আকাশে তারার মেলা পর্ব -২২

0
770

#আকাশে_তারার_মেলা
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব -২২

❝কেউ তোর জন্য পাগল হয়ে যাবে সেটা দেখে তুই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবি তাই না? কারো গলায় ফাঁস লাগিয়ে তুই মুক্ত পাখির মতো ডানা মেলে উড়ে বেড়াবি? তোর ডানা আজ ছাটাই করেই ছাড়ব।❞

কথাগুলো বলেই সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তি টা তুলির উপর ঝুঁকে পড়ল। ভয়ে কাচুমাচু করে মুখ ঘুরিয়ে নিল তুলি। নিজের উপর ভারী কিছু অনুভব না করতে পেরে আস্তে আস্তে মুখ ফিরিয়ে দেখল আদ্র এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে। আদ্র কে নিজের খুব নিকটে আবিষ্কার করলেও দু’জনের মাঝে দূরত্ব রয়েছে কিছুটা। আদ্র বিছানায় তুলির দু পাশে হাত রেখে অগ্নি চোখে তাকিয়ে। ফর্সা চেহারা টায় লাল আভা স্পষ্ট যা চাঁদের মৃদু আলোয় দিব্যি চক্ষুগোচর হচ্ছে তুলির। তুলি স্বপ্নেও ভাবে নি আদ্র চলে আসবে এখানে। আসল তো আসল তাও এভাবে ভয়ার্ত রূপ ধারণ করে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল তুলির। বুকের দরফরানি বাড়তে লাগল ক্রমাগত। অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনের শব্দ হয়তো আদ্রর কর্ণপাত হচ্ছে অনাসয়ে। আদ্র কাছে এসেছে কিন্তু কখনও এমন করে তো কাছে আসে নি। তুলির মনে হচ্ছে এই বুঝি আদ্র নিজের সবটুকু ভার ছেড়ে দিবে তার উপর আর হৃৎস্পন্দন ও থেমে যাবে সাথে সাথেই। অগোছালো অনুভূতি, হৃদয়ের অনবরত কম্পন মিলিয়ে বেসামাল হয়ে পড়ছে তুলি। আদ্রর রক্তিম বর্ণ ধারণ করা নীলাভ দু চোখ স্থির তুলির ভয়ার্ত চেহারায়। হয়তো তৃষ্ণার্ত দু চোখ তাদের তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত। মাথায় চেপে থাকা রাগ টাও পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। কেন তুলি না বলে চলে এল? কেন সারাটা দিন ধরে তার স্নিগ্ধ চেহারা টা দেখা থেকে বঞ্চিত করল? কেন বুকের বা পাশ টায় ব্যাথার সৃষ্ট করল? কোনোভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারছে না আদ্র। তুলির আরেকটু কাছে যেতেই আঁতকে উঠল তুলি। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠল-

–” কককি করছেন আদ্র? ”

–” তুই এতো সাহস কোথায় পেয়েছিস তুলা? ভালোবাসা পেয়ে আমার হাতের থাপ্পড়ের কথা ভুলে গেলি? কি বলেছিলাম তোকে? বলি নি তুই একটুও দূরে যেতে চাইলে আমি একদম খুন করে ফেলব?”

আদ্রর অগ্নি ঝরা চোখের দিকে তাকিয়ে তুলি আমতা আমতা করে বলল,

–” আমার মনটা আসার জন্য ছটফট করছিল আদ্র। আপনি না করতেন তাই না বলে চলে এসেছি। আমি কাল সকালেই আবার ব্যাক করতাম।”

মেজাজ আরো গরম হয়ে এল আদ্রর। তুলির উপর থেকে উঠে বসে একটানে তুলি কে নিজের বুকে এনে ফেলল। নাকে হালকা ব্যাথা পেয়ে আহ্ করে উঠল তুলি। আদ্রর জ্যাকেটে খামচে ধরল নিজেকে সামলানোর জন্য। সাথে সাথেই জ্যাকেট থেকে হাত দুটো টেনে ছুটিয়ে নিল আদ্র। দুই বাহুতে শক্ত করে চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বলে উঠল-

–” আমি মরে গেলে তুই ব্যাক করতি? তোর মন আমার জন্য ছটফট করে নি? কয়েক ঘন্টায় পাগল বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছিস। তোকে ছাড়া শ্বাস নেওয়া টা ও দায় হয়ে পড়ছিল। নিজেকে বাঁচানোর জন্য, হৃদপিণ্ডের একটু ব্যাথা কমানোর জন্য ছুটে এসেছি তোর কাছে। আমার বুকের বা পাশ টায় হাত রেখে দেখ কতটা যন্ত্রণা হচ্ছিল আমার। আমার স্পন্দন গুলো কেমন দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে। ”

তুলির হাত টা টেনে বুকের বা পাশে রাখল আদ্র। নিমিষেই ধুক করে উঠল তুলির বুকটা। আবেশে বুঁজে এল দু চোখ। চোখের পাপড়িগুলো ভিজে গেল পানিতে। একটা ম্যাচুরিটি সম্পন্ন মানুষ এতটা ডেস্পারেট হতে পারে? কাউকে এক পলক দেখার জন্য, চোখের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য এভাবে ছুটে আসতে পারে? ভালোবাসায় এতটা ধৈর্য হারা হতে পারে? ছেলে টা কি সত্যিই তুলির ডাক্তার সাহেব? কোথায় গেল আজ তার ডাক্তার সাহেবের ধৈর্য্য শক্তি? এই মুহুর্তে তুলির মনে পড়ছে সেদিনের কথাটা যেই রাতে সিলেট থেকে ফিরে এসেছিল ওরা। আদ্র বুকে জরিয়ে নিয়ে বলেছিল পৃথিবীর যেই প্রান্তেই থাকুক না কেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার জন্য হলেও ছুটে আসবে তার কাছে। সত্যিই এসেছে। তুলির বুক জুড়ে অসহনীয় পীড়া অনুভব করতে লাগল। মাথা গুঁজে নিশ্চুপ হয়ে রইল আদ্রর বুকে। আদ্রর বুকে হাত টা এখনও স্থির। তুলির শরীরের গরম উত্তাপ পেতেই আদ্র স্তম্ভিত হয়ে গেল। হৃদয়ের ব্যাথা টা পলকেই বেড়ে গেল। সেই সাথে বুক টা হাহাকার করে উঠল। তুলি কে বুক থেকে উঠিয়ে অস্থিরতা নিয়ে বলল,,

–” জ্বর কখন এসেছে? তোমার তো জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। এই তুলা? জ্বর কখন এসেছে?”

নিশ্চুপ তুলি। আদ্রর অস্থিরতা দেখে তার বুকটা বেগতিক ধুকপুক করছে। কি জবাব দিবে বুঝতে পারছে না। সকাল থেকে জ্বর জানলে আদ্র তো মেরেই ফেলবে। হয়তো নিজে কষ্টে জর্জরিত হয়ে পড়বে। তুলি কে নিশ্চুপ দেখে আদ্র হাত টা ধরে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠল-

–” এই মেয়ে কথা বলছিস না কেন? তোর শরীরের উত্তাপ আমার মনটা কে পুড়িয়ে দিচ্ছে। চুপ থেকে আমায় আর কষ্ট দিস না তুলি।”

টলটল চোখ আদ্রর মলিন চেহারায় নিবদ্ধ করল তুলি। সামান্য জ্বরে আদ্রর এতো কষ্ট হচ্ছে। এতোটা পাগলামি করছে। যদি! না আর ভাবতে পারছে না। যেভাবেই হোক আদ্র কে শান্ত করতে হবে। আদ্রর এক হাত নিজের দু হাতে পুরে নিল তুলি। ধরা গলায় বলল,,

–” আপনি অস্থির হবেন না ডাক্তার সাহেব। সামান্য একটু জ্বর সকাল থেকে। আমি ঠিক আছি।”

–” ডাক্তার তুই নাকি আমি? আর সকাল থেকে জ্বর। তারপরও তুই অসুস্থ শরীর নিয়ে চলে এলি? এতো শখ তোর এখানে থাকার? ঠিক আছে থাক। কখনও আর তুই ঢাকা যাবি না। আমাকে ছেড়ে থাকতে চেয়েছিস তো থাক এখানে।”

কঠোর স্বরে কথাগুলো বলে তুলি কে ছাড়িয়ে উঠে পড়ল আদ্র।ভীষণ রাগ হচ্ছে তার তুলির উপর।ভিতর টা পুড়ে যাচ্ছে মেয়েটার জন্য। পা বাড়িয়ে চলে গেল রুম থেকে। তুলি হতবিহ্বল হয়ে বসে রইল বিছানায়। নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়ছে জল। সত্যি সত্যি আদ্র তাকে ফেলে চলে গেল? আর কি নিবে না? কষ্ট হচ্ছে তার খুব। কেন আসতে গেল এখানে। আদ্র ভীষণ কষ্ট পেয়েছে তা ঠিক বুঝতে পারছে। দুর্বল শরীর নিয়ে কোনোমতে উঠে দাঁড়াল। জ্বর টা হুট করেই বেড়ে গেছে। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল হাত টাও খানিকটা ফুলে গেছে ও ব্যাথা করছে। এক কদম বাড়াতেই মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলে আঁকড়ে ধরল কেউ। ঝাপসা চোখে চাইতেই আদ্রর চেহারা টা ভেসে উঠল। তুলির ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল সূক্ষ্ম হাসি। আদ্র তাড়াতাড়ি করে তুলি কে কোলে নিয়ে পা বাড়াল রুমের বাহিরে। আহান দাঁড়িয়ে রুমের সামনে। আতঙ্কিত কন্ঠে বলল,,

–” তুলির কি হয়েছে ভাই?”

–” আমি তুলি কে নিয়ে যাচ্ছি আহান। খালা মণি কে জানিয়ে দিস।”

–” এতো রাতে? আজ থেকে যাও।”

–“না। এমনিতেই অনেক দেরি করে ফেলেছি। আজকেই চলে যাব।”

আদ্রর মুখের উপর আর কোনো কথা বলার সাহস পেল না আহান। পিছু পিছু এল গাড়ি পর্যন্ত। তুলি সব শুনলেও চুপ করে আছে আদ্রর বুকে মাথা রেখে। এখন তুলি কিছু বললেই রাগ টা আরো বেড়ে যাবে আদ্রর তাই সে চুপচাপ। গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে আদ্র ও উঠে পড়ল। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নিজের এক হাত দিয়ে তুলি কে কাছে এনে বাহুতে আবদ্ধ করল। তুলি মলিন কন্ঠে বলে উঠল-

–” এভাবে আপনার কষ্ট হবে তো আদ্র। ”

–” তুই যেই কষ্ট দিয়েছিস তার কাছে এই কষ্ট টা খুবই নিছক। ”

কেঁপে উঠল তুলির মনটা। একটা বার আদ্র কে বলে আসা উচিত ছিল তার। কিছু একটা মনে পড়তেই বিষন্ন মনে বলে উঠল-

–” আপনি খেয়েছেন আদ্র?”

–” সারাদিন পানি ছাড়া আর কিছুই না।”

নিজেকে নিজেরই খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে তুলির। নিজের প্রতি রাগ চেপে রাখতে না পেরে আদ্রের বুকে মাথা রেখে নীরবে চোখের জল ফেলতে লাগল। এতো ভালোবাসা তুলি আগলে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। নিজের সবটুকু দিয়ে আদ্র কে ভালোবেসে ও নিজের অজান্তে কষ্ট দিয়ে ফেলছে। কেন এতো ভালোবাসার মাঝেও কষ্টগুলো চলে আসে? অপ্রত্যাশিত তুলির কাছে এতটা প্রণয়। আদ্রর বুকে মুখ গুঁজে রইল তুলি। বাহির থেকে বাতাস এসে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে দু’জন কে। নিকষ কালো আঁধারে গাড়ি ছুটে চলেছে ঢাকার উদ্দেশ্যে।

_______

সূর্যের কিরণ জানালার পর্দা বেদ করে রুমে এসে পড়তে লাগল। শরীর ঘেমে একাকার তুলির। সূর্যের আলো রুমে আসতেই তুলি প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে চোখ মেলে চাইল। সায়েরা বেগম কে মাথার কাছে বসে থাকতে দেখে খুব অবাক হল। রাতে তো গাড়িতে আদ্রর বুকে ঘুমিয়ে পড়েছিল।তারপর আর কিছুই খেয়াল নেই তার। তুলি কে চোখ মেলতে দেখে সায়েরা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

–” উঠে পড়েছিস? তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে। জ্বরের ঘোরে কিনা কি খেয়েছিস রাতে। এখন ভালো করে খেয়ে আরো সুস্থ হতে হবে। কাল থেকেই তো তোদের বিয়ের অনুষ্ঠান। ”

তুলি নিষ্পলক চোখে চেয়ে থেকে বলল,,

–” তোমার ছেলে কোথায় আম্মু?”

সায়েরা বেগম উত্তপ্ত একটা শ্বাস ছেড়ে আঙুল দিয়ে ইশারা করলেন সোফার দিকে। আঙুল বরাবর চোখ যেতেই তুলি অসহায় চোখে তাকাল। আদ্র ঘুমিয়ে আছে সোফায় মাথা হেলিয়ে। সায়েরা বেগম হতাশ কন্ঠে বলে উঠলেন—

–” ঠিক এজন্যই তোকে যেতে দিতে চাইছিলাম না। কাল এসে তোকে না পেয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছিল। রুমের অর্ধেক জিনিস ভেঙে ফেলেছে। আমার ছেলেটা তো এমন ছিল না রে তুলি। এতো ধৈর্যশীল ছেলেটা তোর বেলায় কেমন অধৈর্য্য হয়ে পড়ে। তোর প্রতি দিনকে দিন ওর দুর্বলতা বেড়েই চলেছে। ভোর রাতের দিকে যখন তোকে নিয়ে ফিরেছে ওর চোখে মুখে ভয় দেখে অন্তর টা কেঁপে উঠেছিল আমার। কিছুক্ষণ আগেও তোর পাশে ছিল। জ্বর সেড়ে যাওয়ায় আমাকে বসিয়ে সোফায় গিয়ে মাথা এলিয়ে দিল। ঘুমিয়েছে নাকি সজাগ ঠিক বুঝতে পারছি না। এতটুকু বুঝতে পারছি আমার ছেলেটা বাঁচবে না তোকে ছাড়া।ওকে ছেড়ে যাওয়ার কথা কখনও ভাবিস না মা।”

তুলি স্তব্ধ হয়ে গেল। সায়েরা বেগম রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। আদ্রর ভালোবাসা প্রতি মুহুর্তে চমকে দেয় তুলি কে। কপালের ঘাম টুকু মুছে ধীর পায়ে আদ্রর কাছে এসে দাঁড়াল তুলি। আদ্রর মুখে ক্লান্তির ছাপ। তুলির ইচ্ছে করছে সবটুকু ক্লান্তি কেঁড়ে নিতে। আদ্রর দিকে একটু নত হয়ে গালে একটা চুমু খেল তুলি। কোমরে চাপ অনুভূত করতেই সারা শরীর ঝিকে উঠল তুলির। তাল সামলাতে না পরে মুখ থুবড়ে পড়ল আদ্রর উপর। ঠোঁট দুটো ঠেকল আদ্রর গলায়। লজ্জায় শিউরে উঠল পুরো দেহ। গাল দুটো টমেটোর মতো লাল হয়ে গেল। তড়িঘড়ি করে মুখ তুলতেই আদ্রর নেশাময় লাল চোখে চোখ আঁটকে গেল। ঘুম না হওয়ায় দু চোখ টকটকে লাল হয়ে আছে।

–” তোমার ডাগরআঁখিদ্বয় আমার নীলাভ দু চোখে ডুবে গেলে আমিও তলিয়ে যাই তোমার মারাত্মক নেশায়।”

আদ্রর ঠোঁটে মৃদু হাসি। অদ্ভুত লজ্জাময় কথাটা শুনে তুলি মুখ ঘুরিয়ে হেসে দিল। তুলির কোমর আঁকড়ে ধরেই আদ্র তুলি কে নিয়ে উঠে দাঁড়াল। বিস্ময়কর দৃষ্টি নিক্ষেপ করল তুলি। পাত্তা না দিয়ে আদ্র তুলি কে বিছানায় বসিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আসল। তুলি হতভম্বের মতো শুধু চেয়ে রইল। আদ্র পাশে শুয়ে টান দিয়ে বুকে নিতেই চোখ বড় বড় তাকাল তুলি। নিশ্বাস ভারী হয়ে আসল। হৃদপিণ্ডের উঠানামা হতে লাগল দ্রুত গতিতে। বহু কষ্টে বলে উঠল-

–“আম্মু চলে আসবে আদ্র।”

–” আসবে না। সারারাত একটুও ঘুমায় নি। এখন তোমাকে বুকে নিয়ে দুই ঘন্টা শান্তিতে ঘুমাতে চাই।”

–” সবাই কি ভাববে? আমাদের তো এখনও বিয়ে হয় নি। একা রুমে,,

–” হুঁশ! ঘুমাতে দাও। তোমার ডাক্তার সাহেব তোমার দিকে কেউ আঙ্গুল তোলার মতো কিছুই করবে না। আর বিয়ে সেটা তো!”

এতটুকু বলেই মুচকি হাসল আদ্র। তুলি চাতক পাখির মতো চেয়ে অসমাপ্ত কথাটা শুনার জন্য। কিন্তু আদ্র তাকে নিরাশ করে কপালে চুমু খেল। আগের কথাটা সমাপ্ত না করেই বলল,,

–” বউ আমার। কে কি বলল তা আমি কেয়ার করি না।”

ভ্রু কুঁচকে তাকাল তুলি। বউ আমার মানে! আদ্র গলায় মুখ গুঁজ তেই সন্দেহের অবকাশ থেকে বেরিয়ে এল। জমে বরফ হয়ে গেল। জমে যাওয়া কন্ঠে উচ্চারণ করল,,

–“আদ্র!”

–” ঘুমোতে দাও নাহলে তোমাকে থাপড়ে একটা দাঁত ও রাখব না।”

দমে গেল তুলি। ভীতু চোখে চেয়ে রইল আদ্রর দিকে।

_______

“জীবনে কিছু পেরেছিস তুই? কখন থেকে বলছি ফুচকা খাবো। তাও খেতে দিচ্ছিস না তুই। ”

রাগে ফুঁশ ফুশ করতে করতে বলে উঠল পায়েল। অন্তু নিরীহ চোখে পায়েলের দিকে তাকিয়ে। বেচারা বেশ দোটানায় ভুগছে। একবার মনে হচ্ছে ফুচকা খেলে পায়েল অসুস্থ হয়ে যাবে আরেকবার মনে হচ্ছে পায়েলের চাওয়া টা পূর্ণ না করলে মনটা কষ্ট পাবে। শপিং মলে এসে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে নিজের রাগী বউ টা কে নিয়ে জানলে আসতই না অন্তু। এখন তো আদ্র কে ইচ্ছে মতো বকতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু সে তো আরেক বাঘ। দেখা যাবে এক থাপ্পড় দিলেই বেচারা অন্তু শেষ। পায়েল জুয়েলারি দোকানে দাড়িয়ে রাগে গিজগিজ করছে। তুলি, আমরিন, রিমি,সাগর, সবাই কে নিয়ে শপিং করতে এসেছে আদ্র। বিয়ের শপিং কিছুদিন আগেই শেষ করেছে তবুও আজ বন্ধুমহল, বোনদের নিয়ে শপিং করতে এসেছে। পায়েল কে রাগতে দেখে সবাই এগিয়ে আসল। রিমি জিজ্ঞেস করল,

–” কি হয়েছে পায়েল?”

–” কি আর হবে অন্তু আমায় ফুচকা খেতে দিচ্ছে না।”

আদ্র চোখ ছোট ছোট করে তাকাল অন্তুুর দিকে। অন্তু হি হি করে বলল–” ফুচকা খেলে যদি বেবীর সমস্যা হয়? ফুচকা খাওয়া যাবে না।”

সবাই চরম অবাক হল। পায়েলের লজ্জায় ইচ্ছে করছে অন্তুর ঘাড় মটকাতে। এতো বেক্কল কেন অন্তুটা! সবাই যা বুঝার বুঝে গেল। আদ্র সবাই কে নিয়ে দ্রুত বাহিরে এসে ফুচকা স্টলের সামনে হাজির হল। পায়েল তো খুশিতে আত্মহারা। অন্তুর দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল

–” দেখলে আদ্র নিয়ে এসেছে তার মানে কোনো সমস্যা হবে না। বাসায় যাই তারপর মজা বুঝবা।”

অন্তু পায়েলের কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজেই ফুচকা খেতে লাগল। পায়েল মুখ বেকিয়ে ফুচকা খাওয়ায় মনোযোগ দিল। তুলি ওদের খুনসুটি দেখে হালকা হাসল। মনটা ভালো লাগায় ছেয়ে গেল। বাবা-মা হবে কয়েক মাস পর দু’জন অথচ এখনও পাল্লা দিয়ে ঝগড়া করে। উহু! এগুলো তুলির কাছে ঝগড়া নয় খুনসুটিময় ভালোবাসা মনে হয়। কাঁধে কারো স্পর্শ পেতেই চোখ ফিরিয়ে তাকাল তুলি। আদ্রর ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি বহমান। তুলির কানের কাছে মুখ নিয়ে ধীর স্বরে বলে উঠল-

–” আমার অংশ তোমার গর্ভে হলে পায়েলের মতো অভিমান করার সুযোগ দিব না। বরং দু’জন মিলে রাতের আঁধারে জমিয়ে ফুচকা খাব। খাবে তো তুলা?”

কান গরম হয়ে গেল তুলির। লজ্জালু হাসি ফুটে উঠল দু ঠোঁটে। আদ্রর হাত টা খামচে ধরে মাথা নেড়ে সায় দিল। আদ্র মুগ্ধ দৃষ্টিতে লজ্জা মাখা চেহারায় চোখ বুলিয়ে সবার অগোচরে তুলি কে একহাতে জরিয়ে নিল। নিচু স্বরে বলল

“আমি কিন্তু বেস্ট বাবা হব তুলা।”

#চলবে,,

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।)

pic Credit : Mohammad safin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here