#গ্রামের_ছেলেটি
পর্ব-২
বাবা মারা যাওয়ার পর এখন সংসারে দায়িত্ব আমার।তাই ভাবছি কি করবো বুঝতে পারছি না। এখন একমাত্র আমিই এই সংসারের আয়ের উৎস। বুঝে উঠতে পারছি না কি করব। তেমন কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না যে এখানে কাজ করে সংসারটা চালাব।
তাই চিন্তা করলাম ঢাকা গিয়ে কিছু করতে হবে।
তারপর একদিন রাকিবকে (বন্ধু) ফোন দিলাম। রাকিবকে সবকিছু খুলে বললাম, তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম আবার ঢাকায় যাব। তাই রাকিবকে ফোনে বললাম যে কাল আমি ঢাকা আসতেছি। রাকিব বললো তাই কর সেটাই ভালো হবে তোর পড়াশোনাও করতে পারবি।
মাকে ছোট বোনকে গ্রামে রেখে আবার চলে আসলাম ঢাকায়।
কিন্তু আমি এখন কি করবো, শুধু টিউশনি পড়িয়ে তো আর চলে না কারন আমার উপর দায়িত্ব বেড়ে গেছে, তাই আমি চিন্তা করলাম যদি একটা ছোট খাটো চাকরি খুজতে পারি তাহলে ভালো হবে।
অনেক খোজ করলাম কিন্তু কোন চাকরি পেলাম না। তাই ঠিক করলাম টিউশনি পড়াই যে সময় টুকু বাকি থাকে সেই সময় একটা রিকশার ভাড়ায় চালাবো।যেই ভাবা সে কাজ একটা রিকশা ভাড়া চালানো শুরু করে দেই এভাবে ভালোই যাচ্ছিল দিনগুলো। একদিন রিকশার চালিয়ে যাচ্ছি, হটাৎ একটা প্রাইভেট কারের সাথে ধাক্কা খায় আমার রিকশা। সাথে সাথেই একটা লোক গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। এসে সাথে সাথেই আমাকে একটা চর বসিয়ে দিলো। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি বের হ্য়ে এলো।😢লোকটি আসে বলল……
লোকটিঃ ওই ছোট লোকের বাচ্চা চোখে দেখস না। চোখ আকাশের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাস। 😡😡
আমিঃ মাপ করে দেন স্যার ভুল হয়ে গেছে।😢😢
লোকটিঃ ভুল হয়ে গেছে মানে জীবনেও কি বাবার জন্মে এরকম গাড়ি চোখে দেখছত।তোর কারনে গাড়ি কি অবস্থা হইছে দেখছত। আবার বলোস মাপ করে দেবো😡😡
ঠাসসসস…..ঠাসসসস(আবার দুইটা চর বসিয়ে দিলো)
আমার চোখ দিয়ে অবিরাম পানি ঝরে যাচ্ছে।।। লোকটি চলে গেলো। আর আমি নিরবে কেদে যাচ্ছি। শহরে মানুষ এই শহরে ইট পাথরের মতো তাদের মনও শক্ত হয়ে গেছে।যেখানে গরিব মানুষের চেয়ে গাড়ি মূল্য বেশি।।। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে, দিন শেষে রিকশা মালিকের কাছে জমা দিয়ে হস্টেলে এসে শুয়ে পরলাম। কিছুক্ষনপরে রাকিব এসে বলল…….
রাকিবঃ কিরে এসেই শুয়ে পরলি যে।শরির ঠিক আসে তো??
আমিঃ এমনেই মাথাটা একটু ব্যাথা করছে তাই শুয়ে আছি।।।😔
রাকিবঃ সেকিরে ঔষধ খেয়েছিস??
আমিঃ নারে এমনেই ঠিক হয়ে যাবে।।আর তুই কি আজকে ভার্সিটিতে গেছিলি?
রাকিবঃ গেছিলাম স্যারকে তোর কথা সবকিছু খুলে বলি।। বুঝছিত ক্লাস ঠিক মতো না করলে আবার কিছু হয় যদি। তাই স্যারকে সব জানিয়েছি।
আমিঃ ও আচ্ছা স্যার কি কিছু বলছে?
রাকিবঃ স্যার বলছে ঠিক আছে সে দেখবে। ঠিক মতো পড়াশোনা করতে বলছে।।
এভাবে আরো কিছু ক্ষন কথা বলে।
রাতের খাবার খেয়ে বাড়িতে ফোন দিলাম মায়ের কাছে।।।ছোট বোন ফোন ধরলো…..
সুমাঃ আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া কেমন আসো??
আমিঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। ভালো, তুই কেমন আছত?
সুমাঃ জি ভাইয়া ভালো।
আমিঃ মা কেমন আছে।আর তোর পড়াশোনা কেমন চলছে??
সুমাঃ মা ভালো আছেন। আমার পড়াশোনা ভালোই চলছে।
আমিঃ আচ্ছা মায়ের কাছে দে।
সুমাঃ ওকে ভাইয়া ভালো থেকো।( মায়ের কাছে দিলো)
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম মা, কেমন আসেন?
মাঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বাবা। তুই কেমন আছত?
আমিঃ জি মা ভালো।।
মায়ের সাথে অনেক কথা হলো…..
তারপর ফোন রেখে দিলাম, শুয়ে শুয়ে ভাবছি আজকের সেই ঘটনাটা। মানুষের ভিতরে যে মনোসত্তটা থাকে তা আজ ওই কাগজের টাকার মাঝে হারিয়ে গেছে। টাকার জন্য মানুষ আজ পশুর পরিনত হয়ে গেছে। মানুষ আজ গরিব মানুষকে মানুষ মনে মরে না। কেন যানি আজ নিজেকে নিজের কাছে অসহায় মনে হচ্ছে 😥😥
কথা গুলো মনে করছি আর নিরবেই কান্না করে যাচ্ছি।। কাদতে কাদতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি।।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেই তার পরে ভার্সিটিতে যাই তারপরে স্যারদের সাথে দেখাকরে, তারপরে কিছু ক্লাস করে চলে আসি।
আবার রিকশা ভাড়া চালানো শুরু করে দেই।।
এভাবেই কেটে যায় ৬ মাস……..
কিছু দিন পরেই বাড়ি থেকে ফোন এলো….
আমিঃ হ্যালো…..
সুমাঃ ভাইয়া মায়ের খুব শরির খারাপ তুমি তারাতাড়ি বাড়িতে আসো।😫
আমিঃ কেন কি হয়েছে, কিভাবে হয়েছে।😥
সুমাঃ আমি যানি না স্কুল থেকে এসে দেখি মা মাটিতে পরে আছে। আমি কি করব বুঝতে পারছি না। তাই কাকিমা (পাশের বাড়ির) কে ডেকে এনেছিলাম।😫
আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। কারণ আমার কাছে টাকা নেই তাই, রাকিবের কাছে গেলাম রাকিব কে বলার পরে। সাথে সাথে আমাকে ওর কাছে যে টাকা ছিলো সব আমায় দিয়ে বলে।তারপর বলল…..
রাকিবঃ যা তারাতারি গ্রামে গিয়ে আংন্টির চিকিৎসা করা।।
আমিঃ তুই যে আমার কত বড় উপকার করলি,,,
আমি ওকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলাম😫😫(আসলে বিপদের সময় সে পাশে থাকে সেই প্রকৃত বন্ধু)
রাকিবঃ আরে ধুর বলদ আমি নাহ তোর বন্ধু আর বিপদের সময় তো বন্ধু পাশে থাকবে না তো কে থাকবে শুনি। আর যদি আমার মা অসুস্থ থাকত তাহলে কি তুই বসে থাকতে পারতি বল। যা এখন তারাতাড়ি গিয়ে আন্টির চিকিৎসা কিরা যা।
আমিঃ হুম…
তারপর আমি গ্রামের উদ্দেশ্য রউনা হলাম।।গ্রামের এসে মায়ের চিকিৎসা করার জন্য নিয়ে যাই।
চলবে……….
ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।।🙏