‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~২৭||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
৪৩.
আমি কোয়েলের পিছনে এসে দেখলাম ও দাঁড়িয়ে আছে। ওর পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত রাখতেই ও অন্যদিকে ঘুরে গিয়ে বললো,
‘ত..তুই এখানে এলি কেন? আমি তো যেতাম ওদিকে।’
কোয়েলকে নিজের দিকে ফিরিয়ে বললাম,
‘এই একই প্রশ্ন আমার। তুই এখানে এলি কেন? কি এমন হলো যে ছুটে এদিকে চলে এলি? রাজদার থেকে এতো পালিয়ে পালিয়ে বেরাস কেন বল তো তুই?’
‘কারণ আমার ওকে ভালো লাগে না তাই, আর কিছু?’
কোয়েল বেশ রেগে কথাটা বললো। আমি বুঝতে পারছি না কোয়েল এতো কেন রেগে রয়েছে রাজদার উপর। আগে কি কিছু হয়েছিলো? তাই হবে, ওরা তো স্কুল লাইফ থেকেই একে অপরকে চেনে। থাক, এখন কিছু জিজ্ঞেস করবো না। পরে কোয়েলের মুড ঠিক হলেই জিজ্ঞেস করবো।
‘কি হলো চল? কতক্ষন এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি?’
‘হ্যাঁ, চল।’
কোয়েল আগে হাঁটতে শুরু করলো আর আমি ওর পিছন পিছন হাঁটতে থাকলাম।
অন্যদিকে,
‘এভাবে আর কতদিন নিজে কষ্ট পাবি আর ওকেও কষ্ট দিবি রাজ?’
আদিত্যের প্রশ্নে রাজ তাচ্ছিল্য হেসে মুখ অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলে আদিত্য হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেললো। আদিত্য ভার্সিটির বাইরে এসে দেখেছিলো রাজ চুপচাপ একটা পার্কের বেঞ্চে বসে আছে। রাজের পাশে বসে রাজকে প্রশ্নটা করলে রাজ কোনো উত্তর দেয় না তাই কিছুক্ষন পর আদিত্য আবার বললো,
‘কোয়েল তো কিছুই জানে না তোর ব্যাপারে।’
‘জানতে চায়ও না।’
‘তুই জানাতে না চাইলে কীভাবে জানবে?’
‘আসার পর থেকে দেখা ছাড়া একটা কথাও বলেনি। চেষ্টা করলে এড়িয়ে গেছে। মৌমিতাই সাক্ষী আসার পর থেকে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর।’
আদিত্য রাজের কাঁধে হাত রেখে বললো,
‘তুই যেটা করেছিস সেটা তো ঠিক নয় রাজ। এটা ভুলে যাস না। কোয়েলের রেগে থাকার কারণ তো আছেই।’
‘(আদিত্যের দিকে তাকিয়ে) আমার ওকে জানানোর কিচ্ছু নেই আদি। ও ওর লাইফে মুভ অন করুক, আমি আমার লাইফে করবো। ছোটবেলার ভালোলাগা নামক আবেগকে তো আর জোর করে ভালোবাসা নাম দেওয়া যায় না তাই না?’
‘(হেসে) তুই বলছিস তুই কোয়েলকে ভালোবাসিস না? তাহলে ওর থেকে দূরে গিয়েও কেন ওর এতো খোঁজ রাখতিস?’
‘(শান্ত কণ্ঠে) আমি কখন বললাম আমি ওকে ভালোবাসি না? আমি তো ওকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসি কিন্তু তাই বলে যে ও’ও আ..আমাকে ভা..ভালোবাসবে তার তো কোনো মানে নেই আদি।’
রাজ কথাটুকু বলে উঠে গেলে আদিত্য নিজের জায়গায় বসে জোরে বলে ওঠে,
‘কোয়েলও কিন্তু তোর খোঁজ প্রত্যেকটা মুহূর্তে নেওয়ার চেষ্টা করেছে রাজ।’
আদিত্যের কথা শুনে রাজ দাঁড়িয়ে গেলে আদিত্য মুচকি হেসে রাজের কাছে এগিয়ে গেলো। পাশে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত গুঁজে বললো,
‘তুই আমাদের সাথে চার বছর যোগাযোগ রাখিসনি রাজ। কোয়েল তখন ছোটো ছিলো সদ্য ক্লাস নাইনে উঠেছে আর তুই সেই সময় এইচ.এস. দিয়ে হাওয়া হয়ে গেলি। ওই ছোটো বয়সেই ও অনেকের কাছে খোঁজ করেছে তোর কিন্তু কোনো খোঁজ পায়নি। ও এখনও জানে না যে আমি তোদের ব্যাপারটা জানি তাহলে তখন কীভাবে আমাকে জিজ্ঞেস করতো তোদের ব্যাপারটা? শুধু এটুকু জানতে পেরেছে যে তুই আমার থেকেই ওর খবর পেতিস। কিন্তু অবাক ব্যাপার তুই জানতিস না।’
আদিত্য কথাটা বলে হাসতে শুরু করলে রাজও হেসে ফেললো। আসলে রাজ যেই ছেলেটার থেকে খবর নিত কোয়েলের সেই ছেলেটাকে আদিত্যই ইনফরমেশন দিতো। আদিত্য ছেলেটাকে কিছু বলতে দেয়নি রাজকে কারণ টা রাজের প্রতি আদিত্যের অভিমান। আদিত্য রাজকে বললো,
‘আমার মনে হয় এবার তোর কোয়েলকে নিজের মনের কথাটা বলা উচিত। দেখ না ওর উত্তর কি আসে। ওর উত্তরেই তুই বুঝতে পারবি ও অভিমান করে আছে নাকি সত্যিই তোকে পছন্দ করে না।’
রাজ মাথা নাড়লো শুধু আদিত্যের কথায় আর মনে মনে ভাবলো,
‘ও হয়তো সত্যিই আমাকে পছন্দ করে না। কিন্তু ওকে এটুকু তো জানাতেই হবে যে আমি ওর জন্যেই চলে গেছিলাম আর ওর জন্যেই ফিরে এসেছি।’
‘কি রে? কি এতো ভাবছিস? চল।’
রাজকে আদিত্য টেনে ভার্সিটির দিকে নিয়ে চলে গেলো। ক্লাস শেষে আদিত্য আর রাজ বসে কথা বলছে বন্ধুদের সাথে কিন্তু আদিত্যের চোখ খুঁজছে মৌমিতাকে। আদিত্য বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে সেটা দেখে রাজ হেসে আদিত্যের কানে কানে বললো,
‘বউরে খুঁজিস? তাহলে ওইদিকে দেখ।’
রাজের কথামতো আদিত্য সেদিকে তাকালে দেখে মৌমিতা আর কোয়েল কথা বলতে বলতে আসছে। রাজ আদিত্যকে বললো,
‘দেখ, তোর বউ এর খেয়াল রাখছি আমি।’
আদিত্য হেসে রাজের দিকে ঘুরে বললো,
‘আমার বউয়ের খেয়াল রাখিসনি, নিজের বউয়ের রেখেছিস। একসাথে দুটো কাজ করছিস বল?’
‘(মাথা চুলকে, হেসে) ভো তো হেইন।’
এদিকে,
আমি আর কোয়েল কথা বলতে বলতে আসছিলাম সে সময় দেখলাম আদিত্য আর রাজদা ওদের বন্ধুদের সাথে কথা বলছে। আমার সাথে সাথে কোয়েলও এটা দেখতে পেলে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে বলে,
‘চল, হস্টেলে ফিরতে লেট হয়ে যাচ্ছে।’
কথাটুকু বলেই কোয়েল গটগট করে হেঁটে বেরিয়ে গেলে আমি ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একবার রাজদাদের দিকে তাকাই। রাজদা আমাকে দেখলে তাচ্ছিল্য হাসলে আদিত্য পিছন থেকে ইশারা করে কোয়েলের সাথে যেতে। আমি সেটা দেখে হাঁটা ধরি কোয়েলের পিছনে। হম, আদিত্যও তার মানে সবটাই জানেন ওদের ব্যাপারে। ওনাকেই না হয় সুযোগ পেলে জিজ্ঞেস করব। হ্যাঁ, সেটাই ভালো হবে। এই বিষয় দিয়েই কথা বলা শুরু করা যাবে। নাহলে আগের দিনের ব্যবহারের পর কীভাবে কথা বলবো মাথায় আসছিল না। এটাই একটা মাত্র উপায় এটা দিয়ে শুরু করে না হয় আগের দিনের বিষয়ে যাবো। কথাগুলো ভেবেই একটু দৌঁড়ে গিয়ে কোয়েলের পাশে হাঁটতে শুরু করলাম।
রাতে,
‘কাজটা হয়ে গেছে রাজ?’
‘অলমোস্ট। বাট আমাদের একবার কলকাতা যেতে হবে।’
‘হম।’
‘কাজটা কিন্তু রিস্কি, ঠিক হচ্ছে কি?’
‘ঠিক কাজে রিস্ক তো থাকবেই ভাই। কিন্তু পিছিয়ে আসলে তো চলবে না তাই না?’
‘প্ল্যানটা দারুন কিন্তু।’
‘তুই না থাকলে এক্সিকিউট করতে পারতাম না। তোকে দেখেই ঠিক করে নিয়েছিলাম প্ল্যানটা কোনো না কোনো ভাবে কাজে লাগাতেই হবে।’
‘চল, অনেক কথা হলো। ঘুম পাচ্ছে।’
‘হ্যাঁ।’
আদিত্য কথা শেষ করে নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলে রাজ সেটা দেখতে পায়। বলে,
‘করেই দেখ একবার ফোন। মে বি ও’ও ওয়েট করছে তোর ফোনের?’
রাজের কথাটা শুনে আদিত্যের মনে এক চিলটে আশার আলো জেগে উঠলো। আদিত্য হালকা ভয় নিয়েই ফোনটা হাতে নিয়ে রাজের দিকে তাকালে রাজ হেসে ভরসা জুগিয়ে ঘুমোতে চলে যায়।
অন্যদিকে,
‘ধুর, কিছুতেই ঘুম আসছে না। কি যে হচ্ছে আজকে।’
অনেকক্ষণ ধরে এপাশ ওপাশ করতে করতে উঠে বসলাম। উঠে বসে কোয়েলের দিকে তাকাতেই দেখলাম ও গভীর ঘুমে মগ্ন। কি করবো ভেবে না পেয়ে ফোনটা হাতে নিলাম। গান শুনি, এতো রাতে ওনাকে ফোন করবো না। আর কি বা বলবো? কোয়েলদের কথা জিজ্ঞেসটা না হয় পরেই করবো। কথাটা ভেবে হেডফোনটা হাতে নিতেই ফোনের আলো জ্বলে উঠলো। স্ক্রিনে ওনার নাম ভেসে উঠছে, ভাইব্রেশনে রাখায় কোনো আওয়াজ হয়নি। আমি কোনো কিছু না ভেবেই ফোনটা রিসিভ করে নিলাম। রিসিভ করার পর অপেক্ষা করতে লাগলাম ওনার কিছু বলার কিন্তু ওদিক থেকেও কোনো রকম কোনো কথা নেই। আমি ধৈর্য হারিয়ে ফোনটা রাখতে নিলেই উনি ওপাশ থেকে বললেন,
‘ঘুমাওনি?’
‘না। ঘুম আসছিলো না।’
‘আচ্ছা।’
‘আপনি কেন ঘুমাননি?’
‘ঘুম আসছিলো না আমারও।’
‘আচ্ছা।’
আবার নীরব হয়ে রইলাম দুজন। এবার আমি নীরবতা ভেঙে বললাম,
‘রাজদা আপনার সাথে রয়েছে?’
‘হ্যাঁ, একই রুমে আছি দুই বন্ধু। ঘুমিয়ে পরেছে ও তাই আমি ব্যালকনিতে আছি।’
‘ঠিক আছেন উনি?’
‘হ্যাঁ, ঠিকই আছে। কোয়েল ঠিক আছে তো?’
‘হ্যাঁ, অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে।’
‘ওর কথা বাদ দাও। কুম্ভকর্ণ এখনকার যুগে থাকলে ওকেই বিয়ে করতো আর নিজের পাটরানী বানাতো। কুম্ভ রাশি হলে যে মানুষ এমন ঘুমায় তা ওকে না দেখলে জানতে পারতাম না।’
[তোর বররে কিন্তু আমি মাইরা দিমু সুমি বেবি।😒 আমারে এসব কি কইতাসে? ঘুমাচ্ছি বলে রিপ্লাইটা দিতে পারলাম না। তুই দে আমার হয়ে।😗]
‘দেখুন, ঘুম নিয়ে এরকম বলবেন না। ঘুম হচ্ছে গিয়ে স্বাস্থ্যের পক্ষে অনেক ভালো।’
‘ওহ, তুমিও তাহলে ঘুমেরই দলে?’
‘আজ্ঞে।’
দুজনেই হেসে উঠলাম। এভাবেই গল্প চলতে লাগলো আমাদের। গল্প করতে করতে কখন যে চোখ লেগে গেছে টেরই পাইনি। সকালবেলা ঘুম ভাঙতেই দেখি ফোন কানের কাছে রয়েছে আর ওনার কলটাও কেটে গেছে অনেক আগে। আমি তাড়াতাড়ি উঠে ড্রেস বার করলাম কারণ কোয়েল ওয়াশরুমে। কোয়েল বের হলে আমি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিয়ে বের হয়ে যাই ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]
আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী