গল্প – বডিগার্ড থেকে বর
.
Part – 10
.
writer – #ArFin_SuMon (Mr. Romio)
.
.
ম্যাডামঃ- খাবো।
আমিঃ- কি খাবেন?
ম্যাডামঃ- বিরিয়ানি খাবো।
আমিঃ- সাথে আর কিছু লাগবে?
ম্যাডামঃ- একটা প্রান আপ নিয়ে আসবি।
আমিঃ- টাকা দেন।
ম্যাডামঃ- এই তোর লজ্জা করে না আমার কাছে টাকা চাইতে!
আমিঃ- লজ্জা করবে কেনো? টাকা তো আমি রাখছি আপনার ব্যাগে।
ম্যাডামঃ- কি?
আমিঃ- আপনি ব্যাগ খুলে দেখেন।
ম্যাডামঃ- কখন রাখছিস?
আমিঃ- রাখছি বলা যাবে না,এখন টাকা দেন না হলে পরে কিছুই পাবো না।
ম্যাডামঃ- এই নে।
আমিঃ- ২০০ টাকা দিয়ে কি পাবো ম্যাডাম?
ম্যাডামঃ- কি পাবি তুই বল।
আমিঃ- দুইটা বিরিয়ানি প্যাকেট পাবো আর একটা প্রান আপ পাবো।
ম্যাডামঃ- ঠিকআছে তো আর কি?
আমিঃ- আর কি মানে সকালে নাস্তা যে করবেন, আটা ময়দা কিছু তো একটা লাগবে।
ম্যাডামঃ- বেশি কথা বলবি না,সকালেও বাইরে থেকে নিয়ে আসবি এখন তাড়াতাড়ি যা।
আমিঃ- যাচ্ছি
ম্যাডামঃ- এই দাড়া?
আমিঃ- আবার কি?
ম্যাডামঃ- আমি কি দাঁড়িয়ে থাকবো?
আমিঃ- বসতে কে বাঁধা দিলো আপনাকে?
ম্যাডামঃ- আমি কি এই ময়লায় বসবো নাকি পরিস্কার করে দিয়ে তারপর যাবি।
আমিঃ- পারবো না,আপনি ঘুমাবেন আপনি করেন।
ম্যাডামঃ- মাথা গরম করবি না বলে দিলাম।
আমিঃ- মাথা গরম হলে তো ভালো।
ম্যাডামঃ- কেনো?
আমিঃ- চায়ের জন্য পানি গরম করবো।
ম্যাডামঃ- তোরে খাইছি দাড়া..
.
কে শুনে কার কথা। মাইর খেতে না চাইলে দৌঁড়া রমিও।
খাবার নিয়ে বের হয়ে ল্যামপোস্টের আলোয় চুপচাপ হাটছি আর ভাবছি কি থেকে কি হয়ে গেলো। ছিলাম বডিগার্ড আর এখন বর হয়ে গেলাম। তাও আবার যে সে বর না বডিগার্ড থেকে বর i mine বডিগার্ড বর হয়ে গেলাম। কি কপাল আমার। কয়জনের ভাগ্যে এমটা হয়।
ভাবতে ভাবতে বাসায় পৌঁছালাম।
কলিং বাজানোর সাথে সাথে দরজা খুলে দিলো ম্যাডাম।
.
ম্যাডামঃ- ওই বান্দর তুই এতক্ষন কি করছিলি বাইরে?
আমিঃ- খাবার আনতে গেছি।
ম্যাডামঃ- এতক্ষন লাগে?
আমিঃ- সময় লাগবে না নাকি?!
ম্যাডামঃ- তাই বলে এতক্ষন লেট করবি। আমি সেই কখন থেকে বসে আছি তোর জন্য।
আমিঃ- সূর্য কোন দিকে উঠলো?
ম্যাডামঃ- রাতের আকাশে তুই সূর্য দেখছিস কোথায়?
আমিঃ- সেটা পরের কথা আগে বলেন আমার জন্য অপেক্ষা করার কারন কি?
ম্যাডামঃ- ক্ষিদে লাগছে কখন খাবার নিয়ে আসবি তাই।
আমিঃ- ওহহহ,এই নিন আপনার বিরিয়ানি।
ম্যাডামঃ- বসবো কোথায়।
আমিঃ- ওহহ আল্লাহ আমারে উঠাই নাও না কেনো? কোথায় বসবো সেটাও নাকি আমি ঠিক করে দিবো।
ম্যাডামঃ- ওই চুপ,সব জায়গায় তো ময়লা জমে আছে কোথায় বসবো? তুই সোফাটা পরিস্কার করে দে, আমি সোফায় ঘুমাবো।
আমিঃ- এয়য়য় শখ কত। আমি ঘুমাবো ফ্লোরে? আপনি যেকোনো একটা রুম পরিস্কার করে ঘুমাবেন।
ম্যাডামঃ- ওই আমি তোর ম্যাডাম আমি যা বলবো তুই তা করবি।
আমিঃ- কোন উপন্যাসে লেখা আছে?
ম্যাডামঃ- তোর জন্য উপন্যাস খুঁজতে পারবো না যেটা বলছি সেটা কর।
আমিঃ- ঠিক আছে ম্যাডাম। আপনি খেয়ে নিন।
.
এই মাইয়ার উপর ঠাডা পড়ুক। সোফায় রাত কাটিয়ে দিবো ভাবছি আজকে কিন্তু সেটা স্বপ্নই থেকে গেলো। এই মাইয়ার জন্য তা হলো না। এটা সেটা করতে করতে রাত ২ টা বাজলো। ক্ষিদেও লাগছে হেব্বি। খুব ঘুমও পাচ্ছে। ম্যাডাম খেয়ে শুয়ে পড়ছে। এটা কি সেই বদরাগী মেয়েটি? কি সুন্দর লাগছে ঘুমন্ত অবস্তায় আমার ম্যাডাম কে।কিছু চুল এসে মুখে পড়ে আছে এতে করে আরো মায়াবী লাগছে ম্যাডামকে ।একটু ছুঁয়ে দিয়ে ইচ্ছে করছে ম্যাডামকে। আচ্ছা ম্যাডাম তো এখন আমার বউ ছুঁয়ে দেখবো কি একটু। যদি একটা থাপ্পড় দেয় তখন কি হবে। না বাবা দরকার নেই ছুঁয়ে দেখার পরে কোনদিন যদি আমায় মেনে নেয় তারপর না হয়ে ছুঁয়ে দেখা যাবে।
খেয়ে শুয়ে পড়লাম ফ্লোরে। সেই একটা ঘুম হলো।কিন্তু সকালে আর শান্তিতে ঘুমাতে পারলাম না ২ টায় ঘুমাইছি সেখানে সারাদিনের ক্লান্তি কাটিয়ে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে ১০ না হোক ৮ তো বাজতে হবে। কিন্তু না সেটা আর হলো না। সকাল সকাল ম্যাডামের চিল্লানি তে ঘুম ভাঙ্গলো।
.
আমিঃ- ম্যাডাম সকাল সকাল এতো চিল্লানি শুরু করে দিলেন কেনো?
ম্যাডামঃ- চিল্লানি দিবো না কেনো তুই বল? কালকে রাতে মশার কামড়িয়ে কামড়িয়ে আমারে শেষ করে দিলো তারউপর ঠান্ডা লাগছিলো তুই একটা চাঁদরও দিলি না গায়ে। আমি একটুও ঘুমাতে পারিনি।
আমিঃ- ওহহহ আল্লাহ আমি কোন মেয়ের পাল্লায় পড়ছি। ওনি রাতে ঘুমাতে পারে নাই বলে আমারেও ঘুমাতে দেয় নাই।
ম্যাডামঃ- প্রতিদিন তো সকাল ৬ টায় উঠিস আর এখন ৮ টা বাজে উঠছিস তারপরও এমন করছিস কেনো? এখন যা নাস্তা নিয়ে আয়।
আমিঃ- এয়য়য়য়, আমি যে সকাল ৬ টায় উঠি তা আপনি জানলেন কি করে? তারমানে আপনি আমায় প্রতিদিন লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছেন?
ম্যাডামঃ- তোরে দেখতে যাবো কেনো? তুই কে? নাস্তা নিয়ে আয় ক্ষিদে লাগছে।
আমিঃ- যাচ্ছি।
.
নাস্তা শেষ করে কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। এত বড় বাড়ি পুরোটা আরো দুজন মানুষ কে নিয়ে পরিস্কার করলাম। ম্যাডাম বসে বসে দেখছে আর চিপস খাচ্ছে এই মাইয়া পারেও বটে। সারাদিন চিপস খেয়ে কাটিয়ে দিলো। কয়টা খাইছে হিসাব নেই। আর এদিকে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ক্ষিদে।
.
আমিঃ- ম্যাডাম রাতে কি খাবার নিয়ে আসবো নাকি রান্না করবো।
ম্যাডামঃ- বাইরের খাওয়ার বেশি খেলে শরীর খারাপ করবে। তুই রান্না করে নিবি
আমিঃ- পারবো না। আপনি করে নেন।
ম্যাডামঃ- বাবা কি বলছিলো মনে নাই তোর? আমারে দেখে রাখতে বলছে।
আমিঃ- দেখে রাখতে বলছে রান্না করে খাওয়াতে নয়।
ম্যাডামঃ- বেয়াদব মুখে মুখে কথা বলিস যা বলছি তাই কর।
আমিঃ- পারবো না। আমি খাবো না রান্নাও করবো না। সারাদিন কাজ করছি এখন ঘুমাবো।
ম্যাডামঃ- ঠাসসসসসসসস। যা রান্না কর।
.
শালার কপাল বিয়ে করছি কোথায় বউয়ের হাতে রান্না খাবো। কিন্তু এমন পোড়া কপাল শুধু থাপ্পড় খাচ্ছি। দূর ভাল্লাগে না।
প্রথমে ভাবলাম রান্না করবো না পরে ভাবলাম রান্না না করলে তো মেয়েটি খাবে না। দুপুরে কাজে ব্যস্ত ছিলাম বলে রান্নাও করতে হয়নি বাইরে থেকে কিছু নিয়ে আসতেও হয়নি। সকালে চিপস আনতে বলছে, ওগুলো খেয়েছে সারাদিন বাচ্ছাদের মতো বসে বসে।
যা পারি কিছু একটা রান্না করি। কিছু একটা তো খাওয়া হবে।
রান্না শেষ করে ম্যাডামকে খেতে ডাকতে গিয়ে দেখলাম গান শুনছে মোবাইলে ইয়ার ফোন লাগিয়ে। সেটা ওনার বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গির মাধ্যমে বুঝা যাচ্ছে।
.
আমিঃ- ম্যাডাম…
ম্যাডামঃ- (চুপ)..
আমিঃ- ম্যাডাম….
ম্যাডামঃ- (চুপ, কোনো সাড়া নেই)…
আমিঃ- ওহহ ম্যাডাম। (অনেক জোরে চিল্লিয়ে)
ম্যাডামঃ- ওই কি হয়েছে চিল্লাস কেনো?
আমিঃ- খেতে আসেন।
ম্যাডামঃ- খাবো না, তোর খাবার তুই খা গিয়ে।
আমিঃ- না খাইলে আমার কি..
.
রান্না করছি খেলে খাবে না খেলে নাই আমার কি।আমি খাওয়া শুরু করার পরে ম্যাডাম এসে বসে পড়লো। আমি শুধু খাচ্ছি, ম্যাডাম যে আসছে সেটা আমি জানি না এমন ভাব করছি।
.
ম্যাডামঃ- ওই প্লেট দে, ক্ষিদে লাগছে খাবো তো।
আমিঃ- একটু আগে তো বললেন খাবেন না তাহলে এখন আবার খেতে আসছেন কেনো?
ম্যাডামঃ- তোরে বলবো কেনো? তুই কে?
আমিঃ- আপনার বর।
ম্যাডামঃ- ঠাসসসসসসসস। আবার যদি কোন দিন তোর মুখে এই কথা শুনি তো তোর খবর আছে।
আমিঃ- আচ্ছা ঠিক আছে আর বলবো না এবার খেয়ে নিন।
ম্যাডামঃ- শুধু কি এই ভাত আর ডিম ভাজি?
আমিঃ- হুম,আজকের মতো এখানে শেষ করেন।
ম্যাডামঃ- আমি খাবো না।
আমিঃ- না খেলে নাই, আমার কি?
ম্যাডামঃ- আমি এগুলো খাবো না। কিছু নিয়ে আয় বাইরে থেকে।
আমিঃ- পারবো না,আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো।
ম্যাডামঃ- আমি কি না খেয়ে থাকবো সারা রাত?
আমিঃ- রান্না করা আছে খেলে খাবেন না খেলে আমার কি?
ম্যাডামঃ- আমি খাবো না।
.
দূর, না খেলে না খাবি। রান্না করার দরকার ছিলো রান্না করছি। খেলে খাবি না খেলে মশা খা গিয়ে।
হাত পা বিছানায় ছড়িয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম।বিছানা ভিজে ভিজে লাগছে কেনো? তাহলে কি আমি হিসু করে দিছি। না তা কি করে হয় আম্মু বলে আমি নাকি ল্যাংটা কাল থেকে বিছানায় হিসু করি না। আজকে কি সে রেকর্ড ভেঙ্গে ফেললাম নাকি। না সেটা কি করে হয়। তাড়াতাড়ি করে উঠে বসে দেখি ম্যাডাম হাতে একটা বালতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে আমি রেকর্ড ভাঙ্গি নাই ম্যাডাম পানি ডেলে দিছে বিছানায়।
.
আমিঃ- ম্যাডাম এটা কি হলো? আপনার জন্য কি একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারবো না?
ম্যাডামঃ- ঘুমাবি মানে কি? আমি জেগে থাকবো তুই ঘুমাবি সেটা হবে না। অনেক ঘুমাইছিস এবার উঠে নাস্তা রেডি কর। কালকে সারা রাত ক্ষিদের জ্বালায় ঘুমাতে পারিনি।
আমিঃ- খাবার তো ছিলো,না খেলো কি করার থাকে বলেন?
আমিঃ- বেশি কথা বলবি না। নান্তা রেডি কর।
আমিঃ- যাচ্ছি।
.
মেয়েটি কি একটু নরম সুরে কথা বলতে পারে না।সব সময় কেমন যেনো খিটখিট করে। ভাল্লাগে না।
.
সব সময় ম্যাডামের জ্বালাত্বন সাথে থাপ্পড় খেতে খেতে এগিয়ে চলছে আমার বিবাহিত প্যারাময় জীবন।
বউটা আমার রাগি হলে কি হবে কোন খারাপ অভ্যাস নাই। তবে একটা বাজে অভ্যাস আছে সেটা হলো স্বামীর গায়ে হাত তুলে। এ মেয়ের হাতে এখন পযর্ন্ত কয়টা থাপ্পড় খেয়েছি তার কোন ঠিক নেই।
বিকালে ঘুমাচ্ছি এমন সময় মনে হলো ভূমিকম্পন শুরু হইছে। তাড়াতাড়ি বাইরে বের হতে গিয়ে দেখি মোবাইলে আম্মুর নাম্বার ভাসছে। তখন মনে হলো ভূমিকম্পন হচ্ছে না আমার মোবাইলে ডাকতেছে।
.
আমিঃ- হ্যালো আম্মু কেমন আছো?
আম্মুঃ- ভালো থাকতে দিলি কবে? বিয়ে হয়েছে ৩ মাস হতে চললো কিন্তু বউমা কে সেই বিয়ের দিনের পর থেকে আর দেখি নাই। তোরে এতবার করে বললাম বউ কে নিয়ে একবার ঘুরে যা।
আমিঃ- কার বউ? কিসের বউ? কিভাবে বউ হলো?
আম্মুঃ- ওই ফাইজালামি হচ্ছে আমার সাথে?
আমিঃ- যাও কি যে বলো না আম্মু,তোমার সাথে কি আমি ফাইজালামি করতে পারি বলো।?
আম্মুঃ- তাহলে বল কবে আসবি বউমা কে নিয়ে?
আমিঃ- আমি জানি না, জিঙ্গেস করে দেখি যায় কি না!
আম্মুঃ- তুই নিয়ে আসলে তো আসবে। কালকে নিয়ে আসবি।
আমিঃ- আচ্ছা দেখি কি করা যায়।
আম্মুঃ- দেখা দেখির কাজ নাই কালকে আসতে হবে তোদের।
আমিঃ- আচ্ছা আসবো।
.
এ কেমন বায়না করলো আম্মু। মুরগি কে বলছে বাঘ কে ডিনারের জন্য রাজি করাতে। বাঘে যদি আমারে চেপে ধরে তাহলে তো আমি শেষ।
রাতে ডিনার করার সময়…
.
.
চলবে……………………
।
।
(গল্পটি কেমন হচ্ছে সবাই ঘটনামূলক মন্তব্য করে জানাবেন)