#গ্রামের_ছেলেটি
পর্ব-৫ম
স্বপন
আমি এসে ফাইলের কাজ করা শুরু করে দেই,। লাঞ্চের সময় হয়ে যায় তাই বিরতি নিয়ে করতে যাই। আমি আর আমার দুইজন কলিগ মাসুদ আহমেদ আর সুমন রহমান।
মাসুদঃ তা সিমুল সাহেব,,চাকরি হয়েছে তা বিয়েটা কবে করছেন করবেন না।
আমিঃ কি বলছেন সবে মাত্র চাকরি হলো এতো তারা হুরো কিসের সময় হলে বিয়ে তা দেখা যাবে।🙂🙂
সুমনঃ আরে ভাই এখনই তো সময় পরে দেখা গেলো দেখা যাবে বলতে বলতে চুল পেকে গেলো এরপর সবাই আপনাকে চাচা বলে ডাকলো,😀
আমিঃ কি বলছেন ভাই,,
সুমনঃ আচ্ছা আমাদের ম্যাডামও তো এখনো বিয়ে করেনি,।
মাসুদঃ তাই তো আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন।। আপনাদেরকে ভালোই মানাবে,,,
আমি তাদের কথা শুনছি আর হাসছি। আর মনে মনে বলছি।
(ম্যাডামকে প্রোপোজ করা কি আর আমি বাকি রাখছি নাকি তা তো করেছিলাম সেই কবেই, তখন যা বলছে। এখন যদি আবার বলি আমাকে তো চাকরি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের তো করবেই, বরং দুনিয়া থেকে বিদায় না করে দেয়)
আমিঃ ভাই আপনারা কি চান আমি বেচে থাকি,,,
মাসুদঃ কেন ভাই আমরা আপনার কি করলাম।
আমিঃ এই যে বলছেন যা তাতে তো মনে করেন। আমার মরার বুদ্ধি করছেন,,,,
সুমনঃ কি বলছেন ম্যাডাম অনেক ভালো,,,দেখেন না কি অপরুপ সুন্দর দেখতে।
আমরা সবাই মিলে একসাথে হেসে দিলাম।।
রাতের একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে,,,
— আসসালামু আলাইকুম,,,হ্যালো কে বলছেন??
ওপাশ থেকে একটি মেয়ে কন্ঠে,,,
— ওলাইকুম আসসালাম,, জি আমি নিলিমা,।আপনি যাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন আমি তার মেয়ে,,
— ওহ আচ্ছা,, তা আপনার বাবা এখন কেমন আছেন?
— জি আলহামদুলিল্লাহ ভাল,,, আসলে আমি আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেবো সে ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
— এতে ধন্যবাদ দেয়ার কি আছে আমি মানুষ হিসেবে কেবল মাত্র আমার যে দায়িত্ব সেটা পালন করেছি। তাছাড়া আমি একা তো আর তাকে নিয়ে যাই নি আরো লোকছিলো আমার সাথে।
— আচ্ছা আমরা কি দেখা করতে পারি,,,,
— হ্যা,, তা করা যেতে পারে,,,
— কাল ,,
— কাল তাহলে অফিস শেষ করে তারপর।
— হ্যা,, ঠিক আছে,,,,
ফোন রেখে দিলাম,,,,,ফোনে নিলিমার কথা শুনে বুকের ভিতর কেমন জেনো করে উঠলো,, পরে মনে হলো এই নিলিমা হয় তো নাও হতে পারে,,এরকম ভাবে কখনো কথা বলতে শুনিনি ওকে। ওর বাবার তো এক্সিডেন্ট করেছে, ধুর কাল গিয়েই দেখা যাবে।
পরদিন চলে গেলাম দেখা করতে ফোনে একটা রেস্টুরেন্টের নাম বলে দিয়েছে । গিয়ে দেখি যা ভেবেছি ঠিক তাই নিলিমাই বসে আছে,,আমি দেখে ওকে কল করি, ফোন বাজতেই আমার দিকে তাকিয়ে অবাক যায়, পরে সাভাবিক হয়ে আমাকে ইসারায় ডাক দিলো আমি যাই ওর কাছে যেতেই,,
নিলিমাঃ আপনি দাঁড়িয়ে কেন বসুন,,,
আমিঃ জি ম্যাডাম,,,
নিলিমাঃ তো কি খাবেন বলুন,,,,
আমাকে একটা মেনুকাড দিয়ে বলে, আমি দেখে দেখি সবকিছু সাথেই আমি অপরিচিত যা কখনো আমি খাওয়া তো দুরের কথা কখনও চোখেই দেখিনি,। খাবার দাম ও অনেক,,সব দেখে আমি ম্যাডামের দিকে তাকাতেই তিনি বলেন,,
নিলিমাঃ কি হলো বলুন,,
আমিঃ ম্যাডাম আমি খবো না,,,
নিলিমাঃ কেন,,,
আমিঃ এখানের খাবারের কি দাম দেখুন,,,
নিলিমাঃ আসতে বলুন,, আপনি দাম দিয়ে কি করবেন৷ আপনি শুধু বলুন কি খাবেন,,
আমিঃ তাও আমরা এখানে না খাই, বাইরে অন্য কোথাও খাই৷ আসলে আমি এসব কোন দিন খাইনি,,
নিলিমাঃ কি বলছেন, শহরে থাকেন অথচ এসব খাবার খান নি,,,এটা কি ভাবে সম্ভব,। আচ্ছা ঠিক আছে আমিই ওঠার দিচ্ছি।
তারপর ম্যাডামকে আমি আমার জন্য খাবার ওডার করতে মানা করি তারপর ও তিনি ওডার করেন,,,
ম্যাডামঃ বুঝলাম না আপনি খাবেন না কেন,,?
আমিঃ আসলে ম্যাডাম,,, (আমাকে না বলতে দিয়ে)
নিলিমাঃ দেখুন আপনি আমাকে ম্যাডাম বলা বন্ধ করুন,,আমার একটা নাম আছে নিলিমা,।ম্যাডাম অফিসে আর এখানে নাম ধরেই বলবেন।
নিলিমার একথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই। এতো দিন যে নিলিমাকে চিনতাম আর আজকের নিলিমার অনেক তফাত রয়েছে,।
আমিঃ ঠিক আছে,,
নিলিমাঃ হুম এবার বলুন,,,
আমিঃ আসলে আমার মা বলেতেন,, যেখাবারের উপর ভক্তি না আসে সে খাবার না খেতে, কারন তাতে শরীর খারাপ করে,,,(আমার কথা শুনে নিলিমা হেসে দেয়)
নিলিমাঃ আপনি কোন গ্রহ থেকে এসেছেন,,
আমিঃ গ্রহ না গ্রাম, গ্রাম থেকে এসেছি।
নিলিমাঃ ওহ আচ্ছা,, এই নি এটা আপনার জন্য।
আমার দিকে একটা ব্যাগ দিয়ে বলে,,
আমিঃ কি আছে এতে,,,
নিলিমাঃ এতে কিছু টাকা আছে,,,
আমিঃ আমার এ টাকা দিয়ে কি করবো আপনি রেখে দেন। আমার সব এর দরকার নেই।
নিলিমাঃ আসলে আপনি আমার কত বড় উপকার করেছেন তা বলে বুঝাতে পারবো না। আর তাই এই সামান্য উপহার।
আমিঃ আপনি ভুল ভাবছেন আমি আপনার বাবার সাহায্য করেছি কোন কিছু পাওয়ার আসায় না। আপনার বাবার এখানে যদি অন্য কেউ থাকতো তাহলে ও করতাম।
নিলিমাঃ আপনি কি পাগল নাকি,কতোগুলো টাকা কে কেউ না করে,,।
আমিঃ এতে পাগল হওয়ার কি সম্পর্ক।। 🙄
নিলিমাঃ তা নয়তো কি আপনার মতো মানুষ এতো টাকা একসাথে দেখেছেন কখনো।
আমিঃ এখন কিন্তু আমাকে অপমান করছেন,,। আচ্ছা আমার যাবার সময় হয়ে গেছে আমি যাই।(আমি বলেই উঠে যাই)
নিলিমাঃ কিন্তু খাবার ওডার দিয়েছি সেটাতো,,,,,😠
(টাকাওয়ালা মানুষেরা এ কাজগুলো খুব ভালোভাবেই করতে পারে। সবকিছু টাকা দিয়ে কেনার চেষ্টা আর গরিব মানুষকে ছোট করে অপমান করা।)
নিলিমা বাসায় চলে গেলো,,
নিলিমা তার বাবার রুমে যায়,তাকে দেখে তার বাবা তাকে জিজ্ঞেস করে,,
নিলিমার বাবাঃ নিলিমা তোকে এরকম গোমড়া মুখ করে আছিস কেন,?
নিলিমাঃ দেখো না বাবা তোমাকে যে হাসপাতালে ভর্তি করেছে, তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
নিলিমার বাবাঃ কি বলিস তাকে বাসায় নিয়ে আসলি না কেন।থাকে কোথায়।
নিলিমাঃ বাবা তুমি চিন্তা করো না তো সে আমাদের অফিসে চাকরি করে।
তারপর সব কিছু বলে ওর বাবা কথা শুনে বলে ।
— ওরকম ভাবে না বল্লেও পারতি,।
— আমি যা সত্য তাই বলেছি,,
— ছেলেটা সৎ তাই তোর সাথে এরকম করেছে। আজকাল এরকম ছেলে কোথায় পাওয়া যায়।
— টাকা ছাড়া সব মানুষ অচল, টাকাই সব।
— দেখ মা এ দুনিয়াতে অনেক মানুষ আছে যারা তোর টাকার জন্য তোর কাছে আসবে কিন্তু দেখবি তোর বিপদের সময় তাদের খুজে পাবিনা। তাই এরকম মানুষ থেকে যত দূরে থাকবি ততই তোর ভালো।
— যাই বলো বাবা টাকা ছাড়া চলা অসম্ভব।
— প্রত্যেক মানুষের কিছুর অভাব থাকে যেমন আমাদের টাকা আছে কিন্তু সুখ শান্তি নেই। যার টাকা নেই তার কাছে এই দুটো আছে। আমাদের সবারি কিছু না কিছুর অভাব আছে।
নিলিমা ওর বাবার কথা শুনে কিছুটা হলেও অনুতপ্ত হয়েছে।
পরেদিন অফিসে বসে আছি,,,
মাসুদঃ শুনেছি ম্যাডামের নাকি নতুন পিএ আসেছে আপনার দেখেছেন নাকি তাকে,।
সুমনঃ তার আগে আপনার পিছনে তাকিয়ে দেখেন,,
হটাৎ ম্যাডাম চলে আসে,,, এসেই আমাকে তার ক্যাবিনের যেতে বলে আমি চলে গেলাম,।
আমিঃ ম্যাডাম আসতে পারি,,??
ম্যাডামঃ হুম আসুন,,,বসুন,,
আমিঃ জি ম্যাডাম কি জন্য ডেকেছেন,,?
ম্যাডামঃ আসলে কালকের আপনার সাথে ওভাবে কথা বলার জন্য আমি খুবি দুঃখক্ষিত।
আমিঃ আপনি কেন ক্ষমা চাচ্ছেন, আপনি ঠিকি বলেছেন। টাকা এমন একটা জিনিস যা ভালো ভালো মানুষকে বদলে দিতে পারে। হয়তো আপনি আমাকেও তাই ভেবেছেন।
ম্যাডামঃ কাল তো অফিস ছুটি, কাল কি ফ্রি আছেন আপনি,,।
আমিঃ হুম,,কেন ম্যাডাম,,
ম্যাডামঃ আসলে বাবা আপনাকে বাসায় নিয়ে যেতে বলেছে।
আমিঃ ওহ কিন্তু আমি তো আপনার বাসা চিনি না,,,
তারপর আমাকে একটা তার বাসার ঠিকানা দিল আমি তার রুম থেকে বেরিয়ে এলাম,,
— শিমুল এই শিমুল,,,(আমার পিছনে থেকে মেয়েলি কন্ঠে ঢাক আসে,,)
মেয়েটার দিক ঘুরতেই আমি চমকে যাই। কারন এটা আমার গ্রামেই থাকে আমার পাশের বাড়ি।
আমিঃ আরে তুই এখানে, কেমন আছিস(ওর নাম রাইসা আমরা একসাথেই লেখাপড়ার করছি।)
রাইসাঃ ভালো, বাহ তুই তো দেখি তাহলে আমাকে চিনতে পেরেছিস,,আমি তো প্রথমে তোকে দেখে চিন্তেই পারিনি। আমি এই অফিসেই নতুন জয়েন করেছি,ম্যাডামের পিএ।
আমিঃ তুই তাহলে ম্যাডামের পিএ।
আমাদের কথা বলতে দেখে ম্যাডাম রাইসা কে ডাক দিলো,,, আমিও আমার কাজে লেগে পরলাম। অফিস শেষে বাসায় যাওয়া জন্য রিকশা নিলাম এর মধ্যে রাইসা আমাকে পিছন থেকে ডাক দিলো,,,,,,,
,,,,,,,চলবে,,,,