#তোমার_প্রেমে_পড়েছি
#পর্ব_০৩
#Rimy_Islam
নেত্র’র আচরণ অনেক বন্ধুত্ব সুলভ। ব্যাপারটা আনমনেই দারুণ লেগেছে নমনীর।
— হাতুড়ি!! ওহ মাই গড! আমাকে খুন করার পরিকল্পনা করছিলো মেয়েটা!
অস্ফুট কারোর গলা শুনে এক প্রকার অনিচ্ছুক ভঙ্গিতে দৃষ্টি দিলো সেই কণ্ঠধারী ব্যক্তিটির দিকে।আর প্রায় সাথে সাথে থতমতভাবে উঠে বসে পড়ে নমনী।রাতের আঁধার ভেদ করে কখন যে ভোরের আলো ফুটেছে আর কখন নেত্র রুমে প্রবেশ করেছে তার তিল পরিমাণ আন্দাজ করতে পারলো না সে। কাঁধ থেকে হেলে পড়া শাড়ির আঁচলটা ঠিক করে নমনী বললো,
— কখন এলেন?
নেত্র মুখ বেঁকে অবাকের স্বরে বললো, — এটা কি?
— হাতুড়ি।
— মেরে মাথা ফাটানোর পরিকল্পনা করেছিলে তা তো বুঝতেই পারছি। তুমি সুবিধার মেয়ে নও।
— জোরপূর্বক বিয়ে করে এনে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা বোকামি ছাড়া কিছু নয়।
— এই একটা নালিশে জীবন পার করবে?
— হু।
নেত্র হাসলো। বললো, — নিচে খেতে এসো। মনে আছে তো গত রাত্রে কি কথা হয়েছিল! তুমি তোমার পুরনো জীবনে ফেরত যাবে। ঠিক যেভাবে আগে দিন কাটিয়েছ সেভাবে।
— বাড়ি যেতে পারবো?
— যেখানে খুশি যাও। বারণ নেই। তবে ঘুরেফিরে এখানেই ফেরত আসবে।
নমনী খানিক দমে যায়। হালকা মাথা হেলে বললো, — ও… আচ্ছা।
— আচ্ছা তুমি মনমতো বাবা’র বাড়িতে থেকে এসো। যত মান-অভিমান সব মিটমাট করে আসবে। শুধু এটা ভুলো না যে তুমি এখন বিবাহিত।
— ভুলতে কতক্ষণ!
— জোরে বলো।
নমনী ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
— কিছু না।
গতানুগতিক ধারায় আজ নমনীর বাড়ির লোকজন এলো। মোটামুটি ঘরোয়া পরিবেশনায় আপ্যায়ণ শেষে নমনী এবং মুমু নিজ বাড়ির পথে রওনা হয়। যাওয়ার সময় নেত্র’র দেখা মিললো না। কারণ সকালেই সে ভার্সিটি এক্সাম-এর জন্য বেরিয়ে পড়েছে।
নমনীদের বাড়ি নাটোরে। রাজশাহী থেকে তাদের বাড়ি পৌঁছাতে ঘন্টা এক সময় লাগে।বাড়ি পৌঁছে নিজ কামরায় পা রাখতেই মনে মনে স্বস্তিবোধ করে নমনী। যদিও এসবে মুমু’র কোনো ভাবান্তর নেই। সে এসেই মটকা মেরে বিছানায় শুয়ে পড়ল। তারপর বললো,
— ফ্যানটা ছাড় তো নমনী। যা গরম পড়েছে!
নমনী ফ্যানের সূইচ চেপে বললো,
— আপু তোর সবকিছু কেমন আলাদা লাগছে না? এই যে ধর আমাদের নিজের বাড়িটাও কেমন পর পর ঠেকছে। সত্যিই বিয়ে হলে এই জন্যই বোধ হয় মেয়েরা বাবার বাড়ি বেশিদিন থাকে না।
— ধূর! কে বলেছে তোকে এসব কথা? আমি তো সহজে এ বাড়ি ছাড়ছি না। কাল পুরো রাত এক ছটা ঘুম হয়নি। নতুন বাড়ি,নতুন মানুষের গ্যাড়াকলে আমার নাস্তানাবুদ অবস্থা।
নমনী শাড়ির প্যাঁচ খুলতে খুলতে বললো,
— নিলয় ভাইয়া কেমন রে আপু?
— উমম….. হ্যাবলাকান্ত মশাই।
— সিরিয়াস!!
— হুম। মাথায় কিছু নেই। আমি যেটা বলি সেটাই করে। নিজস্ব স্বকীয়তা ব্যাপারটা ওর মাঝে থেকে উধাও।
নমনী শাড়ি পাল্টে সুতির সালোয়ার-কামিজ পরে নিলো। এখন খুব আরামবোধ হচ্ছে। শাড়ি পরার অভ্যাস পূর্ব থেকেই নমনীর ছিলো না। বাড়ির পরিবেশে মোটামুটি স্বাভাবিকতা ফিরলেও নমনীর বাবা এবং মা-এর মুখ থমথমে।কোথাও একটা পশ্চাৎ অভিমানী ভাব রয়েই গেছে। নমনী এদিকটা বেশি ঘাটালো না। যে যেমন আছে তাকে তেমন থাকতে দেয়াই শ্রেয়। খাবার টেবিলেও নমনী নূন্যতম বাক্যালাপ ব্যতীত খেয়ে চলে আসে। বই হাতে শুয়ে পড়ে বিছানায়। দ্রুত ঘুমানোর মূলমন্ত্র বই পড়া। কেবল একটু চোখ জোড়া লেগে এসেছিল তার। এমন মুহূর্তে ফোন এলো। নেত্র দিয়ে নাম্বারটা সেভ করা দেখে কিছুটা স্তম্ভিত হয় নমনী। যতটুকু ওর খেয়াল হয় নেত্র’র নাম্বার ওর ফোনে সেভ ছিলো না।
— হ্যালো!!
ওপাশে ভরাট, হাস্যজ্জ্বল পুরুষালী গলায় বললো, — আমি নেত্র। কেমন আছো?
— বেশ ভালো।
— জিজ্ঞেস করলে না তোমার ফোনে আমার নাম্বার সেভ হলো কিভাবে?
নমনী গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো, — এতে নিশ্চয়ই আপনার হাত আছে।
নেত্র হেসে বললো, — বুদ্ধি আছে। খেয়েছ?
— হু। আর কিছু?
— রাগ করছো কেন? প্রেম করবে না একটু? আমার সম্পর্কে যা জানতে চাও বলে ফেলো।
— কিছু জানতে চাই না।
— বেশ। সকালে রেডি থাকবে। নিতে আসবো।
নমনী আৎকে উঠে বললো, — একেবারে?
— আরে বাবা না। একটু ঘুরতে নিয়ে যাবো তোমাকে। এখন বলো গাড়িতে ঘুরবে নাকি রিকশায়।
— রাজশাহী থেকে নাটোর রিকশায় আসবেন? পাগল!!
নেত্র হো হো করে হেসে বললো,
— গাধী!! গাড়ী করে এসে তোমাকে নিয়ে রিকশায় ঘুরবো।
— না। গাড়ী ঠিক আছে।
–ওকে, ডান।
নেত্র ফোন রেখে বালিশে মুখ গুঁজে। খুশিতে তার চোখ দুটো চকচক করছে। নমনীকে সে প্রথম দেখেছিলো তালাইমারি শাখার বরেন্দ্র ভার্সিটি গেটে।সে মুহূর্তেও ভাবেনি কোনো একদিন এই মেয়েকে বউ হিসেবে পাবে। কত কাঠখড় না পোড়াতে হয়েছে! সব খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছিল ওর নাম নমনী। বাড়ি নাটোর হলেও পড়াশোনার খাতিরে রাজশাহী থাকে। সে সময় নেত্র’র বড় ভাই নিলয়ে’র জন্য মেয়ে খুঁজে অস্থির সকলে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নেত্র নমনী’র বড় বোন মুমু’র খবর তার পরিবারকে দেয়। নিলয় যে দেশের বাইরে থেকে গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করে সবে ফিরেছে। এখন বউ নিয়ে দেশের বাইরে সেটেল হওয়ার প্ল্যান করছে। যার বাবা এবং মা উভয়েই বি.সি.এস ক্যাডার। বাবা রায়হান সাহেব রিটায়ার্ড প্রশাসন ক্যাডার। মা নীলুফা বেগম কলেজ টিচার। এমন ছেলের হাতে মেয়ে সমর্পণে কেউ দ্বিমত করবে না। অপরদিকে নমনী’র বড় বোন মুমুও যথেষ্ট সুন্দরী হওয়ায় দুপক্ষের মতে বিয়ের দিন ধার্য হয়। একই হাতে সকলের অগোচরে নেত্র প্রস্তাব দিয়েছিলো নমনী’র জন্য। কিন্তু যে ছেলের এখনো পড়াশোনাই শেষ হয়নি তার হাতে মেয়ে দিতে নারাজ ছিলেন রোকন সাহেব। ফলস্বরূপ বিপরীত পন্থা অবলম্বন অবলম্বন করে নেত্র।
চলবে…….