#তোমার_প্রেমে_পড়েছি
#পর্ব_১৭
#Rimy_Islam
তবে এতদিন বাদে যখন ডেকেছে, বিশেষ কোনো প্রয়োজন নিশ্চয়ই আছে। এটা বুঝতে দেরি করেনি প্রিয়ম।
চারপাশের গুমোট ভাব কাটিয়ে নেত্র বলে উঠলো,
— ভাই, কেমন আছো?
বিস্ময়ের পালা প্রিয়মের। সে বললো,
— আশেপাশে একটু চোখ রাখলে তো বুঝবে কেমন আছি! তা হঠাৎ এই প্রশ্ন? এতদিন তো কবরে ছিলে। আজ পৃথিবীর প্রতি, মানুষের প্রতি এত মায়ার কারণ জানতে পারি?
— কি যে বলো ভাই!
— এক বিন্দুও মিথ্যা বলিনি। নিজেকে কবরের মতোই আবদ্ধ করে রেখেছ। এতদিন ধরে আছি। ভাইয়ের খোঁজ নিতে, আড্ডা দিতে একবারো এসেছ? অথচ নিলয় কতবার ঘুরে যায় আমার কাছ থেকে। এমন চললে তোমার বউ ও পালাবে।
কথাটা বলে প্রিয়ম হাসলেও গাম্ভীর্য ফুটে উঠে নেত্র’র চেহারায়। সে বললো,
— বউ প্রসঙ্গেই আজ কথা বলতে ডেকেছি। নমনী ইদানিং খুব বিমর্ষ থাকছে। তুমি এ ব্যাপারে কিছু জানো?
প্রিয়ম ম্লান হেসে বললো,
— বউ তোমার আর জিজ্ঞেস করছ আমায়? তবে প্রশ্ন যখন করেছ, উত্তর দিচ্ছি। উত্তরটা হলো, ‘ না’।
— তোমাকে দেখলে ও খুব ভয় পায়। তাই জিজ্ঞেস করছি।
প্রিয়ম ঘামতে শুরু করেছে। প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললো,
— তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?
নেত্র হেসে বললো,
— বরাবরের মতো দারুণ।
— আর কিছু বলবে? আমি বাইরে বেরোব।
— হু। আমি সামনের সপ্তাহে হানিমুনে যাবো। কোথায় গেলে ভালো হয় বলো তো?
প্রিয়ম এবার চঞ্চল হয়ে পড়ল। মন আকুপাকু করছে নমনীকে নিয়ে দূরে কোথাও পালাতে। তার উপর নিজের প্রিয় জনকে অন্যের হতে দেখা তার দ্বারা অসম্ভব জেনেও আজ সে নিরুপায়। উত্তপ্ত রাগে দু’ হাত মুঠোবদ্ধ করে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে বললো,
— তোমাদের একান্ত বিষয়ে আমাকে টেনো না।
বলেই প্রিয়ম সেখান থেকে কেটে পড়ে। এদিকে তার মুখে স্পষ্ট পরাজয়ের ছাপ দেখে আত্মগৌরবে বুকটা প্রসারিত হয়ে উঠে নেত্র’র।
নমনী আড়ালে দাঁড়িয়ে সব শুনে বেরিয়ে এল। প্রিয়মের গমন পথে একবার দেখে নিয়ে বললো,
— ওই ত্যাঁদড়টা গেছে তাহলে! তুমি এত বেহায়া কবে হলে নেত্র?
নেত্র উচ্চ স্বরে হেসে বললো,
— অন্যায় কি বলেছি?
— আলবাৎ বলেছ। ওই ছেলের সাথে রসের গল্প জুড়ে বসেছ, আবার আমরা হানিমুনে কোথায় যাবো সেটাও ওর সিদ্ধান্তে হবে?
— আমরা কোনো হানিমুনে যাচ্ছি না। ওইটা প্রিয়ম ভাইকে রাগান্বিত করতে বলেছি। এখন ভাইয়ের ভুল কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার অপেক্ষা।
বলেই বিদ্যের মতো হাসে নেত্র। যেন দাবার চালে প্রিয়মকে হারিয়ে বিজয়ের উল্লাস করছে। নমনী মাথা চুলকে বললো,
— কি করতে চাইছ?
— সময়ের অপেক্ষা।
নীলুফা বেগম দোলনা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। বাড়ির পেছনের খোলা জায়গায় দোলনা বসানোর সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করেও অবশেষে তা কার্যকর হয়নি। একটা দোলনা স্বাচ্ছন্দ্যে স্থাপিত হয়েছে গত সপ্তাহে। আজ শখের বশত সেটাই চড়ে বসেছিলেন তিনি। পেছন থেকে দোল দিচ্ছিল নদী। তাতেই ঘটেছে বিপত্তি। মেয়েটা বাচ্চাদের মতো আনমনে খেলায় মত্ত হয়ে এত জোরে ধাক্কা দেয়, আর নীলুফা বেগম বয়সের ভারে সোজা মুখ থুবড়ে পড়েন মাটিতে। মুখমন্ডলে বড়সড় আঘাত পেয়েছেন। নমনীরা ছাদ থেকে নামতে এ ঘটনা কানে পৌঁছাতেই নেত্র, নিলয় এবং রেহান সাহেব নীলুফা বেগমকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটেছে। বাড়িতে পড়ে রইলো মুমু, নমনী এবং নদী। আমিরা গতকাল গ্রামের বাড়িতে গেছে। এছাড়াও বড় একটা ভয়ের কারণ রয়েছে, প্রিয়ম। বেলা গড়িয়ে তিমির নেমে এসেছে। যে যার ঘরে অবস্থান নিয়েছে। নেত্রদের ফিরতে রাত হতে পারে। আজকাল ডাক্তাররা এত এত টেস্ট দেয়। কখন না কখন ওরা ফিরবে বলা যায় না। রাতটা নির্ঘুম কাটবে নমনীর।
নিজ ঘরে পায়চারি করছে সে। নেত্র যাবার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বলেছে, ‘ একা থেকো না। মুমুর সাথে গিয়ে ঘুমোবে। হয়তো ফিরতে অনেক রাত হবে। যদি মুমুর সাথে আন কমফোর্টেবল লাগে, তবে নদীকে ডেকে নিও। তবুও একা থাকবে না। ‘
নমনীর সাথে মুমুর গলায় গলায় ভাব না থাকলেও দা কুমড়োর সম্পর্কও নয়। যদিও মাঝে মাঝে মুমু স্বার্থপরের মতো আচরণ করে। কিন্তু নমনী জানে, মুমু কঠোর হলেও খারাপ না। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘড়ির কাঁটা দশটায় গিয়ে ঠেকেছে, হুঁশ নেই নমনীর। নিজের ফোন হাতে ফেসবুকে ব্যস্ত হলো সে। এমন সময় ম্যাসেঞ্জারে টুং টাং শব্দে ম্যাসেজ রিকুয়েষ্ট এলো। সে দেখলো অপরিচিত ব্যক্তি। পরক্ষণেই নামটা পড়লো, ‘ হ্যান্স বেথ ‘। ব্র্যাকেটের মধ্যে ছোট করে লেখা ‘প্রিয়ম’।
নমনী এবার ঘাবড়ে যায়। তবুও মেসেজ সিন করে দেখলো প্রিয়ম লিখেছে,
– ‘ Hello my queen ! এখনো জেগে আছ কার জন্য? আমার জন্য নয় তো!
নমনীর রিপ্লাই দিতে ইচ্ছে না করলেও হাত অনিচ্ছায় টাইপ করে বসলো,
-‘ কল্পনা করুন। আমি অপেক্ষা করছি আমার হাজবেন্ডের। আপনি কি আমার হাজবেন্ড?
-‘ হতে কতক্ষণ!
এরপর আর কোনো মেসেজ এলো না। নমনী সবে ফোনটা রেখেছে। দরজাটা এখনো বন্ধ করেনি। মুমুর ঘরে যাবে কি যাবে না এসব দোটানার মাঝে পড়ে আর বন্ধ করা হয়ে উঠেনি।তাই সে দরজা ভেড়াতে গিয়ে কেঁপে উঠে সে। কারণ, দরজার ওপাশে সয়ং প্রিয়ম দাঁড়িয়ে। ছেলেটা এত রাতে এখানে চলে এসেছে। তার উপর আজ কেউ নেই। কথা বলার সময় নমনী কাঁপতে লাগলো।
— কি চাই?
প্রিয়ম শুরুতে অবাক হবার ভঙ্গিমা করে আবার ফিকে হেসে বললো,
— তোমাকে চাই।
সর্বনাশ, এ কি ভয়ংকর কথা! নমনী এবার আগাম বিপদের আভাস পেতে লাগলো। সে বললো,
— আপনি প্লিজ চলে যান। আপনার উপস্থিতি আমার জন্য পীড়াদায়ক।
— Don’t make me upset Nomoni. সর্বদা আমাকে মর্মাহত করে দাও।
— আপনি মানুষটাই মর্মাহত হবার যোগ্য।
প্রিয়ম দরজা ভেদ করে ঘরে প্রবেশের আগ্রহ দেখাতে নমনী ভয়ে দু’ পা পেছনে সরে যায়। ফলে প্রিয়ম অনায়াসে ঘরে ঢুকে পড়ে। এবার নমনী নেয়ে ঘেমে অস্থির। নমনী দ্রুত ফোন হাতে নিতেই প্রিয়ম সেটা ছিনিয়ে নিলো। তারপর বললো,
— আজ তোমার আর আমার মাঝে কেউ আসবে না। তুমি ভয় পেয়ো না। আমি এতটা খারাপ না। শুধু তোমার সাথে মনভরে গল্প করে চলে যাবো।
— আমি কোনো গল্প করবো না।
— আমার প্রতি তোমার এত অনীহা কেন?
— যে ছেলের নামটাতেও ঘোল আনা বিদেশি সংস্কৃতির ছাপ, সে ছেলে হিসেবে যে কেমন, তা আমার বুঝতে বাকি নেই।
প্রিয়ম হেসে বললো,
— এইটুকু বিষয়! তুমি বললে নামটাও পাল্টে দেব তোমার জন্য।
নমনী তাচ্ছিল্য হেসে বললো,
— আপনার নাম দিয়ে আমার কাজ নেই। বিদায় হন এখন। দয়া করুন! আমার খারাপ রূপ দেখতে না চাইলে চলে যান।
নমনী বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ার থেকে হাতুড়ি বের করলো। যেটা সে বিয়ের রাতে নেত্রকে মারতে রেখেছিল। পরবর্তীতে যদিও তার প্রয়োজন পড়েনি। আজ হয়তো কাজে লাগবে।
চলবে…………..