#আকাশে_তারার_মেলা ✨
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব -২৭
এই তুই হাত ছাড়ছিস কেন? চোখ বুঁজবি না একদম।দেখ চারটা মাস ধরে অনেক নাটক করেছিস। আমার কিন্তু এবার সহ্যশক্তি হারিয়ে যাচ্ছে। এক হাত লাগিয়ে দিব গালে।তুলি তুই ভালো করেই জানিস রাগ উঠলে কেউ তোকে আমার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে না। শক্ত কর নিজেকে। এখনও তোর আমার থেকে রেহাই পাওয়ার সময় আসে নি।
তুলির শিথিল হয়ে যাওয়া হাত টা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে পাগলের মতো প্রলাপ করতে লাগল আদ্র। এই বুঝি তার নিশ্বাস আঁটকে যাবে। তুলির দু চোখ বুঁজে যাওয়া যেন তার মস্তিষ্কে হারানোর ভয় জাগিয়ে দিল পুনরায়। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ল। আদ্রর চিৎকার বাহির থেকে আরিয়ান ও রিম শুনতে পেয়ে দৌড়ে এল। আদ্র কে অস্থির অবস্থায় দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল দু’জন। তুলির শ্বাস চলছে কিন্তু রেসপন্স করতে পারছে না। রিম আরিয়ান কে ইশারা করল আদ্র কে সামলাতে। নিজে দৌড়ে চলে এল ডাক্তার ডাকতে। আরিয়ান আদ্র কে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে তুলির কাছ থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু বরাবরই ব্যর্থ। আদ্রর সুঠাম দেহের শক্তির তুলনায় তার শক্তি নগন্য। ডাক্তার দৌড়ে আসলেন কেবিনে। আদ্র কে অনেক চেষ্টা করে ও সরাতে পারল না।ঠাই বসে রইল তুলির হাত টা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে। ডাক্তার তুলি কে চেকআপ করে আরেকটা টুল টেনে আদ্রর পাশে বসল। আদ্র তখনও তুলির মলিন, নির্জীব শ্যামলা চেহারার দিকে তাকিয়ে। ডাক্তার মিনহাজ আদ্রর বাহুতে হাত রাখতেই আদ্র ওনার দিকে দৃষ্টি স্থাপন করল।
“দেখুন না ডা. মিনহাজ আমার ওয়াইফ কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। বিশ্বাস করুন ওকে আমি নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে রেখেছি। শুধু! শুধু তিন বার থাপ্পড় মেরেছি রাগের মাথায়। তাছাড়া চুল পরিমাণ ক্ষতিও আমি ওর হতে দেই নি। তবুও কেন ওর এতো বড় অসুখ হল? থাপ্পড় মারলে কি এত বড় অসুখ হয় ডক্টর?”
ধরফর করে উঠল ডক্টর মিনহাজের বুকটা আদ্রর কাতর স্বরে পাগলাটে কথা শুনে। একজন ডাক্তার হয়ে আদ্র এতোটা জ্ঞান শূন্য কিভাবে হয়ে পড়ল? তিনি যেন কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। কতবার এই ছেলের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে তার। এই ছেলের প্রশংসা শুনেছে কত ডাক্তারদের কাছে। অথচ আজ যেন সম্পূর্ণ বিপরীত একটা মানুষ দেখছেন ওনি। আসলে পৃথিবীতে কিছু কঠোর মানুষ সর্বদাই ভালোবাসার কাঙাল হয়। কঠিন মন গলে তরলে পরিণত হয় ভালোবাসা নামক অসীম অনুভূতির নিকট। আদ্রই যেন ওনার কাছে জলজ্যান্ত প্রমাণ। নিস্তেজ হয়ে চোখ বুঁজে থাকা তুলির দিকে চেয়ে বুকটা হাহাকার করে উঠল ওনার। মনে পড়ে গেল নিজের স্ত্রীর কথা। আদ্রর মতো পাগল না হলেও ভিতরে ভিতরে পুড়েছেন ওনি স্ত্রীর মৃত্যুতে। বিয়ের একবছর পর এক্সিডেন্টে নিজ অর্ধাঙ্গিনী কে হারিয়ে তিনি একাই কাটিয়ে দিয়েছেন নিজের জীবনের এতগুলো বছর। সাথে সজীব রেখেছেন ভালোবাসার স্মৃতি গুলো। জীবন তো কারো জন্য থেমে থাকে না। প্রকৃতি নিজ দায়িত্বে সময়ের প্রবাহে কাটিয়ে দেয় মায়া। কিন্তু আদ্র? আদ্র কি পারবে হারিয়ে সময়ের স্রোতে নিজেকে সামলে নিতে? হঠাৎ ড. মিনহাজের মনে ধ্বনিত হলো পারবে না ছেলেটা। মরে যাবে। হতাশার একটা নিশ্বাস ছাড়লেন তিনি। মনে আশার আলো জাগিয়ে উঠে দাঁড়ালেন কেবিন থেকে বের হওয়ার জন্য। একটু আগেই জুনিয়র চিকিৎসকের ফোন পেয়ে ছুটে এসেছেন। কেবিন থেকে বের হতে হতে উচ্চারণ করলেন ” আকস্মিক মৃত্যু আসলে কিছুই করার থাকে না হাতে তবে মৃত্যুপথযাত্রী কে আল্লাহ চাইলে সুস্থ করে দিতে পারেন। শুধু প্রয়োজন আল্লাহর রহমত এবং ওনার উপর ভরসা রেখে সঠিক চিকিৎসা চালানো।”
আরিয়ান,রিমি আদ্রের দিকে চেয়ে আছে এক পলকে। অনুশোচনায় ভুগছে দু’জন। তুলির চেয়ে ও বেশি কষ্ট অনুভূত হচ্ছে ওদের আদ্রর জন্য। সব জেনেও ওরা কি একটা বার আদ্র কে খুঁজে বের করতে পারত না? চেষ্টা টা আগে করলে হয়তো চার টা মাস ধুঁকে ধুঁকে মরত না আদ্র ও তুলি। আজ রিমের মনে হচ্ছে তুলি ভুল ছিল। ভুল ছিল তার সিদ্ধান্ত। উপস্থিত বুদ্ধি টুকুও হয়তো তুলির নেই। নয়তো কি আদ্রর মতো মানুষ কে ছেড়ে আসতে পারে? ভালোবাসা কখনও ঘৃণায় পরিণত হয় না এটাও কি তুলি বুঝতে সক্ষম হয় নি? অথচ আজ সময় হারিয়ে বাঁচার ইচ্ছে জেগেছে তার। আদ্রর ভিতরটা অগ্নি বলয়ে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে। তুলির হাতের ভাজে অনবরত ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে চলেছে। তার তো এতটুকু ও হদিস নেই রুমে সে ছাড়াও আরো দু’জন মানুষের অস্তিত্ব আছে। বুক চিরে একটা দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এল রিমের। আরিয়ানের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে মনের সুপ্ত কোণে গেঁথে নিল কিছু বাক্য। “আমি কখনও তুলির মতো ভুল করব না আরিয়ান। যদি কখনও বিরাট অসুখে ভুগি তখনও প্রতিটি সেকেন্ড তোমার কাছেই থাকব। কখনও তোমার সান্নিধ্য ত্যাগ করব না শেষ নিঃশ্বাস অব্দি।
ডাক্তার মিনহাজ তুলির রিপোর্ট গুলো ভালো করে চেক করলেন। বেশ কিছুক্ষণ ভাবার পর রিপোর্ট গুলো হাতে নিয়ে আদ্রর কাছে আসল। আদ্রর দৃষ্টি নিবদ্ধ তুলির চেহারায়। চোখের পলক ও ফেলছে না সে। মনে পড়ে গেল সেই ছোট্ট তুলির কথা। অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। ডাক্তার মিনহাজ আদ্রর পাশে বসে বলে উঠলেন,
” মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনতে হবে আদ্র। তুমি পাগলামি করলে বেডে শুয়ে থাকা মেয়েটা ভেঙে পড়বে। আশা করি এজ অ্যা ডক্টর তুমি একজন রোগীর জন্য হলেও ভাববে নয়তো স্বামী হিসেবে নিজের অর্ধাঙ্গিনীর জন্য। ”
চোখ বুঁজে নিজেকে শান্ত করে নিল আদ্র। অস্থির নয়নে ফুটে উঠল আশার প্রদীপ। শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়া স্বরে বলল,
” ভবিষ্যতে কি হবে বা বর্তমানে কি ঘটবে আমি জানিনা ডাক্তার। তবে এতটুকুই জানি আমার নিশ্বাস মিশে গেছে এই মেয়েটার সাথে। এই মেয়েটার শ্বাস প্রশ্বাস চলা মানেই আমার অস্তিত্ব টিকে আছে। আমি একবার ও বলব না আমার তুলি কে বাঁচিয়ে দিন।শুধু এতটুকুই বলব আমার অস্তিত্ব টা বিলীন হতে রক্ষা করুন।”
বিস্মিত না হয়ে পারল না রুমে উপস্থিত মানুষ গুলো। কি নাম দেওয়া যায় এমন ভালোবাসা কে? এতো আকুতি, এতো কাতরতা! রিমের কাছে তুলি কে অভাগিনী মনে হচ্ছে। যাদের জীবনে ভালোবাসা এলেও সেটা আঁকড়ে ধরে রাখতে পারে না। সারাজীবনই প্রাপ্তির খাতা থাকে শূন্য। ডাক্তার মিনহাজ নিজের কাঠ পুড়া অধরযুগল ভিজিয়ে রিপোর্ট গুলো এগিয়ে দিল আদ্রর দিকে।
এম-৩ বা এপিএল নামক ব্ল্যাড ক্যান্সার সম্পর্কে তোমার ধারণা আছে আশা করি। একিউট মায়েলোব্লাসটিক লিউকেমিয়া মূলত আট প্রকারের। যেমনঃ এম- ০,১,২,৩,৪,৫,৬,৭। এ এমএল এম -২ ও ৪ কে শুধু কেমোথেরাপি দিয়ে টানা ৪ মাস চিকিৎসা করলে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর এম-৩ বা এপিএল নামক ব্ল্যাড ক্যান্সার কে পর্যায় বুঝে শুধু ওষুধ বা কেমোথেরাপি দিয়ে টানা ছয় মাস থেকে দুই বছর চিকিৎসা করলে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ৮০ শতাংশের বেশি। তবে এটা পর্যায় বুঝে শুরু থেকেই ট্রিটমেন্ট চালালেই আর আল্লাহ চাইলেই সুস্থ হওয়া পসিবল। অবশ্যই বুঝতে পারছো তোমার ওয়াইফ কোন ধরনের ব্ল্যাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। তবে,,
আদ্র তীর্থের কাকের মতো চেয়ে ডাক্তার মিনহাজের দিকে। কেউ যেন তার গলা চেপে ধরেছে যার ফলে শ্বাস ফেলতেও কষ্ট হচ্ছে। বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। রুহু টা আর্তনাদ করে উঠছে বার বার। তুলি কে নিজের বুকে ঢুকিয়ে রাখতে পারলেই বুঝি তার হৃদপিণ্ড শীতল হতো। অথবা তুলির সঙ্গে সঙ্গে নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারলেই তার শান্তি মিলবে। একটা ভুল সিদ্ধান্ত সবকিছু তছনছ করে দিল। এতোটা মাস কাছে থাকলে হয়তো আদ্র কিছু করতে পারত। সুস্থ করে তুলতে পারত। এখনও যে পারবে না এমন তো না। পারবে সে দিন রাত এক করে তুলি কে সুস্থ করে তুলবে। প্রতিবারের মতো তুলি কে ভিক্ষা চাইবে আল্লাহর কাছে। ব্লাড ক্যান্সার শব্দ টা শুনলেই মানুষ আঁতকে উঠে। হাল ছেড়ে দেয়। ভয় গ্রাস করে দুর্বল করে দেয় মানুষের বেঁচে থাকার স্পৃহা। চেষ্টা না করেই হাল ছেড়ে দেয়। যেমনটা করেছে তুলি। অথচ ভয় না পেয়ে শুরু থেকেই নিজেকে শক্ত করে ট্রিটমেন্ট চালিয়ে গেলে সুস্থ হয়ে উঠা যায়। জীবন -মরণ সেটা তো আল্লাহর হাতে। ডাক্তার কয়েক মাস বাঁচবে বলে ধারণা করলেও দেখা যায় কিছু মানুষ বছরের পর বছর ক্যান্সার নিয়ে বেঁচে আছে। আবার কেউ কেউ আল্লাহর রহমতে ও চিকিৎসায় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছে।
“তোমার ওয়াইফের শুরু থেকেই ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা চলছিল। আমাদের হাতে এখনও সুযোগ আছে আদ্র। আল্লাহর অশেষ কৃপায় ও সঠিক সময় চিকিৎসা শুরু করে দেওয়ায় এতোদিন টিকে আছে মেয়েটা নয়তো বুঝোই তো। এটা মিরাক্কেল ও বলতে পারো তবুও একটা সুযোগ আল্লাহ তোমায় দিয়েছেন। আর দেরি করা ঠিক হবে না। নেমে পড়ো নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে। ”
আদ্রর ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটে উঠল। কৃতজ্ঞতার চোখে আরিয়ান ও রিমের দিকে চাইল। আরিয়ান আর রিম জানার পর থেমে থাকে নি। তুলির অনিচ্ছা থাকা স্বত্তেও চিকিৎসা চালাতে হয়েছে ওদের জোরে। ওরা জানে না এটা কতটুকু কাজে লাগবে তবে মন প্রাণে চাই তুলি বেঁচে থাকুক অনেকগুলো বছর তার ডাক্তার সাহেবের জন্য। এক মিনিট হোক আর এক সেকেন্ড তুলির সমাপ্তি যেন তার ডাক্তার সাহেব কে ঘিরেই হয়। আদ্র উঠে দাঁড়াল। ডাক্তার মিনহাজের সাথে আলোচনা করে তুলি কে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে লাগল। ওইখানে গিয়ে সাময়িক ট্রিটমেন্টের পর সব কাগজপত্র রেডি করে পাড়ি জমাবে বিদেশ। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবে সে। ব্যর্থ হলে নিজেও হারিয়ে যাবে তুলির সাথে। তুলি বিহীন আর একটা মুহুর্ত ও সে চায় না । করিডোর দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে নিজের বাবা -মা, বোন, বন্ধুমহল কে এগিয়ে আসতে দেখল। কে বলবে এগুলো আদ্রর বন্ধুমহল? তুলি শুধু আদ্রর জীবনে নয় নিজের মায়া দিয়ে গেঁথে গেছে সবার হৃদয়ে। চক্ষুজোড়া লাল রঙে ছেয়ে আছে আদ্রর। ছেলের বিধস্ত অবস্থা দেখে সায়েরা বেগম ছেলে কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলেন। ছেলের অবস্থাই ওনাকে জানান দিচ্ছে তুলি ঠিক কেমন অবস্থায় আছে! এতো সুখময় মুহুর্তের কেন অবসান ঘটল? সব তো ঠিক থাকতে পারত। কেন এতো ছোট্ট বয়সে ক্যান্সার নামক ব্যাধির সাথে লড়তে হচ্ছে মেয়েটার? লড়াইয়ে জিতে যাবে নাকি নিঃশেষ হয়ে যাবে চিরতরে?
__________
তুলির ঠোঁটে লজ্জালু হাসি। শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়ে যাচ্ছে শিহরণ। হৃদয়ের গহীনে শীতলতার বিস্তার। গলায় আদ্রর ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া পেতেই একটা হার্ট বিট মিস করল। বুঁজে থাকা চোখ দুটো মেলে এক পলক চাইল আদ্রর দিকে। আদ্র তুলির গলায় মুখ গুঁজে চোখ বুঁজে শুয়ে রইল। বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে তাকে। এই দশটা দিন একটুও থেমে থাকে নি। তুলির পাসপোর্ট, ভিসা রেডি করতে একটু ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। ঘুম ও হারাম হয়ে গেছে। নির্ঘুম কাটানো প্রতিটা রাত ও তাকে বড্ড শান্তি দেয়। কারণ রাত জেগে তো সে তার তুলার সেবা করতে পারে,ঘুমন্ত মুখটা অবলোকন করতে পারে। ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া বুকে এতটুকুই যেন এক ফোঁটা বৃষ্টির পানির ন্যায় ঝরে পড়ল। স্নিগ্ধতায় ভরিয়ে দিল আদ্রর বিষাদে ছেয়ে থাকা মন। তুলি নড়ে উঠল। এতো মাস পর প্রিয় মানুষ টার এতো কাছে আসাটা তুলির হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক করে তুলছে। হসপিটালে থাকতে থাকতে পাগল হয়ে যাচ্ছিল তুলি। কিছুটা সুস্থ হতেই আদ্র কে আকুতি মিনতি করে বাসায় চলে এল তিনদিন হয়েছে। আগের থেকে অনেকটা সুস্থ। ” আমাকে ক্যান্সার নামক ব্যাধি এতোটা গ্রাস করতে পারে নি আদ্র যতটা আপনার অনুপস্থিতি গ্রাস করেছে আমায়। আমি প্রতিনিয়ত যন্ত্রণায় সিক্ত হতাম আপনাকে ছাড়া। আপনিই আমার ভালো থাকার উপশম। অথচ বিয়ের দিন কতটা বোকামি করেছি। আমাদের জীবনের চার টা মাস কে নরকে পরিণত করেছি। আসলেই আমি আহাম্মক!” কথাগুলো ভেবেই একটু হাসল তুলি। আদ্রর চুলে হাত দিতেই মাথা তুলে তুলির মুখ বরাবর চাহনি নিক্ষেপ করল। দু’জনের মাঝে কিঞ্চিত দূরত্ব। তুলির বলতে ইচ্ছে করছে ” আপনাকে ঠকানোর শাস্তি সরূপ সবটুকু দূরত্ব ঘুচিয়ে নেন আদ্র।”
তুলির গোলাপি মসৃণ ঠোঁটে ঠোঁট রাখল আদ্র। এক হাত দিয়ে আদ্রর ঘাড় খামচে ধরল। ডুবে গেল আদ্রর নীলাভ চোখের মাদকতায়। চোখের পলকেই ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল আদ্র। তুলি কে সম্পূর্ণ বেড রেস্ট দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আর উপায় নেই। নিজের পায়ে হাঁটার মতো শক্তি আর তুলি পায় না। একটু তেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। পা ফুলে গেছে। সারা শরীরে থেকে থেকে ব্যাথা। তবুও মেয়েটার মুখে ম্লান হাসির ঝিলিক। আদ্র কাভার্ড থেকে কাপড় বের করে ওয়াশরুমে পা বাড়াতে নিলে তুলি হালকা হেসে দুর্বল স্বরে বলে উঠল-
” এখন কি আর সিগারেট খান না? অন্য সময় তো আপনার মুখ থেকে সিগারেটের সুবাস আসত।”
বাঁকা হাসল আদ্র। ঝটপট হাতের কাপড়গুলো সোফায় ফেলে কাছে এসে ঝুঁকে পড়ল তুলির মুখের দিকে। ঠোঁট প্রসারিত করে–” সিগারেট খাওয়ার নেশার চেয়ে আমার তুলার প্রতি মারাত্মক নেশা। এখন যখন তুলা-ই আমার বুকে তখন সিগারেটের নেশা ও ফিকে। তাই ছেড়ে দিয়েছি।”
আদ্রর এমন লাগামহীন বেহায়া কথা শুনে তুলি ঢোক গিলল। ঠোঁট কামড়ে মুখ টা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিল। চোখে মুখে ছুঁয়ে যাচ্ছে আদ্রর গরম নিশ্বাসের উত্তাপ। বুক টা কেঁপে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। আদ্র সরে যেতে নিলে সাহস জুগিয়ে বলে উঠল-
” আমরা তিন কবুল বলব না আদ্র?”
থ মেরে তুলির দিকে চেয়ে রইল আদ্র। তুলির সারা মুখ জুড়ে লজ্জার রেখা প্রতিফলিত যা আদ্র কে ঘোরে নিমজ্জিত করে ফেলল। নেশামিশ্রিত স্বরে জবাব দিল,
” তোমার ট্রিটমেন্ট শেষ হলেই আমরা নতুন ভাবে আবার সব সাজাব।”
” উঁহু! কালকেই কি লাল বেনারসি পড়ে আমি আপনার বধূ হতে পারি?”
#চলবে,,,
(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। গল্পটা আজ শেষ করতে পারলাম না। তবে পরবর্তীতে সমাপ্তি পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করব।)