#তোমার_প্রেমে_পড়েছি
#পর্ব_১৮
#Rimy_Islam
নমনী হাতুড়ি হাতে বিশ্বজয়ের গৌরব বোধে তাকায় প্রিয়মের দিকে। সে এক হাতে কোমর স্পর্শ করে অপর হাতে শক্তভাবে হাতুড়িটা ধরে বললো,
— তুমি নিজেকে বুদ্ধিমান ভেবে থাকলে আমিও কম যাই না। এই হাতুড়ি দিয়ে তোমাকে খুন করবো।
প্রিয়ম এবার শব্দ করে গা দুলিয়ে হাসতে লাগলো। তারপর হাসতে হাসতে পেট ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো। এরপর ডাগর চোখে নমনীকে দেখে নিয়ে বললো,
— শোনো মেয়ে! আমি কোন ধানের চাল তা বুঝলে এই পদক্ষেপ নিতে না। তুমি জানো না আমার ক্ষমতা কতটুকু। এইসব হাতুড়ি আমার শরীরে ছোট আঁচড় কাটা ছাড়া বড় কোনো আঘাত হানতে পারবে না। আমার বডি দেখেছ?
নমনী তাকালো প্রিয়মের দিকে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঘৃণাভরা চোখে ভীতির রেখা ভেসে উঠলো। টাইট ফিটিং শার্টের উপর শরীরের বলিষ্ঠতার প্রকাশ ঘটেছে স্বাচ্ছন্দ্যে। হাতের বাহুর ফোলা ভাব দৃষ্টি এড়ানোর মতো নয়। বার কয়েক ঢোক গিলে নমনী। মনে ক্ষীণ সন্দেহ, এই ছেলে জিম করে এমন শরীর বানায়নি তো! আজকাল এদেশের মানুষের মাঝেও সুগঠিত শরীর বানানোর প্রভাব পড়েছে । তবে ভিনদেশে এর প্রভাব নিশ্চয়ই আরো তীব্র!
প্রিয়ম ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
— তুমি যা ধরেছ ঠিক ধরেছ। আমি আধা কাঁচা শাক-সবজি খেয়ে শরীর বানিয়েছি কি লোকের হাতে মার খেতে? হাতুড়িটা ফেলে দাও নমনী।
নমনী জোর গলায় বলে,
— দেবো না।
— আমাকে মারলে তোমার হাতেই ব্যথা পাবে। আমার চুলও নড়বে না। Let’s try. Now hit me.
নমনী মুখে হাসি ফুটিয়ে সত্যি সত্যি প্রিয়মকে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে আঘাত করে বসে। ফলস্বরূপ, সে তার হাতের তালুতে সূক্ষ্ম ব্যথার ন্যয় অনুভব করে। প্রিয়মের নড়বার কোনো নাম নেই। সে অবিচল সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।
অতঃপর হেসে বললো,
— আঘাত যত তীব্র হবে, তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা তত গভীর হবে।
— হয়নি। আঘাত যত তীব্র হয়, ভালোবাসা তত ক্ষীণ হয়।
— এটা ঠিক আবার একই সাথে ভুল। ভালোবাসার সঙ্গা একেক জনের কাছে একেক রকম। আমার কাছে ভালোবাসা মানে তুমি। তুমি আঘাত করো, মারো, কাটো, তুমি আমারই থাকবে।
— কেন আমার পেছনে পড়েছেন?
— আমি বাধ্য নমনী। আমার মনের কাছে ধরা। সে না মানলে আমি কি করি বলো তো!
নমনী সর্বশেষ অবলম্বনটা হাত থেকে ফেলে দেয়। নিরুপায় হয়ে বিছানায় বসে ফোন হাতে নিতে তা ছো মেরে নিয়ে নেয় প্রিয়ম। ‘আফসোস! আর কিছু করার নেই।’ বলেই হাসে প্রিয়ম। নমনী নিজেও এবার হাল ছেড়ে দেয়। ভয়ংকর এ রাতের সমাপ্তি যেন নেই। আজকের পর কোথায় গিয়ে ঠেকবে তার জীবন? জানে না সে। হয়তো প্রশ্ন উঠবে অনেক। সে নির্দোষ হয়েও সমস্ত দোষ এসে চাপবে তার কাঁধে। কেউ দেখবে না একা বাড়িতে প্রিয়ম তার উপর কি অন্যায়টা করেছে, কেউ দেখবে না একা বাড়িতে শত্রুর কাছে রেখে নেত্র চলে গেছে। একবারো খারাপ কিছু ঘটার কথা মাথায় না নিয়ে। বাবার প্রতি দায়িত্ব পালন হেতু সে দীর্ঘস্থায়ী আরেক সম্পর্ককে গুরুত্বহীন করে দিয়েছে।
‘ভাই, তুমি এগোবে জানতাম, কিন্তু এতদূর এগোবে জানতাম না।’ নেত্র কথাগুলো বলতে বলতে ঘরে প্রবেশ করে। নমনীর চোখে গাঢ় আশার আলো। এমন এক মুহূর্তে প্রতিটাক্ষণ সে তো নেত্রকেই চাইছিলো। এদিকে প্রিয়মের মুখ থমথমে ভয়ে জড়সড়। সে কম্পিত ঠোঁটে বললো,
— তুমি?
নেত্র হেসে বললো,
— হুম। তুমি চোখে সরষে ফুল দেখছো নাতো!
— Nonsense. কি বলবে পরিষ্কার করে বলো।
নেত্র মৃদু আঘাত করে প্রিয়মের বাহুতে। সেদিকে প্রিয়ম একবার তাকিয়ে আবার নেত্র’র চোখে চোখ রাখে। এদিকে নেত্র নমনীর হাত ধরে বলে,
— এই মেয়েটাকে দেখছো! এটা আমার বউ। এখানে এসেছ ভালো কথা। ক’দিন ঘুরবে আবার চলেও যাবে। কিন্তু সারাজীবন এই হাতটা ধরে আমাকেই রাখা লাগবে। সেখানে তোমার মতো উড়ো ঝড়ের অবস্থান নেই। কি করে তোমার সাহস হলো আমার অনুপস্থিতিতে আমার ঘরের বউয়ের দিকে নজর দেয়ার?
প্রিয়ম নড়বড়ে কণ্ঠে বললো,
— তুমি ভুল বুঝছ। নমনী একা ছিলো বলে জাস্ট ওকে সময় দিচ্ছিলাম।
নমনী প্রায় সাথে সাথে জোর বিরোধ করে বললো,
— এই ছেলে মিথ্যা বলছে নেত্র।
— আমি জানি নমনী।
বললো নেত্র। ওর কথায় অবাক হয় নমনী। সব জানে! এ কথার দ্বারা কি বুঝায়! প্রিয়মের মুখ কালো অন্ধকারে ঢাকা।
নেত্র বলতে থাকে,
— প্রথমেই ভেবেছিলাম, আমার অনুপস্থিতিতে প্রিয়ম ভাই সুযোগ নিবে। এমন সুযোগ একজন প্রেমিক পুরুষ হাতছাড়া করার উপায় নেই। ইভেন আমি হলেও করবো না। তার উপর একই বাড়িতে থাকছে ভাই। আমি প্ল্যান মতো বাবার সাথে যাবার কথা বলি। তবে মাঝপথ থেকে ফেরত এসে দেখি বাঘ ইতোমধ্যে ফাঁদে পা ফেলেছে। থ্যাঙ্ক ইউ ভাই। তোমার চেষ্টা ছাড়া আমার পরিকল্পনা সফল হতো না। এখন তুমি নিজ থেকে বিদায় নিবে নাকি আরো অপদস্ত হবার জন্য ওয়েট করবে। It’s up to you.
——-
প্রিয়মকে নতুনভাবে বিদায় করতে হয়নি। সে নিজ দায়িত্বে পরেরদিন ঢাকা চলে যায়। সেখান থেকে টিকেট কেটে অস্ট্রেলিয়া। বাড়ির লোকজন কত বললো আর ক’টা দিন থেকে যেতে। অন্তত টিকেট না পাওয়া পর্যন্ত এখানেই থেকে যেতে। প্রিয়ম শুনলো না কারোর। সে ভালোমতো নেত্র সম্বন্ধে অবগত হয়েছে যে, নেত্র’র বাইরের আবরণ নরম হলেও ভেতরের অংশ কড়া। সে যা বলেছে তা করে বসবে না। এমন ভাবা নিঃস্প্রয়োজন। যাবার সময় সে একবারের জন্যও নেত্র কিংবা নমনীকে বিদায় জানায়নি।
সে যাবার পর থেকে নমনী ভীষণ খুশি। তার মুখে হাসি ফুটেছে বহুদিন পর। আজ নেত্রও বড় খুশি। কারণ, তার নমনী খুশি। সে যে নমনীর প্রতি কতটা দুর্বল তা যদি নমনী একবার জানতো, তবে তার প্রতি কখনো কোনো আক্ষেপ প্রকাশ করতো না।
আকাশে আজ মেঘ কম বাতাসের তোড় বেশি। এত এত বাতাসে নমনীর ভেসে যেতে ইচ্ছে করছে। সারাদিনের কাজ শেষে সন্ধ্যে সময়টা নিজের জন্য বরাদ্দ করতে ভুলে না কখনো। তাইতো ঝটপট চলে এসেছে ছাদে। আর এসেই দেখে আজ তার খুশির উপহারস্বরূপ প্রকৃতি ঢেলে রেখেছে বিরামহীন বলসাধ্য হাওয়া।
নেত্র’র দেখা সারাদিন মেলেনি। সে পুরোদিন কাটিয়ে দিয়েছে বাইরে। যখন দিন শেষে নিজের ঘরটায় ঢুকে, তখন নমনীকে না পেয়ে অবাক হয়নি সে। তাই সেও চলে আসে ছাদে। এখানে ঠিক পেয়ে যায় নমনীকে।
নেত্র বললো,
— প্রকৃতি বিলাসী কন্যা, কি করছ?
নমনী উজ্জ্বল মুখে নেত্র’র দিকে তাকিয়ে বললো,
— বাতাস বিলাস করছি। তুমি কখন এলে?
— এইতো সবে। আজ চমকালে না একবারো!
— কারণ আমাকে চমকে দেবার মানুষটা বিদেয় হয়েছে। আহ!শান্তি- শান্তি!
নেত্র উচ্চ শব্দে হেসে বললো,
— তবে মানতেই হবে, কাল প্রিয়ম ভাইয়ের স্থানে আমি থাকলেও ওই সুযোগটা মিস করতাম না।
— আহা, শখ কত! বললেই আমি শুনতাম! মেরে রুম থেকে ভাগিয়ে দিতাম।
— বললেই আমিও বুঝি শুনতাম! কোলে তুলে তোমাকে নিয়ে রুমে ঢুকতাম।
— Shut up. বেহায়া পুরুষ আমার পছন্দ না। ভুলে যাবে না আমরা প্রেম করছি। চাইলেই ওসব লাগাম ছাড়া স্বভাব দেখাতে পারবে না। লিমিট বজায় রেখে চলো।
— আর না মানলে?
— না মানলে বললো না আমি তোমার জন্য এখন কি ফিল করি।
নেত্র উৎসুক দৃষ্টি হেনে দিলো নমনীর দিকে। জীবনে প্রথম বই ব্যতীত কোনো কিছুতে সে গভীর কৌতূহল বোধ করছে। সত্যিই কি চলছে নমনীর মনে! এখনই না জানলে তার স্বস্তি নেই।
চলবে………