‘ একদিন তুমিও ভালোবাসবে ‘ 🌸❤️
||পর্ব~৯||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
১৭.
ঘড়িতে দুপুর ২টো,
কোয়েল ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে সাদা কাগজে কিছু একটা লিখছে। দেখে মনে হচ্ছে কোনো কিছুর ফর্ম ফিলাপ করছে। আমি ধরাম! করে কোয়েলের সামনে বই রাখলাম আর বসলাম। ও প্রথমে ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালেও, আমাকে দেখার পর আবার নিজের কাজে মন দিলো। আমি আশ্চর্য হলাম, আমাকে দেখে কোনোরকম রিয়াক্ট করলো না কেন কোয়েল? রাগ করলো নাকি? এতো সেতো না ভেবে কোয়েলকে জিজ্ঞেস করলাম,
‘কি রে? কি করিস তুই?’
কোয়েল কোনো উত্তর দিলো না। ব্যাপারটা তো বেশ চিন্তার হয়ে গেলো, কথা বলছে না কেন আমার সাথে?
‘এই কোলু! কথা বলিস না কেন? রাগ করেছিস আমার উপর?’
আমার প্রশ্ন শুনে কোয়েল মাথা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘কেন? রাগ কেন করবো?’
আবার কোয়েল নিজের কাজ করতে শুরু করলো।
‘উফ! কি এমন কাজ করছিস দেখি তো।’
কোয়েলের কাছ থেকে ফর্মটা টেনে নিয়ে দেখতে শুরু করলাম। আস্তে আস্তে ফর্মটা পুরো পড়ার পর কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে কোয়েলের দিকে তাকাতেই কোয়েল আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,
‘ক্যায়সা লাগা মেরা সারপ্রাইজ?’
কথাটা বলে কোয়েল আমায় চোখ মারলো। আমি এসেছিলাম কোয়েলকে সারপ্রাইজ দিতে আর এখানে এসে নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেলাম? কোয়েলকে জিগ্যেস করলাম,
‘এটা কি? আমার নাম কেন দিয়েছিস ডান্স কমপিডিশনে?’
‘কারণ তুই ডান্সার তাই।’
‘ডান্সার মানে? কোয়েল তোর মাথা ঠিক আছে তো? এটা আমাদের ইউনিভার্সিটির অ্যানুয়াল ফাংশন। কত বিখ্যাত, নামি লোক আসবে জানিস? ওখানে আমি ভুল করলে ভার্সিটির সন্মানটা কোথায় যাবে বল তো?’
আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে কোয়েল আমার হাত থেকে ফর্মটা টেনে নিয়ে নিলো। ফর্ম ফিলাপ করার পুরোই শেষ কোয়েলের।
‘দেখ কোয়েল, আমি পারবো না কম্পিটিশনে কম্পিট করতে ব্যাস! অসম্ভব আমার পক্ষে। আমি সামান্য একটা ডান্সার…
‘তো তোর কি মনে হচ্ছে আমাদের ভার্সিটি তে মাধুরী দীক্ষিত আসছে তোর সাথে? নাকি নোরা ফাতেহি আসছে বেলি ডান্স দিতে? আজব কথাবার্তা তো।’
‘আমি পারবো না। আমার ভীষণ ভয় লাগছে।’
‘শোন, এই ফর্ম আমি জমা দেবই। তুই যদি পার্টিসিপেট না করিস সেটা তোর ব্যাপার। কিন্ত তারপর থেকে আর কোনোদিন আমার সাথে কথা বলবি না। ওকেই?’
থ্রেডটা দিয়েই কোয়েল উঠে গেলো আর আমি মাথায় হাত দিয়ে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সোজা হয়ে বসলাম তখন যখন আদিত্য ওর সামনে এসে দাঁড়ালো। ওদের মধ্যে কি কথা হলো কিছুই শুনতে পেলাম না শুধু আদিত্য একবার আমার দিকে তাকালেন তারপর কোয়েলের কাছ থেকে ফর্মটা নিয়ে চলে গেলেন। উনি চলে যাওয়ার পর আমি কোয়েলের কাছে দাঁড়িয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
‘ওনাকে দিলি কেন ফর্মটা?’
‘আদিত্যদা ইউনিয়নের হেড তাই জন্যে। ওই জিয়ার দলবলের কাছে দেওয়ার থেকে আদিত্যদাকে দেওয়াটাই মাচ বেটার, তাই না?’
আমি কোয়েলের প্রশ্নে শুধু ওর দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে রইলাম। ও আমার হাত ধরে টেবিলের কাছে নিয়ে গিয়ে, ব্যাগটা নিয়ে বাইরের দিকে হাঁটা ধরলো।
‘এবার বল, কেমন ঘুরলি নিজের বাড়িতে?’
‘ভালোই।’
‘তোর অ্যাবসেন্সে আদিত্যদা তোর খোঁজ করছিলো।’
কোয়েলের কথাটা শুনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
‘আমার খোঁজ করছিলেন? কিন্তু কেন?’
‘এতো অবাক হচ্ছিস কেন? ক্লাসে চল দাঁড়িয়ে না থেকে, যেতে যেতে বলেছি।’
কোয়েলের কথা শুনে ক্লাসের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। ও বলতে শুরু করলো,
‘তুই যেদিন গেলি সেদিন আমি ভার্সিটি আসিনি। আদিত্যদা হঠাৎই আমার রুমে আসে আর এসেই তোর কথা জিজ্ঞেস করে। আমি বলি যে তুই বাড়িতে গেছিস তারপর বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমার খবর নিয়ে চলে যায়। এই দু-তিন দিন আমার সাথে যখনই দেখা হয়েছে তোর খোঁজ নিয়েছে আর জিজ্ঞেস করেছে তুই কবে ফিরবি।’
কোয়েল কথা শেষ করতেই ক্লাসে ঢুকলাম। এই বিষয়ে আর কোনো কথা বাড়ালাম না। কিন্তু উনি কেন আমার বিষয়ে এতো খোঁজ খবর নিচ্ছেন এটাই বুঝতে পারছি না। আমি তো ওনাকে বলেই দিয়েছি আমি আর ওনার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না। উনি যেমনটা বলেছিলেন তেমনটাই হবে, উনি ওনার রাস্তায় আর আমি আমার। তাহলে কেন উনি এমন ব্যবহার করছেন? উনি কি কোনোভাবে আমার সাথে জড়িয়ে… না না না। এবার আর আমি এক ভুল করবো না, আগের বার এই আশাই আমাকে অনেক যন্ত্রনা দিয়েছে এবার আর নয়। ওনার কথা না ভাবাই ঠিক হবে আমার জন্য।
১৮.
ক্লাস শেষ করে আমি ম্যাডামের সাথে কথা বলবো সেই জন্যে প্রিন্সির রুমের দিকে যাচ্ছি, সেসময় দেখলাম আদিত্য আসছেন তাও আবার আমার দিকে তাকিয়েই। উনি আমাকে কিছু বলবেন সেই জন্য দাঁড়ালে আমি ওনাকে পাশ কাটিয়ে প্রিন্সির রুমে ঢুকে গেলাম। ওনাকে বোঝাতে হবে আমি ওনাকে এড়িয়ে চলতে চাই। ম্যাডামের সাথে কথা বলতে বলতে খেয়াল করলাম উনি বাইরেই দাঁড়িয়ে আছেন। হঠাৎই ম্যাডামের রুমে ঢুকে পড়লেন উনি,
‘আরে আদিত্য! তুমি এখানে? কোনো দরকার ছিলো?’
ম্যাডামের কথার উত্তর উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ম্যাম আপনার সাথে দরকার নেই। দরকার ওর সাথে, আপনাদের কথা বলা শেষ নিশ্চই?’
আমি ইচ্ছে করেই দেরী করছিলাম যাতে উনি চলে যায় কিন্তু এখানে তো উল্টো হয়ে গেলো। বাধ্য হয়ে আমাকে ওনার সাথে বেরিয়ে আসতে হলো। বেরিয়ে এসে এক মুহূর্ত আমি দাঁড়ালাম না, দ্রুত হাঁটা শুরু করলাম। পিছন থেকে উনি সমানে আমার নাম ধরে ডেকে চলেছে তা আমি শুনতে পেলেও উপেক্ষা করছি। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না, ভার্সিটির মাঠে আসতেই উনি আমার হাত পিছন থেকে টেনে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন।
‘কখন থেকে ডেকে চলেছি আমি আর তুমি শুনতেই পাচ্ছো না? নাকি না শোনার ভান করছিলে?’
‘বুঝতেই যখন পেরেছেন না শোনার ভান করছি তাও কেন এসেছেন কথা বলতে?’
‘আমার কথা বলাটা দরকার তাই।’
‘আপনার এমন কি দরকার পরলো আমার সঙ্গে যে, যাকে আপনি স্ত্রী বলে মানেন না, পরিচয় দিতে চান না তারই হাত ধরে সবার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন?’
আমার কথায় উনি চারিপাশে তাকিয়ে দেখলেন আমাদের দিকে প্রায় অনেকেই তাকিয়ে আছে। উনি একটা জোরে নিশ্বাস নিয়ে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে অন্য দিকে চলে এলেন।
‘কেন এভয়েড করছো আমাকে?’
‘আপনার সাথে কথা বলার কোনো উদ্দেশ্য বা কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।’
‘বাড়াবাড়ি করছো এবার তুমি। আমি যখন কথা বলতে চাইছি তখন কেন এইভাবে এভয়েড করছো?’
‘সেটা কেউ দেখতে যাবে না যে, কে কথা বলতে চাইছে। দেখবে শুধু এটাই যে একটা মিডল ক্লাস মেয়ে টাকার জন্য একটা বড়লোক ছেলের পিছনে পরে আছে। বিশ্বাস করুন, এই কথাটা আমি শুনতে চাইছি না। এইখানে আসার পর থেকে সব সহ্য করে নিয়েছি কিন্তু আমার চরিত্রের উপর কেউ কথা বললে সেটা আমি কিছুতেই মেনে নেব না। তাই প্লিজ স্টে আওয়ে ফ্রম মি মিস্টার আদিত্য ব্যানার্জী।’
কথাটা বলেই আমি চলে এলাম। যেই সম্পর্কের কোনো পরিণতি নেই সেই সম্পর্ক থেকে দূরে থাকাই ভালো হবে আমার মতে। আমি পিছন ফিরে না তাকিয়েই চলে এলাম ভার্সিটি থেকে হস্টেলে।
অন্যদিকে,
‘ফাইন! তুমিই যখন চাওনা আমার সাথে কথা বলতে তাহলে আমিও আর যেচে পরে তোমার সাথে কথা বলতে যাবো না। আমিই বোকা যে কি না সবটা ঠিক করতে চেয়েছিলাম। ডোন্ট নো কি হয়েছে আমার কদিন ধরে, এই মেয়েটার চিন্তা আমার মাথা থেকে বেরোচ্ছেই না। আগে কোনোদিন কোনো মেয়েকে নিয়ে ভাবিনি আমি কিন্তু… ড্যাম ইট!’
আদিত্য পিলারের মধ্যে একটা ঘুষি মারলো সজোরে। পিছন থেকে সে সময় জিয়ার চিৎকার এলো আর কিছুক্ষণের মধ্যেই জিয়া আদিত্যের পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘আদি কি হয়েছে তোমার? এভাবে রিয়াকট করছো কেন?’
আদিত্য জিয়ার দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে জিয়া ভয় পেয়ে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে আদিত্য বলে,
‘জাস্ট স্টে আওয়ে ফ্রম মি!’
আদিত্য চলে গেলে জিয়া বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। আদিত্য কি কারণে ওর উপর রাগ দেখালো জিয়া বুঝলো না কারণ রাতের কথা ওর কিছুই মনে নেই। সে বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে জিয়া চলে গেলো।
পরেরদিন,
আমি আর কোয়েল ক্লাস করে বেরোচ্ছি সে সময় জিয়া এসে আমাদের সামনে দাঁড়ালো। আমাদের দিকে তাকিয়ে বাঁ হাতে একটা কাগজ আমাদের চোখের সামনে ধরে। আমি আর কোয়েল তাকিয়ে দেখি এটা আমার কম্পিটিশনের ফর্ম।
‘আমি তোর দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়ালাম কিন্তু তোর সেটা পছন্দ হলো না তাই তো তুই সেই আমার বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ালি আমার কম্পিটিটর হয়ে।’
জিয়ার কথা বুঝে আমি আর কোয়েল একে অপরের দিকে তাকালাম। আমি বললাম,
‘আমি জানতাম না তুইও পার্টিসিপেট করছিস আর তাছাড়া বন্ধুত্বের কথাটা তোর মুখে মানাচ্ছে না ফ্রেশারস পার্টির ঘটনার পর। তুই সেদিনই বুঝিয়ে দিয়েছিস তুই কি ভাবিস আমাকে নিয়ে সো প্লিজ…
আমি কোয়েলের হাত ধরে ওখান থেকে চলে আসতে নিলে জিয়া আবার বলে ওঠে,
‘তা পারবি তো আমার সাথে কম্পিট করতে? একটু ঠিক ঠাক ড্রেস পরে আসিস যাতে নাচতে সুবিধা হয়। নাহলে দেখা গেলো জাজেস্টরা হয়তো তোর ড্রেস দেখেই তোকে ডিসকলিফাই করে দিলো।’
জিয়া হাসতে হাসতে চলে গেলে কোয়েল আমাকে বললো,
‘ভালো ডান্সার জিয়া। স্পেশালি ওয়েস্টার্ন/হিপহপে।’
‘আর ভারতনাট্যম, কথক, ক্লাসিক্যালে?’
‘ক্লাসিক্যালেও ভালোই বাট ভারতনাট্যম আর কথক, ওডিশিতে একটু উইক।’
‘কদিন জানো বাকি কম্পিটিশনের? চারদিন তো?’
‘হ্যাঁ। ওকেই। চল হস্টেলে।’
আমি আর জিয়া ফিরে এলাম হস্টেলে আর কোয়েল হঠাৎ করেই বললো শপিং করতে যাবে। আমিও অমত করলাম না, একটু ঘোরাও হয়ে যাবে এই ফাঁকে।
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]
আইডি- কোয়েল ব্যানার্জী