#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
Part_63
#Writer_NOVA
দুই দিন পর………..
কোলিং বেল বাজতেই কপালে ভাজ পরলো আমার। এই অসময় আবার কে? এত সকালে তো কারোর আসার কথা নয়। ফজরের নামাজ পরে সোফায় এসে বসে আছি। সোফা থেকে উঠে দরজা খুলতে এত কষ্ট লাগছে। মনে হচ্ছে পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যকার দুরত্ব। আলসেমি ধরলে সারা শরীরে জং ধরে যায় আমার। খালামণি কিচেনে চা বানাচ্ছিলো। এদিকে কোলিং বেল বেজেই চলছে। খালামণি আমাকে তাড়া দিয়ে বললো,
— নোভা উঠে দেখ না কে এসেছে?
— উঠতে কষ্ট লাগে খালামণি।
— আসবো লাঠি নিয়ে।
— আসো তাহলে সেই ভয়ে দৌড়ে খুলে দিবো।
— যা খুলে দে।
— উফ, অসহ্যকর। এতবার কেউ কোলিং বেল বাজায়? বিরক্ত লাগে এই জিনিসটা আমার। দরজার বাইরের মানুষটা কেন বুঝে না যে দরজা খুলবে সে হেঁটে হেঁটে আসবে উড়ে উড়ে না।
— তোর মতো আলসেমি করলে দরজা খুলতে সারাদিন লাগবে।
— যাচ্ছি, যাচ্ছি।
বিরক্ত নিয়ে দরজা খুললাম। দরজার ওপরপাশে কাউকে না দেখে মেজাজ চটে গেল। চেচিয়ে খালামণিকে বললাম,
— দেখ খালামণি কেউ নেই।
— তুই যে ঢিলামি করে দরজা খুললি এতে বেচারা হয়রান হয়ে চলে গেছে।
— আমার কি দোষ! একটু দেরী করলে কি হতো?
— দরজা বন্ধ করে চলে আয়।
খালামণির কথামতো দরজা বন্ধ করতে নিলেই নিচের দিকে চোখ পরলো। মাঝারি আকারের একটা গিফটবক্স রাখা। আমি হাতে নিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না। গিফট বক্সটা বাসার ভেতর নিবো কি নিবো না সেই দ্বিধাদ্বন্দে পরে গেলাম। এক সময় ভাবলাম নিয়েই যাই। আমাদের বাসার সামনে রেখেছে তার মানে এটা আমাদেরই। কিন্তু কে দিলো? গিফট বক্সটা নিয়ে দরজা আটকাতেই আমার মোবাইলে কল এলো। এত সকালে আম্মুর কল দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। সচারাচর আম্মু এত সকালে কল দেয় না। বাসার কারো কোন বিপদ হলো না তো। রিসিভ করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সালাম দিলাম,
— আসসালামু আলাইকুম আম্মু।
— শুভ জন্মদিন।
আম্মুর মুখে জন্মদিনের কথা শুনে ভয় কেটে গিয়ে বিস্ময়ে রূপান্তরিত হলো। অবিশ্বাস্য গলায় বললাম,
— আজকে আমার জন্মদিন?
— না, আমার পালক মেয়ের জন্মদিন।
— দেখছো আমি ভুলেই গিয়েছি।
— তোর জন্মদিন তোর আবার কবে মনে থাকলো?
— তাও ঠিক কথা। মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য তো তুমি আছো। তাহলে আমি কেন মনে করবো?
— নে তোর আব্বুর সাথে কথা বল।
— হুম দাও।
এটা সত্যি কথা আমার জন্মদিনের দিন আমারি মনে থাকে না। কিন্তু আম্মু কখনও ভুলে না। প্রতিবার আম্মু সকালে উঠে আমাকে ঘুমের মধ্যেই কপালে চুমু দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতো। এবার শুধু তাদের থেকে দূরে। দেড় মাস পরে তো সারাজীবনের জন্য দূরে চলে যাবো। চোখ দুটো টলমল করে উঠলো। চোখের পানি পরার আগেই মোবাইলের অপরপাশে আব্বুর কন্ঠস্বর পেলাম।
— আসসালামু আলাইকুম বড় মা। কেমন আছো?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি?
— আলহামদুলিল্লাহ। জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
— শুকরিয়া আব্বু।
— পড়াশোনা ঠিকমতো করো।
— দোয়া করো তোমরা।
— এনাজ কেমন আছে? ওর সাথে কি দেখা হয়?
— আছে আলহামদুলিল্লাহ ভালোই। দুদিন আগে দেখা হয়েছিলো। প্রতিদিন কলে কথা হয়।
— সাবধানে থেকো। এই নাও ইভা কথা বলবে তোমার সাথে।
— আচ্ছা, মোবাইল দাও ওর কাছে।
ইভা মোবাইল নিয়ে চেচিয়ে বললো,
— হ্যাপি বার্থডে টু ইউ মোটু। গত ২২ বছর আগে তোমার মতো একটা শয়তান মেয়ের জন্ম হয়েছিল।
— এসে নেই বাড়িতে। তোর পিঠের হাড্ডি ভাঙবো আমি।
— তোমার জন্মদিন তো তোমারি মনে নেই। অবশ্য মনে ছিলো কোনদিন। সে যাই হোক যে যা গিফট করবে সেগুলো আমাকে দিয়ে দিয়ো। তোমার তো সামনে বিয়ে। ঐ বিয়েতে অনেক কিছু পাবা। তাই জন্মদিনেরগুলো আমার।
— ইভু মার খেতে না চাইলে আজাইরা বকবক বন্ধ কর। যা গিয়ে পড়তে বস।
— এর জন্য বলে কারো ভালো করতে না। আমি কত সুন্দর করে উইশ করলাম আর তুমি আজকের দিনেও আমাকে বকতেছো।
— ভাগ্য ভালো তুই সামনে নেই। নয়তো মার খেতি।
— আচ্ছা রাখি ভালো থেকো। পরে কথা হবে। জন্মদিনের ট্রিট পাই আমি। সেটা দিতে ভুলো না। ভুলে গেলে জামাই বাড়ি যেতে দিবো না।
—ওকে, দেখা যাবে।
কল কেটে গিফট বক্সের দিকে তাকালাম। আমার বার্থডে উপলক্ষে কি কেউ গিফট পাঠিয়েছে? হতে পারে। গিফট পেপার ছিঁড়ে ফেললাম। বক্সের ঢাকনা খুলে দেখি এক ডজন চুড়ি। চুড়ি দেখে আমার মেজাজ গরম। চুড়ি আমার কোনকালেই পছন্দ নয়। মেয়েদের আলাদা একটা শখ থাকে চুড়ির। কিন্তু আমার কেন জানি চুড়ি দেখলেই রাগ লাগে। আমার কালেকশনে মাত্র দুই মুঠ চুড়ি আছে। তাও এক মুঠ ইভার, আরেক মুঠ তন্বী গিফট করেছিলো। তন্বী আবার চুড়ি বলতে অজ্ঞান। মনে মনে ভেবে ফেলেছি চুড়িগুলো ইভা,তন্বী আর নূর আপিকে দিয়ে দিবো। বক্স বন্ধ করার আগে টুপ করে একটা ছোট টুকরো কাগজ পরলো। আমি উবু হয়ে সেটা উঠিয়ে ভাজ খুললাম। সেখানে লেখা ছিলো,”নয় নাম্বার বিপদ সংকেত ” আজব লেখাটা পরে কপাল কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম। খালামণি আমাকে ডেকে বললো,
— থম মেরে কি করিস?
— কিছু না খালামণি।
— তন্বী কি ঘুমিয়ে গেছে?
— সেই কখন।
— তোর চা পাতিলে আছে। গরম করে নিস।
— আচ্ছা। তায়াং ভাইয়া কি ঘুমে?
— তায়াং তো সকালে নামাজ পরতে গিয়েছিল। এখনো তো এসেনি।
খালামণি তার রুমে চলে গেল। গতকাল বিকেলে দাদী চলে গেছে। তাই খালামণি এখন একা। পাশের ফ্লাটে গুছগাছের পর্ব চলছে। আজ ইফাতের আম্মুর সিজার করাবে। রাতে তার সাথে কথা বলে এসেছি। আমি চিরকুটটা ভাজ করে বক্সের ভেতর রেখে দিলাম। আর গিফট বক্সটা ডেসিং টেবিলের ওপর রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
💖💖💖
— মামা, ঐ ঘড়ির দোকানটার সামনে রিকশা থামিয়েন তো।
রিকশাওয়ালা আমার কথামতো দোকানের সামনে রিকশা থামালো। আমি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে তার ভাড়া মিটিয়ে দিলাম। তন্বী আমার দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বললো,
— তুমি এখানে এলে কেন?
— নাচতে।
— প্লিজ বলো না।
— ঘড়ির দোকানে মানুষ কি করতে আসে?
— ঘড়ি কিনতে।
— তাহলে আমিও তা করতে এসেছি।
— তোমার তো অনেকগুলো ঘড়ি আছে। তুমি আবার ঘড়ি কিনে কি করবে?
— আমার জন্য নয়।
— তাহলে কার জন্য?
— আমার উনির জন্য।
— এনাজ ভাইয়ার জন্য!
— জ্বি হ্যাঁ। আমার উনি তো তিনিই। নিশ্চয়ই অন্য কেউ নয়।
— কি উপলক্ষে গিফট করছো?
— জামাইকে গিফট করতে আবার উপলক্ষে লাগে নাকি?
— না লাগে না। তবুও জিজ্ঞেস করলাম।
— ওর ঘড়িটা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ভাবলাম আমি একটা গিফট করে দেই।
— যাক এতদিনে একটা কাজের মতো কাজ করছো।
— কেন অন্য সময় কি অকাজ করি?
— তুমি কাজের থেকে অকাজই বেশি করতে পছন্দ করো। সেটা আমি ভালো করে জানি।
— হয়েছে আর কিছু বলতে হবে না। চল, ভেতরে যাই।নয়তো কলেজে যেতে দেরী হয়ে যাবে।
— ওকে চল।
দুজন কথা বলতে বলতে দোকানের ভেতরে চলে গেলাম। দুদিন আগেই মনে মনে ঠিক করে ফেলেছিলাম এনাজকে একটা ঘড়ি গিফট করবো। এর মধ্যে সময় করে উঠতে পারিনি। আজ সময় করে চলে এলাম।
দুপুরে……
কলেজ শেষ করে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি রিকশার জন্য। তন্বী, শারমিনের হদিস নেই। কল করছি দুটোর মোবাইল বন্ধ বলছে। দুপুর হয়ে গেলো এখনো একজনও আমাকে উইশ করেনি। তায়াং ভাইয়া তো প্রতিবার আমাকে উইশ করে। কিন্তু এবার কোন খোঁজ নেই। আমার এনজিও সংস্থা তো এখন অব্দি কলও করেনি। বউয়ের জন্মদিন সেও বোধহয় ভুলে খেয়ে ফেলছে। মন আমার ভীষণ খারাপ। আসুক আবার ভালোবাসা দেখাতে। প্রত্যেকটাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবো। রোদ উঠেছে আজ গ্রীষ্মকালের মতো। যার দরুণ গরম লাগছে।চারিদিকে কোন মানুষের আনাগোনা নেই। হঠাৎ আমার সামনে একটা বাইক থামলো। আমি ভ্রু কুঁচকে বাইকের দিকে তাকাতেই আবিরকে দেখতে পেলাম। আবির হাত নাড়িয়ে বললো,
— হেই মিস, কেমন আছেন?
আবিরের দিকে আমি একটা ক্রুর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ডানে-বামে তাকাতে লাগলাম। কলেজ ছুটি হয়েছে প্রায় দশ মিনিট ধরে। এর মধ্যে পুরো কলেজ ফাঁকাই বলা যায়। হেঁটে যেতে ইচ্ছে করছে না বলে বিগত ছয় মিনিট ধরে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। এখন এই ফালতু ঝামেলা এসে কাঁধে ভিড়লো। আবির আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে তাড়া দিয়ে বললো,
— কি হলো কথা বলছেন না যে?
অনেক কষ্টে নিজেকে একটু শান্ত করেছিলাম। কিন্তু এই ছেলে আমার মেজাজ পুনরায় বিগড়ে দিলো। কঠিন গলায় বললাম,
— আমি কি আপনাকে চিনি যে আপনার সাথে কথা বলবো?
— ওমা, কালকে না পরিচিত হলাম।
— কখন?
— এখুনি ভুলে গেলেন?
— দেখুন গায়ে পরে কথা বলার মানুষ আমার একদম পছন্দ নয়। ছেঁচড়া মনে হয়। আপনি তো সবসময় নায়কের সাজ সেজে থাকেন। তাহলে স্বভাবটা নায়কের মতো না হয়ে ছেঁচড়ার মতো কেন?
— অপমান করছেন?
— এতখনে বুঝলেন?
— আপনি গতকাল উপকার করলেন। তাই আমি ভাবলাম আজ যদি তা ফেরত দিতে পারি। আপনাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এলাম। আর আপনি আমাকে ছেঁচড়া বানিয়ে দিলেন।
— সামান্য একটা উপকার করলে যে আপনি এমন ফেভিকল আঠার মতো চিপকে থাকবেন, সেটা যদি জানতাম, তাহলে ভুলেও গতকাল আপনাকে উপকার করাতো দূরে থাক আপনার সাথে কথা বলতাম না।
— আপনাকে দেখে তো শান্তশিষ্ট মনে হয়। কিন্তু এত তেজ কোথা থেকে আসছে তাই ভাবছি আমি।
— আমি মোটেও শান্তশিষ্ট নই। গতকাল ভদ্রতার খাতিরে ভালো ব্যবহার করেছি তো তাই পার পেয়ে গেছেন। যত্তসব আজাইরা পাবলিক।
গটগট পায়ে সামনের দিকে এগুতে লাগলাম। আর দু-এক মিনিট থাকলে ব্যাটার গালে ঠাস করে চড়ও বসিয়ে দিতাম। তার চেয়ে ভালো এর সামনে থেকে সরে যাই। কিন্তু সে হাল ছাড়লো না। ধীরে বাইক চালিয়ে আমার সাথে সাথে আসতে লাগলো। আমি থেমে তার দিকে তাকিয়ে চেচিয়ে বললাম,
— সমস্যা কি আপনার? আমাকে এভাবে ডিস্টার্ব করছেন কেন?
— আমি কি করলাম?
— আপনি জানেন না আপনি কি করেছেন?
আবির ইনোসেন্ট ফেস করে ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো। মাথার মধ্যে চিনচিন রাগ উঠছে। আমি কিছু বলতে নিলেই দেখলাম সে চোখের ইশারায় কারো সাথে কথা বলছে। আমি তার দৃষ্টি বরাবর তাকাতেই কেউ একজন দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে পরলো। আমি সেদিকে গ্রাহ্য না করে এক দফা তাকে ঝাড়লাম। বেচারা করুন চোখে তাকিয়ে বললো,
— এবার একটু থামেন প্লিজ। সেই কখন থেকে আমাকে বকেই যাচ্ছেন। আপনি যেরকম ছেলে ভাবছেন আমাকে, আমরা মোটেও সেরকম ছেলে নই।
— আপনি কিরকম ছেলে তা আমার জানা হয়ে গেছে। চিপুক টাইপের ছেলে আপনি। যে কারো সাথে চিপকে থাকেন। আমি আপনাকে…..
পুরো কথা আমার শেষ করা হলো না। তার আগেই পিছন থেকে কেউ মুখে রুমাল চেপে ধরলো। আমি কিছু সময় ছটফট করে নিস্তেজ হয়ে গেলাম। জ্ঞান হারানোর আগে শুধু এতটুকু দেখেছিলাম যে আমার সামনে থাকা আবিরের মুখে এক টুকরো রহস্যময় হাসি ফুটে উঠেছে।
#চলবে
আগামীকাল টুইস্ট আছে অপেক্ষা করুন। আমি কোন ঝামেলা দিবো না আর। আবির কে তাও আগামীকাল জানতে পারবেন। গতকাল বলেছিলাম যে কারা দ্বিতীয় খন্ড চান কারা চান না। আপনারা কেউ বলেছেন চাই, কেউ বলেছেন চাই না। এতে আমি প্রচুর কনফিউজড। এরকম হবে জানলে আমি কখনো জিজ্ঞেস করতাম না। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি আমার মনমতো লিখবো। কি করবো সেটা এখন বলবো না। খুব শীঘ্রই সেটা আপনারাই দেখতে পাবেন। সবার কথা তো আমার মানা সম্ভব নয় তাই আমি আমার মনের কথাই শুনি। এতে অন্ততপক্ষে আমি যেভাবে গল্প সাজিয়েছি সেভাবে তো তুলে ধরতে পারবো। তবে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। আপনাদের নিরাশ করবো না। আমি স্যাড এন্ডিং এর বিপক্ষে। তাই গল্প সেড এন্ডিং হবে না তাতে আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন।
#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
#Sarprise_Part
#Writer_NOVA
কেউ খুব যত্ন সহকারে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। স্পর্শটা খুব চেনা লাগছে। কানে ইঞ্জিনের শো শো শব্দ আসছে। কিন্তু কিসের ইঞ্জিন তা বলতে পারবো না।পিটপিট করে চোখ খুলতেই দেখতে পেলাম এনাজের কাঁধে আমার মাথা।সে এক হাতে জড়িয়ে ধরে আরেক হাতে মাথায় হাত বুলাচ্ছে। আশেপাশে তাকিয়ে আরেকটু চমকে উঠলাম। আমরা একটা ট্রলারে আছি। চারিদিকটা বেলুনে সাজানো। ছোট ছাউনির নিচে বসে আছি আমি ও এনাজ। নদীতে ঢেউ বেশি নেই। শো শো শব্দ করে ট্রলার এগিয়ে যাচ্ছে তার নিজস্ব গতিতে।আমি শক্ত করে এনাজকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে উঠলাম। এনাজ ব্যস্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে তোমার? ভয় পেয়েছো? আমি আছিতো। একটু শান্ত হও।
— ঐ আবির নামের ছেলেটা….
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় কথা বলা শুরু করতেই পাশ থেকে কেউ বলে উঠলো,
— আমি কিছু করিনি। যা করার সব তোমার জামাই করছে। বুদ্ধিও তোমার জামাইয়ের।
আবিরের গলা পেয়ে চমকে তাকালাম। সত্যি তো আবির এখানে।আমি গুটিসুটি মেরে দুই হাতে এনাজকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ লুকালাম। এ ছেলে এখানে কি করে? আমাকে ভয় পেতে দেখে এনাজ বললো,
— ওকে ভয় পেয়ো না। আবির আমাদের বন্ধু।
আমি একদফা অবাক হয়ে এনাজের মুখের দিকে তাকালাম। এনাজ আমাকে চোখ দিয়ে আশ্বস্ত দিলো। কিন্তু তাকে ছাড়লাম না আমি। আবিরের দিকে একটা রাগী লুক দিয়ে ভেংচি কাটলাম।
— হ্যাপি বার্থডে টু ইউ!
একসাথে সবাই চেচিয়ে ইউশ জানিয়ে এগিয়ে এসে হামলে পরলো আমার ওপর। সারা শরীর পার্টি স্প্রে ও জরি দিয়ে মাখামাখি আমার। তায়াং ভাইয়া, তন্বী, রওনক, শারমিন, তওহিদ ভাইয়া, ইমরান হাশমি ভাইয়া, শাহেদ, রায়হান ভাইয়া। সবাইকে একসাথে দেখে এনাজের দিকে তাকালাম। এনাজ আমার মুখের স্প্রে মুছে দিতে বললো,
— আমার একটা মাত্র বউ। তার বার্থডে-এর কথা কি আমি ভুলে যেতে পারি বল তো? ম্যানি ম্যানি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্যা ডে। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। মে আল্লাহ ব্লেইস ইউ মাই ডিয়ার।
আমি অভিমানী সুরে বললাম,
— এই ছিলো আপনাদের মনে? আর আমি ভেবেছি সবাই আমার বার্থডে-এর কথা ভুলেই গেছেন।
এনাজ শব্দ করে হেসে বললো,
— কিডন্যাপের প্ল্যানটা আমাদেরি ছিলো। আমার সব বন্ধুকেই তো তুমি চিনো। একমাত্র আবিরকে ছাড়া। তাই এক্ষেত্রে আবিরকে কাজে লাগিয়েছি আমরা।
— তায়াং ভাইয়া মাঝে মাঝে যে আবিরের কথা বলতো উনি কি সেই আবির? চট্টগ্রামে কাজ করে।
— হ্যাঁ, ওর কথাই বলতো।
— কিডন্যাপ করে এনে বার্থডে সারপ্রাইজ। সত্যি অনেক বড় সারপ্রাইজ আমার জন্য। কিন্তু অজ্ঞান করেছে কে?
এনাজ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
— এনাজ ছাড়া তার বউকে ছোঁয়ার অধিকার অন্য কারো আছে নাকি? কেউ ধরলে তার হাত ভেঙে ফেলবো। আমিই সেই ব্যাক্তি। যে তোমাকে অজ্ঞান করেছে।সরি টিডি পোকা! তোমাকে অজ্ঞান করে, কিডন্যাপের অভিনয় করেছি শুধুমাত্র সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।
— এভাবে কেউ সারপ্রাইজ দেয়? আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মনে মনে বলেছিলাম এই আবিরকে একবার সামনে পেলে চাটনি বানাবো।
আবির অভিযোগের সুরে এনাজকে বললো,
— দেখ ভাই, আমি কিছু না করেও তোর বউয়ের কাছে কত কথা শুনেছি। এখন আবার বলছে চাটনি বানাবে। এমনি যেই ধানি লঙ্কা। আমি ওর সাথে যেই ভয়ে ভয়ে কথা বলেছি।
তায়াং ভাইয়া তাড়া দিয়ে বললো,
— বাকি কথা পরে হবে। এখন কেক কেটে নে।
শারমিন ও তন্বী এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে একসাথে বার্থডে উইশ করলো। আমি ওদের দুটোকে সরিয়ে দিয়ে রাগী গলায় বললাম,
— কথা নেই তোদের সাথে। তোরাও আমাকে ছেড়ে আমার জামাইয়ের দলে ভর্তি হয়েছিস।
তন্বী মুখ কুচোমুচো করে বললো,
— আমার কোন দোষ নেই। সব তোমার জামাইয়ের প্ল্যান। উনার কারণে বার্থডে উইশটাও করতে পারিনি।
শারমিন এক হাত চেপে ধরে বললো,
— প্লিজ রাগ করিস না। আমরা চেয়েছি সবাই একসাথে তোকে সারপ্রাইজ দিবো।
— হ্যাপি বার্থডে আপু।
কলেজ পড়ুয়া বয়সী একটা মেয়ে এগিয়ে এসে আমার দিকে গোলাপ ফুল এগিয়ে দিয়ে বার্থডে উইশ করলো। আমি হাত বাড়িয়ে ফুলটা নিয়ে মিষ্টি হেসে বললাম,
— শুকরিয়া আপু। কিন্তু তোমাকে তো চিনতে পারলাম না।
ইমরান হাশমি ভাইয়া জোরে চিৎকার করে বললো,
— উনি আমাদের শাহেদের গার্লফ্রেন্ড। ওর নাম মোহনা।
আমি বিস্মিত চোখে বললাম,
— শাহেদ ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ডও আছে?
রায়হান ভাইয়া টিটকারির সুরে বললো,
— সে তো কবের থেকেই। শুধু আমরাই সিঙ্গেল রইলাম। বাকি সব মেয়ে পটিয়ে বিয়েও করে ফেলছে।
আমি মুখ শুকনো করে বললাম,
— আমি শাহেদ ভাইয়াকে এসব থেকে দূরে ভাবছিলাম। আর উনি একটা পিচ্চি মেয়েকে পটিয়ে ফেলছে। জিও শাহেদ ভাইয়া জিও।
আমি মোহনাকে ডেকে আমার পাশে বসালাম। হাসিমুখে কুশলাদি জিজ্ঞেস করে এটা সেটা জিজ্ঞেস করতে লাগলাম।
— কেমন আছো মোহনা?
—এই তো আপু ভালো আছি তুমি।
— আলহামদুলিল্লাহ এখন অনেক ভালো আছি।
— তোমার সারপ্রাইজটা কিন্তু দারুণ হয়েছে আপু।
— হ্যাঁ, তাতো অবশ্যই। তোমার নাম ও আমার এক চাচাতো ভাইয়ের বউয়ের নাম এক। ঐ ভাবীর নামও মোহনা।
— ওহ আচ্ছা।
— কোন ক্লাশে পড়ো?
— ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার।
— ওহ্ তাহলে আমাদের ছোট।
— হ্যাঁ আপু।
আমরা দুজন কথা বলছি।বাকিসব কেক ডেকোরেশন করছে। কেকের ওপরের ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। তা নিয়ে ওদের মধ্যে চেচামেচি। সবার একটা কথা ফুল নষ্ট হলো কি করে? রওনক আমার সামনে এসে মাথা চুলকে লাজুক ভঙ্গিতে বললো,
— ভাবী, চুড়ির বক্সটা কি তোমার কাছে?
আমি মোহনার সাথে কথা বলা থামিয়ে রওনকের দিকে শান্ত দৃষ্টি দিয়ে বললাম,
— কোন চুড়ির বক্স?
— সকালে যে তোমাদের বাসার দরজার সামনে রেখে গিয়েছিলাম। গিফট পেপারে পেঁচানো ছিলো। তন্বীকে জিজ্ঞেস করলাম তন্বী বললো ও পায়নি। তাহলে নিশ্চয়ই তুমি পেয়েছো।
আমি কিছু সময় ভাবতেই চুড়ির বক্সের কথা মনে পরে গেলো। আমি চোখ গোল গোল করে বললাম,
— ঐটা আপনি রেখেছিলেন?
— হুম, আমি ভেবেছিলাম আজ তন্বীর জন্মদিন। তাই ওর জন্য গিফট পাঠিয়ে ছিলাম। ওর তো চুড়ি খুব পছন্দ তাই। পরে তায়াং ভাইয়ার থেকে শুনলাম আজ তোমার জন্মদিন আর আগামী মাসের ১৫ তারিখে তন্বীর।
— আমি আরো টেনশনে পরে গিয়েছিলাম বেনামি গিফট বক্সটা কে পাঠালো? তাও আমার অপছন্দের জিনিস। কিন্তু “নয় নাম্বার বিপদ সংকেত” শব্দটা কেন লিখছেন?
— সবসময় তোমার বোন আমার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায়। এবার ওকে আমার খাঁচায় বন্দী করবো। তাই বিপদ সংকেত পাঠিয়েছি।
— আপনি তন্বীকে ভালোবাসেন তাই না?
— হুম অনেক। কিন্তু তোমার বোন বুঝে না।
— সোজা বিয়ে করে ফেলেন।
— তাই করবো৷ এর জন্য তো নয় নাম্বার বিপদ সংকেত লিখে পাঠিয়েছি।
— সমস্যা নেই গিফট বক্সটা আমার কাছে। আমি ওকে দিয়ে দিবো।
— ঠিক আছে।
তায়াং ভাইয়া রওনককে ডেকে বললো,
— শাঁকচুন্নিকে সাথে নিয়ে আয়। এবার কেক কাটি।
💖💖💖
আমি গুটি গুটি পায়ে ট্রলারের মাঝে চলে গেলাম। এনাজ আমার দিকে প্লাস্টিকের ছুরি এগিয়ে দিলো।আমার হাতের ওপর এনাজ হাত রাখলো। আমি কেক কেটে প্রথম টুকরোটা এনাজকে খাইয়ে দিলাম। এনাজ আমার হাত থেকে বাকি অংশটুকু নিয়ে আমার মুখে পুরে দিলো। একে একে সবাইকে খাইয়ে দিলাম। আবিরের সামনে যেতেই আবির মুখ কুচোমুচো করে বললো,
— তুমি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ো না। আমার ভয় করে।
তার কথা শুনে ফিক করে হেসে উঠলাম। তার দিকে কেকের টুকরো এগিয়ে দিতেই ভয় পাওয়ার ভান করে মুখে নিলো। রায়হান ভাইয়া শুরু করলো ক্রিম মাখামাখি। একেকজনের মুখ ক্রিমে ভর্তি। সবাই রায়হান ভাইয়াকে বকা শুরু করলো।এনাজ সবাইকে থামিয়ে দিয়ে আমার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে পরলো। সবার নজর এখন তার দিকে। এনাজ কি করতে চাইছে তা আমারও বোধগম্য নয়। এনাজের দেখাদেখি তওহিদ ভাইয়া শারমিনের সামনে, রওনক তন্বীর সামনে হাঁটু মুড়ে বসে পরলো। আমরা মেয়ে তিনজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে তাকালাম।তিনজনের চোখে,মুখে বিস্ময়। এনাজ পকেট থেকে একটা ছোট বক্স বের করলো। বক্সটা খুলে একটা স্বর্ণের আংটি বের করে আমার হাতে পরিয়ে দিয়ে বললো,
— জন্মদিন উপলক্ষে আমার তরফ থেকে এই ছোট্ট উপহার তোমার জন্য।
আমার জন্য আরেকটা সারপ্রাইজ।আমি এক হাতে মুখ ঢেকে বিস্মিত চোখে বললাম,
— এটা ছোট উপহার! এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া এনজিও সংস্থা। আমার জীবনের বেস্ট মোমেন্ট এগুলো। এতবড় সারপ্রাইজ আমি জীবনেও পাইনি।
এনাজকে দাঁড় করিয়ে সবার সামনে জড়িয়ে ধরলাম। চোখ দিয়ে পানি পরছে আমার। ইমরান হাশমি ভাইয়া আফসোসের গলায় বললো,
— ভাই, এবার ছাড়। সিঙ্গেল ছেলেগুলোর বুকে আর কত আগুন ধরাবি তোরা? বুকটা ফাইট্টা যায়। আজ একটা গার্লফ্রেন্ড নেই বলে, তোরা এমন করতে পারিস না।
আমি লজ্জা পেয়ে এনাজকে ছেড়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ালাম। আবেগে ভুলেই গিয়েছিলাম এখানে মানুষ আছে। তওহিদ ভাইয়া ও রওনক হিরোর স্টাইলে পকেট থেকে রিং বের করে সমস্বরে বললো,
— উইল ইউ ম্যারি মি?
তন্বী একবার আমার দিকে তাকায় আরেকবার তায়াং ভাইয়ার দিকে। বোঝায় যাচ্ছে বেচারী অনেক ভয় পাচ্ছে। শারমিন দুই হাতে মুখ ঢেকে রেখেছে।লজ্জায় নাকি ভয়ে তা বুঝতে পারছি না। তায়াং ভাইয়া তন্বীকে আশ্বস্ত গলায় বললো,
— আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। রওনককে আমি অনেক আগের থেকে চিনি। তোর যদি ওকে পছন্দ হয় তাহলে হ্যাঁ বলে দে। পছন্দ না হলে না বলে দিস। আমি কিছু বলবো না। শারমিন তোমাকেও এক কথাই বলি। তওহিদও ভালো ছেলে। আমার প্রত্যেকটা বন্ধু ছেলে হিসেবে বেস্ট। এটা আমি চোখ বন্ধ করে বলতে পারি। এবার কি ডিসিশন নিবে তা তোমরাই ভাবো।
আমিও ওদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
— সারাজীবন তোরা সংসার করবি। আমরা নই। তাদের তোদের মনের কথাটাই বলে দে।
সবাই একসাথে চেচিয়ে বলছে, “সে ইয়েস”। এখন দেখার বিষয় ওরা কি বলে।একসময় সবার উৎকন্ঠা শেষ করে ওরা দুজন ইয়েস বলে হাত এগিয়ে দিলো। রওনক, তওহিদ ভাইয়া খুশিতে আংটি পরিয়ে দিয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো। সবাই হৈ-হুল্লোড় করে হো করে চেচিয়ে উঠলাম। আমি ও তন্বী এগিয়ে গিয়ে তায়াং ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম। ভাইয়া দুই হাতে আমাদেরকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। তার চোখে পানি। এনাজ এগিয়ে এসে ভাইয়ার পিঠে চাপর মেরে বললো,
— কাঁদিস না। আজ তো তোর আনন্দের দিন।
রওনকের হাতে তন্বীকে আর এনাজের হাতে আমাকে তুলে দিয়ে ভাইয়া কান্না জড়ানো কন্ঠে বললো,
— আমার দুই বোনকে আমি তোদের হাতে তুলে দিলাম। এদেরকে এখন আগলে রাখার দায়িত্ব তোদের।
আমি মন খারাপ করে ভাইয়াকে বললাম,
— ভাইয়া নূর আপিকে নিয়ে আসতি। সবাই ছিলো শুধু আপি ছাড়া। আপিকে অনেক মিস করছি আমি।
ভাইয়া বললো,
— আমি জানলাম সকালে এতকিছু। এর আগে এনাজ কিডন্যাপের প্ল্যানটা আমাকে বলেছিলো। কিন্তু খেয়াল ছিলো না। এদিকে সব জোগাড় করতে গিয়ে আর সময় হলো না। নয়তো ওকে নিয়ে আসতাম।
হঠাৎ ঘড়ির কথা মনে হতেই আমি মুখ কুচোমুচো করে এনাজকে বললাম,
—আপনার জন্যও আমার পক্ষ থেকে একটা উপহার আছে। আমার ব্যাগ কোথায়?
এনাজ তায়াং ভাইয়াকে ডেকে বললো,
— ওর ব্যাগ কোথায়?
তায়াং ভাইয়া বললো,
— ছাউনির নিচের মাচায়।
এনাজ দৌড়ে গিয়ে সেখান থেকে আমার ব্যাগ নিয়ে এলো। আমি ব্যাগ থেকে গিফট পেপারে পেঁচানো ঘড়ির বক্সটা বের করে তার হাতে ধরিয়ে দিলাম। সে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
— কি এটা?
— খুলে দেখুন। আচ্ছা এই ট্রলার কোথায় যাবে?
এনাজ গিফট পেপারে ছিঁড়ে বাক্সটা খুলতে খুলতে বললো,
— কোথাও না।
— বুঝলাম না।
— আমরা এই নদীতেই ঘুরবো। সেদিন তো নৌকা চালাতে পারি নি বলে তোমাকে নিয়ে ঘুরতে পারিনি। তাই আজ ট্রলার ভাড়া করেছি। আর সকল সারপ্রাইজ প্ল্যান এখানে করেছি।
এনাজ বক্সটা খুললো।মুখে তার এক চিলতে হাসি ফুটে উঠেছে। চোখ দুটো রসগোল্লা করে আমাকে বললো,
— এটা আমার জন্য?
— জ্বী। পছন্দ হয়েছে?
— হুম অনেক।নাও হাতে পরিয়ে দাও।
আমি ঘড়ি বের করে তার হাতে পরিয়ে দিলাম।এনাজ ঘড়িটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে তার পছন্দ হয়েছে। যাক, আমি স্বার্থক। আমার পছন্দ তার পছন্দ হয়েছে বলে। এসব কিছু রায়হান ভাইয়া ভিডিও করে নিলো।এত সুন্দর মুহুর্তগুলোকে ক্যামেরাবন্দী না করা মানেই বোকামী।শাহেদ ভাইয়া সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— এবার খাবারের পালা শুরু করা যাক। দুপুর তো গড়িয়ে গেছে সেই কবে। পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।
তায়াং ভাইয়া বললো,
— হ্যাঁ, এখন সবাই একসাথে খেয়ে নেই।
এনাজ আমার পাশ থেকে তাদের সামনে গিয়ে বললো,
— চল এবার খাওয়া-দাওয়ার পর্বটা শেষ করি।
তওহিদ ভাইয়া বললো,
— হাতে হাতে সবাই মিলে সার্ভ করবো। তাহলে তাড়াতাড়ি হবে।
চুপচাপ আমরা গোল হয়ে বসলাম। বিকেলবেলায় আমরা দুপুরে খাবার খাবো। একসাথে হৈচৈ করে চলন্ত ট্রলারে খাবার খেয়ে নিলাম। তারপর সবাই একসাথে বসে রুমাল লুকানো খেললাম। সাথে গানের কলি। আমার ইমরান ভাইয়ার সাথে গান গাইতে হয়েছিলো। ইমরান ভাইয়া গান গাওয়ার থেকে মজা বেশি করেছে। অনেক মজা, হৈ-হুল্লোড় করে সন্ধ্যায় আমাদের ট্রলার নদীর কিনারে থামলো। এবার পালা বাসায় ফিরে যাওয়ার।
আজকের বার্থডে আমার জীবনের স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতে আমার নাতি-নাতনিদের গল্প শুনাবো। তাদের নানা/দাদা আমাকে কিডন্যাপ করে বার্থডে সারপ্রাইজ দিয়েছে। যাওয়ার সময় মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সময় যে এতটা দ্রুত চলে যাবে ভাবতেই পারিনি। বাইকে এনাজকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে স্মৃতিগুলো নিয়ে বাসার দিকে যাচ্ছি। একটা বিকেল আমার কাছে স্বপ্নের মতো লাগলো। কখনও ভাবিনি আমার জন্মদিনটা এতটা আকর্ষণীয় হবে। সাথে এত সারপ্রাইজে ভরপুর। বা হাতের সামনে এনে অনামিকা আঙুলে থাকা আংটিতে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালাম। তারপর আবার এনাজকে জড়িয়ে ধরে পিঠে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
#চলবে