‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৫৬||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
৮৪.
সকালে কোয়েলের ঘুম ভাঙতেই কোয়েল লাফ দিয়ে উঠে বসলো। ফোনটা নিয়ে দেখলো সকাল সাতটা বাজে। তাড়াতাড়ি করে উঠে জানলার কাছে গিয়ে জানলাটা খুলে রাজের গাড়িটা খুঁজতে থাকলো কোয়েল। নাহ, কোথাও রাজের গাড়িটা দেখা যাচ্ছে না।
কোয়েল: কখন বাড়ি গেছে কে জানে? আচ্ছা ও বাড়ি গেছে তো নাকি…ধুর ধুর! কি যে আজে বাজে ভাবছিস তুই কোয়েল। পুরো মাথাটাই গেছে তোর। যাই ফ্রেশ হয়ে ও’কে একটা মেসেজ করবো।
কোয়েল এই বলে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ করতে যাবে তার আগেই দেখে রাজ মেসেজ করে রেখেছে। মেসেজে লেখা, “আমি নটার সময় হস্টেলের বাইরে চলে আসব, রেডি হয়ে থাকবে।”
কোয়েল দেখলো মেসেজটা কিছুক্ষণ আগের করা। তাই রিপ্লাই হিসেবে প্রশ্ন করলো, “কখন বাড়ি গেছো?”
কোয়েল মেসেজ করতেই সেটা সিন হয়ে গেলো মানে রাজ হোয়াটসঅ্যাপে ওর চ্যাট খুলেই বসে ছিলো। রাজ রিপ্লাই করলো, “কিছুক্ষণ আগে। তিরিশ মিনিট মতো হয়েছে।”
কোয়েল এবার সঙ্গে সঙ্গে রাজকে ফোন করলো। রাজ ফোন রিসিভ করতে না করতেই কোয়েল বলা শুরু করলো,
কোয়েল: কি গো তুমি? সারারাত ওভাবে গাড়ির মধ্যে বসেছিলে? ঠিকভাবে ঘুমাও পর্যন্তনি। এইগুলো তোমার পাগলামি জানো তো? আমি তো হস্টেলের মধ্যে ছিলাম, কি এমন ক্ষতি হতো আমার? বরং তোমার ক্ষতি হয়ে যেতে পারতো। তুমি কেন…
রাজ: আচ্ছা বাবা শান্ত হও। কুল কুহু কুল! আমি একদম ঠিক আছি ওকে? এতটা ভয় পাওয়ার কি আছে আর আমার কে ক্ষতি করবে? জিয়ার বাবা? কিচ্ছু করতে পারবে না রিল্যাক্স।
কোয়েল: এতোটাও ওভার কনফিডেন্স ভালো না রাজ। যা ইচ্ছা করো, আমি কিচ্ছু বলবো না আর।
কোয়েল ফোন রেখে দিয়ে বেডের উপর নিজের থেকে দূরে ছুড়ে ফেললো ফোনটাকে। মাথার মধ্যে জানো আগুন জ্বলছে ওর। সারাদিন এবার রাজ অফিসের কাজ করবে তারপর আবার সন্ধ্যা থেকে পড়তে বসবে। এর মধ্যে যদি একটু না ঘুমায় তাহলে যে শরীরটা খারাপ করবে সেটা বুঝতে চাইছেনা। সামনেই পরীক্ষা, তার মধ্যে শরীর খারাপ হলে কি হবে ভেবে দেখেছে? এইসব ভেবেই মাথা গরম হয়ে আছে কোয়েলের যার কারণে রাজ ফোন করলেও সেটা দেখার পরও ধরছে না ফোনটা। রাগের চোটে ফোনটা সাইলেন্ট করে দিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে দিলো কোয়েল।
সকাল ৮টা বেজে ৩০ মিনিট,
কোয়েল ধীরে সুস্থে রেডি হতে শুরু করে। এখন মাথাটা একটু ঠান্ডা আছে কারণ কিছুক্ষণ আগেই মৌমিতা আর আদিত্য ফোন করে ও’কে বুঝিয়েছে। ফোনটা জেনারেল মোড করে কোয়েল রেডি হয়ে নেয়। ৯টা বাজার কিছুক্ষণ আগেই কোয়েল বেরিয়ে যায় হস্টেল থেকে। বেরিয়ে নিজের ডান দিকে তাকাতেই দেখে বেশ কিছুটা দূরে রাজের গাড়ি দাঁড়িয়ে।
কোয়েল: রাজের গাড়ি এখানে? তার মানে ও চলে এসেছে? কই আমাকে তো মেসেজ করলো না?
কোয়েল কথাটা ভেবে আস্তে আস্তে রাজের গাড়ির দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু গাড়িতে কাওকে দেখতে পায় না। যেহেতু জায়গাটা নির্জন তাই হঠাৎই কোয়েল আশে পাশে থেকে একটা মেয়েলি গলার স্বর পায়। চারিদিকে তাকাতেই দেখে আরেকটু এগিয়ে একটা গলি মতো আছে। খুব সম্ভবত, ওখানে থেকেই আসছে আওয়াজটা। কোয়েল আস্তে আস্তে গলিটার দিকে এগিয়ে যেতেই দুটো মানুষকে দেখে স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে যায়। কোয়েলের সাথে সাথে কোয়েলের দৃষ্টিও তাদের উপর স্থির। পুরোপুরি ভাবলেশহীন হয়ে কোয়েল সামনের দিকে তাকিয়ে রাজের বুকে অন্য একটা মেয়েকে দেখছে। মেয়েটাকে চেনে ভালো মতো, সেদিন পার্কের মেয়েটা মানে টিনা। শুধু যে মেয়েটা রাজের বুকে মাথা রেখে রাজকে জড়িয়ে ধরে আছে তা নয়, রাজও জড়িয়ে ধরে আছে মেয়েটাকে সযত্নে। রাজ টিনাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে ওর দিকে হেসে ওর চোখের জল মুছিয়ে দেয়।
রাজ: আমি তোমার চোখে আর কোনোদিন জল দেখতে চাই না। আমি আছি তো? আমি সবসময় তোমাকে আগলে রাখবো।
এইবার রাজ নিজেই টিনাকে বুকে টেনে নেয় হেসে আর কোয়েল সেটা দেখে নিজের দুহাত মুষ্টিবদ্ধ করে চোখ বন্ধ করে নিলে টিনার মুখে নিজের নাম শুনতে পায়। চোখ খুলে দেখে রাজ ভয়ভীত হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রাজ কোয়েলের দিকে এক পা বাড়াতেই কোয়েল এক-পা, দু-পা করে পিছতে পিছতে নিজের চোখের জল মুছে দৌঁড়ে চলে যায় ওই জায়গা থেকে। কোয়েলের পিছন পিছন রাজও ছুট দিলে টিনা গলি থেকে বেরিয়ে রাজের গাড়ির সামনে দাঁড়ায়। তারপর লুকিং গ্লাসে চোখের জল মুছে নিয়ে, নিজের মুখটা একটু দেখে বাঁকা হাসে।
এদিকে, কোয়েল নিজের হস্টেলের গেটের সামনে এসে দেয়ালে এক হাত ভর দিয়ে সমানে ফোঁপাতে থাকে। সেই সময় রাজ এসে কোয়েলের পিছনে দাঁড়ালে কোয়েল তা টের পায় আর নিজের চোখের জল মুছে হাঁটতে নেয়।
রাজ: (কোয়েলের হাত ধরে) এভাবে দৌঁড়ে এলে কেন তুমি? আমার কথাটা তো শুনবে নাকি?
কোয়েল এক ঝটকায় নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে রাজের দিকে ফিরে বললো,
কোয়েল: কথা তো দূর তোমার মুখটাও দেখতে চাই না আমি। এভাবে আমাকে না ঠকালে তোমার চলছিলো না তাই না?
রাজ: আগে আমার পুরো কথাটা তো শোনো।
কোয়েল: বললাম তো আমার কিচ্ছু শোনার নেই। এইজন্যই তোমাদের ছেলেদের আমি বিশ্বাস করতে চাই না। একসাথে দু-তিনটে মেয়ে না হলে তোমাদের তো চলেই না।
রাজ: কোয়েল মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ! (জোরে) একটা মেয়ের নামে বদনাম করছিস তুই এটা বলে। নিজে একটা মেয়ে হয়ে কি করে এসব বলছিস তুই?
কোয়েল: তোমার মত একটা ছেলেকে চোখের সামনে দেখেছি তাই বলছি। বাহবা, যতজনকে রাখো সবার জন্যই দরদ আছে বুঝি? যাক, শুনে বেশ ভালো লাগলো। তা তোমার ফুর্তির পাত্রী হিসাবে আমি কত নম্বর…
কোয়েলের কথা শেষ হওয়ার আগেই রাজ সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল কোয়েলের গালে। কোয়েল গালে হাত দিয়ে চুপ করে থাকলে রাজ নিজেই ধাতস্থ হয়, বুঝতে পারে সে একটা ভুল করে ফেলেছে। রাজের চোখ ছলছল করে ওঠে। কোয়েলের দু-গালে নিজের হাত রাখতে গেলেই কোয়েল পিছিয়ে গিয়ে ভেজা চোখ নিয়ে রাজের দিকে তাকায়। যার ফলে রাজের বুকের ভিতরটা চিনচিন করে ওঠে। কোয়েল হাঁটা শুরু করলে রাজ নিজের মাথা নীচের দিকে নামিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। বড়ো একটা নিশ্বাস নিয়ে জোর পায়ে হাঁটা দেয় কোয়েলের পিছনে।
রাজ: কুহু! কুহু আমার কথাটা শোনো একবার। আমি তোমার গায়ে হাত তুলতে চাইনি। কুহু প্লিজ!
কোয়েল রাজের একটা কথাও শুনছে না নিজের মনে হেঁটে চলেছে। একসাথে অনেকগুলো পুরোনো ঘটনা বলা যায় পুরোনো ভয় কোয়েলের সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে যেগুলো ও কখনোই রাজের থেকে আশা করেনি। রাজকে সবার থেকে অন্য ভেবে শেষমেষ ভুল করলো কোয়েল? এটাই মাথায় ঘুরছে কোয়েলের সমানে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করেই রাজ কোয়েলের হাত ধরে টান মেরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
রাজ: একবার আমার কথাটা…
ঠিক যতটা জোরে, যতটা দ্রুত রাজ কোয়েলকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছিলো তার থেকেও বেশি জোরে, দ্রুত কোয়েল রাজের বুকে দু-হাত দিয়ে ধাক্কা মেরে রাজকে সরিয়ে দেয়।
কোয়েল: আমার কাছে আসার চেষ্টাও করবে না তুমি। আমার এতদিনের ধারণাটাই বদলে দিয়েছো তুমি। এক নিমিষে আমার ভালোবাসা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছো।
রাজ: কুহু প্লিজ…
রাজ আবারও কোয়েলের কাছে এসে কোয়েলকে বোঝানোর চেষ্টা করতে যায় কিন্তু কোয়েল আবার ধাক্কা মেরে রাজকে দূরে সরিয়ে বলে,
কোয়েল: আর কোনোদিনও আমার সামনে আসবে না।
কোয়েল চলে যেতে রাজি হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। নিজের দু-হাত নাকের দুপাশে চোখের কোণে এনে চোখের জলটা মুছে নেয়।
রাজ: আমি ওকে কিছুতেই হারাতে পারবো না। আই ক্যান্ট লিভ উইদআউট হার!
রাজ উঠে দাঁড়ায় আর দৌঁড়ে কোয়েলের যতটা সম্ভব কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
রাজ: কুহু প্লিজ কাম ব্যাক! আমি বাঁচবো না তোমাকে ছাড়া। এভাবে আমাকে একা করে দিয়ে যেও না প্লিজ! আমার ভুল হয়ে গেছে এর জন্য তুমি আমার কাছে থেকে আমাকে যা শাস্তি দেবে আমি মাথা পেতে নেব। কিন্তু আমাকে ছেড়ে যাওয়ার মতো শাস্তি দিয়ো না আমি শেষ হয়ে যাবো। আই লাভ ইউ সো মাচ কুহু!
রাজ চিৎকার করে কথাগুলো বলে দেয় কোয়েলকে আটকাতে ব্যর্থ হয়ে। দু-চোখের কোণ দিয়ে এখনও জল গড়াচ্ছে রাজের। এদিকে রাজের আর্তনাদসহ ডাক আর উপেক্ষা করতে পারছে না কোয়েল, বুক ফেঁটে কান্না আসছে। রাজের কথাগুলো শুনে এবার বাধ্য হয়ে পিছন ফিরে তাকায় কোয়েল আর কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। কারণ রাজ গাড়ি যাওয়ার মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে কোয়েলের দিকে তাকিয়ে। একদিক দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে আর একদিক দিয়ে গাড়ি আসছে, মাঝে দাঁড়ানোর জায়গা। কোয়েল সেই দাঁড়ানোর জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে কারণ একদিক পার হয়ে ও চলে এসেছে নিজের কথা শেষ করে। কিন্তু রাজ পার হয়ে আসেনি। হঠাৎ করেই কোয়েলের চোখ যায় অপরদিক থেকে বেশ কয়েকটা গাড়ি একসাথে আসছে দ্রুত গতিতে কিন্তু সেদিকে রাজের কোনো হুঁশ নেই। সে করুন ও অসহায় দৃষ্টি নিয়ে কোয়েলের দিকে চেয়ে আছে। কোয়েল শুধু রাজের দিকে তাকিয়ে একটা চিৎকার দেয় জোরে….
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]
বি:দ্র: এই কয়েকদিন মোটামুটি ভালো বড়ো পর্ব দিয়েছি তাই আর বড়ো করলাম না আজকের পর্ব।
আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী