‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৪৫||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
৬৬.
কোয়েল রাজদের ঘরে এসে দেখে রাজ চুপচাপ বসে আছে সোফায়। কোয়েলের বিষয়টা বেশ আজব লাগে, মনে প্রশ্ন আসে এভাবে কে রাজ বসে আছে? কোয়েল এগিয়ে গিয়ে রাজের পাশে বসে জিজ্ঞেস করে,
কোয়েল: ব্রেকফাস্টের জন্য নীচে যাওনি কেন?
রাজ: এমনি, ভালো লাগছে না কিছু খেতে।
কোয়েল: সকাল থেকে সিগারেট ছাড়া কিছুই খাওনি তুমি আমি খুব ভালো ভাবেই জানি। চলো কিছু একটু খেয়ে নেবে চলো।
কথাটা বলে কোয়েল রাজের হাত ধরে উঠে যেতে নিলে রাজ কোয়েলের হাতটা শক্ত করে ধরে নিজের জায়গাতেই বসে থাকে। কোয়েল রাজের দিকে তাকালে রাজ ইশারায় কোয়েলকে বসতে বলে।
রাজ: আমি ভাবিইনি তুই আসবি আমাকে ডাকতে।
কোয়েল: কি হয়েছে? কি নিয়ে চিন্তা করছো তুমি এত?
রাজ একটু অবাক হয় কোয়েলের প্রশ্নে সেটা বুঝতে পেরে কোয়েল বলে,
কোয়েল: এত অবাক হবার কিছু নেই। তোমার মুখ দেখলে যে কেউ বুঝে যাবে কিছু একটা হয়েছে।
রাজ: (মুচকি হেসে) যে কেউ না! যে ভালোবাসে সেই বুঝেছে আর আজীবন বুঝবে।
রাজের কথা শুনে কোয়েল মুখ ফিরিয়ে নিলে রাজ বেশ চিন্তিত সুরে বলে,
রাজ: বউদি আর তুই অলওয়েজ একসাথে থাকবি ওকেই?
কোয়েল: (রাজের দিকে বড়ো চোখ করে তাকিয়ে) পরেশবাবু আবার কিছু প্ল্যান করছে নাকি জিয়া? ওহ ওরা দুজন তো একই।
রাজ: আমার কেমন জানো মনে হচ্ছে শুধু ওরা দুজন না আরো কেউ আছে। (মনে মনে– আমি খুব ভালো ভাবেই জানি কে আছে। কিন্তু আমি সেটা তোমাকে জানাতে পারবো না, আদিকে তো না’ই। জানি না কি হতে চলেছে আর যেটা হতে চলেছে সেটা কীভাবে সামাল দেবো সেটাও বুঝতে পারছি না।)
কোয়েল: কাকে সন্দেহ করছো তুমি? সৌভিকদা?
রাজ ভ্রু কুঁচকে তাকায় কোয়েলের দিকে আর কিছু একটা ভেবে কোয়েলকে বলে,
রাজ: জিয়া আসার পর থেকে সৌভিকের সাথেই রয়েছে প্লাস ও ক্ষমাও চেয়েছে। এখন তো আমি সিওর কিছু একটা প্ল্যানিং জিয়া করছে, খুব সাবধান।
কোয়েল: মৌ নিজেই পুরো বিষয়টা সম্পর্ক ফলো করেছে আর আমাকে কিছুক্ষণ আগে জানালো। জিয়া যখন ক্ষমা চেয়েছে খটকাটা তখনই লেগেছে মৌয়ের তাছাড়া বাদ বাকি পুরোটা সময় জিয়া ওদের নজরে নজরে রেখেছিলো।
রাজ: হম, বুঝতে পেরেছি। কথাটা আদিও জানে।
কোয়েল: আদিত্যদা তোমার উপর রেগে আছে।
রাজ: (সামান্য হেসে) জানি কিন্তু বিশ্বাস কর আমার কিচ্ছু খেতে ইচ্ছা করছে না। আসলে আমি ঠিক করে ঘুমাতে পারিনি তাই খেতে মন চাইছে না। এটা অলওয়েজ হয় আমার সাথে।
কোয়েল: তাই বলে কিচ্ছু খাবে না?
রাজ: খেয়ে নেবো। ভাবছি এখন তো সবে সকাল ১০টা। দুপুরের দিকে বেড়াবো এই ৩টে নাগাদ। তখন ভিউটাও সুন্দর পাওয়া যাবে আর ঠান্ডাটা একটু হলেও কম থাকবে। সন্ধ্যের আগে ফিরে আসবো আবার। আজকে প্রথম দিন সো অতটা না ঘুরলেও চলবে।
কোয়েল: তাহলে ততক্ষণ তুমি ঘুমিয়ে নাও, দুপুরে খেয়ে নিয়ে তারপর বেড়াবে।
রাজ: হম, ভীষণ টায়ার্ড লাগছে।
কোয়েল উঠবে তখনই রাজ কোয়েলের হাতটা শক্তকরে ধরলো আবার। কোয়েল রাজের চোখের দিকে তাকালেই রাজ নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,
রাজ: খুব বড় কিছু একটা হতে চলেছে। (কোয়েলের দিকে তাকিয়ে) আমাদের সবাইকে সব কিছুর জন্য সব দিক থেকে প্রিপেয়ার থাকতে হবে।
কোয়েল ঘাবড়ে গেলো কথাটা শুনে যা কোয়েলের চোখে মুখে প্রকাশ পাচ্ছে।
রাজ: আমাদের সবাইকে একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রেখে চলতে হবে, এক থাকতে হবে। যাতে কোনো কিছুই আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করতে না পারে, আমাদের আলাদা করতে না পারে।
কোয়েল শুধু হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে। রাজ একটা নিশ্বাস ফেলে উঠে যায় আর কোয়েলও বেরিয়ে নিচে চলে আসে।
মৌমিতা: কি রে? রাজদা এলো না?
কোয়েল প্রথম থেকে সবটা বললে মৌমিতাও চুপ করে যায়।
কোয়েল: আদিত্যদাকে সবটা জানাতে হবে মৌ।
মৌমিতা: আমি জানিয়ে দেবো। তাছাড়া রাজদা তো আছেনই। আমি যাচ্ছি ওনাকে ঘুরতে যাওয়ার বিষয়টা বলতে।
আমি কোয়েলকে বলে চলে আসি ওনাকে বলতে। উনি সবটা শুনে রাজদার উপর আর রাগ করে থাকতে পারেননি। সবাই ব্রেকফাস্ট সেরে নিলে উনি আমাকে আশপাশটা একটু ঘুরে দেখতে বলেন আর আমি বেরোই। কোয়েল ঘরে আমাদের জিনিসপত্র গোছগাছ করছে। আমাদের গেস্ট হাউসটা বেশ সুন্দর জায়গায়। গেস্ট হাউস থেকে বেরিয়ে কিছুটা হাঁটলেই রাস্তা যেখান দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। কুয়াশাটা কেটে গেছে, দূরে বেশ পাহাড় দেখা যাচ্ছে হালকা হালকা। আমি রাস্তার উপর উঠে রেলিংয়ের কাছে আসি। আশেপাশে গাছ থাকলেও উপর থেকে নীচে দেখলেই কেমন ভয় লাগছে, বেশ গভীর খাদটা। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ঘুরে গেস্ট হাউসের দিকে ঘুরতে নিলেই দেখি একটা বাচ্চা বল নিয়ে খেলছে। হুট করে বলটা হাত ফসকে মাঝ রাস্তায় চলে গেলে বাচ্চাটি ওই বলের কাছে চলে যায়। খেয়াল করে না ওর পিছনে বড়ো একটা গাড়ি আসছে।
.
.
.
আদিত্য: মৌমিতাআআ!!
মৌমিতা বাচ্চাটাকে রাস্তার মাঝখানে দেখেই ছুট লাগায়। জোরে দৌঁড়ে গিয়ে সাথে সাথে বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরে ওইপাশে পরে যায় কিন্তু বাচ্চাটা কোলে থাকায় বাচ্চাটার গায়ে আঁচও লাগেনি। মৌমিতা যখন বাচ্চাটাকে বাঁচানোর জন্য দৌঁড়ে যায় তখন সে সময় আদিত্যও সেখানে উপস্থিত হয় মৌমিতাকে খুঁজতে খুঁজতে। মৌমিতাকে ওভাবে পরে যেতে দেখে আদিত্যও পরি কি মরি করে ছুটে চলে যায় মৌমিতার কাছে। চোখের নিমিষে পুরো ঘটনাটা ঘটে যায়। ইতিমধ্যে লোক জড়ো হয়ে গেছে মৌমিতার আশেপাশে। মৌমিতা বাচ্চাটাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াতে নিলে দাঁড়াতে পারে না। ততক্ষনে বাচ্চাটিকে তাঁর মা-বাবা কোলে নিয়ে নিয়েছে।
আদিত্য: ঠিক আছো তুমি? কোথায় লেগেছে দেখাও আমাকে।
মৌমিতা: আপনি এখানে কি করছেন? আমি ঠিক আছি।
আদিত্য: একদম চুপ! হাত দেখাও।
উনি হুট করেই ভিড়ের মাঝ থেকে বেরিয়ে এসে আমার পাশে এসে বসলে আমি অবাক হয়ে যাই। আমাকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়ে উনি আমার হাতটা আলতো করে টেনে নিয়ে দেখেন কুনুইটা ছোঁড়ে গেছে বাজে ভাবে। হালকা ক্রিম কালারের চুড়িদারের প্যান্টটা হাঁটুর কাছে লাল বর্ণ ধারণ করেছে। যার ফলে কোনো সন্দেহ নেই হাঁটুতেও কেটে গেছে। আদিত্য এসব দেখে আমার দিকে একটা রাগী লুক দেন। আমি কিছু বলতে গিয়েও না বলে চুপচাপ মাথা নীচু করেনি।
__ওনাকে পাশে একটু নিয়ে এসে বসান, আমরা জল আনছি।
আদিত্য: দরকার নেই। এখান থেকে একটুখানি আমাদের গেস্ট হাউস। চলে যেতে পারবো। থ্যাংক ইউ!
__থ্যাংক ইউ তো আমাদের বলা উচিত। উনি আজকে না থাকলে আমার ছেলেটার যে কি হতো। অনেক ধন্যবাদ।
মৌমিতা: না না, ধন্যবাদ দিয়ে ছোটো করবেন না প্লিজ। আমি ঠিক…
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই আদিত্য আমাকে কোলে তুলে নিলেন। সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে এই দেখে ওনাকে কিছু বলতে যাবো কিন্তু সাহস পেলাম না। উনি হাঁটা ধরলেন আমাকে নিয়ে গেস্ট হাউসের দিকে তাই আমিও আলতো করে ওনার গলাটা জড়িয়ে ধরলাম। এইবার বেশ জ্বালা জ্বালা করছে কাঁটা জায়গাগুলো।
মৌমিতা: নামিয়ে দিন এখানে আমাকে নাহলে ভার্সিটির সবাই খারাপ ভাববে।
অনেক সাহস নিয়ে কথাটা বলেই ফেললাম কিন্তু উনি আমার কথার কর্ণপাত না করেই এগিয়ে যাচ্ছেন। আমার একদম ভালো লাগছে না ব্যাপারটা। ওখানে সবার মাঝে জিয়া আছে, ও যদি এমনটা দেখে তাহলে কি মেনে নেবে? এমনিতেই আসার সময় থেকে আমি ওকে লক্ষ্য করেছি কিন্তু এটা ওনাকে বোঝাই কীভাবে এখন?
মৌমিতা: আপনি আমার কথাটা শুনুন, এরকম করবেন না। জিয়া দেখলে…
কথা বলতে বলতে সামনে তাকাতেই দেখি গেস্ট হাউসের গেটের কাছে জিয়া আর সৌভিকদা দাঁড়িয়ে আছেন। যেটার ভয় ছিলো সেটাই হয়ে গেলো। উনি আমাকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে বাইরে বসার সোফাতে বসাতেই স্যার ম্যাডামরা সবাই এগিয়ে এলেন।
আদিত্য: স্যার! ম্যাম! প্লিজ ডক্টরকে কল করুন।
মৌমিতা: সামান্য কেটে যাওয়ার জন্য ডক্টর লাগবে…না মানে একটু ছোঁড়েই তো গ..গেছে তাই।
উনি এত তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন যে আমি কথা বলার মাঝেই আটকে গেছিলাম তারপর যেকোনো প্রকারে কথাটা শেষ করলাম।
কোয়েল: কি করে হলো এসব?
আদিত্য: কথা পরে হবে আগে ওর ট্রিটমেন্ট করতে হবে। ভালোই রক্ত বের হচ্ছে। তুই মেডিসিন নিয়ে…ছাড় আমিই আনছি।
আদিত্য নিজেই ছুটলো মেডিসিন আনতে। সত্যি বলতে গেলে ছোঁড়ে যায়নি, কেটেই গেছে অনেকটা। সারা শরীর কেমন জানো ব্যাথা করতে শুরু হয়েছে ক্ষত জায়গাগুলোর সাথে সাথে। আদিত্য কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন। সযত্নে আমার ক্ষত জায়গাটা পরিষ্কার করে উনি আমার হাতের কুনুইটা ব্যান্ডেজ করে দিতে দিতে কোয়েলকে বললেন,
আদিত্য: আমি ওকে ঘরে দিয়ে আসছি ডক্টরকে কল করে। তুই ওর হাঁটুটা পরিষ্কার করে দ..দিস।
কথাটা বলেই আদিত্য বেরিয়ে গেলেন। ওনার চোখে জল! আমি কি ঠিক দেখলাম? হ্যাঁ, ঠিকই দেখেছি কারণ কোয়েলকে কথাটা বলতে গিয়ে ওনার গলা স্বর কেঁপে গেছিলো। উনি আমার এই অবস্থা দেখে যেভাবে পাগলামি করলেন সবার সামনে, কাওকে কিছু করার সুযোগ পর্যন্ত দিলেন না এইসব জিয়া দেখেছে দূরথেকে দাঁড়িয়ে তা আমি দেখতে পেয়েছি। আদিত্য উঠে দাঁড়াতেই ও সরে গেছে।
কোয়েল: এইবার কিন্তু সবাই ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো মৌ। আদিত্য তোর প্রতি যে কতটা কনসার্ন এটা সবার চোখে পরেছে সেই আসার সময় থেকে। (মুখ টিপে হেসে)
মৌমিতা: এটা ভালো বিষয় নয় কোয়েল। জিয়াও পুরো ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে, আমার কিছু ঠিক লাগছে না। (চিন্তার সুরে)
কোয়েল কিছু বলার আগেই আদিত্য আমার সামনে এসে আমাকে দাঁড়ানোর সুযোগ না দিয়ে নিজেই আমার দিকে ঝুঁকে আমাকে কোলে তুলে নেন।
আদিত্য: ডক্টর আসছেন আমি রিসেপশনে বলে দিয়েছি তুই তাড়াতাড়ি ঘরে আয় কোয়েল, প্লিজ।
আদিত্য ঘরে এসে আমাকে বেডে বসিয়ে চলে যেতে নিলে আমি ওনার হাত ধরে জিজ্ঞেস করি,
মৌমিতা: আপনি আমার উপর রেগে আছেন?
আদিত্য: সেই অধিকার আমার নেই।
ওনার কথাটা শুনে আমার খারাপ লাগলো। উনি চলে যেতে নিলে আমি বেড থেকে নামার জন্য পা ভাঁজ করতেই ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠলাম। আদিত্য তা দেখতে পেয়ে জোরে ধমক দিয়ে উঠলেন,
আদিত্য: নামতে বলেছি তোমাকে আমি?
উনি এতটাই জোরে, রেগে কথাটা বলেছেন যে আমি কেঁপে উঠেছি। নিজের অজান্তেই চোখে জল চলে এসেছে। ছলছল চোখে ওনার দিকে তাকালেই উনি কেমন জানো দমে যান। চোখ বন্ধ করে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেন কিছুক্ষণের জন্য। তারপর বলেন,
আদিত্য: ডক্টর দেখে যাওয়ার পর আমি কথা বলবো তোমার সাথে। কোয়েল আসার আগে নড়বে না এক পা।
ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলেন! কি সাংঘাতিক পরিমাণ রেগে আছেন তা আমি ভালোই টের পেলাম। এখন! ব্যাপারটা মেনে নেওয়া অস্বাভাবিক নয়। কারণ উনি এই কয়েকদিনে প্রতিটা মুহূর্তে আমাকে বুঝিয়েছেন উনি আমাকে ভালোবাসেন। আজকে আমার সাথে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনাটা আমাকে সাহায্য করলো ওনার ভালোবাসায় বিশ্বাস আনতে। ওনার জায়গায় আমি থাকলেও এমন রিয়াক্ট করতাম কারণ হারিয়ে যাওয়ার ভয়! আমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়েই কি রেগে আছেন উনি?
কোয়েল: মৌ! আস্তে আস্তে আমাকে ধরে ওঠ। তোর হাঁটুটা ভালোই কেটেছে কারণ চুড়িদারের প্যান্টটা দেখ, লাল হয়ে গেছে জায়গাটা জুড়ে। আদিত্যদা খুব বকবে তাড়াতাড়ি ব্যান্ডেজ না করলে। কি রে? মুখটা এমন শুকনো কেন? ব্যাথা পেয়েছিস সেইজন্য নাকি বর বকেছে কোনটা?
কোয়েলের কথা শুনে কেঁদেই ফেললাম। কোয়েল সেই দেখে জড়িয়ে ধরলে পুরো ঘটনাটা ওকে খুলে বলি।
কোয়েল: স্বাভাবিক আদিত্যদার রাগ করাটা। কিন্তু তুইও তো ভুল কিছু করিসনি।
মৌমিতা: ওনাকে কে বুঝাবে এটা?
কোয়েল: তুই! আবার কে? এখন চল ওয়াশরুমে।
কোয়েল আমাকে ধরে ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো। পায়ের পাতাতেও চোট লেগেছে তাই হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে। ইশ, ডক্টর বাবু জানো এমন একটা ওষুধ দেয় যাতে আমি এক নিমিষে ফিট হয়ে যাই আর কালকে ঘুরতে বেরোতে পারি। আজকে যাওয়ার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
৬৭.
আদিত্য ঘরে এসে ব্যালকনিতে চলে যায় চুপচাপ কারণ ঘরে রাজ ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কিছুই জানেনা সে। আদিত্যও এর রাজকে ডাকেনি কারণ মৌমিতার কাছ থেকে সবটাই শুনেছে সে। আদিত্য ব্যালকনিতে একভাবে বাইরের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ আগের ব্যবহারের কথাটা মনে পরলো যেটা মৌমিতার সাথে করেছে। সাথে সাথেই আদিত্য নিজের ডানহাতের দুটো আঙুল দু-চোখের কোণে চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলো। চোখ বন্ধ করতে ভেসে উঠলো সেই দৃশ্য যেখানে মৌমিতা একটুখানির জন্য বেঁচে গেছে গাড়ির সামনে পরতে পরতে। এক মুহূর্তের জন্য আদিত্যের পুরো পৃথিবীটা সেই সময় যেমন থমকে গেছিলো? এখনও ঘটনাটা মনে করতে তার ব্যতিক্রম হলো না। আদিত্য চোখ খুলে জোরে একটা নিশ্বাস নিলো উপরের দিকে মুখ করে।
রাজ: কি হয়েছে? এতো টেন্সড লাগছে কেন তোকে?
আদিত্য কাঁধে হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছন ফিরে রাজের দিকে তাকালো। রাজের প্রশ্ন শুনে তার উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো,
আদিত্য: তুই উঠে পরলি কেন? সবে তো ঘুমাতে গেছিলি।
রাজ: সেটা নিয়ে চাপ নেই আমি এখন গিয়ে শুলে আবার ঘুমিয়ে পরবো। ঘুমটা ভাঙতেই দেখলাম তুই এখানে। কি হয়েছে?
আদিত্য নীচের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললো,
আদিত্য: আজ আমি সারাজীবনের মতো মৌকে হারিয়ে ফেলতে বসে ছিলাম।
রাজ জানো ভুলে গেলো কেমন রিয়াকট করা উচিত কথাটা শুনে। কিছুক্ষণ আগেই তো সে সাবধান করেছিল কোয়েলকে আর এখনই এমন কথা বলছে আদিত্য? কি এমন হয়ে গেলো কিছু সময়ের মধ্যে? ভাবছে রাজ।
রাজ: কি হয়েছে তুই আমাকে খুলে বল।
আদিত্য প্রথম থেকে সবটা বললে রাজ একটু স্বস্তি পায়। সে ভেবেছিলো হয়তো জিয়া কিছু করেছে কিন্তু সেটা নয়। দুর্ভাগ্যবশত একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আদিত্যকে আপসেট দেখে রাজ আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে। সাথে সাথেই আদিত্য রাজকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁপা কণ্ঠে বলে,
আদিত্য: আরেকটু হলেই আমি ওকে হ..হারিয়ে ফেলতাম। বিষয়টা মনে পরলেই আমার বুকের ভিতরটা ম..মোচড় দিয়ে উঠছে।
রাজ: তুই বউদির কাছে যা এখন। ডক্টর এসে গেছে মে বি, কি বলছে দেখ। আর বউদিই বা কি করতো? চোখের সামনে একটা বাচ্চাকে মরতে দিতে তো পারতো না তাই না? (আদিত্যকে সোজা করে বুঝিয়ে বললো)
আদিত্য: আমি জানি ওর কোনো দোষ নেই কিন্তু আমি নিজের মনকে বোঝাতে পারছি না। আমি ওকে নিজের মনের কথাটাও ঠিক ভাবে জানিয়ে উঠতে পারলাম না আর এখনই ওকে হারিয়ে ফেলতে বসেছিলাম আমি। মরে যাবো ইয়ার ওর কিছু হলে আমি!(ছলছল চোখে)
রাজ: তোকে আমি বললাম তো এসব কথা ভাবা বন্ধ করে আর বউদির কাছে যা। বউদির সাথে সময় কাটালে দেখবি তোর এই ভয়টা কেটে যাবে। সব ঠিক আছে আদি, সামলা নিজেকে।
আদিত্যের চোখে জল দেখে রাজের খারাপ লাগলেও একটু ভালোও লাগছে কারণ আদিত্য কাওকে এতটা পরিমাণ ভালোবাসবে এটা ধারণার বাইরে ছিল রাজের। রাজ বোঝানোর পরে আদিত্য বললো,
আদিত্য: তুই গিয়ে ঘুমা, আমি যাচ্ছি।
রাজ: রাগ করে চিল্লাস না জানো আর।
আদিত্য হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে রাজ গিয়ে বেডে বসে পিছন দিকে মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়, তখনই….
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]
আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী