তোমার_প্রেমে_পড়েছি #পর্ব_০৪

0
866

তোমার_প্রেমে_পড়েছি
#পর্ব_০৪
#Rimy_Islam

কিন্তু যে ছেলের এখনো পড়াশোনাই শেষ হয়নি তার হাতে মেয়ে দিতে নারাজ ছিলেন রোকন সাহেব। ফলস্বরূপ বিপরীত পন্থা অবলম্বন করে নেত্র।

গতরাত থেকে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে।এর মাঝে বাইরে যাওয়াটা বোকামি ছাড়া আর কি!কে জানে নেত্র আদৌ আসবে কি-না? এক প্রকার জোর খাটিয়ে নমনী আয়নার সামনে বসে নিজেকে পরিপাটি করতে ব্যস্ত হয় ।সে পরেছে চওড়া সোনালী পাড়ের আকাশী রঙা শাড়ী। তবে আজ হাতে কাঁচের চুড়ির স্থানে জায়গা নিয়েছে একজোড়া সফেদ রঙের ঝুমকো বালা। লম্বা লেজের মতো বিনুনীটা পেছনে ছেড়ে দিতেই কোমর ছুঁয়ে বসেছে। আলতো নরম ঠোঁটে লিপবাম লাগিয়ে উঠে পড়ে নমনী। ড্রেসিং টেবিলের সাইড ড্রয়ার থেকে হাতঘড়ি বের করে ঠিক সময় জানান দিচ্ছে কিনা তা দেখেই হাতে পরে নিলো। মুমু কেবল আধবোজা চোখে পিটপিট করে নমনীকে দেখে দীর্ঘ একটা হাই তুলে বললো,
— কোথায় যাওয়া হচ্ছে মহারানীর? বাড়িতে ফিরবি তো?
নমনী আয়নায় পরিপূর্ণভাবে পুনরায় নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বললো,
— নেত্র আসছে নিতে। না যেয়ে উপায় কি বল?
— ইচ্ছে না হলে যাবি না।
— সেই চান্স নেই আপু। শেষে হুলুস্থুল কান্ড বাঁধিয়ে জোরপূর্বক হলেও নিয়ে যাবে। এমনিতেই বাড়ির সবাই আমার প্রতি রেগে আছে। দ্বিতীয় দফা কোনো অনাগত বিপদ চাই না। থাক আপু, আসছি।
— এই দাঁড়া, নেত্র এসেছে?

নমনী পাতলা কানে সেসব না শুনেই বেরিয়ে আসে।ডাইনিং রুমে রোকন সাহেব পেপার হাতে আরাম কেদারার দুলুনিতে একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হতেই কিছুর আওয়াজ পেয়ে লাফিয়ে উঠলেন।
— কে….কে?
— আমি বাবা, নমনী।
— ওহ! কোথায় যাস?
— তোমার জামাই আসছে নিতে। একটু ঘুরতে যাবো।
— জামাই! নিলয় আসছে? কেউ আমাকে বলেনি কেন?
নমনী বিরক্ত হয়।
— কি আজব! আমারও বিয়ে হয়েছে হুঁশ করো বাবা। নেত্র আসছে।
— ওই অপদার্থটা!

নমনী রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বাইরে চলে আসে। মুষলধারার বারি বর্ষণ এখন গুঁড়ি ধারার রুপ নিয়েছে। ওদের বাড়ি পেরিয়ে বামের চওড়া মেঠো রাস্তা ধরে সোজা গেলেই পাঁকা সড়ক।নেত্র মেসেজে জানিয়েছে সে নাকি ওখানেই অপেক্ষারত থাকবে। কাজেই ছাতা নিয়ে হাঁটার পথ ধরে নমনী। নেত্র’র সাথে বিয়ে স্বাভাবিক পরিবেশে হয়নি। বিয়ের পূর্ব অবধি নমনীও দু’ চোখে সহ্য করতে পারছিল না ছেলেটাকে। অথচ তিন কবুল আর সামান্য একটা সই! এরপর চমৎকারভাবে কত কিছুই না বদলে গেল! নমনী আর নমনী থাকলো কই! কোথাও কেউ আগে বা পাছে নেত্র’র নামে একটা টু শব্দ করলেও বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠে ওর। মনে হয় গলা টিপে খুন করে সবাইকে। কেন এমন হয়? জানে না নমনী।যে যা- ই বলুক, নেত্র বিশেষ কেউ সেটা বুঝতে ভুল করেনি সে। আনকোরা একফালি হাসি এসে ভাসিয়ে দিলো তার মুখটা।
নমনী মূল সড়কে একটা কার দেখে আন্দাজ করে নিলো এটা নেত্রই হবে। হাসি আঁটকে মুখে তথাকথিত গাম্ভীর্য নিয়ে এগিয়ে যেতেই গাড়ি থেকে নামে নেত্র। ব্ল্যাক শার্ট উইথ ব্লু জিন্স। তার বা’ হাতে শোভা পাচ্ছে বড় ডায়ালের এক হাতঘড়ি।

নেত্র হাসি হাসি মুখ করে বললো,
— ওয়াও নমনী! লুকিং প্রিটি!
নমনী ছোট করে বললো,
— থ্যাঙ্ক ইউ। যাওয়া যাক!
— মুখ ফোলা মেয়ে নিয়ে যাবো না। মুখের আকার ঠিক করো।
— কি আজব! আমার মুখটা কি ত্যাড়া- বাঁকা?
— ওইরকমই।
— ধূর যাবোই না। এসেছেন একে তো বৃষ্টির দিনে, তার উপর আমার চেহারায় সৌন্দর্য নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন!
— সৌন্দর্যে না, তোমার ক্ষণস্থায়ী ফোলা মুখ ঠিক করে সহজ হও নমনী। কতটা ভালোবাসা থাকলে একটা ছেলে এই বৃষ্টির ভেতর এতটা পথ মাড়িয়ে আসতে পারে আইডিয়া আছে?
নমনী জোর আওয়াজে গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে বসে পড়ে।
— একটা চিজ মেয়ে!
বলেই নেত্রও গাড়িতে বসে।
— নমনী!!
আবেগী, মোলায়েম কণ্ঠে নমনী পাশ ফিরে চাইল। চোখ রাঙিয়ে বললো,
— আবার কি?
নেত্র বিভ্রান্ত হয়ে বললো,
— এত সুন্দর ডাকের প্রতিত্তর এই!! বলছি কোথায় যাবে? চলনবিল, রাজবাড়ি নাকি পাটুল?
— উম…… পাটুল।
— গট ইট। লেট’স গো টু পাটুল।

ভেজা আকাশ, ভেজা বাতাস, ভেজা চারিদিকের পথ-ঘাট। রাস্তায় পায়ের পাতা অব্দি ডুবে যাবে ততটা জল উঠে এসেছে। গাড়ির গ্লাসে বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা লেগে রয়েছে। পাটুল যাওয়ার রাস্তায় রাস্তায় গাড়ি যেতে হয় ধীরে এবং সাবধানে। বর্ষার সময় পাঁকা সড়টায়ও পানি উঠে আসে। দু’পাশে থৈথৈ অতল পানির জোয়ার আর মাঝে নিয়ে রাস্তা। অথচ বছরের অন্য সময়গুলোতে দুইপাশ জুড়ে থাকে বিস্তৃত সবুজে ভরা ধানক্ষেত। নমনীর মনে তখন শুধু একটাই গান বাজছিল।

” অসময়ে এ বৃষ্টিতে আমি…
অসময়ে এ বৃষ্টিতে তুমি….
কিছু না বলা কথা দিলাম ভাসিয়ে…..
ধুয়ে যাক না এ মন অভিমানে।
মেঘলা আকাশ….. হালকা হাওয়া….
যাই ভিজে আর নিজেকে ফিরে পাওয়া।
আধখোলা কাঁচ….. বৃষ্টি ছোঁয়াচ…..
তোমার নামে মেঘের খামে চিঠি দিলাম আজ।
আধভেজা প্রহর…..আধভেজা শহর….
আধভেজা তুমিও আর আধভেজা আমার শহর।”

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here