‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~১৮||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
৩৩.
রাতে ঘরে পায়চারি করছি। আজকের দিনটা বেশ ভালোই কেটেছে। প্রথমত ওনার বাড়ি গিয়ে ওনার খোঁজ নেওয়ায় খুব ভালো হয়েছে। আর তারপর জিয়াকেও মোক্ষম জবাব দিতে পেরেছি। এরপরেও যে কেন অস্বস্তি কাটছে না বুঝছি না। ভাবছি, একবার ওনাকে ফোন করলে কেমন হয়?
‘করেই ফেল ফোনটা। এরকম পায়চারি করে করে ফোনটাকে বারবার দেখার কোনো মানে হয় না। তোরই ফোন আর তোরই বর, তাই করেই ফেল।’
কোয়েলের কথা শুনে ওর দিকে রেগে তাকালাম।
‘কি বর, বর করছিস বল তো সকাল দিয়ে?’
‘সে কি? তোর বরকে তোর বর বলবো না তো কি বলবো?’
‘ধুর! মানি না বর। যে এই বিয়েটাকেই মানে না সে বর হওয়ার যোগ্যতা রাখে?’
‘আমি জানি মৌ তোর কতটা খারাপ লেগেছে ফুলশয্যার রাতে ওরকম একটা কথা শুনে আদিত্যদার মুখে। কিন্তু আদিত্যদার ওরকম বলার কারণ ও নিজের জীবনের সাথে কাওকে কোনোদিন জড়াতে চায়নি। সারাটাজীবন একা থাকতে চেয়েছে। ও তোকে মানেনি দেখে যে অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসে এমনটা নয়। ও তোকে ওরকম কথা বলার পর নিজেই অনুতপ্ত, এই জন্যই তো তোকে দেখে দেখে রাখছে। মনে মনে ও ঠিকই বিয়েটা মেনে নিয়েছে, দেখবি আর কদিন পর বলেও দেবে তোকে।’
কোয়েলের কথা শুনে তাচ্ছিল্য হাসলাম, বললাম,
‘উনি এতদিন পর আমার কাছে এসে ক্ষমা চাইলেই কি আমার ফুলশয্যার রাতটা ফিরে আসবে? আমি যে এতটা কষ্ট পেয়েছি এবং পাচ্ছি সেগুলো মুছে যাবে? নাহ! প্রত্যেকটা মুহূর্তে তীরের মতো বিঁধেছে ওনার কথাগুলো আমার বুকে, যখনই মনে করছি সবটা মেনে নেবো। আমার নিজের জীবন নিয়ে যা স্বপ্ন ছিলো তা এক নিমিষে ধুলোয় মিশে গেছিলো বিয়ের কথা শুনে। তাই মেনে নিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম নতুন করে শুরু করবো জীবনটা কিন্তু সেটাও উনি হতে দেননি। তাহলে আমি কেন এত কষ্ট পাওয়ার পর উনি ফিরে আসলে ওনাকে মেনে নেবো? বলতে পারিস?’
আমার কথা শুনে কোয়েল আমাকে ওর দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বললো,
‘আমি তোকে বলছি না এক্ষুনি আদিত্যদাকে মেনে নিতে। আমি শুধু বলছি ওকে শাস্তি দিতে গিয়ে নিজেকে শাস্তি দিয়ে বসিস না। ও ভুল করেছে, শাস্তিটা ওর প্রাপ্য। এতো সহজে ওকে কেন ক্ষমা করবি? কিন্তু এই রাগের বশে নিজের অনুভূতিগুলো চিনতে ভুল করিস না। তাহলে তুইও শাস্তি পাবি। বুঝলি? আমি অলওয়েজ তোর পাশে আছি। যা এবার ঘুমিয়ে পর।’
কোয়েল গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে ওর কথাগুলো মাথায় ঘুরতে লাগলো। অনুভূতি? কোন অনুভূতির কথা বললো ও? ধুর! এসব নিয়ে ভাবতেই চাই না আমি। যাই ঘুমাই।
কিছুক্ষণ পর,
কোয়েলের কথামতো শুয়ে তো পড়লাম কিন্তু ঘুম কিছুতেই আসছে না। নাহ, ওনাকে ফোনটা করেই ফেলি, ঘুমিয়ে থাকলে না হয় ধরবে না। এই ভেবে উঠে বসলাম। ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম কোয়েল ঘুমিয়ে পড়েছে। আস্তে আস্তে ফোনটা নিয়ে জানলার কাছে গিয়ে ওনাকে কল করলাম। রিং হয়ে যাচ্ছে সমানে, একটা সময় কেটে গেলো।
‘আরেকবার করি। না ধরলে না হয় আর করবো না।’
আবার করলাম কিন্তু সেই একই ভাবে রিং হয়ে যাচ্ছে ফোনটা। তাই ফোনটা কাটতে যাবো সেই সময় একদম শেষ মুহূর্তে ওপাশ থেকে ঘুম ঘুম গলায় আওয়াজ এলো,
‘হ্যালো।’
‘হ..হ্যালো, আমি মৌমিতা।’
এক সেকেন্ডের জন্য ওনার ঘুমের আওয়াজ শুনে হার্টবিট বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু উনি চুপ করে আছেন কেন এখন?
‘আদিত্য! আপনি ঠিক আছেন?’
‘হ..হ্যাঁ কিন্তু তুমি এতো রাতে?’
‘আব, আসলে.. ফোন করবো কি করবো না ভেবে পাচ্ছিলাম না। তাই…
‘কেন? আমি বাঘ না ভাল্লুক যে তুমি ফোন করলে তোমার ফোনের ভিতর ঢুকে তোমাকে খেয়ে নেবো?’
বলে উনি মুখ চেপে হাসতে থাকলে আমি সেটা বুঝতে পারি। রাগ হয়ে গেলো,
‘এই আপনি হাসছেন কেন হ্যাঁ? হুট করে ফোন করলে আপনি কি ভাববেন তাই করিনি। হুহ!’
‘আচ্ছা বাবা ঠিক আছে।’
‘আবার হাসছেন?’
‘আচ্ছা, আচ্ছা হাসবো না।’
তারপরেও উনি হাসতে থাকলে আমিও হেসে ফেললাম। এইভাবেই কথা বলতে থাকলাম আমরা। ওনাকে বললাম আজ আমি জিয়াকে কি কি বলেছি আর অঙ্কিত আমাকে হেল্প করেছে। ভেবেছিলাম অঙ্কিতের কথা শুনে উনি রাগ করবেন কিন্তু না, উনি কিছুই বললেন না। কথা বলা শেষ করে ঘুমোনোর সময় কোয়েলকে একবার দেখলাম তারপর আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।
‘ঠিকই ভেবেছিলাম আমি। এই দুটোকেই ভালোবাসার মানে বুঝতে হবে। বরের সাথে কথা না বললে, তার খোঁজ না নিলে রাতে ঘুম হচ্ছে না আবার বর বললে সে নারাজ! হা হা!’
কোয়েলের ঘুম ভেঙে গেছিলো যখন মৌমিতা কথা বলছিল ফোনে। ফোনে কথা বলার ধরণ শুনেই কোয়েল নিমিষে বুঝে গেছিলো আদিত্যের সাথেই কথা বলছিল মৌমিতা।
৩৪.
বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে। এখন আদিত্যও পুরোপুরি সুস্থ, ভার্সিটি আসা শুরু করেছেন। ভার্সিটি আসার পর আদিত্য আমারর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেননি একবারও। অবশ্য করবেনই বা কেন? আমি কে হই? কেউ হইনা বলেই তো এতো টা ইগনোর করছেন আমাকে। ঠিক আছে, আমারও কোনো দরকার নেই ওনার সাথে কথা বলার।
‘কি রে কি ভাবছিস এভাবে একা বসে?’
পাশে তাকিয়ে দেখলাম অঙ্কিত এসে বসেছে। অঙ্কিতকে উত্তর দিতে যাবো ঠিক সেই সময়,
‘কার চিন্তায় মগ্ন তুমি দেবী?’
আরেক পাশে কোয়েল এসে বসলো। আমি ওকে হেসে উত্তর দিলাম,
‘এমন একজনের চিন্তায় যে আমায় নিয়ে ভাবে না। তোর মত তো আর এতো ভাগ্য নেই যে, এমন একজন সারাদিন আমার খোঁজ নেবে, আমাকে ভালোবাসবে।’
আমার কথা শুনে অঙ্কিতের কাশি উঠে গেলো। আর আমি হেসে ফেললাম এদিকে কোয়েল বোকার মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
‘আমার খোঁজ সারাদিন কে নেয়? কে ভালোবাসে আমাকে? ধুর! কি যে বলিস না।’
কোয়েলের মুখে ভয় ফুঁটে উঠলো আমার কথা শুনে যা দেখে আমি অবাক হলাম। এমন কি বলেছি যে ভয় পেয়ে গেলো কোয়েল? আমি অঙ্কিতের দিকে তাকাতেই ও আমাকে বললো,
‘মৌ তুই যেটা ভাবছিস সেটা একদমই নয়। কোয়েলকে আমি স্কুল লাইফ থেকে চিনি তাই বোনের মতো ভালোবাসি। এর চাইতে বেশি কিছু না।’
‘আচ্ছা সেটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু ও এমন ভয় পেয়ে গেলো কেন আর তুমিই বা কাশতে লাগলে কেন?’
‘ইয়ে, না মানে। এমনি! চল দেখি ও কোথায় গেলো।’
অঙ্কিত উঠে কোয়েল যেদিকে গেছে সেদিকে গেলে আমিও উঠে যাই। ওখানে গিয়ে দেখি অঙ্কিত কোয়েলকে কিছু একটা বলছে, আমি গেলেই চুপ করে যায়।
‘কি রে এভাবে তখন উঠে গেলি কেন?’
‘সে কি! তুই দেখিসনি?’
‘কি দেখবো?’
‘জিয়া আসছিলো তাই।’
‘তুই যার থেকে বাঁচার জন্য এখানে এলি, সেই এখানে আসছে উইথ আদিত্য!’
অঙ্কিতের কথা শুনে আমি আর কোয়েল পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখলাম আদিত্য এক হাতে পকেটে গুঁজে আরেকহাতে ফোন ঘাটতে ঘাটতে আসছেন আর ওনার পকেটে গোঁজা হাতের বাহু জড়িয়ে জিয়া হাসতে হাসতে এদিকেই আসছে। জিয়া নিজের মতো কথা বলছে হেসে হেসে আর আদিত্য মাঝে মধ্যে হেসে ওর দিকে তাকাচ্ছেন। এসব দেখে আমি কোয়েলের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসলাম অর্থাৎ একে মেনে নিতে বলছিলি তুই আমায়।
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]
বি:দ্র: জানি আজকের পর্ব খুবই ছোটো হয়েছে তার জন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত। আসলে আমার শরীরটা ঠিক নেই তাই এর থেকে বেশি লিখতে শরীর দিচ্ছে না। ক্ষমা প্রার্থী আমি আপনাদের কাছে। 🙂🙏
আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী