#গ্রামের_ছেলেটি
পর্ব-৬ষষ্ঠ
স্বপন
রাইসা আমার সাথে আমার বাসায় চলে আসে আমি রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে দেই। রাইসা আমার সাথে আমার বাসায় আসতে চাইলে আমি ওকে নিষেধ করে দেই। কেন বললে আমি বলি বাড়িওয়ালা দেখলে সমস্যা আছে তাই ওই রিকশায় ওকে পাঠিয়ে দেই।
পরেদিন,,,
ম্যাডামের বাসায় চলে এলাম এসে বাসার কলিং বেল বাজাতেই ম্যাডাম এসে দরজা খুলে দিলো,,,আমাকে ভিতরে আসতে বলল,,আমি ভিতরে গিয়ে দেখি স্যার মানে ম্যাডামের বাবা সোফায় বসে আছে। আমি গিয়ে তার সামনে তাকে সালাম দিলাম সে সালামের উত্তর দিলো, ম্যাডাম ভিতরে চলে গেলো, আমাকে তার পাশে বসিয়ে আমাকে বলে,,
স্যারঃ তুমি আমার কতবড় সাহায্য করলে তার জন্য তোমার কাছে আজিবন কৃতজ্ঞ থাকব। আমার মেয়ে তোমাকে যা বলেছে তার জন্য দয়া করে তুমি কিছু মনে করওনা।
আমিঃ একি বলছে আপনি । আমি কিছু মনে করবো কেন আর তাহলে কি আমি আসতাম নাকি।
স্যারঃ ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছে। আমিও ব্যবসায়ী কাজের কারনে ওকে সময় দিতে পারিনি। তাই এরকম বদমেজাজি হয়েছে, তার উপরে আবার খারাপ সঙ্গ পেয়ে বেশি বিগড়েছে।
স্যার এর সাথে বসে আরও অনেক কথা বললাম।। সত্যিই তো মা না থাকায় যদি তাকে কোনটা ভালো কোনটা ভুল সেটা বোঝানোর কেউ না থাকে তবে সে মানুষ তো বিগড়ে যাবেই।
স্যার আমার পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে আমি তাকে আমার বিষয়ে সব কিছু খুলে বলি।। কিভাবেপড়া শোনা করেছি সব কিছু শুনে স্যার আমার মাথায় হাত দিয়ে বলে।
স্যারঃ তোমার মতো ছেলে নিজের সন্তান হিসেবে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তোমার মা সত্যিই খুব ভাগ্যবতি।
এই বাসায় খাওয়া দাওয়া করেছি। এখন বাসায় ফেরার সময় হয়েছে। তাই স্যার কে বলে বিদায় নিবো তখন স্যার বলে মাঝে মাঝে তার বাসায় আসতে বলে আমি তার কথা সমমতি জানাই। ম্যাডাম বলল আমাকে সে আমার বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসবে আমি না করলেও সে বলে সে নামিয়ে দিয়ে আসবে।
তাই আমি আর না করলাম না। ম্যাডামের সাথে তার গাড়িতে করে । আমি বসে আছি তার পাশে ।
নিলিমাঃ আচ্ছা শিমুল আপনার বাসায় কে কে আছে ঢাকায়?
আমিঃ ঢাকায় আমি একাই থাকি,। মা আর বোন গ্রামে থাকে।
নিলিমাঃ কি বলেন,,তাদেরো ঢাকায় নিয়ে আসেন,,এতে আপনার খাবারের সমস্যা হয় না।
আমিঃ কেন,,, আমি বাসায় নিজেই রান্না করি,,,
নিলিমাঃ কি বলেন,,আপনি রান্নাও করতে পারেন,,, ভালোই আমি তো একটা ডিমও ভাজতে পারি না।
এভাবেই তার সাথে প্রায় বের হই। একদিন আমি আর নিলিমা বসে আছি, নিলিমা আমাকে আমার ছোট বেলার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে,,
আমিঃ কি আর বলব,,,গ্রামে একটি গরিব ঘরে জন্ম আমার। বাবা কৃষি কাজ করতেন। সন্ধ্যা হলেই কারেন্ট চলে যেতো আমরা একসাথে যত ছেলে ছিলাম সবাই বের হয়ে যেতাম। এক সাথে সবাই মিলে অন্ধকারে কানামাছি, চোখ পলান্তি (গ্রামের ভাষায়) এভাবে প্রতি কোন না কোন খেলা ধুলা করতাম। গ্রামে যদি কেউ বলত তোদের ওখানে কারেন্ট যায় না। আমরা বলতাম না আমাদের এখানে মাঝে মাঝে কারেন্ট আসে। কারন, থাকার থেকে বেশি সময় কারেন্ট চলে যেতো।
নিলিমাঃ তোমরা পড়াশোনা করতে কখন।
আমিঃ বিদ্যুৎ প্রতিদিন ঠিক টাইম মতোই যেতো তাই তার আগেই পড়া শেষ করে নিতাম। কখনো আবার উঠনে পাটি বিছিয়ে সবাই বসে গল্প শুনতাম। আমরা বসে থাকতাম আর বড় আপুরা, বড়মা, দাদি, মামি, কাকি একাক দিন একাক জন গল্প শোনা তো। কেউ ভুতের গল্প কেউ আমার তাদের সময়ের কথা বলতো, আপুরা বলতো প্রেমের গল্প। যা তারা উপন্যাসে পড়েছে। শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে জোছনার আলোতে। আবার কখনো একসাথের সবাই মিলে রাতের অন্ধকারে এবাড়ি ওবাড়ি গিয়ে দেখতাম কারো গাছের ফল, খেজুর গাছের রস কারও খোপের মুরগী এসব নিয়ে সবাই মজা করে খেতাম। এর মধ্যে মনে করো আমার এক বন্ধুর বাড়ির মুরগি চুরি করে তাকে নিয়ে আসি খেতে, খেয়েছেও মজা করে। পরে সকালে ওর মা খোপ খুলে দেখে ওদের বড় মুরগিই নেই,,। তার পর ও আমাদের কাছে আসে। ওর চেহারা দেখার মতোছিলো। 😄😄
নিলিমাঃ তখন কেউ কিছু বলত না আপনাদের,।
আমিঃ কিভাবে বলবে কেউ জানতো নাকি। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আমাদের সাথে চেয়ারম্যানের দুই ছেলে আবার তার ভাগনে এরাও ছিলো তাই কেউ বুঝতে পারলেও কিছু বলতো না। এখনো তো মনে করো যে মানুষ যদি বিদেশে থেকে আসলেও কেউ কারো বাড়ি যায় না। আর তখনো যদি কেউ ঢাকা থেকে আসতো অন্যরকম একটা আনন্দ ছিলো। আমরা গেলে বিস্কুট দিতো সেই বিস্কুট এখন আর দেখা যায় না, টাকার কয়েলের মতো দেখতে ছিলো,আরও অনেক কিছু নিয়ে আসতো। তখন এক টাকা ৪টা লজেন্স পাওয়া যেতো। স্কুলে যাবার সময় ২ টাকার জন্য অনেক কান্না করেছি। এর জন্য মায়ের হাতে অনেক মার ও খেয়েছি তখন হয়তো বুঝতে পারতাম না। এখন বুঝতে পারছি যে কম কষ্টে তখন মা মারতেন না। বন্যার সময় স্কুলে যাবার রাস্তায় পানি উঠে যেতো। তখন আমরা লুঙ্গি পড়ে তারপর সেই লুঙ্গি কাছা দিয়ে তার পর যেতাম। বন্যা বেশি হলে স্কুল তলিয়ে যেতো। তখন আমাদের ওখানে একটা মোল্লার হাট নামে একটা মসজিদ ছিলো সেখানে মাদ্রাসায় আমাদের পড়ানো হতো। স্কুল ছুটি দিলে বৃষ্টি হলে মা ছাতি নিয়ে চলে আসতো।কখনো বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়িতে আসতাম। তখন এই টেকনোলজি না থাকলেও কখনো বোরিং লাগেনি। সব সময় খেলা ধুলা মারা মারি। বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলা। আবার কখনো হা-ডু-ডু খেলা। তখন সিনিয়র জুনিয়র হা-ডু-ডু খেলা হতো সারা গ্রামে মাইকিং করে দি তো আমরা খেলা দেখার জন্য স্কুল পালিয়ে চলে আসতাম। কোনদিন আবার স্কুলে যেতামিই না। সেই সময়টা কে অনেক মিস করি। এখন হয় তো সেই আগের মতো কারেন্ট যায় না চুরি হয় না। যে রাস্তায় হা-ডু-ডু খেলা হতো সেখানে এখন পাকা রাস্তা হয়ে গেছে। এখন আর সেই আগেই মতো নেই। ছাপড়ার স্কুল এখন বিল্ডিং হয়ে গেছে, রস্তায় আর পানি উঠে না। এখন ছাতা ব্যাগের ভিতরেই থাকে বৃষ্টি হলে বের করা হয়।
আমার কথা শুনে নিলিমা এক ধ্যানে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
নিলিমাঃ তোমার ছোট বেলার কথা শুনে মনে হচ্ছে এ জিবনে অনেক কিছু মিস করেছি,,যা তুমি উপভোগ করেছো,,,
চলবে,,,,,,,,
share korben plz🙏🙏
বিঃ দ্রঃ লেখায় কোন ভুল থাকলে ক্ষমা করে দেবেন 🙏🙏🙏🙏