শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
Part_22
#Writer_NOVA
আমার কথার উত্তর না দিয়ে ইফাত মুচকি হেসে এগিয়ে এলো। তারপর যা করলো তা আমি কল্পনাও করিনি। চোখ দুটো আমার বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। সে এগিয়ে এসে আমাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরের দিকে দৌড় দিলো। আমি বিস্মিত হয়ে ভেতরের দিকে এলাম। সোফার পাশে দাঁড়াতেই সে লাফ দিয়ে সোফায় উঠে গেলো। তারপর আমার গলা জড়িয়ে ধরে গালে টাইট করে একটা চুমু দিলো। আমি বিস্ফোরিত চোখে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। ভাই, এরা শুরু করছে কি😵? একজন কানে,কপালে চুমু দেয়।আরেকজন এখন আবার গালে দিলো।মিনিট খানিক পর গালের থেকে ঠোট সরিয়ে গলা ছেড়ে লাজুক মুখে দাঁড়ালো। লজ্জা পেয়ে দুই হাতে মুখ লুকালো। আমি এখনো হাওয়ায় ভাসছি। সিফাত মুখ টিপে হাসছে। হো হো করে হাসির শব্দ পেতেই সামনে তাকালাম। তন্বী পেট ধরে হাসতে হাসতে বসে পরেছে। আমি ওর দিকে রাগী লুকে তাকাতেই ও হাসি না থামিয়ে মুখ ধরে আরো হাসতে লাগলো। কোনরকম হাসি থামিয়ে বললো,
— এটা কি ছিলো নোভাপু? আমি তো হাসি থামাতে পারছি না। আমি কিন্তু কিছু দেখিনি।
আমি একবার ইফাতের দিকে আরেকবার সিফাতের দিকে তাকালাম। ইফাত দুই হাতের ফাঁক দিয়ে তাকাচ্ছে আর মিটমিট করে হাসছে। সিফাত তো সোফায় বসে মুখ চেপে ধরে রাখছে। আমি গালে হাত দিয়ে ধপ করে সোফায় বসে থুম মেরে বসে রইলাম। এই নেংটি ইদুর যে এমন কিছু করবে তা আমার বিন্দুমাত্র ধারণাও ছিলো না। আমি অসহায় মুখে ইফাতকে জিজ্ঞেস করলাম,
— এই নেংটি ইদুর তুই এসব কোথা থেকে শিখেছিস?
সিফাত মুখের থেকে হাত সরিয়ে ফটফট করে বললো,
— আব্বু তো আম্মুকে এভাবে কিসি দেয়। সেখান থেকে বোধহয় শিখেছে ভাইয়া। ভাইয়াও তো সেমভাবে তোমায় কিসি দিলো ভাবী।
আমার চোখ দুটো আরেকবার রসগোল্লা হয়ে গেলো। ওরে বাটপার, ওরে চিটার! আজকালের পিচ্চি পোলাপাইনগুলো এত এডভান্স হয়ে গেছে। না, এদের বাবা-মা কে বলতে হবে ছেলে তাদের বহুত বড় হয়ে গেছে। সাবধান করে দিতে হবে এদের সামনে কোন রোমান্স করতে না। বাচ্চাগুলো অলরেডি পেকে গেছে। এর থেকে বেশি পাকলে হীতের বিপরীত হবে। ইফাত তার ভাইকে ধমক দিয়ে আমাকে বললো,
— আমি এগুলো বাংলা মুভিতে দেখেছি। সাকিব খান তার বউকে এভাবে কিসি দেয়। অনেক দিন ধরে ইচ্ছে ছিলো তোমাকে একটা কিসি করার। আজ পূরণ হলো।
হাত সরিয়ে লজ্জা রাঙা মুখে একদমে কথাগুলো বললো। তারপর আবার মুখ ঢেকে ফেললো। আমি রেগে বললাম,
— ওরে বাংলা মুভিরে! তোর দাদার সাথে বসে এখনো এসব দেখিস তুই। আজই প্লাস দিয়ে তোদের বাসার ডিস এন্টেনার তার কেটে দিবো। তারপর দেখবো মুভি দেখিস কি করে?তোদের দাদা, নাতীর বাংলা মুভি আমি বের করছি। তোর বাংলা মুভির গুষ্টি কিলাই। বাচ্চা পোলাপাইন দেখবে কার্টুন চ্যানেল। তা না দেখে সে বাংলা মুভি দেখছে। আজকে তোদের মায়ের কাছে না না মায়ের কাছে বিচার দিয়ে লাভ নেই। তোদের বাবার কাছে বিচার দিবো।
তন্বী হাসতে হাসতে আমার পাশে এসে বললো,
— বাংলা মুভির কিস করার সিনটা জোস ছিলো। নায়ক ছোট বলে সোফায় উঠে তারপর গলা জড়িয়ে ধরে…..। থাক, আর কিছু বললাম না। আমার নিজেরই লজ্জা করছে। বাপরে, আজকালের পিচ্চিরা এতো এডভান্স!!
এতক্ষণ ঘোরে থাকলেও এখন ঘোর কেটে গেছে। রাগে আমার সারা শরীর কাঁপছে। চিন্তা করুন বাচ্চা ছেলেগুলো কতটা বজ্জাত হলে এমনটা করতে পারে।
সিফাতের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর বড় ভাইকে ইশারা করে কি জানি বলতে বলেছে। ইফাত মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করতে বলছে। আমি চোখ দুটো ছোট ছোট করে রাগী গলায় বললাম,
— দুজন ইশারায় কি বলছিস? জলদী বল।
তোরা এখনো দাঁড়িয়ে আছিস? দুইটাকে আমি পিটিয়ে সোজা করবো। তোদেরকে এখুনি মাথায় তুলে আছাড় মারবো। ওয়েট কর একটু।
সিফাত মুচকি হেসে বললো,
“জানো ভাবী সেদিন কি হয়েছে?”
কথাটা বলে একবার ইফাতের দিকে তাকালো। ইফাত বারবার মানা করছে বলতে। কিন্তু সিফাত শয়তানি হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— সেদিন হয়েছে কি?
তন্বী ঝাড়ি মেরে বললো,
— বলবি তো কি হয়েছে?
— বলছি তো। ঝাড়ি মারছো কেন?
— জলদী বল।
—সেদিন ভাবী যখন বৃষ্টিতে ভিজে সিঁড়ি বেয়ে নামছিলো তখন ভাইয়া ভাবীকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। প্রতিদিনই তো ভাবী গোসলের পর যখন ভেজা চুলগুলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঝাড়ে তখন ভাইয়া বারান্দার থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে ভাবীকে দেখে। দেখছো ভাবী ভাইয়া তোমাকে কতটা ভালোবাসে।
সিফাতের কথা শুনে আমি ও তন্বী দুজন দুজনার মুখের দিকে শুকনো দৃষ্টিতে তাকালাম। এমন কিছু শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। তন্বীর মুখ দেখে মনে হচ্ছে তন্বীরও একি অবস্থা। আমার মুখের শব্দ মনে হচ্ছে কেউ বন্ধ করে দিয়েছে। কোনমতে বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে বললাম,
— ওরে এরা দেখি জুয়ান ছেলেগুলোকেও ক্রস করে ফেলেছে। পুরো লুচি পরোটা। তন্বী আমি বোধহয় জ্ঞান হারাবো বোইন। যা জলদী পানি নিয়ে আয়।
ইফাত দ্রুত এগিয়ে এসে সিফাতের পিঠে দুম করে এক ঘুষি বসিয়ে বললো,
— আমার বউকে আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি তোর কি হ্যাঁ? আরেকটা কথা বললে ইচ্ছে মতো মারবো।
ঘুষিটা বেশ জোরেই লেগেছে। যার কারণে সিফাত ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো। আমরা কিছু বলবো কি করে আমাদের দুই বোনের জবান তো অলরেডি বন্ধ হয়ে গেছে। সিফাতের কান্নার শব্দ পেয়ে তায়াং ভাইয়া কিছুটা দৌড়ে ড্রয়িংরুমে চলে এলো। জোরে চেচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হচ্ছে এখানে? এতো কান্নাকাটি কিসের?
আমরা দুই বোন নিষ্পলক চোখে একসাথে তায়াং ভাইয়ার দিকে তাকালাম। আমাদের এমন চেহারা দেখে তায়াং ভাইয়া বিরক্তিমুখে বললো,
— তোরা এভাবে থুম মেরে বসে আছিস কেন? ও কাঁদছে কেন? কিছু তো বলবি?
আমরা কি বলবো? কথায় আছে না অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর। এদের কথা শুনে আমরা পাথর হয়ে গেছি। দের কথা শুনে আমি এখন অজ্ঞান হবো।তায়াং ভাইয়া আমাকে এসে ধাক্কা দিতেই আমি সোফায় মাথা হেলিয়ে দিলাম।তারপর তায়াং ভাইয়াকে খোঁচা মেরে বললাম,
— তায়াং ভাইয়া আমি অজ্ঞান হয়ে গেছি।জলদী আমার জ্ঞান ফেরা🌚। যদিও পুরোপুরি জ্ঞান যয়নি তবে এদের অত্যাচারে কাইত হইয়া পইরা রইছি।
— ঐ শাঁকচুন্নি কি বলিস এসব?
আমি তায়াং ভাইয়ার হাত টেনে নিয়ে আমার গালে থাপ্পড় মারতে মারতে পরিমণির স্টাইলে বললাম,
—ভাই আমি বাইচা আছি কেন?আমারে মার, আমারে মাইরা ফালা। আমি বাঁচতে চাই না।
ইফাত এগিয়ে এসে আমার গালে এক হাত রেখে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো,
— এসব কথা কইয়ো না বউ। আমার অনেক খারাপ লাগে। জানো তুমি এই কয়দিন অসুস্থ ছিলা বলে আমি তোমার লিগা নামাজ পরে দোয়া করছি। অনেক কান্না করছি। তোমার সাথে দেখা করতেও আসছিলাম। আম্মুর সাথে আসছিলাম বলে তোমার সাথে কথা বলতে পারি নাই। তোমার কিছু হইলে আমার কি হইবো কও?
আমি মুখটাকে একটুকু করে ছলছল নয়নে বললাম,
— তুই তো আমারে ইমোশনাল করে দিলি রে। তোর ভালুপাসা দেখে আমি মুগ্ধ।
তারপর হঠাৎ রণমুর্তি রূপ নিয়ে ওর হাত আমার গালের থেকে সরিয়ে রেগে বললাম,
— ইফাইত্তারে তুই কি আমার সামনে থেকে যাবি? নাকি দুই-চার ঘা খাবি। আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন। বেশি পেকে গেছো? দাঁড়া তোরে আজকে আমি কাঁচা চাবায় খাইয়া ফালামু। একটু লবণও নিমু না। বাঁচতে চাইলে সামনের থেকে ভাগ।
এদিক সেদিক তাকিয়ে ওকে ধাওয়া দেওয়ার জন্য কিছু একটা খুঁজতে লাগলাম। কিছু পাই না বলে টি-টেবিলের ওপরে থাকা মাটির ফুলদানি হাতে তুলে নিলাম। সেটা উঁচিয়ে মারার জন্য উদ্যত হতেই ইফাত ছুট লাগালো। ইফাতকে নাগাল না পেয়ে সেটা নিয়ে সিফাতের দিকে তাকাতেই দেখি সে আগের থেকে গায়েব। আমি ফুলদানিটা যথাস্থানে রেখে আবার সটান হয়ে সোফায় শুয়ে পরলাম। তন্বী হাসতে হাসতে ফ্লোরে বসে পরছে।তায়াং ভাইয়া কিছু না বুঝে আমাদের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে আছে। ভাইয়া এগিয়ে এসে বললো,
— কি হলো তা কি তোরা কেউ আমাকে বলবি।
তন্বী হাসির রেশ কমিয়ে বললো,
— নোভাপুকে জিজ্ঞেস করো।
— কেন তুই বললে কি সমস্যা?
—আমি কিছু বলতে পারবো না। যারটা তার থেকে জেনে নাও। আমি কিচেনে গেলাম। চা খেলে বল বানিয়ে দেই।
তন্বী মুখ টিপে হাসতে হাসতে কিচেনে চলে গেল। তায়াং ভাইয়া আমার সামনে এসে খোঁচা মেরে রাগী ভঙ্গিতে বললো,
— বলবি কি হয়েছে?
আমি ভাইয়ার দিকে না তাকিয়ে চেচিয়ে বললাম,
— ভাইয়া আমারে নাড়া দিস না। আমি কিন্তু মইরা গেছি।
#চলবে