#গল্প_টু_সিস্টার_শেষ_পর্ব
#লেখা_নাজনীন_নাহার
২০.০৩.২০২২
শেষ পর্বঃ
আমরা দু’বোন ইউটিউব থেকে দেখে দেখে রোজ বিশ থেকে ত্রিশ মিনিট মেডিটেশন করি। নানুকেও শিখিয়ে নিয়েছি। আমরা প্রতিদিন ডিম, দুধ, কলা ও সাধ্যের মধ্যে পুষ্টিকর খাবার খেতে চেষ্টা করি। কারণ এটাও আমাদের সুস্থতার জন্য ও কাজের জন্য ইনভেস্টমেন্ট। পরিশ্রম করার জন্য শরীরে এনার্জির প্রয়োজন।প্রয়োজন পরিমিত খাবার।
এই সকল বিষয়গুলোর উপরও আমি কনটেন্ট তৈরি করে আমার পেইজে প্রচার করি। কারণ আজকের তরুণরাই আগামীর নেতৃত্ব দিবে।
আমার মা এখন ভীষণ খুশি।তবে আমাকে আর শর্মিকে নিয়ে মাঝে মাঝে মা ভয় পায়। যেহেতু আমরা ঢাকা শহরে একা একা চলাফেরা করি। তাই
এরমধ্যেই শুক্র শনি দুইদিন দু’ঘন্টা করে সময় নিয়ে কারাতে ক্লাসে ভর্তি হলাম।বাসার কাছেই একটা ক্লাব পেলাম। নিজেদের আত্মরক্ষা ও শারীরিক ফিটনেসের জন্য প্রতিটি মেয়েকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি কারাতেটা শিখে নেয়া উচিত। এটা আমার মতামত। মানসিক ও শারীরিক ফিটনেস একটা মানুষকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
পেইজে কারাতের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা নিয়ে ভিডিও আপলোড করলাম। আমাদের এলাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার কারাতে ক্লাবে মেয়ে ছেলে সকলেই ভর্তি হতে লাগল। ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে গেল ক্লাবগুলোতে। কারাতে, সাতার, ফুটবল, ক্রিকেট সহ খেলাধুলা ও ফিটনেসের উপকারিতার উপর করা কনটেন্টগুলোর কারণে সারা দেশের খেলাধুলার ক্লাবগুলোকে প্রমোট করাও হয়ে গেল আমার। এর ফলে আমাদের দুই বোনের পরিচিতি আরও বেড়ে গেল। আমাদের কারাতে ক্লাব আমাদের দুই বোনের বেতন নেয়া বন্ধ করে দিলেন। আমাদের জন্য ফ্রি করে দিলেন পুরো কোর্সটা। আসলে কাজের প্রতি ডেডিকেশন ও সততা। আমাদেরকে সাফল্য এনে দিতে বাধ্য আলহামদুলিল্লাহ। এগুলো আমরা আমাদের জীবনে প্রতিফলন করে সকলকে দেখিয়ে দিচ্ছি হাতে কলমে ও জীবনের পরিক্রমায়।
এরমধ্যে মাকে বললাম মা কাজ ছেড়ে দাও এবার।আসো আমরা একটু বড়ো বাসা নিয়ে একসাথে থাকি। মা রাজি হলেন না।
সে কাজ করবেনই।
তখনই আমার মাথায় সিঙ্গাপুরের মেইড সার্ভেন্টদের নিয়ে দেখা সেই সকল ইনফরমেশনগুলো ও তা নিয়ে আমার চিন্তা করা যেই পরিকল্পনা সেগুলো সামনে এলো । মনে হলো আমার মায়ের জন্য এই মেইড সার্ভেন্ট বিষয়ক প্রকল্পটা বাস্তবায়নের সময় এসেছে।
এতোদিনে সকলের বিশ্বাস অর্জন করা “উর্মি কেয়ার “থেকে মেইড সার্ভেন্ট সরবরাহ শুরু করার বিজ্ঞাপনটি দিলাম। বললাম আপাতত শুধুমাত্র গুলশান ও বনানীতে সীমিত সংখক মেইড সার্ভেন্ট নিয়োগ দেয়া হবে।
যেহেতু আমি প্রায় এক বছর যাবত ঢাকায় আছি। তাই আশেপাশে আমার বেশ পরিচিতি হয়েছে। আমি বাড্ডাতে আমার আসেপাশের বেশ কিছু দরিদ্র মহিলা ও মেয়েকে মেইড সার্ভেন্ট এর কাজের জন্য সিলেক্ট করলাম।এরা সকলেই আমার মায়ের মতো বহুদিন ধরে বাড়ি বাড়ি ছুটা কাজ করে থাকেন।
ঘন্টা ও কাজের কেটাগরি অনুযায়ী কাজের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে একটা ছক তৈরি করে নিলাম। প্রথমেই আমি বেশ হেলদি স্যালারি ডিমান্ড করলাম মেইড সার্ভেন্টদের জন্য আমার বিজ্ঞাপনে।
হেলদি সেলারির পাশাপাশি আমি মেইড সার্ভেন্টদের সম্মানের দিকটি চিন্তা করে কিছু শর্তে জুড়ে দিলাম আমার বিজ্ঞাপনে।
যেমন আচরণ ও ব্যাবহারে মালিকদেরকে মানবিক হতে হবে।
একজন সম্মানিত অফিস এমপ্লয়িদের মতো সম্মান দিতে হবে। সপ্তাহে একদিন ছুটি দিতে হবে। বাড়তি কাজের জন্য ও সপ্তাহিক ছুটির দিনে কাজ করাতে হলে ওভারটাইম দিতে হবে। অসুস্থ হলে তার জন্য চিকিৎসা ভাতা দিতে হবে।
একজন মেইড সার্ভেন্ট অসুস্থ হয়ে এবং বিশেষ কোনো কারণে তিনদিনের বেশি ছুটি কাটালে তখন “উর্মী কেয়ার” থেকে বিকল্প এমপ্লয়ি পাঠানো হবে। আমি মেইড সার্ভেন্ট নামটারও পরিবর্তন আনলাম প্রথমেই। প্রকল্পের নাম হলো “গৃহ সহকারী “। এই প্রকল্পের স্লোগান হলো
“কাজ নয় ছোটো বড়ো
সকল কাজে সম্মান করো।”
এভাবে সেলারি ও শর্ত সহ পেইজে বিজ্ঞাপন প্রচার হতে থাকল প্রতিদিন। বিজ্ঞাপন পোস্ট করার পর প্রথম একমাস তেমন কোনো সারা পাওয়া গেলো না। কারণ আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে বাসাবাড়ির কাজের লোকদেরকে সম্মান দেয়ার ও যথাযোগ্য পারিশ্রমিক দেয়ার মানসিকতা ও অভ্যাসই সেভাবে তৈরি হয়নি এখনো। আমি ধৈর্য হারালাম না। মা’কে বললাম মা তোমার কাজ আমি রেডি করছি। তুমি তোমার বর্তমান কাজের যায়গাগুলোতে এক মাসের নোটিশ দিয়ে দাও। মা সেভাবেই করলেন।
আমি আমার মিশন সফল করবই। একজন দুইজন করে শুরু করব সমস্যা নেই। তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। মূল কথা হলো এই কাজে আমার তো কোনো ইনভেস্টমেন্ট নেই। ইতিমধ্যে মা আমাদের কাছে চলে এলেন। মনে মনে খুব চাইছিলাম মা’কে আর কাজ করতে দেব না।
কিন্তু মা আমার সকল পরিকল্পনা শুনে আমার কাছে বেশ জোড়ালো ভাবে একটা আবদার করে বসল।মা বলল।
——–শোনো মা। সারাডা জীবন তো মাইনসের বাসাবাড়িতে এই বুয়া হইয়াই কাজ করলাম। অহন তুমি বুয়াগোর জন্য এতো সম্মানের ব্যবস্থা করতাছ। আমি তো এহনো সুস্থ আছি। তাই আমি তোমার এই রকম সম্মান লইয়া কয়ডা বছছর কাজ করবার চাই। তুমি মা আমারে না করবা না। আর আমি হইলাম কাজ করার মানুষ। সব কাজ বন্ধ কইরা বইয়া থাকলে তো অসুস্থ হইয়া যামু।
আমি মায়ের চোখে মুখে একটা দুঃখ জয়ের আনন্দ দেখলাম। মা’কে না করতে পারলাম না।
একমাস পরে আমার কাছে প্রথম অফার আসল।কথা বলে আমি এক বাসায় একজন গৃহ সহকারী নিয়োগ দিলাম। সে আমার মা।
শুরু করলাম মাকে নিয়ে আমার স্বপ্ন জয়ের আরেকটি মিশন।
মা’কে চেষ্টা করলাম সেলোয়ার-কামিজ পরাতে। কারণ তার চলাফেরা ও কাজের সুবিধা হবে।দেখতেও একটা স্মার্ট লুক থাকবে। কিছুদিনের মধ্যেই সারাজীবন পেঁচিয়ে শাড়ি পরা আমার মা’কে ইজি করে নিলাম সেলোয়ার-কামিজে।
ইতিমধ্যে আমার পেইজের লোগো বসিয়ে কিছু কাঁধের ক্যারিং ব্যাগ তৈরি করে নিলাম। আমার উর্মি কেয়ার থেকে যারা টিউশনি করে তারা সকলে এই ব্যাগগুলো ব্যাবহার করে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের গৃহ সহকারীরাও সকলে এই ব্যাগগুলো ব্যাবহার করবে।
“আমরা সকলে মানুষ তাই সকলেই সমান আমরা” এই বিশ্বাসকে ধারণ করেই আমার উর্মি কেয়ার।
আমার কাঁধে যে ব্যাগ। আজ থেকে আমার মায়ের কাঁধেও একই ব্যাগ। কী ভীষণ সমতার সম্মান নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করলাম।
মা আমি ফজরের নামজ পড়ে। হালকা নাস্তা করে বেরিয়ে পরি। বাড্ডা থেকে গুলশান দুই। মা’কে নামিয়ে দিয়ে এসে নিজে ফ্রেশ হয়ে কলেজে চলে যাই। কলেজ থেকে ফেরার পথে মা’কে তুলে নিয়ে আসি।
মা এতোদিন সকাল সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত কাজ করে যে টাকা ইনকাম করত।তার চেয়েও বেশি টাকা এখন ইনকাম করে এক বাসাতেই। তাও সকাল সাতটা থেকে দুপুর অবধি আট ঘন্টা কাজ করে।সাথে দুপুরের খাবার পায়। আমার বিশ্বাস আরও বেড়ে গেল। এক এক করে আমার এই প্রকল্পটি এক বছরের মধ্যে দাঁড়িয়ে গেল।
বিশ বছর বয়স থেকে শুরু করে পপঞ্চান্ন বছর বয়সের মহিলাদেরকে নিয়ে আমার কাজ শুধু হয়ে গেল। যারা যারা নিয়োগ পাচ্ছে। তাদের সকলের ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি জামানত হিসেবে জমা রাখছি। যাতে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে গেলে সামাল দেয়া যায়। আর তাছাড়া এরা সাধারণ মানুষ তাই কোনো অর্থ ও সম্পদ ডিপোজিট করতে পারবে না এটাও আমাকে বুঝতে হবে।
এরমধ্যেই আমার প্রতিষ্ঠানের একটা লাইসেন্স করে নিলাম। বাড়িওয়ালা আঙ্কেলের সাথে কথা বলে আমাদের বাসার সাথে একটা রুম বাড়িয়ে নিয়ে ফর্মাল একটা অফিসও করে নিলাম।
আমার ছোট বোন শর্মিও ক্লাস টেইনে ওঠার পর নিজের নামে একটা ব্লগ খুলে নিয়েছে। সে সরাসরি লাইভ করে তার ব্লগের যাত্রা শুরু করেছে। শর্মি তার নিজের লেখাপড়ার সময় থেকে দু’ঘন্টা লাইভে পড়াশুনা করে সারাদেশের এসএসসি পরীক্ষার্থীদেরকে যুক্ত করে নিলো এতে। কারণ শর্মি মেধাবী ও পরিশ্রমী স্টুডেন্ট। সে কীভাবে লেখাপড়া করে এটা সে সকল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে লাগল। সে এতে ভীষণ সাড়া পেলো। স্টুডেন্টদের সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাবা-মা ও শিক্ষকরা শর্মির সাথে দারুণ সহযোগিতা করতে লাগল। তখন শর্মির স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্কুলের একটা হল রুমে শর্মিকে প্রজেক্টের মাধ্যমে রোজ সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত লাইভে ক্লাস পরিচালনার সু-ব্যবস্থা করে দিল। কিছু কিছু ক্লাস শিক্ষকরাও এসে এসে শর্মির লাইভে সারা বাংলাদেশের পরীক্ষার্থীদের গাইড করতে লাগলেন।
শর্মি ও আমি আসলে একা আলোকিত হতে চাইনি। আমাদের লক্ষ্য হলো আমি নিজে আলোকিত হব। আলোকিত করব পুরো জাতিকে।
আলহামদুলিল্লাহ আমাদের সবকিছু খুব ভালোভাবেই চলছিল।আমার এইচএসসির ফাইনাল পরীক্ষা চলে এলো। শর্মির এসএসসি পরীক্ষা আগে শেষ হলো। এরপর আমার এইসএসসি পরীক্ষা শুরু হল।
আমার খুব ধকল গেলো। তবে পরীক্ষা খুব ভালো হলো।
পরীক্ষা শেষ করে কিছু নতুন কনটেন্ট বানালাম। কনটেন্টগুলো সবসময়ের মতো খুব সাড়া পেল। আমি ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রিপারেশন শুরু করলাম। আমার প্রথম ও শেষ টার্গেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আমার কাছে এর কোনো বিকল্প রাখলাম না।কারণ আমার মনে হলো আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির একাডেমি ও সাবজেক্টের বিকল্প রাখলে আমার প্রস্তুতির মধ্যেই কিছু দুর্বলতা ঢুকে যাবে। তাই লক্ষ্য স্থীর করলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আমার গোল ঠিক করে নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রিপারেশনে নিজের সর্বোচ্চটা দিলাম। নিজের সব কাজগুলো যথারীতি চলছে। সাথে ভর্তির প্রিপারেশন।
এদিকে আমার ছোটো বোন শর্মি নিজের নামে যে ব্লগটা খুলে নিয়েছিল। তার বয়স এক বছরের বেশি হয়ে গেল। ওর এসএসসি পরীক্ষাও হয়ে যাওয়ায় আমরা দু’বোনই ভর্তি পরীক্ষার পড়া রেডি করছি।
শর্মী তার ব্লগের নাম দিয়েছে ” শর্মির সেবা “। আমার পেইজের সাথে নামটার মিল থাকলেও আমাদের দুই বোনের সেবার আদলটা আলাদা। শর্মি পিওর সায়েন্সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ওর টার্গেট হলো ও ডাক্তারি পড়বে। এবং সরকারি ম্যাডিকেলেই তাকে ভর্তি পরীক্ষায় টিকতে হবে।
আমার মতো সেও যেহেতু মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে মায়ের মুখে হাসি ফুটাতে চায়। তাই সে চেষ্টা করছে। চেষ্টা করতে দোষ কী!
আমরা দুই বোনই ছোটবেলা থেকে খুব গুছিয়ে চলার চেষ্টা করেছি। অভাব ও দারিদ্র্যের সাথে। জীবনের অনিরাপত্তার সাথে। বাবা ছাড়া হয়ে এবং মায়ের দূরত্বের সাথে মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছি রোজ। বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে ছেলেমেয়েরা ভালো বাবা-মায়ের সঙ্গে থেকেও ইন্টারনেটের অপব্যবহার করে নিজেরা নানান ভাবে নিজেদের মন মানসিকতা, চিন্তা ও অভ্যাস নষ্ট করে ফেলছে। নেশাগ্রস্ত হচ্ছে। অভাব দারিদ্র্য ও বাবা-মায়ের দাম্পত্য কলহের জন্য আত্মহত্যাও করছে অহরহ। সেখানে আমরা দু’টো সুবিধা বঞ্চিত মানুষ হয়েও নিজেদেরকে গুছিয়ে রেখেছি। পেইজ ও ব্লগের ইতিবাচক প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেদের মন মানসিকতার সাথে সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটিয়েছি। নিজেদের সাথে সাথে দেশের দরিদ্র ও আপামর জনসাধারণের জীবন, জীবিকা, অভ্যাস ও আচরণ পরিবর্তন করে তাদেরকেও মানবতার শিক্ষা দিয়েছি। সাবলম্বী হতে সাহায্য করেছি বৃহৎ একটা পিছিয়ে পড়া শ্রেণীকে। উন্নত করেছি ও করছি দেশ ও জাতির।
আমার মা বাড়ি বাড়ি ছুটা কাজ করা অশিক্ষিত মা হলেও তার মধ্যে ছিলো ভীষণ ধৈর্য। ছিলো নিজের পরিশ্রম ও সততা দিয়ে সম্মানের সাথে টিকে থাকার চেষ্টা। এই কারণেই আমরা আমার মায়ের মেয়ে দু’টো নিজেদেরকে পরিশ্রম ও সততার আদলে গড়ে নিয়েছি। নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের পাশাপাশি আমরা অনেক অনেক মানুষের জন্যও সম্মানজনক জীবনের পথ বাতলে দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।
পর পর কিছুদিনের ব্যাবধানে আমাদের দুই বোনের পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলো।
দু’জনই আশানুরূপ ভালো রেজাল্ট করলাম। এরপর বসলাম ভর্তি পরীক্ষায়।
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্টে ভর্তি হতে পারলাম। শর্মি ভিকারুননিসা কলেজে।
শর্মি ডাক্তার হবে।তাই সে তার ব্লগের লাইভ থেকে লাইভ করে করে সারা বাংলাদেশের স্টুডেন্টদেরকে ইংরেজি, অঙ্ক, বিজ্ঞানের লিসেন গুলো দেয়। ইতিমধ্যে তার জন্যও একটা স্কুটি কিনে দিয়েছি। সে স্কুটি করে কলেজে যায়। বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে ও ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে গিয়ে সমাজ সচেতনতা সহ স্বাস্থ্য, খাদ্যাভ্যাস, ডায়েট, হেলদি ফুড, মানসিক স্বাস্থ্য, প্রাইমারি চিকিৎসা, নার্সিং এরকম জন সচেতনমূলক ও মানুষের জন্য উপকারী লাইভগুলো করে তার ব্লগ থেকে।
ইতিমধ্যেই শর্মিরও একটা দারুণ জনপ্রিয়তা তৈরি হয়ে গেল। দেশ ছাড়িয়েও পৃথিবীর মানুষ আমাদেরকে আপন ভাবতে লাগল। দেশের বিভিন্ন সমাজকল্যাণ মূলক কজের যায়গাগুলোতে আমাদেরকে “টু সিস্টার” হিসেবে মোটিভেশনাল কাউন্সিলিং ও স্পিস দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে লাগল। কাছাকাছি জায়গাগুলোতে আমরা স্বশরীরে উপস্থিত হই। আর দূরের যায়গাগুলোতে আমরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমাদের কনসেপ্ট ও কনটেন্টগুলো তুলে ধরি।
আমাদের আর কোনো লোন থাকল না। আমরা বাড্ডা এলাকাতেই থেকে গেলাম। আমি ম্যানেজমেন্টে তৃতীয় বর্ষে উঠলাম। এদিকে আমার বোন শর্মি সরকারি ম্যাডিকেলে ডাক্তারি পড়ার চান্স পেল। তবে শর্মি ঢাকাতে টিকেনি। ও সিট পেলো চট্টগ্রাম মেডিক্যালে। মায়ের খুব মন খারাপ হলো। মা’কে নানুকে বুঝালাম। জীবনে সবকিছু আমাদের মন মতো হবে না মা। আর যা হয়েছে ও হচ্ছে আমাদের সাথে তা ভালোর জন্যই।
আমরা “টু সিস্টার” আলাদা হলাম এই প্রথম।কিন্তু আমাদের শক্তি এক হয়েই সারা পৃথিবী জয় করতে লাগল। আমরা ইতিমধ্যেই আমাদের কাজের সফলতা ও পরিকল্পনায় জাতির জন্য একটা মাইলফলক তৈরি করে ফেললাম। নতুন জেনারেশনের মধ্যে একটা পজেটিভ জীবন বোধ তৈরি করতে সক্ষম হলাম। আমাদের দুই বোনের জন্য বর্হিবিশ্বের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপের অফার আসল। আমি মা’কে ছেড়ে ও বাংলাদেশকে ছেড়ে যাবার কথা ভাবতেও পারলাম না।কারণ আমার কাছে মনে হলো পৃথিবী এখন অনেকটাই আমার হাতের মুঠোয়। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। তাইতো এর সুবিধাগুলোকে কাজে লাগিয়ে আমি এতদূর এসেছি।আগামীতেও আমি বহুদূর যাব ইনশাআল্লাহ।
ছোটো বোনটি যেহেতু এক বছর যাবত দূরে থাকে।তাই ছোটো বোন শর্মিকে স্কলারশিপে পড়াশোনার জন্য আমেরিকায় পাঠিয়ে দিলাম ওর আগ্রহের কারণেই। আমার বিশ্বাস আমার ছোটো বোন শর্মি একদিন অনেক বড়ো ডাক্তার হয়ে ফিরবে বাংলাদেশে ইনশাআল্লাহ। এটাই আমাদের চাওয়া। শর্মি যে জ্ঞান অর্জন করে ফিরবে। তা দিয়ে সে বাংলাদেশের জনগনের জন্য কাজ করবে।
আমি যথারীতি আমার লেখাপড়া, পেইজ ও সবগুলো কাজ নিয়ে ভালোভাবেই ক্যারিয়ার গুছিয়ে নিচ্ছি। মা’কে “গৃহ সহকারী ” প্রকল্পটার দায়িত্ব অনেকটা বুঝিয়ে দিয়ে অফিসে বসিয়ে দিলাম একজন ম্যানেজারের সাথে।
এখন আর আমার মা বাড়ি বাড়ি গৃহ সহকারীর কাজ করেন না। নানু ও মা’কে নিয়ে আমাদের সফলতার দিনগুলো খুব ভালো ভাবেই চলতে লাগল। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ এর প্রায় সকল সুবিধা কাজে লাগিয়ে আমরা সমাজে সম্মানজনক উন্নত জীবন যাপন করতে লাগলাম। পরিবর্তিত হলো আমাদের সাথে সাথে বহু বহু মানুষের জীবনের ও দৃষ্টিভঙ্গির। আমি আমার মায়ের নামে একটা অ্যাপার্টমেন্ট বুকিং নিলাম বাড্ডাতেই। ছোটো বোন শর্মিও আমেরিকায় গিয়ে নিজেকে মোটামুটি গুছিয়ে নিয়েছে।
সামনে আমাদের অবারিত সুন্দর ও সফলতার পথ। আরও অবারিত সাফল্যের সম্ভাবনা। পৃথিবীর দুই প্রান্তে বসবাস করেও আমরা দুই বোন এখনও পেইজ চালাই। ব্লগ চালাই। আমাদের কনটেন্টগুলে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও কনভার্ট করা। আমরা বাংলাদেশ তথা পৃথিবীর মানুষের জন্য ও মানবতার জন্য কাজ করছি। আমাদেরকে এখনও সকলেই ” টু সিস্টার ” বলেই এক নামে চেনে, জানে ও সম্মান করে। আমাদের বিশ্বাস আজীবন আমরা পৃথিবীর মানচিত্রে মানবতা, শিক্ষা, দারিদ্র্যতা দূরীকরণ ও মানবিক গুণাবলীতে নিজদেরকে মানুষ হিসেবে এবং মানবিক প্রতীক হিসেবে ” টু সিস্টার ” হয়েই টিকে থাকব।টিকে থাকবো আমাদের মৃত্যুর পরেও আমাদের মানবিক কাজের গৌরবের জন্য ইনশাআল্লাহ। আমি উর্মি ও বোন শর্মির জীবন থেমে থাকার জন্য নয়।মানবতার কল্যাণে বহমান আছে ও থাকবে আমাদের জীবন।
(সমাপ্ত)