#তোমার_প্রেমে_পড়েছি
#পর্ব_২০
#Rimy_Islam
নমনীকে দরজার সামনে দেখে মেয়েটা তড়াৎ করে বসে খুব সহজভাবে উঠে এলো তার কাছে। এবং বললো,
— Hi! I am Naura. বাংলায় ‘ নৌরা’।
নমনী রগচটাভাবে বললো,
— আমি ইংরেজি বুঝি। নামটা বাংলায় আলাভাবে বলার প্রয়োজন ছিল না। আমি নমনী।
নৌরা হেসে বললো,
— Please don’t mind. And i know you.
— You know me but i don’t . কে আপনি?
— নেত্র’র ফ্রেন্ড। তুমি নেত্র’র ওয়াইফ, রাইট?
নমনী মুখ বেঁকে বললো,
— জি। কেন?
নৌরা বলতে লাগলো,
নেত্র শুরু থেকেই অন্য ধরনের ছেলে ছিল। মেয়ে, মাস্তি এসবের ফুরসত ওর কখনোই ছিল না। কেবল বই তার জীবন। বই তার মরণ। হঠাৎ তোমার প্রেমে পড়ে বিয়ে করাটা, তাও আবার পালিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে করাটা আমরা কেউই নিতে পারছিলাম না। তোমাকে দেখার প্রবল ইচ্ছে থেকেই আজ চলে এসেছি।
‘কেমন দেখলি আমার প্রেম বালিকাকে?’ প্রশ্নটা নৌরাকে ছুঁড়ে ঘরে ঢুকলো নেত্র। সে রুমের প্রবেশ দরজার সামনে দিয়ে এসছে দেখে নমনী অবাক হয়। কারণ নেত্র বাইরে কখন গিয়েছে তা সে বিন্দুমাত্র আভাস পায়নি। তবে যে আমিরা বলছিল নেত্র নিজের ঘরেই রয়েছে! নেত্র’র দু’হাত ভর্তি বই। সে বইগুলোকে টেবিলে রেখে নৌরার দিকে তাকিয়ে হাসে। বিপরীতে নৌরাও হাসে। এরপর নেত্র যখন নমনীর দিকে তাকালো, নমনী মুখটা গম্ভীর করে নিলো। যার দরুন নেত্র চুপসে যায়।
নৌরা বললো,
— Very pretty!
নেত্র গৌরবের বেশে বললো,
— বলেছিলাম না যে আমার বউ মোস্ট প্রিটি লেডি! নিজের চোখে দেখে বিশ্বাস হলো তো?
— সবই বুঝলাম। তোর বউ সুন্দরী। তবে আমি খুব অবাক হয়েছি।
নেত্র উৎকণ্ঠা নিয়ে বললো,
— কেন-কেন?
— তোর বউ আমাকে নাকি চিনেই না। কিরে! তুই আমার ছবি ওকে একবারো দেখাসনি?
নেত্র থ বনে গেলো। চোরা চোখে নমনীকে দেখে নেয়। সে বিড়াল চোখে তার দিকেই চেয়ে রয়েছে। নমনীর সূক্ষ্ম চোখে অনুসন্ধিৎসু ভাব দেখে নেত্র কেশে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বললো,
— সুযোগ পাইনি। বাদ দে ওসব কথা, এখন তো পরিচয় হয়েছে। এবার যে বই নিতে এসেছিলি সেটা নিয়ে বিদেয় হ।
কিন্তু নমনী বাঁধা দেয়।সে সৌজন্য রক্ষার্থে বললো,
— সেকি! কেবল তো নৌরা আপু এসেছে। আজ থেকে যাক।
— প্লিজ আমাকে আপু বলোনা। আমি তোমার বড় হলেও নাম নিয়েই বলো। It’s a request.
তরতর করে কথাগুলো বলে নৌরা।
নমনী ফোঁড়ন কেটে বললো,
— ছিঃ আপু, তা কি হয় নাকি! তোমাকে আপু বলেই ডাকবো। স্যরি তোমার রিকুয়েষ্ট রাখতে পারছি না। বিবেকে বাধে।
নমনী কথাগুলো বলে মনে মনে খুব পুলকিত হয়। মেয়েটাকে ইচ্ছে মতো জব্দ করা গেছে ভেবে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নেত্র তা সামলে নিতে বললো,
— নৌরা, তুই যা। অন্য একদিন এসে ক’ দিন থেকে নাহয় যাস।
নৌরা মুখে অসম্ভব গাম্ভীর্য এনে বললো,
— আমিও তাই ভাবছিলাম। যাচ্ছি কেমন?
____
‘আপু আসব?’ কথাটি বলে নমনী অনুমতির অপেক্ষা না করে ঘরে ঢুকে পড়ে। মুমু গোছগাছে তুমুল ব্যস্ত হয়ে রয়েছে। আগামীকাল তারা কানাডার মাটিতে পা দিতে চলেছে। সে নিয়েই তার ব্যস্ততা। সবার বারণ উপেক্ষা করে সত্যিই স্বদেশের মায়া ত্যাগ করে ভিন্ন দেশী হতে উদ্যত হয়েছে। এ নিয়ে সকলের মন খুব খারাপ। রেহান সাহেবের প্রেসার উঠা-নামা করছে ঘনঘন। নীলুফা বেগম শয্যাশায়ী হয়েছে কয়েকদিন ধরে। না ঠিকমতো কিছু মুখে তুলছেন, না কারো সাথে ঠিকমতো কথা বলছেন।
মুমু হেসে উঠলো। হাসি মুখ থেকে খসে খসে পড়ছে। বললো,
— পারমিশন নিচ্ছিস কেন? বোস এখানে। কি বলবি বল।
— তুই সত্যি চলে যাবি আপু? আমি যে একা হয়ে পড়বো। বাবা-মাও খুব মন খারাপ করছে।
— তুই একা কোথায়? বাড়ি ভর্তি লোক। তার উপর তোকে যত্ন, ভালবাসা দেওয়ার মানুষ নেত্র আছে তো।
— যাস না প্লিজ।
— পাগলামি করিস না। শুভ কাজে বাধা দিতে নেই। আমরা যেয়ে ঠিকমতো সব সামলে নিতে পারলে তোদেরকেও নিয়ে যাবো। কত মজা হবে!
নমনী হতাশ হলো। বুঝতে বাকি রইলো না মুমু বুঝবার মেয়ে নয়। এছাড়া নীলয় শুরুতে কানাডা যেতে রাজি না হলেও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাকে মানাতে সক্ষম হয়েছে মুমু। মুমুর নাছোড় জিদের কাছে সে হার মেনেই নিয়েছে।
নমনীর মন খারাপ। আকাশে মেঘ জমেছে। একদম তার মনের মতন। ছাদের রেলিংয়ে দু’হাতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছে সে। সকালে নেত্র’র অনাকাঙ্খিত বান্ধবীর আগমন তার ভালো লাগেনি। অন্যদিকে মুমুরা কাল বিদায় নিবে ভাবলেই হুহু করে কান্না চলে আসছে তার। কোনো কিছুই ভালো চলছে না।
‘ কান ধরে ক’ বার উঠবস করতে হবে? পঞ্চাশ, একশ? চলবে তো?’
নমনী হাসলো। নেত্র এমন একটা মানুষ, যে নিমেষেই কারো মন ভালো করে দেওয়ার চমৎকার ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে। এ ক্ষমতা খুব সীমিত মানুষের রয়েছে। সে বললো,
— হাজারবার করো।
নেত্র ঢোক গিলে বললো,
— তাহলে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে হবে। হাজারবার উঠবস করার পর আমি আর আমি থাকবো না। লেটুস মহাশয় হয়ে যাবো।
— কি যা তা বলো!
— মন খারাপ?
— অসম্ভব!
— চলো ঘুরতে যাই।
নমনী বিরক্তি নিয়ে বললো,
–আমি খুব আপসেট নেত্র। মেয়েটা কে ছিল? খবরদার মিথ্যে বলবে না।
— আমার স্কুল কালের ফ্রেন্ড। এবং এখনো আছে। একটু চঞ্চল বাট মন ফ্রেশ। আমার কাছে একটা বই নিতে এসেছিল। সাথে তোমাকে দেখার ওর ইচ্ছেটাও পূরণ হলো।
নমনী ঠোঁট ফুলিয়ে বললো,
— তুমি বললে ফিরতে দেরি হবে অথচ বাড়ি এসে দেখি ইতোমধ্যে তুমি হাজির। আবার সাথে এক মেয়ে নিয়ে। কি মনে করো আমি কিছু বুঝিনি? খারাপ মতলবেই নিয়ে এসেছিলে মেয়েটাকে। আমি চলে আসায় তোমার ইচ্ছে অপূর্ণ-ই থেকে গেলো।
নেত্র নৈরাশা জনিত শ্বাস ফেলে। মেয়েরা বড়ই আজব প্রাণী! তার দেখা সর্বাজব প্রাণী এরা। এদের বুঝানোর ক্ষমতা পৃথিবীর কোনো শক্তির নেই। কোনো সৃষ্টির নেই। আর হয়তো তাই মানসিকভাবে নারীদের দ্বারাই পুরুষরা নির্যাতিত।
চলবে………….