প্রেমানুরাগ পর্ব-৩
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথি
গেস্ট হাউজের বেডরুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনুরাগ নিজের প্রতিচ্ছবির আড়ালে পেছোনের দেয়ালে প্রেমার হাস্যজ্জল ছবির দিকে তাকিয়ে সগোউক্তি করে,
–মিথ্যে অপবাদের কারনে তুমি আমাকে দূরে ঠেলে দিলে। আমাকে একবারো বুঝতে চাইলে না। এতো চেষ্টা করেছি তাও আমাকে একটা কথাও বলার সুযোগ দাও নি। এবার তোমাকে আমি তোমার অনিচ্ছাসত্ত্বে নিজের করে নিবো। আমার প্রেমানুরাগের প্রেম তুমি। ভাগ্য যখন তোমার আমার দেখা এখানে করেই দিয়েছে তো আমি সেই সুযোগ হারাবো না। রাজরানীকে ছাড়া রাজা যে অসম্পূর্ণ!
দরজায় করাঘাতে অনুরাগ দরজা খুলে দেখে এক সারভেন্ট দাঁড়িয়ে। সারভেন্ট অনুরাগকে বলে,
–স্যার, উকিল সাহেব এসেছেন। তাকে বসারঘরে বসতে বলেছি। আপনার অপেক্ষা করছে।
অনুরাগ আচ্ছা বলে সারভেন্টকে যেতে বলে সে বাঁকা হেসে শপিং ব্যাগ থেকে লাল বেনারসিটা বের করে তারপর প্রেমাকে যেখানে আটকে রেখেছে সেখানে যায়।
প্রেমা মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বসে ছিল কোনো উপায় না পেয়ে। অনুরাগ গিয়ে ওর সামনে বেনারসিটা ধরে। প্রেমা দৃষ্টি উঠিয়ে শাড়ীটা দেখে অনুরাগকে দেখে। ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–আমাকে বিয়ে করে আপনার তো কোনো লাভ নেই। আমি একটা সাধারন বাংলাদেশি মেয়ে আর আপনি সুপারস্টার। আপনার জন্য হাজারো মেয়ে ফিদা। অনেক সুন্দরী মেয়ে ও হিরোইন আপনার জন্য স্বপ্ন বুনে। ওদেরকে বেছে নিন। আমাকে প্লিজ ছেড়ে দিন।
অনুরাগ প্রেমার মুখের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে ঘোর লাগানো কন্ঠে বলে,
–কিন্তু আমি যে তোমাতে আসক্ত। তোমার প্রেমময়ী হাজারো অভিযোগে মত্ত! তোমাকে আমি দ্বিতীয়বার হারাতে চাই না। তুমি মানো না মানো আমার প্রেমানুরাগে শুধু তুমি। আমার ভালোবাসাকে তোমার মিথ্যে মনে হয় তা আমি জানি। তোমাকে সত্যের মুখোমুখি করতেই আমি নিজের করবো রাজরানী!
হতাশ হয় প্রেমা। সে জানে আজ তার বিয়ে হবেই। সেও তো ভালোবাসে কিন্তু ভয় হয়। এক বছর আগে যেভাবে তার হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল তা শুধু সেই জানে। অন্যরা তো শুধু কাহিনী খুঁজে!
ফ্লাসব্যাক,,______
প্রেমা পড়ালেখা করে অবসর সময় পেলেই গান, মুভি, ফেসবুক এসব নিয়ে পড়ে থাকে। সেলিব্রেটিদের উপর ক্রাশিত হওয়া যেনো ওর নিত্যকার কাজ। কিন্তু প্রেমার সবচেয়ে পছন্দ নবাগত সুপারস্টার অনুরাগ খানকে। অনুরাগ খান তখন একটা মুভি করেই প্রচুর হিট করেছে।কোনো রিয়েলেটি শো থেকে সে আসেনি। সে এসেছে বংশ পরম্পরায়। অনুরাগ খানের বাবা সাহিল খান একজন নামকরা মুভিস্টার ছিলেন। এখন সে পরিচালক। সাহিল খান নিজের ছেলেকেই মুভিতে প্রোমোট করেছে। ছেলে তার ইংল্যান্ড থেকে আর্কিটেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করে ইন্ডিয়াতে আসার পরেই সে মুভিতে ছেলেকে প্রোমোট করেছে।
অনুরাগের ইচ্ছা ছিল না নায়ক হবার। নায়ক ও নায়িকাদের নিয়ে অনেক মিথ্যা তথ্য ছড়ায় মিডিয়াতে। এসব করে সাংবাদিক আর পত্রিকা অফিসরা নিজেদের নাম কামায় আর ইমেজ নষ্ট হয় নায়ক ও নায়িকাদের। তার বাবাকে নিয়েও বের হয়েছিল আর সেটার যের ধরে ওর বাবা-মায়ের ডিভোর্স হতে হতে হয়নি। তাই অনুরাগ চায়নি অভিনয়ে ক্যারিয়ার গড়তে। কিন্তু বাবার আবদারে সে মানা করতে পারেনি। ফেসবুকে অফিসিয়াল পেজ তো খুলে দিয়েছে কিন্তু সেটাতে খুব কম যায় সে। অনুরাগের মা বাঙালী তাই অনুরাগ বাংলা, হিন্দি দুই ভাষাতেই পারদর্শী। কিন্তু অনুরাগের রিয়েল আইডি যেটাতে সে গুটি কয়েক বন্ধু ছাড়া আর কাউকে রাখেনি সেটা সে পাবলিক করেনি।
প্রেমা অনুরাগের উপর এতোটা ক্রাশিত যে সাথের কো-একট্রেস কেও তার হিংসে হতো তার। অনুরাগের অফিশিয়াল পেজে কোনো ছবি বা স্ট্যাটাস দিলে প্রেমা খুব সুন্দর করে গুছিয়ে মন্তব্য করতো।
অনুরাগ যখনি নিজের পেজে যেতো তখন প্রেমা হাসান মৌ নামের এক আইডি থেকে সুন্দর ও গঠন মূলক মন্তব্য দেখে তার ভালো লাগতো। কৌতুহলবশত সে প্রেমার আইডিতে গিয়ে প্রেমার সব পোস্ট সব কিছু চেক করে তার ভালো লাগে। প্রেমা ফর্সা না হলেও প্রেমার হাসি নজরকারা সাথে হরিণির মতো টানা চোখ। হাসলে যেনো চোখও হাসে। অনুরাগ নিজে প্রেমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দেয়। প্রেমা প্রোফাইলে অনুরাগের ছবি দেখে নাচতে নাচতে একসেপ্ট করে। অবশ্য অনুরাগ নিজের ইউনিভার্সিটি লাইফের সব হাইড করে রেখেছে। অনুরাগ খানের নামে তো অনেক ফেইক আইডি। সেরকমই একটার পরিচয় দিয়েছে। প্রেমার সাথে কথা বলে প্রতিদিন টুকটাক। ওদের সব কথা অনুরাগ খানকে নিয়ে। প্রেমা নিজের বন্ধুদেরো বলে না এ বিষয়ে। অনুরাগ প্রথমে সবার মতো নিজেকে অনুরাগ খানের পরিচয় দিয়েছে কিন্তু এতো ফেইক আইডির মধ্যে যে কেউ বলবে সে অনুরাগ খান! তাই প্রেমাও ধরে নিয়েছে এটা ফেইক। তারপর অনুরাগ বলেছে সে অনুরাগ খানের বিশাল পাঙ্খা! এটা বলার কারন, অনুরাগ মনে করে,
” নিজেকে যদি নিজে ভালোবাসতে না পারি তবে কেউ ভালোবাসবে না। আগে নিজেকে নিজে ভালোবাসো তারপর অন্যরাও তোমাকে ভালোবাসবে। নিজের করা প্রতিটা কাজ নিজের কাছে প্রিয় হতে হয়, নাহলে হতাশাগ্রস্থ হতে দেরি লাগে না।”
তাই অনুরাগ নিজেকে নিজের বড় ফ্যান বলে পরিচয় দিয়েছে। এতে সে মিথ্যাও বলেনি কিন্তু পুরো সত্যটাকে আড়াল করার জন্য যথেষ্ট। প্রেমার প্রতিটা মেসেজিং এর ধরন অনুরাগকে বুঝিয়ে দেয় প্রেমা অনুরাগকে অনেক পছন্দ করে। সেলিব্রেটি বলে সেটাকে অতোটা প্রকাশ করেনা।
বিপত্তি ঘটে তখন যখন অনুরাগের দ্বিতীয় ছবির কো-একট্রেস সুহানা দেশাই এর সাথে মিথ্যে সম্পর্কের কথা মিডিয়াতে রাঙিয়ে ছড়ানো হয়। ভাইরাল হয়ে যায় খবরটা। আসলে সুহানা নবাগত অভিনেত্রী। ওর হয়েই কিছু লোক পাবলিসিটি বাড়ানোর জন্য এই কাজটা করে। ফেসবুক, ইন্সট্রা, টুইটার, ইউটিউব সব জায়গাতে এসবের মিথ্যে তথ্য ও নোংরা ভিডিও ভাইরাল হয়। সবাই ধরে নেয় ওদের সম্পর্ক আছে আর শিগ্রই বিয়ে হবে। অনেক তরুণীর মন ভাঙে। প্রেমা তখন অনেকটা ভেঙে পড়ে। এতোদিন অনুরাগ খানের প্রেমে পড়ে গেছে সে।
অনুরাগ এসব বিষয়কে গুজব বলে উড়িয়ে দেয় কিন্তু প্রেমার মন থেকে সরাতে পারেনি। প্রেমা এখন যাকে ফেইক অনুরাগ মনে করে তার সাথেও কথা বলে না। অনুরাগের এসব সহ্য হয় না। সেও তো প্রেমাকে নিজের রাজরানী করতে চায়।
অনুরাগ প্রেমাকে নিজের আসল পরিচয় দেয়। প্রেমা বিশ্বাস না করলেও যখন অনুরাগ তার ইন্সটিটিউটের বায়োডাটা ও পুরোনো পোস্ট সিলেক্টেড ফ্রেন্ড করে তখন প্রেমা অনুরাগকে যা তা বলে ব্লক করে দেয়। প্রেমার চোখে,
“সেলিব্রেটি মানেই এদের জীবনটা নাটকিয়। হাজারটা মেয়ে ব্যাবহার করে। একজনে এরা থিতু হয় অনেক পরে।”
একরাশ ঘৃণা মনে নিয়ে প্রেমা অনুরাগকে নিজের জীবন থেকে সরায়।
ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড,,_____
অনুরাগ প্রেমার সব বাঁধন খুলে দিয়ে নিজে ধরে দাঁড়া করায়। টানা সাড়ে পাঁচ ঘন্টা বসে থেকে কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছে। এখন দাঁড়াতে কষ্ট হচ্ছে। অনুরাগ প্রেমাকে আচানক কোলে তুলে নেয়। হকচকিয়ে যায় প্রেমা। নামাতে বললেও ঘারত্যারা অনুরাগ নামাবে না। তার জন্যই যেহেতু এতো কষ্ট হয়েছে তো খেয়ালটাও সে রাখবে।
অনুরাগ প্রেমাকে নিজে যে রুমে থাকছে সেই রুমে নিয়ে যায় তারপর ফিমেইল সার্ভেন্টদের বলে প্রেমাকে লাল বেনারসিতে রাঙিয়ে বউ সাঁজাতে। প্রেমা সবটাতে নির্বিকার। সে জানে অনুরাগ নিজে যা চাইবে তাই করবে। বাঁধা দিতে চাইলেও পারবে না। আর এখান থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই। এতো গার্ড যে সব বন্ধ। তবে মেয়ে সার্ভেন্ট গুলা যদি সাহায্য করে তো করতে পারে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
ঘটনা প্রবাহ কাল্পনিক।
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। আমার তিন দিনের নবজাতক চাচাতো ভাইটাকে সময় দিতে গিয়ে বড় করে লিখা হচ্ছে না।