শিশির_ভেজা_রোদ্দুর
Part_62
#Writer_NOVA
(নিচের কথাগুলো পড়ার জন্য অনুরোধ রইলো)
—এক্সকিউজ মি! হেই মিস!
ভাইয়ার বিয়ের দুই দিন পর কলেজে এসেছি।বাসার সব ঝামেলা এর মধ্যে শেষ হয়েছে।কলেজের ভেতরের রাস্তায় একা দাঁড়িয়ে আছি। তন্বী, শারমিন ওয়াসরুমে গেছে। আমি ওদের সাথে যাবো না বলে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ পেছন থেকে একটা ছেলের কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম৷ হাই লেভেলের গেটআপে একটা ছেলে দৌড়ে আমার দিকে এগিয়ে আসেছে। ছেলেটা কে এক দেখায় আমার কাছে ভাব ওয়ালা ছেলে মনে হলো। আমি তার দিকে তাকিয়ে ক্ষীণ গলায় বললাম,
— আমাকে বলছেন?
— জ্বি মিস আপনাকেই। আপনাকে ছাড়া অন্য কোন মেয়ে তো দেখতে পাচ্ছি না। ছেলেরা তো আর মিস হয় না।
— জ্বি বলুন।
— যুবরাজ ভাইয়াকে কোথায় পাবো বলতে পারেন?
— ইউভি ভাইয়া?
— হ্যাঁ, উনিই। যুবরাজ বললে চিনে না কেউ।
— তাকে সবাই ইউভি বলে ডাকে।
— তাকে কোথায় পেতে পারি?
— আমি জানি না। তাদের খবর আমি রাখি না।
— ওহ আচ্ছা। আপনি তো এটা বলতে পারবেন যুবরাজ ভাইয়ার খবর কার কাছ থেকে পেতে পারি?
— আপনি রওনক ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করুন।
— রওনক কে?
— যুবরাজ ভাইয়ার বদলে রওনক ভারপ্রাপ্ত ভিপি পদে আছে। সে বলতে পারবে যুবরাজ ভাইয়া কোথায় আছে। তবে এই রওনককেও একটু খুঁজে নিতে হবে। এই ছেলে সারাদিন টো টো করে ঘুরে। কোথাও দুদণ্ড শান্তিতে বসে থাকে না।
— ওহ আচ্ছা আপনি মেবি রনোর কথা বলছেন।
— রণো কে?
— রওনককে আমরা সংক্ষেপে রনো বলি।
— ওহ্ আমি জানতাম না।
—ইটস ওকে। সবাই তো আর সবকিছু জানে না। এখন বলুন ওকে কোথায় পেতে পারি?
— এই রাস্তা দিয়ে বরাবরি গেলে দোতালা একটা ভবন দেখতে পাবেন। সেখানে ওদের মিটিং রুম আছে। সেখানে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করলে আপনাকে বলে দিবে।
— Thanks
—😊😊
মন ভালো ছিলো বলে এত প্যাচাল পারলাম। নয়তো ত্যাড়া কথা বলে বেচারার মেজাজ খারাপ করে দিতাম।সে চলে যেতেই আমি ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে ফেসবুক ওপেন করলাম। ছেলেটা কিছু দূর গিয়ে আবার ফিরে এলো। দুই হাত কচলাতে কচলাতে কুচোমুচো হয়ে বললো,
— আমার নাম আবির। আপনার নামটা কি জানতে পারি? যদি আপনার কোন সমস্যা না হয়।
আমি মোবাইল থেকে চোখ উঠিয়ে, কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
— আমার নাম জেনে কি করবেন?
— না, উপকার করলেন। পরবর্তীতে যদি আপনার ঋণ শোধ করার কোন সুযোগ পাই।
— এই সামান্য ঋণ শোধ করতে হবে না মিস্টার চবির সরি আবির।
— ওকে।
আবির মাথার পেছনের চুল ঝাড়তে ঝাড়তে সামনে এগিয়ে গেলো। পেছনে তাকিয়ে একটা রহস্যময় হাসি দিলো।ওর হাসি দেখে ভ্র জোড়া কুঁচকে গেলো। ছেলেটাকে এতখন ঠিক মনে হলেও এখন সুবিধার মনে হচ্ছে না। ছেলেটা কি ইচ্ছে করে সাহায্য চাওয়ার ভান করলো? নাকি সত্যি সাহায্য চাইলো? রওনককে চিনলে এটা কি জানে না ও এই কলেজের ভিপি? নাহ, এখন তো ছেলেটাকে অনেক বেশি সন্দেহ হচ্ছে আমার। নিশ্চয়ই এর মাঝে ঘাপলা আছে। নয়তো সামনে এক দল ছেলে দাঁড়িয়ে ছিলো তাদের জিজ্ঞেস না করে আমাকে কেন জিজ্ঞেস করলো? এতকিছু তো আমার মাথায় খেলেনি। কথায় আছে না চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। আমারও হয়েছে সেম দশা। ছেলেটা চলে যাওয়ার পর একে একে সব মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
— কি রে নোভা কোন দুনিয়ায় আছিস তুই?
শারমিন দুই বাহু ঝাঁকিয়ে আমাকে কথাটা জিজ্ঞেস করতেই আমার হুশ ফিরলো। আমি কিছুটা চমকে বললাম,
— কি কিছু না। এত দেরী হলো কেন?
— আর বলিন না। ওয়াসরুমে যা ভীড়।
— ক্যান্টিনে যাবি?
তন্বী আমার এক হাত ধরে অনুরোধের সুরে বললো,
— না ক্যান্টিনে যাবো না। চলো ফুচকা খেতে যাই।
শারমিনও তন্বীর কথার রেশ ধরে বললো,
— হ্যাঁ, চল। অনেকদিন ধরে ফুচকা খাওয়া হয় না। আজ ফুচকা খেতে যাই।
আমি মাথা থেকে আবিরের বিষয়টা ঝেড়ে ফেলে সিরিয়াস ভঙ্গিতে ওদের বললাম,
— ওকে চল তাহলে।
তিনজন একসাথে হাঁটতে লাগলাম। এখন অফ পিরিয়ড। সেই সুবাদে বাইরে ঘুরছি। ওরা দুজন হাসি-ঠাট্টা করতে লাগলো। ওদের সাথে আজ আমিও যোগ দিলাম। হাসির পাল্লায় পরে আবিরের কথা ওদেরকে বলতে বেমালুম ভুলে গেলাম। শারমিন হাসি থামিয়ে আমাকে খোঁচা মেরে বললো,
— কিরে তোর বিয়ের খবর কি? সব তো পাকা এখন। তাহলে দেরী কেন?
— ডিসেম্বরের শেষ দিকে বিয়ে।
— এত দেরী কেন?
— সব দিক বিবেচনা করে শেষ দিকে দেওয়া হয়েছে।
— এখন নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়। তার মানে তোর বিয়ের আরো দেড় মাস বাকি। তোর আব্বু না বলেছিলো দুই সপ্তাহের মধ্যে দিয়ে দিবে।
— তোকে কে বললো?
শারমিন লাজুক হেসে ভ্রু-এর কাছটা চুলকে বললো,
— তওহিদ।
তওহিদের কথা শুনে আমি মুচকি হাসলাম। কিন্তু তন্বী বিস্মিত চাহনি দিয়ে চোখ কপালে তুলে বললো,
— ঘটনা কি শারমিন আপু? হাবভাব তো আমার ভালো ঠেকছে না। তওহিদ ভাইয়ার সাথে আজকাল তোমার বেশ কথা হয় দেখছি। ডুবে ডুবে জল খাওয়া হচ্ছে বুঝি?
শারমিন তন্বীর পিঠে দুম করে একটা কিল বসিয়ে দিয়ে বললো,
— বেশি বুঝিস কেন?
— আমি বেশি বুঝছি না শারমিন আপু। যেটা সঠিক সেটাই বুঝছি।
— জ্বি না। তেমন কিছু না।
— তাহলে কেমন কিছু?
আমি হাত উঁচিয়ে দুটোকে থামিয়ে বললাম,
— এবার থাম তোরা। রাস্তার মধ্যে কি শুরু করেছিস? মানুষ দেখলে খারাপ বলে।
শারমিন বললো,
— বললি না বিয়ে এত পিছালো কেন?
— কি আর বলবো বল? আম্মু স্কুলে চাকরি করে। আমার বিয়েতে না হলে ৭ দিন ছুটি নিতে হবে। তাতেও হবে কিনা সন্দেহ। আব্বু তো সহজে ছুটি পায় না। এখন বিয়ে হলে অনেক আত্মীয়-স্বজন আসতে পারবে না। সামনে তাদের বাচ্চাদের পরীক্ষা। তাই সবদিক বিবেচনা করে ডিসেম্বরের শেষে ফেলা হয়েছে। ঐ সময় সবারি পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। শীতকালীন ছুটি থাকবে। আমাদের যে ডিসেম্বরে একটা সেমিস্টার আছে তা কি ভুলে গেছিস তুই? এখন বিয়ে হলে পাক্কা আমি সেমিস্টারে খারাপ করবো।এনাম ভাইয়ারও এই মাসের শেষ দিকে এক্সাম আছে। মাত্র একটা দেবর আমার। এনাজের আপন বলতে শুধু এনাম ভাইয়াই। উনি যদি বিয়েতে না থাকতে পারে তাহলে কি কারো ভালো লাগবে বল? তাই ডিসেম্বরের শেষ দিকেই ঠিক আছে। কারো কোন এক্সাম থাকবে না, কব্জি ডুবিয়ে বিয়ের খাবার খাবে।
তন্বী মুখটাকে শুকনো করে বললো,
— সেই সময়ে কনকনে ঠাণ্ডা থাকবে। গ্রামে যেই শীত। তোমার অনুষ্ঠানে আমাকে গায়ে কম্বল জড়িয়ে বসে থাকতে দেখবে। সামাদ ভাইয়ার বিয়ের সময় হালকা শীত ছিলো। তাতেই আমি ভয়ে ভয়ে ছিলাম সর্দি-কাশি তে পায় নাকি। এখন কি হবে আল্লাহ মালুম।
আমি শারমিনকে বললাম,
— তোর কিন্তু গায়ে হলুদের আগের দিন যেতে হবে।
শারমিন নিরাশ কন্ঠে বললো,
— দেখ আমাকে শুধু বিয়ের দিনের জন্য যেতে দেয় কিনা! জানিসই তো আমার পরিবার কিরকম।
— তুই চিন্তা করিস না আন্টিকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমাদের। সব ব্যবস্থা করে ফেলবো। দশটা না পাঁচটা না একটামাত্র বেস্টু আমার। তোকে ছাড়া কি আমি বিয়ে করতে পারি বল।
শারমিনকে জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বলার সাথে সাথে ওর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সেই হাসিতে আমিও খুশি। বিয়ের তারিখটা সব দিক মাথায় রেখেই ডিসেম্বরের শেষ দিকে ফেলা হয়েছে। আব্বু তো চেয়েছিলো দুই সপ্তাহের মধ্যে বিয়েটা সেরে ফেলতে। যদিও সেটা খুব তাড়াহুড়ো হয়ে যায়। সবাই একসাথে যখন বসলো তখন দেখা গেলো নানাজনের নানা সমস্যা। সবার সাথে প্রায় তিনঘণ্টা কথা বলে, সব দিক মাথায় রেখে, সবার মতামত নিয়ে বিয়ের ডেট ফিক্স করা হলো ডিসেম্বরের শেষে। সেই সময় কারো কোন সমস্যা নেই। মানে আরো দেড় মাস পর বিয়ে।
💖💖💖
কথা বলতে বলতে কলেজ গেইট পার হতেই সামনে এনাজকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম। উনি এখানে কি করেন? তার তো এখন অফিসে থাকার কথা। তার সামনে গিয়ে দুই হাত কোমড়ে রেখে বললাম,
— এই যে মিস্টার এনজিও সংস্থা এখানে কি?
এনাজ মুখে হাসি হাসি একটা ভাব রেখে রওনক ও তওহিদ ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলো। আমার কন্ঠ পেয়ে মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— আমার টিডি পোকাকে এক নজর দেখতে এসেছি।
তার উত্তর শুনে তওহিদ ভাইয়া, রওনক “ওহো” বলে চেচিয়ে উঠলো। আমি কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম। রওনক বললো,
— ইস, আমার ভাইয়ের লজ্জাবতীটা।
আমি রওনকের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকাতেই সে ভয় পাওয়ার ভান করে বললো,
— এখন যেমন আছো তেমনি থেকো ভাবী। তোমাকে পূর্বের মিস ঝগড়ুটে রূপে যাওয়ার কোন দরকার নেই।
রওনকের কথা বলার অঙ্গিভঙ্গিতে আমি ফিক করে হেসে উঠলাম। হঠাৎ আবিরের কথা মনে হতেই হাসিটুকু আমার মিইয়ে গেলো। মৃদু গলায় বললাম,
— রওনক ভাই আপনাকে একটা ছেলে খুজছিলো।
রওনক ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
— যে খোঁজার খুঁজুক। যার দরকার হবে সে আবার আসবেই। সবসময়েই এত ঝামেলা ভালো লাগে না।
তওহিদ ভাইয়া আমার কুশলাদি জিজ্ঞেস করলো। তারপর শারমিনের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আমাকে বললো,
— তা কোথায় যাওয়া হচ্ছে হবু মিসেস এনাজ?
আমার উত্তর দেওয়ার আগে তন্বী রওনকের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তওহিদ ভাইয়াকে বললো,
— ফুচকা খেতে যাবো আমরা।
রওনক মুখটাকে বাঁকিয়ে বললো,
— এই ভরদুপুরে ফুচকা!
তন্বী ভেংচি কেটে বললো,
— জ্বি।
তওহিদ ভাইয়া এনাজকে বললো,
— চল এনাজ আমরা তাহলে তাদের সাথে যাই। বসে আলাপ-আলোচনা করা যাবে।
এনাজ পকেট থেকে মোবাইল বের করে টাইম দেখে নিয়ে পুনরায় মোবাইল পকেটে রেখে বললো,
— হুম চল।
শারমিন এতখন চুপ করে থাকলেও তওহীদ ভাইয়ার কথা বুঝতে না পেরে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
— কিসের আলাপ-আলোচনা?
তওহিদ ভাইয়া এক চোখ মেরে দুষ্টুমীর সুরে বললো,
— বিয়ের। এনাজ,নোভার বিয়ের প্ল্যানিং-এর কথা বলছি আমি।
তওহিদ ভাইয়া দাঁত বের করে হে হে করে হাসতে লাগলো। শারমিন মুখ বাঁকিয়ে অন্য দিকে দৃষ্টি দিলো। রওনক, তন্বী একে অপরের সাথে চোখে ইশারা করে কি কথা বলছে আল্লাহ মালুম। ওদের কথা ওরাই বুঝছে।যার দরুন একটু পরপর দুজনেই মিটমিট করে হাসছে। আমাদেরকে স্পেস দিয়ে ওরা চারজন একসাথে হাঁটতে লাগলো।আমরা কিছুটা পেছনে। কলেজ থেকে সাত মিনিট পশ্চিমে হাঁটলে একটা ফুচকার স্টল। আমরা এখন সেদিকেই যাচ্ছি। আমি ও এনাজ পাশাপাশি হাঁটতে লাগলাম। দুজনেই চুপ। নীরবতা ভেঙে আমিই প্রথম কথা বলে উঠলাম।
— হাতের ঘড়ি কোথায়?
— নষ্ট হয়ে গেছে।
— কিনবেন না?
— না আগেরটাই ঠিক করিয়ে নিবো। সামনে বিয়ে আমার। টাকা জমাচ্ছি। এখন অযথা খরচ করতে চাই না। মধ্যবিত্ত ছেলে আমি। অযথা খরচ মানায় না আমার। তাছাড়া সামনে সংসারী হবো। আমার অর্ধাঙ্গিনীর জন্যও তো কিছু রাখতে হবে।
তার কথায় খুশি হয়ে মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
— গুড।
— নূর ভাবী চলে গেছে?
— হ্যাঁ, আজ সকালে।
— আম্মু, আব্বু তো গত পরশু চলে গেছে?
— হ্যাঁ আম্মুর স্কুল খোলা তো।
— বিয়ের শপিং-টা তোমায় সাথে নিয়ে করতে চাইছি। তোমার কসমেটিকস, ড্রেস তুমি চয়েজ করে নিবে।আমি মেয়েদের কোন জিনিসপত্রের ধারণা নেই।
— ওকে। আপনি আজ অফিসে যাননি?
— কি মনে হয়?
— পরনে তো অফিসের গেটআপ দেখা যাচ্ছে। তারমানে গিয়েছিলেন।
— আজ হাফ ডে ছিলো। ১ টার দিকে সব ছুটি হয়ে গেছে। আমি ভাবলাম আমার পোকাটার সাথে দেখা করে আসি। দুদিন ধরে তো দেখা হয় না।
আমি চোখ রাঙিয়ে বললাম,
— আমি পোকা?
এনাজ আমার দুই গাল টেনে দিয়ে বললো,
— হ্যাঁ, আমার টিডি পোকা।
— আপনি তো এনজিও সংস্থা।
— হুম জানি।
টুকটাক কথা বলতে বলতে পথ চলছিলাম। আমি একা একা হাত নাড়িয়ে কথা বলছিলাম। পাশে তাকিয়ে দেখি এনাজ নেই। পেছনে তাকিয়ে দেখি সে আমার থেকে অনেকটা দূরে। তার মানে এতখন আমি একাই বকবক করছিলাম। এনাজ দৌড়ে আমার পাশে এসে হাঁপাতে লাগলো। আমি কিছুটা কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলাম,
— কোথায় গিয়েছিলেন? আমি তো একা একা কথা বলছিলাম। আপনি যে আমার পাশে নেই সেটাও খেয়াল করিনি। ভেবেছি আপনি আমার সাথেই আছেন। আপনার কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখি আপনি নেই।
— ঐ তো ঐ মোড়ে একজন বৃদ্ধ লোক বসে ভিক্ষা করছিলো। আমার অনেক খারাপ লাগলো তাকে দেখে। তাই পানি ও কিছু খাবার কিনে দিয়ে এলাম।
তার কথা শুনে যতটুকু রাগ হয়েছিলো তা উড়ে গেলো। আমার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। নাহ্ আমি কোন ভুল মানুষকে নিজের জন্য পছন্দ করিনি। এই মানুষটাকেই আমার চাই। আমি কথা বলতে বলতে দিকপাশ ভুলে যাই। আর উনি সবদিকে খেয়াল রাখে। খুশিমনে তার এক বাহু দুই হাতে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখলাম। উনি রাস্তার মাঝে আমার অদ্ভুত আচারণ দেখে চোখ দুটো রসগোল্লা বানিয়ে ফেললো। আমি ধীর কন্ঠে বললাম,
— আমাকেও বলতেন আমিও একটু সাহায্য করতাম।
— আমি আর তুমি কি আলাদা হলাম নাকি? আমি করেছি মানে তুমিও করেছো। আমার সবকিছুতে তো তোমার অধিকার।
আমি তার কথার বিনিময়ে কিছু না বলে হুট করে বললাম,
— ভালোবাসি!
— আমিও।
— চলুন যাওয়া যাক। রাস্তার মাঝে কি এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবেন?
উনি অবাক হয়ে বললো,
— তুমি আমার বাহু ধরে হাঁটবে?
— কেন কোন সমস্যা?
— একটুও না। তুমি তো সচারাচর এমনটা করো না। তাই কনফিউজড হচ্ছি।
— আমার হবু বরের হাত আমি ধরে হাঁটবো কার কি?
— হ্যাঁ তাও ঠিক। তবে মাঝে মাঝে তোমার কি হয় আমি নিজেও বুঝি না। অদ্ভুত পাগলামি করো।
আমি দাঁত বের করে শয়তানি হাসি দিয়ে বললাম,
— রাস্তায় বেশি মানুষ নেই। তাই হাত ধরে হাঁটতে ইচ্ছে হলো। বেশি মানুষ থাকলে কি এমন পাগলামি করি?
— যতখুশি পাগলামি করতে মন চায় করো। কিন্তু এখন জলদী করে চলো। ওরা বোধহয় স্টলে চলে গেছে। কল দিচ্ছে আমাকে।
— আচ্ছা চলুন।
এনাজের কাঁধের থেকে মাথা সরিয়ে তার বাহু জড়িয়ে ধরে হাঁটতে লাগলাম। আমাদের উচ্চতার ডিফারেন্ট খুব বেশি নয়। মাত্র ছয় ইঞ্চি। পায়ে উচু গোড়ালির জুতো পরে থাকায় অনায়াসে তার কাঁধে মাথা রাখতে পারেছি আমি। উনি একবার মুগ্ধ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে সামনে নজর দিলো। আমি তো তার বাহু ধরে হেলেদুলে হাঁটছি। তাকে জ্বালানোর জন্য। কিন্তু সে মোটেও বিরক্ত নয়।চুপচাপ খুশিমনে সহ্য করে নিচ্ছে।
#চলবে
আসসালামু আলাইকুম। ওদের বিয়ে আমি দিবো। কিন্তু এর মধ্যে ছোট্ট একটা কাহিনি আছে। আবিরের চরিত্রটা যেহেতু নতুন এসেছে নিশ্চয়ই কারণ ছাড়া আনিনি। আরেকটু অপেক্ষা করুন। প্রমিস এবার বিয়ে দিবোই🥶। তবে একটা কথা জানার ছিলো। অনেকেই বলছেন ওদের বিয়ের পরের কাহিণী চান। এখন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই,আপনারা কি ওদের বিয়ের পরবর্তী কাহিনী চান? যদি চান তাহলে অবশ্যই জানাবেন। বিয়ের পরের কাহিনী চাইলে আমাকে দ্বিতীয় খন্ড আনতে হবে। সাথে এই খন্ডে কিছু রহস্য রেখে দিতে হবে। আর না চাইলে তাও বলবেন প্লিজ। তাহলে শর্টকাটে এদের বিয়ে দিয়ে গল্প শেষ করে দিবো। আর যদি বলেন না আপু, বিয়ের পরবর্তী কাহিনীও চাই। তাহলে বেশ কিছু রহস্য আমি রেখে দিবো। প্রথম খন্ড যেখানে শেষ হবে সেখান থেকেই দ্বিতীয় খন্ড শুরু হবে। আর না চাইলে বিয়ে দিয়ে গল্প শেষ। দয়া করে প্রত্যেকে যার যার মতামত জানাবেন।