প্রেমানুরাগ পর্ব-৭
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথি
–এই তোর সাথে ছেলেটা কে রে? বোটে তুই কার সাথে উঠেছিলিরে?
প্রেমা থতমত খেয়ে যায় ইশার কথায়। রিভার র্যাফটিং এর সময় অনুরাগের সাথে তোলা ছবি এটা। কালকেই অনুরাগের থেকে প্রেমা নিয়েছে। ছবিতে অনুরাগের মুখ বোঝা যায় না। প্রেমার মুখ কিছুটা বোঝা যায়। প্রেমাকে চুপ থাকতে দেখে প্রিয়াও বলে,
–বলো আপু। তুমি কার সাথে উঠেছিলে?
প্রেমা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
–শান্তর সাথে। বাকিরা এক বোটে আর আমি ও শান্ত অন্য বোটে।
ইশা সন্দেহের সুরে বলে,
–তোর আর শান্তর কি কিছু চলছে? না মানে এভাবে জড়িয়ে আছে যে?
প্রেমা এবার কি জবাব দিবে ভেবে পাচ্ছে না। ইশা প্রেমার মুখ চোখ দেখে আর কিছু জিজ্ঞাসা করেনা। কথা কাটিয়ে দেয়। প্রেমাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। প্রিয়াকে ঘুমাতে বলে ওরাও শুয়ে পড়ে। প্রিয়া ঘুম কাতুরে তাই জলদি ঘুমিয়ে পরে। প্রিয়া ঘুমানোর পরেই ইশা প্রেমাকে শোয়া থেকে টেনে উঠিয়ে বলে,
–এবার বল। শান্তর সাথে কি তোর রিলেশন চলে?
প্রেমা আমতা আমতা করে বলে,
–আরে না। এমনেই ফ্রেন্ড হিসেবে তুলেছি।
ইশা বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে। প্রেমা তা দেখে বলে,
–বইন বিশ্বাস কর, আমি শান্তকে ভাইয়ের নজরে দেখি। এবার ঘুমা প্লিজ। অনেক রাত হইছে। রাত ২টা বাজে।
ইশা প্রেমাকে বিছানা থেকে টেনে নামিয়ে ব্যালকনিতে নিয়ে যায়। তারপর বলে,
–সত্য করে বল, ছেলেটা কে? আমার মনে হচ্ছে এটা শান্ত না!
প্রেমা ইশাকে বার দুয়েক বলেও বুঝাতে সক্ষম না হয়ে স্বিকার করে,
–হ্যাঁ, এটা শান্ত না। তবে কে সেটা বলবো না। ওই মানুষটাকে আমি ভালোবাসি।
ইশা এক্সসাইটেড হয়ে বলে,
–তোর ফ্রেন্ড সার্কেলের কেউ? আমি কি চিনি তাকে?
প্রেমা বলে,
–তুই চিনিস তবে সে আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের কেউ না। আর কিছু জিজ্ঞাসা করবি না। সময় হলে আমি বলবো।
ইশা মুখ কালো করে গিয়ে শুয়ে পরে। প্রেমাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।
পরেরদিন,,
সানাফ, প্রিয়ম ও জারিফ সানাফদের বাসায় আসে। প্রিয়া দরজা খুলে দরজা ধরেই থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। তা দেখে প্রিয়ম নিজের বোনের মাথায় চাটা মেরে বলে,
–পেত্নী সর এখান থেকে। না সরলে ভিতরে ঢুকবো কেমনে!
প্রিয়া কপাল কুঁচকে সানাফকে বলে,
–ভাইটু, এই শয়তানের নাতিকে বলো আমাকে পেত্নী না বলতে। আমার মতো সুইট, কিউটকে পেত্নী বলে! তাও অন্য মানুষের সামনে।
শেষের কথাটা মিনমিন করে বলে তবে প্রিয়ম ঠিকই শুনে ফেলেছে। প্রিয়ম বলে,
–ওও! মানুষের সামনে আপনারে পেত্নী বলাতে মান-সম্মানে লাগছে? তাহলে কাল যে তুই আমাকে ওদের সামনে “হুলো বিড়াল” বলছিস? তখন?
প্রিয়া ফুঁসছে। সানাফ তা দেখে ওদের থামানোর জন্য বলে,
–আহ! থাম তোরা। দুই ভাই-বোন সাপ-বেজির মতো লেগেই থাকিস। আর প্রিয়ম, তুই না প্রিয়ার থেকে পাঁচ বছরের বড়! তুই ওরে খেঁপাস বলেইেতো সেও তোরে খেঁপায়।
প্রিয়ম দুঃখ ভরা কন্ঠে বলে,
–তুমি জানো না ভাই, এই পেত্নী আমার পকেট মারে। আমার দুইটা টিউশনি করে জমানো টাকা আমায় কতো লুকুচুরি করে রাখতে হয়।
সানাফ বলে,
–ছোট বোন তাই তোর থেকে টাকা চায়। তুই একটু দিলে কি হয়?
প্রিয়াও কোমড়ে হাত দিয়ে সানাফের সাথে তাল মিলায়। প্রিয়ম ব্যাঙ্গ করে বলে,
–তোমার বোনটা ভদ্র বলে কি এই পেত্নীকেও ভদ্র মনে করো? সে টাকা চায় না। সরাসরি নিয়ে নেয়। আমি কি চাকরি করি নাকি? মাত্র মাস্টার্সে পড়ি। চাকরি কেও দেয় না। টিউশনি দুইটা করিয়ে নিজের হাত খরচ চালাই আর কিছু জমাই।
এদের এতো কাহিনী জারিফ দেখছে তাও ওর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। কাল থেকে সে মনমড়া হয়ে আছে। সানাফ এবার বলে,
–আচ্ছা, প্রিয়া। তুই প্রিয়মের কাছ থেকে টাকা লাগলে চেয়ে নিবি। পকেট থেকে না বলে নিলে তোর ভাই যদি পরে বিপদে পরে?
প্রিয়া মুখ কালো করে আছে। তা দেখে সানাফ বলে,
–এই ধর, এই প্যাকেটটা রাখ।
প্রিয়া প্যাকেটটা খুলে দেখে তাতে দুই হাজার টাকা। প্রিয়া খুশি হয়ে সানাফকে জড়িয়ে ধরে। সানাফ প্রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
–কাল বিয়ের বাজার করে পকেটে বেশি টাকা নাই। এটুকুতে খুশি থাক।
প্রিয়ম ভেঙ্গচি কেটে বলে,
–তাও দেখবা আমার পকেটে হাত দিবেই।
প্রিয়া প্রিয়মকে একটা ঘুষি মেরে নাচতে নাচতে চলে যায়। সানাফ এবার জারিফকে চুপ থাকতে দেখে বলে,
–কিরে? তোর আবার কি হলো? চল ভিতরে চল।
ওরা ভেতরে গিয়ে ড্রয়িংরুমে না বসে সানাফের ঘরেই যায়। জারিফের তো এ বাড়িতে আগে আসা যাওয়া ছিল তাই ফর্মালিটি করেনা।
প্রেমার মা প্রেমাকে বলে, ওদের নাস্তা দিয়ে আসতে। প্রেমার যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না কিন্তু মাকে তো বলতেও পারছে না। প্রেমা তখন অনুরাগের সাথে কানে এয়ারফোন লাগিয়ে কথা বলছে। প্রেমাকে স্বস্তি দিয়ে প্রিয়া এসে নাস্তার ট্রে নিয়ে নেয়। প্রেমার মাও আপত্তি করেনা। বাড়ির মেয়ে তাই আপত্তির কিছু নাই।
প্রিয়া ট্রেটা নিয়ে সানাফের রুমের সামনে গিয়ে একহাতে ট্রে আগলিয়ে আরেক হাত দিয়ে চুল ঠিক করে নেয়। তারপর রুমের ভিতর গিয়ে সবার আগে জারিফের হাতে ট্রে থেকে পায়েসের বাটিটা দেয়। জারিফ বলে,
–এসবের দরকার ছিলো না। আমি সানাফের সাথে এমনিতেই এসেছি। একটু পর আবার বাহিরে যাবো তো তাই।
প্রিয়ম নিজে ট্রে থেকে নুডুলসের বাটি নিয়ে বলে,
–আরে ভাই, এই মেয়ে এতো খাতিরদারি করছে তো নিয়ে নেন। বাসায় মেহমান আসলেও একে দিয়ে আম্মু কিচ্ছু করাতে পারেনা সেখানে এই মেয়ে আপনাকে এসে পায়েসের বাটি এগিয়ে দিচ্ছে! ভাবা যায়!
সানাফ ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে বলে,
–ও একটু কাজ করছে তাও তোর ভালো লাগে না? ভাইয়ের বিয়ে তাই সে টুকটাক করছে।
প্রিয়ম বলে,
–সন্দেহজনক! প্রেমা ও ইশাও তো আছে।
প্রিয়া ভাব নিয়ে বলে,
–প্রেমাপু ফোনে কথা বলছে তাই আমি আনছি। এখন জেঠিমার কষ্টের কথা চিন্তা করলেও দোষ হয়ে যায় দেখছি!
জারিফের আবারো মনটা খারাপ হয়ে যায়। প্রিয়ম নুডুলসের খালি বাটি রেখে বলে,
–কেন? ইশা কই?
প্রিয়া বলে,
–ইশাপু মাত্র নুডুলসটা বানালো। তাই ভাবলাম এতো কাজ করলো তো আমিই নিয়ে আসি।
প্রিয়ম খুশিতো গদগদ হয়ে বলে,
–এজন্যই নুডুলসটা আজকে অন্যরকম লাগলো। স্বাদটা দারুন। তুই বানালে তো মুখে দেওয়া যেতো না। খালি পানিতে মশলা দিয়ে সিদ্ধ করে আর ডিম পোস করে খাস।
প্রিয়া ভেঙচি কেটে জারিফের দিকে তাকিয়ে বেশ খুশি মনে বলে,
–পায়েসটা কেমন হয়েছে?
জারিফ মুখে হাসি নিয়ে বলে,
–বেশ ভালো হয়েছে।
প্রিয়ম পায়েসের বাটিটা নিতে যাচ্ছিলো। প্রিয়ার এই প্রশ্নে সে পায়েসের বাটি না নিয়ে প্রিয়াকে বলে,
–এমন ভাবে বলছিস যেনো পায়েস তুই রান্না করেছিস? তাহলে বাবা আমি খাবো না! জারিফ ভাই হয়তো লজ্জায় বলতে পারছে না।
জারিফ প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
–না, পায়েসটা ভালো হয়েছে। খাও।
প্রিয়া ভাব নিয়ে বলে,
–না আমি বানাইনি তবে পায়েসের মাঝে এই বাদাম গুলো আমি কেটেছি আর কিশমিশ গুলা ধুয়ে দিয়েছি।🤗
প্রিয়ম বেক্কলের মতো প্রিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বাদাম ও কিশমিশের কারনে সে এমন ভাবে বলে বেড়াচ্ছে! তাহলে পায়েসটা বানালে কি করতো!
প্রিয়া লাজুক হেসে চলে যায়। সানাফ এসে প্রিয়মের কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলে,
–বেশি সেন্টি খাস না। পরে বলতে পারে, আপেল গুলাও ও কেটেছে!
প্রিয়ম আপেলের পিস গুলার দিকে তাকিয়ে খাওয়ার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলেছে। জারিফ ও সানাফ প্রিয়মের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে শেষ।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি করবেন না।