবে?
#চলবে
শেষের কথা পড়ে কেউ আমাকে বকেন না🥺।আমি আজকে এক্সাইটিং-এর ঠেলায় সবার সামনে আমার এক বছরের ছোট চাচাতো ভাইকে উপরোক্ত কথাটা বলে লজ্জায় ফেলে দিছিলাম😵।তাই গল্পেও আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম🤭।
Good