গল্প – বডিগার্ড থেকে বর
.
Part – 11
.
writer – #ArFin_SuMon (Mr. Romio)
.
.
এ কেমন বায়না করলো আম্মু। মুরগি কে বলছে বাঘ কে ডিনারের জন্য রাজি করাতে। বাঘে যদি আমারে চেপে ধরে তাহলে তো আমি শেষ।
রাতে ডিনার করার সময়…
.
আমিঃ- ম্যাডাম অনেকদিন হলো কোথাও যাওয়া হয়না। চলেন কোথাও থেকে একটু ঘুরে আসি।
ম্যাডামঃ- মতলব কি সেটা বল তো?
আমিঃ- মতলব আবার কি হবে, আম্মু ফোন দিয়ে বলছে আপনাকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে যেতে কালকে। আপনি কি যাবেন?
ম্যাডামঃ- না আমি কোথাও যাবো না। তুই যা।
আমিঃ- আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাবো। আপনাকে যেতে হবে না।
ম্যাডামঃ- হুম।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানিয়ে নাস্তা করে রেডি হয়ে নিলাম। যেতে যেতে এমনি সন্ধ্যা হয়ে যাবে জ্যামে পড়লে তো অবস্থা হালুয়া হয়ে যাবে।তবুও রওনা দিতে দিতে ৯ টা বেজে গেলো।
.
ম্যাডামঃ- ওই দাড়া আমি যাবো তো।
আমিঃ- আপনি আবার কোথায় যাবেন?
ম্যাডামঃ- আমি কি এখানে একা থাকবো নাকি আমাকে আমাদের বাড়িতে রেখে তারপর যাবি তুই।
আমিঃ- আমি পারবো না। আপনি পথে নেমে পড়লে তো হয়।
ম্যাডামঃ- পারবো না। তুই রেখে আসবি।
আমিঃ- আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি আসি। আর আপনি যদি আমার সাথে যেতে চান তাহলে আমার বাড়িতে যেতে হবে না হলে আপনার পথে আপনি যান, আমার পথে আমি যাবো।
ম্যাডামঃ- তুই তো আচ্ছা ফাজিল ছেলে। আমি যেটা বলবো তোকে সেটা করতে হবে।
আমিঃ- সেটা পরে দেখা যাবে। আগে তো রওনা দিই।
ম্যাডামঃ- হুম? চল।
.
বাস চলছে নিজের আপন গতিতে আমরাও এগিয়ে যাচ্ছি বাড়ির দিকে। বডিগার্ডের কাজ পাওয়ার পর আর বাড়িতে যাওয়া হয়নি। আজ অনেক দিন পর যাচ্ছি।
ম্যাডাম বসে আছে আমার পাশের সিটে আর চিপস খাচ্ছে। এ মেয়েটি কি কিছু পারে না চিপস খাওয়া ছাড়া।
অনেক্ষন পর ম্যাডাম আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। অনেক্ষন চিন্তা করে দেখলাম, এখন ঘুমাচ্ছে পরে যখন ঘুম থেকে উঠে দেখবে আমার কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে আছে তখন দেখে যদি থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় তাহলে বাসের মধ্যে যা একটু সম্মান আছে সেটাও খেয়ে ফেলবে। তার থেকে বরং জাগিয়ে দিই।
.
আমিঃ- ম্যাডাম (হালকা করে মাথায় নাড়া দিয়ে ডাকলাম)
ম্যাডামঃ-………(চুপ)
আমিঃ- ম্যাডাম উঠেন।
ম্যাডামঃ- কি হয়েছে? (একটু লজ্জা পেলো আমার কাঁধে ওনার মাথা দেখে)
আমিঃ- ব্যাথা করছে হাতে।
ম্যাডামঃ- তো আমি কি করবো?
আমিঃ- আপনার জন্য তো এমন হলো!
ম্যাডামঃ- আমি কি করছি?
আমিঃ- আপনি যদি আমার কাঁধে মাথা না রাখতেন তাহলে ব্যাথাও হতো না।
ম্যাডামঃ- এই তোর লজ্জা করে না, একটা মেয়ের মাথা কাঁধে রাখতে পারছিস না।
আমিঃ- আমার কি ঠেকা পড়ছে যে আপনার মাথা আমার কাঁধে রাখবো।
ম্যাডামঃ- বেশি কথা বলিস কেনো? চুপ থাকতে পারিস না?
আমিঃ- না পারি না।
ম্যাডামঃ- আবার কথা বলিস মুখে মুখে!
আমিঃ- এই তালা দিলাম মুখে আর কোন কথা বলবো না।
.
বাড়িতে আসতে আসতে ৭ টা বেজে গেলো। পথে একটু কথাও হয়নি ম্যাডামের সাথে। কখন যে বাসার দরজায় এসে দাড়িয়েছি নিজেই জানি না।
.
আম্মুঃ- কিরে কি ভাবছিস?
আমিঃ- ওহহ আম্মু তুমি?
আম্মুঃ- আমি হবো না কি ভূত হবে নাকি?
আমিঃ- না, তেমনটা না।
আম্মুঃ- আমার বউমা কে নিয়ে আসছিস তো?
আমিঃ- তোমার বউমা কোথায় পাবো?
আম্মুঃ- পিছনে দাড়িয়ে আছে যে ওটা কে?
আমিঃ- ভূত মনে হয় তাকিয়ে দেখ।
আম্মুঃ- কি? তুই আমার বউমা কে ভূত বললি? তোর আজকে খাওয়া বন্ধ।
আমিঃ- খাওয়ার এত শখ নাই। তুমি তোমার বউমা কে নিয়ে খাওয়াও।
আম্মুঃ- আসো মা ভিতরে আসো।
.
এটা কি হলো। ম্যাডাম তো চলে এলো। মাইয়া জাতি বড় অদ্ভুদ জাতি। সকালে কত ভেজাল করলো এই মাইয়া এখানে আসবে না বলে আর এখন কত সহজে আম্মুর সাথে হাসি-খুশি চলল।মনেই হচ্ছে না মেয়েটি রাগি, বদমেজাজি।
.
আম্মুঃ- রমিও খেতে আয়।
আমিঃ- খাবো না, তুমি খাও তোমার বউমা কে নিয়ে।
আব্বুঃ- রমিও আয় বাবা অনেকদিন হলো একসাথে বসে খাওয়া হয়নি।
আমিঃ- না না খাবো না, তোমাদের বউমা আসছে ওরে নিয়ে খাও।
আম্মুঃ- ওই বেশি বারাবারি করবি তো খাওয়া আর পাবি না।
আমিঃ- এই না, তা কি করে হয় আম্মু?
আম্মুঃ- তা যদি না হয় তাহলে খেতে আয়।
আমিঃ- আসছি, হাফ মিনিট দাড়াও।
আম্মুঃ- দাড়ানোর সময় নাই।
আমিঃ- এইতো আসছি।
আম্মুঃ- বসে পড়।
আমিঃ- এত আয়োজন কখন করলে আম্মু?
আম্মুঃ- আমার বউমা আসবে আর আমি কিছুই রান্না করবো না নাকি?
আমিঃ- আমার জন্য তো কোনদিন এতকিছু করনি আজ বউমা আসছে বলে এত কিছু!
আম্মুঃ- আবার যদি শুনি আমার বউমা কে নিয়ে কোন কথা বলিস তাহলে তোর কপালে কিছুই জুটবে না। এবার বল কি করবি?
আমিঃ- কিছুই বলবো না আর এই চুপ করলাম।
.
বাপরে বাপ এ কেমন বিচার। আম্মুও দেখছি ম্যাডামের দিকে ঝুকে পড়ছে। এই মাইয়া কি কোন যাদু জানে নাকি। যদি এমন যাদু আমি জানতাম তাহলে কবে ম্যাডামকে থুক্কু বউ কে পটিয়ে নিতাম।
খাওয়া শেষ করে বাইরে গিয়ে একটু ঘুরাঘুরি করে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আমার রুমে ঘুমাতে গেলাম।
রুমে ডুকে দেখি ম্যাডাম বসে আছে বিছানায়।
অনেক ক্লান্ত লাগছে তাই কোন কথা না বলে বালিশ নিয়ে নিচে শুয়ে পড়লাম। চোঁখ বন্ধ করার সাথে সাথে বুকের উপর ভারি ভারি লাগছে সাথে গলা চেপে ধরছে মনে হলো কেউ।
চোঁখ খুলে দেখি ম্যাডাম।
.
আমিঃ- আরে আরে কি করছেন? ছাড়ুন বলছি।
ম্যাডামঃ- ছাড়বো না, কি বলা হচ্ছে শুনি?
আমিঃ- কি বলছি?
ম্যাডামঃ- মনে করে দেখ কি বলছিস।
আমিঃ- মনে পড়ছে না, মরে যাবো তো ছাড়ুন বলছি ছাড়ুন।
ম্যাডামঃ- ছাড়বো না, কি বলছিস হুহ? তোমার বউমা আসছে তোমার বউমা কে নিয়ে খাওয়াও। এই আমি তোরে বলছিলাম না আমার বাড়িতে রেখে আসতে।
আমিঃ- আমিও বলছিলাম পারবো না। ছাড়ুন না ম্যাডাম মরে যাবো তো।
ম্যাডামঃ- ছাড়বো না, মরে যা। মরে গেলে তো আমি বাঁচি।
আমিঃ- হিহিহিহিহিহি, আমি তো মরবো না।
ম্যাডামঃ- তাহলে আমি তোরে নিজের হাতে খুন করবো।
আমিঃ- পারলে করেন কে বারন করছে।
ম্যাডামঃ- মারবো মারবো সুযোগটা আগে আসুক তারপর।
.
দুই দিন বাড়িতে কাটানোর পর আবার ঢাকায় ফিরে এলাম। তারপর থেকে আগের মতো চলছে। সবসময় প্যারা দিয়ে চলছে ম্যাডাম থুক্কু বউ।
পরদিন বিকালে…
.
ইভাঃ- এই রমিও কেমন আছো?
আমিঃ- ভালো, তুমি।
ইভাঃ- ভালো থাকতে তুমি কোথায় দিচ্ছো?
আমিঃ- আমি কি করছি?
ইভাঃ- তোমায় যে ভালোবেসে ফেলছি।
আমিঃ- ম্যাডাম জানে এটা?
ইভাঃ- পাগল নাকি? তোমার ম্যাডাম জানতে পারলে তো আমাকে মেরে ফেলবে। ওইদিন যা করলো তোমার কথা জিঙ্গাস করাতে।
আমিঃ- তাহলে এখন আবার কথা বলছো কেনো? তুমিও মরবা সাথে আমারেও মারবা।
ইভাঃ- আচ্ছা তোমার বউ তো তোমাকে ভালোবাসে না তাহলে ওকে ডিবোর্স দিয়ে দাও।
আমিঃ- যাও যাও তুমি গিয়ে ম্যাডাম কে বলে আসো আমাকে যেনো ডিবোর্স দিয়ে দেয়।
ইভাঃ- আচ্ছা বলবো। তবে ডিবোর্স দিয়ে দিলে আমাকে গলায় ঝুলিয়ে নিতে হবে।
আমিঃ- যদি ডির্বোস করাতে পারো তবে।
ইভাঃ-.ওকে আমি রাজি।
আমিঃ- তবে ম্যাডাম যদি আমারে কিছু বলে তাহলে আমি সব বলে দিবো।
ইভাঃ- তোমাকে বলতে হবে না আমি বিকালে তোমাদের বাসায় এসে জানাবো।
আমিঃ- যদি মার খেতে না চাও তাহলে বাসায় থাকো আর যদি মাইর খাওয়ার শখ থাকে তাহলে বিকেলে এসো।
ইভাঃ- হুম, আসবো আসবো।
.
কি মেয়েরে বাবা মরার ভয় নেই নাকি। ও আসবে আমার আর ম্যাডামের ডিবোর্স করাতে। আমার তো লুঙ্গি ড্যান্স দিতে ইচ্ছো করছে। বিকালে এসো চা নাস্তার বদলে মাইর খেয়ে যেও। ইদানিং ম্যাডাম আমাকে যেভাবে প্রতিদিন পিটায় কোন কারন ছাড়া আর ওনি আসবে ডিবোর্স নিয়ে কথা বলতে। ওহহহ ওই মাইয়ার তো পরিচয় দেওয়া হয়নি ওনি হলো আমাদের বাড়ির থুক্কু আমার শ্বশুর বাড়ির পাশের বাসার একটি মেয়ে এখানে আসার পর থেকে আমার পিছনে পড়ে আছে। ওর নাম তো বলা হয়েছে তবুও বলি ও ইভা। পড়ালেখা শেষ করে বসে আছে থুক্কু বসে নাই আমার পিছনে পড়ে আছে।
আজকে আর ঘুমালাম না ৪ টার সময় বের হয়ে গেলাম বাসা থেকে বাসায় থাকলে আজকে আমার উপর দিয়ে শনি,রবি,সোম,মঙ্গল সব চলবে।
৯ টার দিকে বাসায় ডুকলাম। ডুকে সোজা রান্না ঘরের দিকে দিলাম দৌঁড় খুব ক্ষিদে লাগছে খাবার গরম করতে হবে। ম্যাডাম ঠান্ডা খাওয়ার খেতে পারে না আর আমি ঠান্ডা ছাড়া খেতে পারি না।
রাতে একসাথে খেয়ে শুয়ে পড়লাম আমার রুমে গিয়ে। ম্যাডাম থাকে অন্য রুমে। একটু পরে ম্যাডাম ডুকলো আমার রুমে হাতে একটা লাঠি নিয়ে।এদিকে ভয়ে আমি কাঠ হয়ে যাচ্ছি।
.
ম্যাডামঃ- এই এদিকে আয়।
আমিঃ- কেনো ম্যাডাম?
ম্যাডামঃ- কাজ আছে আয়।
আমিঃ- কি কাজ তাড়াতাড়ি বলেন আমি ঘুমাবো।
ম্যাডামঃ- তোর ঘুমা পাড়াচ্ছি দাঁড়া।
আমিঃ- আরে আরে ম্যাডাম আমাকে মারছেন কেনো? আমি কি করছি?
ম্যাডামঃ- তুই পাশের বাসার ইভা প্রেত্নি কে কি বলছিস?
আমিঃ- বিশ্বাস করেন ম্যাডাম আমি কিছু বলি নাই।
ম্যাডামঃ- তাহলে ও কি আমারে বোকা বানাইছে?
আমিঃ- হতে পারে।
ম্যাডামঃ- তার মানে তুই বলতে চাচ্ছিস আমি বোকা?
আমিঃ- সেটা কখন বললাম?
ম্যাডামঃ- তাহলে কি বলছিস?
আমিঃ- কিছু বলি নাই।
ম্যাডামঃ- আবার মিথ্যা কথা বলিস তোরে তো আজকে শেষ করে দিবো।
আমিঃ- আমি কিছু করিনাই তো ম্যাডাম সব দোষ ওই ইভার।
ম্যাডামঃ- আহহহ ইভা, তুই ওরে বলিস নাই আমারে ডিবোর্স দিয়ে ওরে বিয়ে করবি? বলিস নাই?
আমিঃ- ম্যাডাম আমি এটা বলি নাই ও আপনাকে মিথ্যা বলছে।
ম্যাডামঃ- তুই বলছিস, আমি লুকিয়ে লুকিয়ে সব শুনছি।
আমিঃ- কি? আপনি এমন কেনো ম্যাডাম?
ম্যাডামঃ- কেমন?
আমিঃ- লুকিয়ে লুকিয়ে অন্যের কথা শুনছেন এটা ঠিক না।
ম্যাডামঃ- তুই আমারে কোনটা ঠিক আর কোনটা ঠিক না সেটা শিখাতে আসবি না আমি সব জানি।
আমিঃ- জানলে ভালো,এখন আমি ঘুমাবো অনেক মার খাইছি।
ম্যাডামঃ- কি তুই ঘুমাবি?
আমিঃ- হুম।
ম্যাডামঃ- তোরে আমি ঘুমাতে দিবো না। তোর কাজ হলো আজকে সারারাত আমাকে পাহারা দেওয়া।
আমিঃ- পারবো না।
ম্যাডামঃ- না পারলে আবার শুরু করবো তখন বুঝবি।
আমিঃ- আবার শুরু করার দরকার নেই আমি রাজি।
ম্যাডামঃ- চল।
আমিঃ- হুম।
ম্যাডামঃ- বাইরে না রুমের ভিতরে এসে পাহারা দিবি।
আমিঃ- ভিতরে কেনো বাইরে থেকে দিলে কি হবে?
ম্যাডামঃ- যেটা বলছি সেটা কর।
আমিঃ- হুম।
.
ঘুমে মাথাটা কেমন করছে আর এই মাইয়া দাঁত বের করে হাসছে। ইচ্ছে করছে ঘুশি মেরে দাঁত ভেঙ্গে দিই। দেখ দেখ দাঁত কেলাচ্ছে আবার।
.
আমিঃ- এই ম্যাডাম এই।
ম্যাডামঃ- চিল্লাছিস কেনো?
আমিঃ- আমি ঘুমাবো।
ম্যাডামঃ- তোরে ঘুমাতে দিচ্ছে কে? এটা তোর শাস্তি।
.
.
চলবে……………………