#শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
Part_53
#Writer_NOVA
সকালবেলা সারা ছাদে এদিক থেকে ঐদিকে পায়চারি করছি। গতরাতে যা শুনেছি তাতে আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। সকালবেলা থেকে মাথাব্যথা উঠে গেছে। তাতেও আমার এখন ভ্রুক্ষেপ নেই। মাথাব্যথার থেকে বেশি টেনশন আমাকে ঘিরে ধরেছে। কাপের বদলে কড়া লিকারের এক মগ চা খেয়েছি। কপালে এক হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। কি করবো, কি হবে, কোথায় যাবো? কিছু বুঝতে পারছি না।
— বউ!
— ও ভাবী কি করো?
দুই পুঁচকের সুর পেয়ে নিজের কপালে জোরে একটা চাপর মারলাম। এমনি আমি টেনশনে শেষ। এই দুটো এসেছে আমাকে আরো জ্বালাতে। চোখ দুটো ছোট ছোট করে ওদের দিকে তাকালাম। দুজন মুখে শয়তানি হাসি রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
— এই তোরা এখানে কি করিস? সকালে ওঠে পড়াশোনা না করে ছাদে কি তোদের?
— তুমি কাকে বলো ভাবী? তুমি নিজেও তো পড়াশোনা না করে ছাদে ঘুরছো। আমাদের বলো কেন?
— এই সিফাত একদম মুখে মুখে কথা বলবি না। নয়তো অনেক খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু।
আমাকে রাগতে দেখে ইফাত মিষ্টি সুরে বললো,
— রাগো কেন বউ? সামনে বার্ষিক পরীক্ষা বলে কি আমরা তোমাকে আগের মতো ডিস্টার্ব করি বলো তো? তুমি জানো আব্বু কি বলছে?
— যা বলার বলছে। এখন আমার সামনে থেকে যা তো। তোদের সাথে ফালতু পেচাল পারার সময় নেই আমার। মাথা টেনশনে ফেটে যাচ্ছে আমার। এর মধ্যে এরা এসেছে ঢং-এর পেচাল নিয়ে।
— বউ শুনো না। আব্বু কি বলছে একটু শুনো?
মুখটাকে বাংলা পাঁচের মতো করে ইফাতের দিকে তাকালাম। তারপর কাঠ কাঠ গলায় বললাম,
— হুম বল।
আমি অনুমতি দেওয়ায় ইফাত খুশি হয়ে গেলো। আমার সামনে এসে খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
—আব্বু বলছে বার্ষিক পরীক্ষায় আমি যদি প্রথম হই তাহলে তোমার সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। তুমি আমার বউ হয়ে যাবে। নুবা শুধু ইফাতের।
— আমার নাম নোভা নট নুবা🤦♀️।
— কি হলো বউ?
— ইফাত এদিকে আয়।
— পাপ্পি দিবা?
আমি রেগে বললাম,
— তুই আগে এদিকে আয়।
— না, তুমি মারবা।
— ঐ কোণার থেকে ইটটা নিয়ে আয়। তারপর জোরে একটা আমার মাথায় বারি দে। আমি মইরা যাই। ভাই আমি বাঁইচা আছি কেন? আমারে মাইরা ফালা।এতো ঝামেলা ভালো লাগে না।
— তুমি এসব কি বলো বউ🥺?
— আরেকবার বউ বললে আমার মাথায় আমি নিজেই ইট দিয়ে বারি দিবো। আমি আর বেঁচে থাকতে চাই না। এত জ্বালা ভালো লাগে না আমার।
সিফাত মুখ আটকিয়ে হেসে বললো,
— তুমি মরে গেলে আমার ভাইয়ের কি হবে ভাবী?
— ভালো চাইলে চোখের সামনে থেকে সর তো। আমার এত জ্বালাযন্ত্রণা ভালো লাগে না। আমাকে একটু শান্তি দে তো তোরা। আমি হাতজোড় করছি একটু শান্তি দে।
ইফাত আমার সামনে এসে চোখ দুটো টলমল করে বললো,
— এসব কথা বলো না। আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। তুমি ছাড়া আমি বাঁচমু না।
— তোর ভালুপাসার গুষ্টি কিলাই। দূর হো সামনে থেকে। নয়তো তোদের মেরে আমি জেল খাটবো।
সিফাত মুখটাকে সিরিয়াস ভঙ্গি করে বললো,
— কি হয়েছে বলো তো ভাবী? তোমাকে আজ অনেক টেনশনে মনে হচ্ছে।
— কিছু হয়নি। তোর আম্মুর শরীর কেমন? হসপিটাল থেকে আসছে?
— আম্মু ভালো আছে ভাবী। আম্মু আর বাবু দুজনেই ভালো আছে। তাই ১৫ দিন পর যেতে বলছে।
— আলহামদুলিল্লাহ।
ইফাত নাক টেনে চোখের কোণে আসা পানি মুছে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো,
— তোমার কি হইছে বউ? বলো না তোমার কি হইছে? তোমারে কেউ কিছু বললে আমাকে বলো। আমি তার খবর নিয়ে ফেলবো।
— হইছে থাম তুই। দুই আনার মানুষ বারো আনার ডায়লগ দিতে হবে না। এখন দয়া করে আমার সামনে থেকে একটু যা। আমাকে একা থাকতে দে।
সিফাত কনুই দিয়ে ইফাতকে খোঁচা মেরে ফিসফিস করে বললো,
— ভাবীর মুড ভালো না ভাইয়া। চলো এখান থেকে চলে যাই। নয়তো ধাওয়া দিবে। তুমি তো খাবেই সাথে আমাকেও খাওয়াবা।
ইফাত জোর গলায় বললো,
— আমার বউকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না।
আমি কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
— সত্যি তুই এখন যাবি না?
— না যাবো না।
— ভালো করে জিজ্ঞেস করছি যাবি কিনা বল?
— যাবো না।
— তুই যাবি না তোর ঘাড়েসুদ্ধ যাবে। তুই শুধু একটু দাঁড়া।
আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে ছাদের কোণা থেকে একটা ইট নিয়ে ওদের পেছন ধাওয়া করতেই সিফাত, ইফাতকে টেনে দরজা দিকে দৌড়ালো। আমি একবার ইটের দিকে তাকিয়ে মৃদু করে আমার কপালে দুটো বারি দিলাম। ঠাটিয়ে দুটো দিয়ে যদি নিজের পোড়া কপালটাকে পুরোপুরি ভেঙে ফেলতে পারতাম তাহলে বোধহয় একটু শান্তি পেতাম।
💖💖💖
দুপুরে…..
খাবার টেবিলে গোল হয়ে সবাই বসে আছি। এনাজ, তায়াং ভাইয়া, তন্বী আমি একপাশে বসেছি। আরেকপাশে দাদী, খালামণি বসেছে। এনাজ জোহরের নামাজের পর এখানে চলে এসেছে। আমি খাবার না খেয়ে প্লেটে আঁকিবুঁকি করছি। আসলে খাবার আমার গলা দিয়ে নামছে না। খালামণি তা খেয়াল করে বললো,
— কি রে তোর কি হয়েছে? তুই খাচ্ছিস না কেন?
আমি কিছুটা থতমত খেয়ে বললাম,
— কই খালামণি? আমি তো খাচ্ছি। তুমি খেয়াল করোনি।
— দেখছি তো কি খাচ্ছিস!
দাদী গ্লাসে পানি ঢেলে কিছুটা পানি খেয়ে বললো,
— নাতনী বিয়ের চিন্তায় খাওয়া ভুলে গেছে। আরে চিন্তা করো না সতিন তার ব্যবস্থা করে ফেলছি।
আমি চমকে তার দিকে তাকাতেই আমার সাথে সাথে তন্বী, তায়াং ভাইয়া ও এনাজও তাকালো। তন্বী ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
— কি বলছো তুমি দাদী?
— ওহ তুই তো কিছু জানিসই না তনিমা। দাঁড়া আমি সবাইকে বলছি।
এনাজ আমার দিকে বিস্মিত চোখে তাকালো। আমি জোর করে মুখে হাসি টেনে নিচের দিকে নজর দিলাম। তায়াং ভাইয়া বললো,
— কি এমন কথা গো ডার্লিং?
— বলছি, বলছি।
এনাজ চোখে, মুখে বিস্ময়ভাব রেখে দাদীকে বললো,
— মনে হচ্ছে খুব সিরায়াস কথা।
— অনেকটা তাই গো আমার দুই নাম্বার জামাই।
আমি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে চুপ করে রইলাম। দাদী কথাটা বলার পর যে কি হবে তা আল্লাহ মালুম। আমার হাত-পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে। একবার তায়াং ভাইয়ার মুখের দিকে আরেকবার এনাজের মুখের দিকে তাকালাম। দাদী কিছু সময় থেমে বললো,
— তানভীরের সাথে আমি নোভার বিয়ে দিতে চাই। বাঁচবো আর কয়দিন। তাই বড় নাতীর বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিবো। যাতে তোদের ঘরের ছেলে-মেয়ে দেখেই মরতে পারি।
আমি তায়াং ভাইয়া ও এনাজের রিয়েকশন দেখার জন্য তাদের দিকে তাকালাম। দুজনের মুখ নিমিষেই রাগে লালবর্ণ ধারণ করলো। আমি জানতাম এমন কিছুই হবে। গতকাল রাতে তো আমি এই কথা শুনেই কোমায় যেতে যেতে ফিরে এসেছি। গতকাল রাতে তাদের ডাকতে গিয়ে আমি রুমের সামনে গিয়ে আমার ও তায়াং ভাইয়ার বিয়ের কথা বলতে শুনেছি। কিন্তু এখন কি হবে? দাদী আবার বললেন,
— নোভার বাবা-মায়ের সাথে সকালে কথা বলা আমার শেষ। তারা দু-একদিনের মধ্যে আসবে। তারা আসলে ঘরোয়াভাবে এই সপ্তাহেই দুজনকে বিয়ের সুতোয় বেঁধে দিবো। তারপর না হয় নোভার পড়ালেখা শেষে বড় করে অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে আনবো।
তায়াং ভাইয়া জোরে চেয়ার টেনে উঠে বেসিনের কাছে চলে গেল। হাত ধুয়ে এক মিনিটও দেরী করলো না। নিজের রুমে চলে গেল। এনাজও খাবার ছেড়ে উঠে গেলো। হাত ধুয়ে গটগট পায়ে বাসার বাইরে চলে গেল। দাদী, খালামণি একে অপরের দিকে তাকিয়ে দুজনের যাওয়ার পানে অবাকভাবে তাকিয়ে রইলো।
দাদী বললো,
— কি হলো তানভীরের মা?
— আমিও তো বুঝলাম না মা।
তন্বী বিস্মিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আমি এক দৃষ্টিতে সামনের পানির জগের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এমনটাই হওয়ার ছিলো। একটু পর ভাইয়ার রুম থেকে ভাংচুরের শব্দ আসবে। আর আমার ওপর দিয়ে একটা বিশাল ঝড় যাবে।তন্বী আমাকে খোঁচা মেরে মিনমিন করে বললো,
— কি হচ্ছে এসব নোভাপু?
আমি ওর দিকে মলিন চোখে তাকিয়ে বড় করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। মাথা আমার ভনভন করে ঘুরছে। চোখ মুখে অন্ধকার দেখছি। আমি বোধহয় এই যাত্রায় পটল তুলবো। এরপরের কাহিনিগুলো এত দ্রুত ঘটলো যে আমি পুরো স্তম্ভ হয়ে রইলাম। চোখের পলকে একেকটা ঘটনা ঘটতে লাগলো। বিয়েটা হলে চারটা জীবন নষ্ট। আমি তো তা হতে দিতে পারি না। কিন্তু বিয়েটা আটকাবো কি করে? এখন নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। কেন যে গতকাল বিয়ের জন্য লাফালাম। নিজের কপাল নিজেই পুড়েছি। এখন ভালোই ভালোই বিয়ে ভাঙতে পারলেই আমি বাঁচি।
#চলবে
দয়া করে কেউ ছোট বলে চেঁচাবেন না। টেনেটুনে ১১০০+ শব্দ লিখছি।কি দিয়ে কি লিখছি তাও জানি না। দুই দিন ধরে আমি কিসের মধ্যে আছি আমিই ভালো জানি। লেখার জন্য একটু সময়ও পাই না। তার মধ্যে ইদানীং লেখার ওপর থেকে মন পুরো উঠে গেছে। বোনাস চেয়ে লজ্জা দিবেন না। যেখানে এক পর্ব লিখতে আমার সময় হয় না সেখানে বোনাস চাওয়া পুরোই বিলাসিতা। আরেকটা কথা আগামীকাল গল্প পাবেন না। তাই কেউ অপেক্ষা করে থাকবেন না। আমি আগামীকাল একটু ব্যস্ত থাকবো।