#তোমার_প্রেমে_পড়েছি
পর্ব_২১
#Rimy_Islam
আর হয়তো তাই মানসিকভাবে নারীদের দ্বারাই পুরুষরা নির্যাতিত।
নমনী বললো,
— নৌরা আপু আমাদের সম্পর্কে সব জানে? ওই যে বললো পালিয়ে জোরপূর্বক বিয়ের কথা। আবার তুমিও তার সামনে আমাকে প্রেম বালিকা বলে ডাকলে। চলছে কি তোমাদের ভেতর?
নেত্র হাসতে হাসতে বললো,
— কিছুই না। তোমার আর আমার ফুল হিস্ট্রি আমার প্রত্যেক ফ্রেন্ড-ই জানে। নৌরা একা নয়।
— আমাদের সম্পর্ককে একটা উন্মুক্ত বইয়ের মতো সবার কাছে তুলে ধরার খুব কি দরকার ছিল?
— নমনী প্লিজ, প্রত্যেকটা দিন একটা না একটা বিষয়ে তুমি উঠে পড়ে লেগে বসো। এভাবে চলতে থাকলে….
— চলতে থাকলে কি?
— জানি না। তোমার মতো বুঝে নাও।
— দিন দিন তোমার মাঝে প্রতুল চেঞ্জ দেখছি।
— শোন নমনী, যখন সম্পর্কে সন্দেহের স্থান হয়, তখন ভালবাসা পালিয়ে যায়। তাকে ধরে আনতে পরে অনেক বেগ পেতে হয়। আবার অনেকে আর ফেরাতে পারে না। তুমি কি তাই চাও?
নমনী সিক্ত গলায় বললো,
— না। কিন্তু সন্দেহের সুযোগটা তুমি করে দিচ্ছ।
নেত্র মুখ বিকৃত করে নিলো। তারপর রসহীন গলায় বললো,
— পুরো হোপলেস। কিচ্ছু হবে না তোমাকে দিয়ে।
নেত্র আর দাঁড়ালো না। নমনীকে রেখে নেমে পড়ে।
____
ইদানীং নেত্র প্রত্যহ বাড়ির বাইরে অনেকটা সময় কাটায়। বাসার প্রতি আগের মতো টান, উত্তেজনা বোধ করে না। ফিরতে ফিরতে বেশ রাত করে। নমনীও এতে যেন অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। প্রথম দিকে এ নিয়ে দু’ একবার কথা কাটাকাটি হলেও এখন আর সেটুকুও হয় না। কারণ সে ইতোমধ্যেই হাল ছেড়ে দিয়েছে। নেত্র’র তার প্রতি যে কেয়ার আর ভালবাসা নিয়ে দিন রাত মুমু জ্বলতো, সেই নেত্র এখন কেয়ারের ‘ক’ ও নেয় না। মুমু আর নিলয় কানাডায় বেশ সুখেই জীবনযাপন করছে। সপ্তাহে দুই একবারের বেশি ওদের সাথে কথা হয় না। তবে আশ্চর্য বিষয়, তাদের যাওয়ার সাথে সাথে বাড়ির সুখগুলোও যেন চলে গেছে। নেত্রর সাথে তার সম্পর্ক ঠিক নেই। যে যার মতো চলছে। কেউ কাউকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নয়। রেহান সাহেব নিজের ঘর ছেড়ে খুব কমই বেরোন। এমনকি খাবার টেবিলেও তিন বেলা আসেন না। অপরদিকে নীলুফা বেগম আর আগের মতো প্রাণোচ্ছ্বল, সৌখিন মহিলা নেই। সবকিছুই মন্দ চলছে। এভাবে চলতে থাকলে নমনী এখানে বেশিদিন টিকতে পারবে না। বরাবরই সে ভীষণ আমোদে মেয়ে থেকেছে। হুট করেই এমন প্রাণহীন পরিবেশে তার দম নিতেও যেন হাঁসফাঁস ধরে যাচ্ছে।
নৌরা মেয়েটা একদিন হঠাৎ করেই চলে এলো। নমনী তখন সবে গোসল সেরে বেরিয়েছে। আমিরা চুলোয় রান্না বসিয়েছে। প্রতিদিন রান্নার সময় আমিরাকে সময় দিয়েই নমনীর বেশ কেটে যায়। আজও তাই গোসল সেরে ওদিকে যেতে যাবে তখনই এলো নৌরা।
— নমনী, কেমন আছো?
নমনী খুব যে খুশি হলো তা না। বরং অনিচ্ছুক এক প্রকার বিরক্তি মুখে চলে এলো।
— তুমি?
— অবাক হচ্ছ? নেত্র ফিরেনি বুঝি?
— না।
— বসতে বলবে না?
— ওহ সরি, প্লিজ আপু বসো।
— নেত্র বাসায় ফিরবে না আজ। কথাটা জানাতেই এলাম। আমার বাসায় থাকবে। ক্লাস শেষ করে সোজা আমার বাসায় যাবে। একটা পার্টির আয়োজন করেছি।
নমনী এবার সত্যিই আকাশ থেকে পড়লো। কি বলছে এই মেয়ে! সর্বনাশ! নেত্র এতদূর এগিয়েছে যে, সে এখন পরনারীর বাসায় রাত্রি যাপন করবে?
— আমিও যাবো।
কাঠ গলায় বললো নমনী।
— সরি তোমাকে নিতে পারতাম যদি ফ্রেন্ড হতে। ওই পার্টতে শুধু ফ্রেন্ডরা থাকবে। তুমি বোর হবে।
নৌরার উচ্চারিত প্রতিটি কথা খোঁচা বরাবর বিঁধে নমনীর বুকে। সে নির্লজ্জ হয়ে একজনের বাড়িতে যেতে চাইছে আর সে কিনা তাচ্ছিল্যের ন্যায় না করে দিলো!
— তাহলে নেত্রকেও সে পার্টতে থাকতে দেব না যেখানে আমি থাকবো না।
— নেত্র থাকবে কিনা সেটা একান্তই তার ব্যাপার। সে নিজ ইচ্ছায় যেতে চেয়েছে।
নৌরা চলে যাবার পরও নমনীর মন শান্ত হলো না। নেত্রকে অনেকবার ফোন করার পরও সে ফোন ধরলো না। এমন পর্যায়ে নমনী নৌরার বাসায় যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ঝামেলা বাধে অন্যখানে। নৌরার বাড়ির ঠিকানা তার কাছে নেই। শুধু জানে তার বাসা শালবাগান এরিয়ায়। সুবিধের ব্যাপার হলো নেত্র’র সোহেল নামক এক ফ্রেন্ডের নাম্বার নমনীর কাছে ছিলো। তার কাছ থেকে বিভিন্ন খবর দেওয়া নেওয়া ভালোই হতো। এক্ষেত্রেও সে নিশ্চয়ই সাহায্য করবে। করলোও তাই। সোহেলের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো এবং সন্ধ্যে নাগাদ নৌরার বাড়ির সামনে হাজির হলো নমনী। মধ্যম প্রাচীরঘেরা একতলা বাসা। কলিংবেল চাপতেই দরজা খুললো নেত্র। আশ্চর্য! নেত্র’র মুখোভঙ্গি অবাক করবার মতো। শান্ত চেহারা। সরল, নির্ভীক হাসি। নমনীকে দেখে সে বিন্দুমাত্র ঘাবড়ায়নি। যেন তার আসার খবর নেত্র পূর্ব থেকেই জানতো।
চলবে……………..